ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্বপ্নে নিজেকে আল্লাহর সামনে দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৭:২০ পিএম
আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০২৪, ১১:২৮ এএম
স্বপ্নে নিজেকে আল্লাহর সামনে দেখলে কী হয়?
আরবি ও ইংরেজিতে ‘আল্লাহ’ লেখা ছবি। ইন্টারনেট

আবু আব্দুল্লাহ তাসতারি (রহ.) বলেন, স্বপ্নে আমি দেখতে পেলাম কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কবর থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আমার সামনে একটি বাহন আনা হলে আমি তাতে আরোহণ করলাম। সে আমাকে নিয়ে আকাশের দিকে চলল। হঠাৎ সেখানে জান্নাত দেখতে পেয়ে অবতরণের চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমাকে বলা হলো, এটা তোমার স্থান নয়। এরপর সে আমাকে নিয়ে এক আকাশ থেকে আরেক আকাশে উঠতে লাগল। প্রত্যেক আকাশেই দেখতে পেলাম একটি করে জান্নাত। অবশেষে ইল্লিয়ন বা সর্বোত্তম জান্নাতে পৌঁছে সেখানে বসার ইচ্ছা করলাম। আমাকে বলা হলো, তোমার রবের সাক্ষাৎ না করে তুমি বসবে না। আমি বললাম, হ্যাঁ আমি বসব না। ফেরেশতারা আমাকে নিয়ে চলল। হঠাৎ আমি আল্লাহতায়ালার সামনে আদম (আ.)-কে দেখতে পেলাম। আদম (আ.) আমাকে দেখে সাহায্যপ্রার্থীর মতো তার ডান দিকে বসালেন। আমি বললাম, হে আমার প্রতিপালক, শায়খ বা মুরব্বির ক্ষমার জন্য আমি আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি। এরপর আল্লাহতায়ালাকে আমি বলতে শুনতে পেলাম, তিনি বললেন, হে আদম, উঠ। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

বিশর বিন হারিসের ভাগিনা বলেন, এক ব্যক্তি বিশরের কাছে এসে বলল, আপনি কি বিশর বিন হারিস? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি বলল, আমি আল্লাহতায়ালাকে স্বপ্নে দেখেছি। তিনি বলছিলেন, তুমি বিশরের কাছে যাও এবং তাকে বল, হে বিশর। তুমি যদি আমার জন্য জ্বলন্ত কয়লার ওপরও সিজদা কর, তারপরও ওই সুখ্যাতির জন্যে আমার শুকরিয়া আদায় করতে পারবে না, যা আমি তোমার জন্য লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি।

  • শায়খ আবু সাদ (রহ.) বলেন, যে স্বপ্নে নিজেকে আল্লাহতায়ালার সামনে দণ্ডায়মান দেখবে এবং আল্লাহতায়ালাকেও তার দিকে তাকাচ্ছে দেখতে পাবে। স্বপ্নদ্রষ্টা যদি সৎ হয়, তা হলে ওই স্বপ্ন তার জন্য দয়া ও রহমত হিসেবে বিবেচিত হবে। স্বপ্নদ্রষ্টা যদি সৎ না হয়, তা হলে তার হুঁশিয়ার হওয়া বাঞ্ছনীয়। 
  • স্বপ্নে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কানে কানে কথা বলতে দেখলে, মহান আল্লাহ তাকে নৈকট্যদানের মাধ্যমে সম্মানিত করবেন। মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় বানাবেন। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি মুসা (আ.)-কে নিগূঢ় তত্ত্ব আলোচনার জন্য নিকটবর্তী করেছি।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ৫২)
  • আল্লাহতায়ালাকে সিজদা করতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা আল্লাহতায়ালার নৈকট্য ও মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাবে। আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহকে সিজদা করো এবং তার নৈকট্য লাভ করো।’ (সুরা আলাক, আয়াত: ১৯) 
  • পর্দার আড়াল থেকে আল্লাহর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে দেখলে, তার দীন-ধর্ম সুন্দর হবে এবং তার হাতে যদি কারও আমানত থাকে, তা হলে তা আদায় করে দেবে এবং তার প্রভাব বাড়বে। সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে দেখলে, তার দীন-ধর্ম বিনষ্ট ও বিভ্রান্ত হবে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘কোনো মানুষের পক্ষে সরাসরি আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কথা বলা অসম্ভব। তবে ওহির মাধ্যমে বা পর্দার আড়ালে সম্ভব।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ৫১)
  • আল্লাহর গুণাবলি প্রত্যক্ষ করা ছাড়া যদি কেউ আল্লাহকে অন্তর্দৃষ্টিতে দেখে, তিনি তাকে নৈকট্য দান করেছেন বা তাকে সম্মান দিয়েছেন বা তার হিসাব-নিকাশ নিয়েছেন বা তাকে সুসংবাদ দিয়েছেন, তা হলে যেভাবে সে দেখেছে, কিয়ামতের দিন সেভাবেই আল্লাহর সাক্ষাৎ পাবে।
  • আল্লাহতায়ালাকে ক্ষমা ও দয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে দেখলে, অবশ্যই ওই প্রতিশ্রুতি ঠিক ও সত্যে পরিণত হবে। কেননা মহান আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। তবে জীবদ্দশায় তার জানমালে বিপদাপদ আসতে পারে। আল্লাহতায়ালাকে উপদেশ দিতে দেখলে, সে ওইসব কাজ হতে বিরত থাকবে, যেগুলো মহান আল্লাহ অপছন্দ করেন। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনি তোমাদেরকে উপদেশ গ্রহণের উপদেশ দিচ্ছেন।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৮১) 
  • মহান আল্লাহ স্বপ্নদ্রষ্টাকে কাপড় পরিয়ে দিতে দেখলে, তার জীবদ্দশায় দুর্দশা ও ব্যাধি আসবে। কিন্তু বিনিময়ে অধিক শুকরিয়া লাভের তাওফিক পাবে। 
  • স্বপ্নে আল্লাহতায়ালাকে তার প্রতি রাগান্বিত দেখা, তার প্রতি তার মাতাপিতার রাগের ইঙ্গিত। মাতাপিতাকে তার প্রতি রাগান্বিত দেখা, তার প্রতি আল্লাহতায়ালার রাগের আলামত। আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আরও নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আমার ও তোমাদের মাতাপিতার কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। আমারই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (সুরা লোকমান, আয়াত: ১৪) 
  • আল্লাহতায়ালা স্বপ্নদ্রষ্টার প্রতি রাগ করেছেন দেখলে, সে উঁচু মর্যাদা হতে ছিটকে পড়বে। আল্লাহ বলেছেন, ‘যার প্রতি আমার ক্রোধ নেমে আসবে, তার ধ্বংস নিশ্চিত।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮৯৯) 
  • পরিচিত জায়গায় আল্লাহতায়ালার সামনে নিজেকে উপস্থিত দেখলে, সেখানে ইনসাফ ছড়িয়ে পড়বে। ওই এলাকা শস্য-শ্যামল প্রান্তরে পরিণত হবে। সেখানকার অত্যাচারীরা ধ্বংস হবে। সাহায্য পাবে নিপীড়িতরা।

(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত) 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

 

 

 

কাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব?

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
কাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব?
দুই মুমিনের আলোচনার ছবি। সংগৃহীত

অনেকে মনে করেন, যাকাত ফরয হওয়ার জন্য যে ধরনের সম্পদ জরুরি যেমন, টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, ব্যবসায়িক সম্পদ, তেমনি কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্যও একই শর্ত। ফলে কোন কোন সচ্ছল পরিবারের লোকজনকেও কোরবানি দিতে দেখা যায় না। এটি ভুল ধারণা। সঠিক মাসআলা হল, যে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নিকট কোরবানির দিনগুলোতে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত যেকোন ধরনের সম্পদ থাকবে তার ওপরই কোরবানি ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কোরবানির পশু জবাইকারীকে কোন পারিশ্রমিক দিতে হবে কী?

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
কোরবানির পশু জবাইকারীকে কোন পারিশ্রমিক দিতে হবে কী?
কোরবানির পশু জবাইকারার প্রস্তুতির ছবি। সংগৃহীত

কোরবানি আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মহান ইবাদত। এই ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধি-বিধান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। কোরবানির পশু জবাই করার পর জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া প্রসঙ্গে অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন। এ বিষয়ে ইসলামের বিধান অত্যন্ত পরিষ্কার।

ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, কোরবানির পশু জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া জায়েজ। অর্থাৎ, আপনি আপনার কোরবানির পশু জবাই করার জন্য কাউকে নিযুক্ত করলে তাকে তার শ্রমের বিনিময়ে অর্থ বা অন্য কোনো হালাল বস্তু পারিশ্রমিক হিসেবে দিতে পারবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। এটি শ্রমের মূল্যায়নের অন্তর্ভুক্ত।

তবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়। কোরবানির পশুর কোনো অংশ, যেমন - গোশত, চামড়া, মাথা ইত্যাদি পারিশ্রমিক হিসেবে জবাইকারীকে দেওয়া যাবে না। এর কারণ হলো, কোরবানির পশু সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত। এর গোশত, চামড়া বা অন্য কোনো অংশ বিক্রি করা বা পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করা জায়েজ নয়। যদি এমনটা করা হয়, তাহলে কোরবানির উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। ফিকাহশাস্ত্রের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ 'কিফায়াতুল মুফতী' (৮/২৬৫) এবং 'খুলাসাতুল ফাতাওয়া' (৪/৩১৯) তে এই মাসআলাটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অতএব, কোরবানির পশু জবাইকারীকে তার কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দিতে চাইলে নগদ অর্থ প্রদান করা উচিত। কোরবানির পশুর কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। এই বিধান মেনে চললে আমাদের কোরবানি আল্লাহর দরবারে মাকবুল হবে ইনশাআল্লাহ।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কোরবানির নিজ অংশের গোশত বিক্রি কী জায়েজ?

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ পিএম
কোরবানির নিজ অংশের গোশত বিক্রি কী জায়েজ?
চামড়া ও গোশতের ছবি। সংগৃহীত

কোরবানি, মুসলিম উম্মাহর এক মহান ইবাদত। ত্যাগের এই দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করা হয়। কোরবানির গোশত বিতরণ ও ব্যবহার নিয়ে সমাজে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, যা নিরসনে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মুসনাদে আহমাদ বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রাথমিকভাবে কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি খেতে নিষেধ করেছিলেন, যাতে সবাই গোশত পায়। পরে তিনি এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে অনুমতি দেন যে, যতদিন ইচ্ছা কোরবানির গোশত খাওয়া যাবে। তবে, তিনি সুস্পষ্টভাবে কোরবানির গোশত এবং হাদী (হজের সময় কোরবানিকৃত পশু) এর গোশত বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। তাঁর নির্দেশ ছিল, নিজেরা খাও এবং অন্যদেরকে দান করো।’(হাদিস,১৬২১০)

একইভাবে, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করাও নিষেধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এগুলোর চামড়া নিজেদের কাজে ব্যবহার করো। তা বিক্রি করো না।’ এর অর্থ হলো, চামড়া ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবে, যেমন জায়নামাজ বা বালিশের কভার বানানো। যদি চামড়া বিক্রি করতেই হয়, তবে সেই অর্থ দরিদ্রদের মাঝে সদকা করতে হবে; নিজের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।

অতএব, এই হাদিসের আলোকে মাসয়ালাটি স্পষ্ট হয় যে, কোরবানির নিজ অংশের গোশত হোক বা অন্য কোনো অংশের, তা বিক্রি করা জায়েজ নয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং অভাবীদের মাঝে গোশত বিতরণ করে তাদের হক আদায় করা। কোরবানির এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সমুন্নত রাখতে আমাদের শরিয়তের নির্দেশনা মেনে চলা আবশ্যক। যদি কেউ আপনাকে হাদিয়া হিসেবে কোরবানির গোশত দেয়, তবে তা আপনি খেতে পারবেন।

 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

ইবলিস কী সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিল?

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
ইবলিস কী সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিল?
কোরআনুল কারিমের ছবি। সংগৃহীত

কোরআনে বিভিন্ন প্রিয় নবির সঙ্গে আল্লাহর বিশেষ সম্পর্কের কথা এসেছে। যেমন- আল্লাহ সরাসরি কথা বলেছেন হজরত মুসা (আ.)-এর সঙ্গে ‘তুর’ পাহাড়ে এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে মিরাজে আরশের উচ্চাসনে। এটি নবিদের জন্য ছিল এক অনন্য সম্মান। সাধারণ কোনো বাদশার সঙ্গেও কথা বলা যেমন মর্যাদার, তেমনি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য নিঃসন্দেহে সর্বোচ্চ সম্মান।

কিন্তু ইবলিস যে অবাধ্য ও অভিশপ্ত তাকে নিয়েও কোরআনে আল্লাহর প্রশ্নোত্তরের বর্ণনা রয়েছে। এতে প্রশ্ন ওঠে, সে কি আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছিল? আল্লাহ বলেন, ‘আমি যখন তোকে আদেশ করলাম, তখন তুই কেন সিজদা করলি না?’(সুরা আরাফ, ১২)

জবাবে ইবলিস বলেছিল, ‘আমি আদমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।’

এই আয়াতগুলো সরাসরি কথোপকথনের ইঙ্গিত দেয়। তবে বহু আলেমের মতে, এই কথাবার্তা হয়েছে ফেরেশতাদের মাধ্যমে। যেমন- ইমাম সুয়ুতি তাঁর গ্রন্থ লুকতুল মারজান ফি আহকামিল জান-এ ইবনু আকিল হাম্বলির বরাতে বলেন, ইবলিস কখনো আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলেনি। বরং সব কিছু হয়েছে ফেরেশতাদের মাধ্যমে।’

তবে অধিকাংশ তাফসিরবিদ ও কোরআনের সরল পাঠ অনুসারে এই সংলাপ হয়েছিল সরাসরি, তবে তা ঘটেছে ইবলিস অভিশপ্ত ও বিতাড়িত হওয়ার আগেই। তখন সে ছিল মর্যাদাসম্পন্ন, এমনকি ফেরেশতাদের সর্দারদের একজন হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু আল্লাহর আদেশ অমান্য করে অহংকারে ডুবে যাওয়ায় সে চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত হয়। এর পর আর কখনোই সে আল্লাহর সান্নিধ্য পায়নি।

এ থেকেই শিক্ষা, আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া কোনো গুণ বা পদমর্যাদার কারণে স্থায়ী হয় না, বরং তা নির্ভর করে আনুগত্য, বিনয় ও বিনম্রতার ওপর।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

পশু জবাইয়ের সময় দয়া দেখানো কতটা জরুরি?

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১০:০০ পিএম
পশু জবাইয়ের সময় দয়া দেখানো কতটা জরুরি?
কোরবানির পশু জবাই করার ছবি। সংগৃহীত

ঈদুল আযহা এলে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কোরবানি করা হয়। এটি একটি মহান ইবাদত। তবে এই ইবাদত পালনের সময় পশুর প্রতি সহানুভূতি ও দয়া প্রদর্শন করা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। কোরবানি মানেই শুধু জবাই করা নয়, বরং তা হতে হবে সর্বোত্তম পন্থায়, যাতে পশুর কষ্ট ন্যূনতম হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) এই বিষয়ে অত্যন্ত জোরালো নির্দেশনা দিয়েছেন। শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা সকল কিছুর ওপর অনুগ্রহকে অপরিহার্য করেছেন। অতএব, যখন তোমরা (শরিয়ত মোতাবেক হদ বা কিসাস হিসেবে) হত্যা করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে হত্যা করো, যখন জবাই করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে জবাই করো। এবং প্রত্যেকে তার ছুরিতে শান দেবে, যেন জবাইয়ের প্রাণীর বেশি কষ্ট না হয়।’(মুসলিম, ১৯৫৫; আবু দাউদ, ২৮১৫; নাসায়ী, ৪৪০৫) 

এই হাদিস থেকে আমরা কয়েকটি বিষয় পরিষ্কারভাবে জানতে পারি:

ক. অনুগ্রহ ও দয়া: ইসলাম সকল সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শনের শিক্ষা দেয়। পশুর প্রতিও এই দয়া প্রযোজ্য।

খ. উত্তম পদ্ধতি: জবাইয়ের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এর অর্থ হলো, দ্রুত ও নিখুঁতভাবে জবাই সম্পন্ন করা, যাতে পশু অপ্রয়োজনীয় কষ্ট না পায়।

গ. ছুরিতে শান দেওয়া: ধারালো ছুরি ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক। ভোঁতা ছুরি পশুর কষ্টকে দীর্ঘায়িত করে, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ধারালো ছুরি পশুর জন্য দ্রুত ও কম যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু নিশ্চিত করে।

কোরবানির সময় পশুকে অহেতুক টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া, অন্যদের সামনে জবাই করা, কিংবা একটি পশুর সামনে অন্য পশুকে জবাই করা থেকেও বিরত থাকা উচিত। এটি পশুর মানসিক কষ্টের কারণ হয়।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক