
আবু আব্দুল্লাহ তাসতারি (রহ.) বলেন, স্বপ্নে আমি দেখতে পেলাম কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কবর থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আমার সামনে একটি বাহন আনা হলে আমি তাতে আরোহণ করলাম। সে আমাকে নিয়ে আকাশের দিকে চলল। হঠাৎ সেখানে জান্নাত দেখতে পেয়ে অবতরণের চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমাকে বলা হলো, এটা তোমার স্থান নয়। এরপর সে আমাকে নিয়ে এক আকাশ থেকে আরেক আকাশে উঠতে লাগল। প্রত্যেক আকাশেই দেখতে পেলাম একটি করে জান্নাত। অবশেষে ইল্লিয়ন বা সর্বোত্তম জান্নাতে পৌঁছে সেখানে বসার ইচ্ছা করলাম। আমাকে বলা হলো, তোমার রবের সাক্ষাৎ না করে তুমি বসবে না। আমি বললাম, হ্যাঁ আমি বসব না। ফেরেশতারা আমাকে নিয়ে চলল। হঠাৎ আমি আল্লাহতায়ালার সামনে আদম (আ.)-কে দেখতে পেলাম। আদম (আ.) আমাকে দেখে সাহায্যপ্রার্থীর মতো তার ডান দিকে বসালেন। আমি বললাম, হে আমার প্রতিপালক, শায়খ বা মুরব্বির ক্ষমার জন্য আমি আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি। এরপর আল্লাহতায়ালাকে আমি বলতে শুনতে পেলাম, তিনি বললেন, হে আদম, উঠ। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
বিশর বিন হারিসের ভাগিনা বলেন, এক ব্যক্তি বিশরের কাছে এসে বলল, আপনি কি বিশর বিন হারিস? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি বলল, আমি আল্লাহতায়ালাকে স্বপ্নে দেখেছি। তিনি বলছিলেন, তুমি বিশরের কাছে যাও এবং তাকে বল, হে বিশর। তুমি যদি আমার জন্য জ্বলন্ত কয়লার ওপরও সিজদা কর, তারপরও ওই সুখ্যাতির জন্যে আমার শুকরিয়া আদায় করতে পারবে না, যা আমি তোমার জন্য লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি।
- শায়খ আবু সাদ (রহ.) বলেন, যে স্বপ্নে নিজেকে আল্লাহতায়ালার সামনে দণ্ডায়মান দেখবে এবং আল্লাহতায়ালাকেও তার দিকে তাকাচ্ছে দেখতে পাবে। স্বপ্নদ্রষ্টা যদি সৎ হয়, তা হলে ওই স্বপ্ন তার জন্য দয়া ও রহমত হিসেবে বিবেচিত হবে। স্বপ্নদ্রষ্টা যদি সৎ না হয়, তা হলে তার হুঁশিয়ার হওয়া বাঞ্ছনীয়।
- স্বপ্নে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কানে কানে কথা বলতে দেখলে, মহান আল্লাহ তাকে নৈকট্যদানের মাধ্যমে সম্মানিত করবেন। মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় বানাবেন। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি মুসা (আ.)-কে নিগূঢ় তত্ত্ব আলোচনার জন্য নিকটবর্তী করেছি।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ৫২)
- আল্লাহতায়ালাকে সিজদা করতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা আল্লাহতায়ালার নৈকট্য ও মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাবে। আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহকে সিজদা করো এবং তার নৈকট্য লাভ করো।’ (সুরা আলাক, আয়াত: ১৯)
- পর্দার আড়াল থেকে আল্লাহর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে দেখলে, তার দীন-ধর্ম সুন্দর হবে এবং তার হাতে যদি কারও আমানত থাকে, তা হলে তা আদায় করে দেবে এবং তার প্রভাব বাড়বে। সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে দেখলে, তার দীন-ধর্ম বিনষ্ট ও বিভ্রান্ত হবে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘কোনো মানুষের পক্ষে সরাসরি আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কথা বলা অসম্ভব। তবে ওহির মাধ্যমে বা পর্দার আড়ালে সম্ভব।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ৫১)
- আল্লাহর গুণাবলি প্রত্যক্ষ করা ছাড়া যদি কেউ আল্লাহকে অন্তর্দৃষ্টিতে দেখে, তিনি তাকে নৈকট্য দান করেছেন বা তাকে সম্মান দিয়েছেন বা তার হিসাব-নিকাশ নিয়েছেন বা তাকে সুসংবাদ দিয়েছেন, তা হলে যেভাবে সে দেখেছে, কিয়ামতের দিন সেভাবেই আল্লাহর সাক্ষাৎ পাবে।
- আল্লাহতায়ালাকে ক্ষমা ও দয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে দেখলে, অবশ্যই ওই প্রতিশ্রুতি ঠিক ও সত্যে পরিণত হবে। কেননা মহান আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। তবে জীবদ্দশায় তার জানমালে বিপদাপদ আসতে পারে। আল্লাহতায়ালাকে উপদেশ দিতে দেখলে, সে ওইসব কাজ হতে বিরত থাকবে, যেগুলো মহান আল্লাহ অপছন্দ করেন। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনি তোমাদেরকে উপদেশ গ্রহণের উপদেশ দিচ্ছেন।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৮১)
- মহান আল্লাহ স্বপ্নদ্রষ্টাকে কাপড় পরিয়ে দিতে দেখলে, তার জীবদ্দশায় দুর্দশা ও ব্যাধি আসবে। কিন্তু বিনিময়ে অধিক শুকরিয়া লাভের তাওফিক পাবে।
- স্বপ্নে আল্লাহতায়ালাকে তার প্রতি রাগান্বিত দেখা, তার প্রতি তার মাতাপিতার রাগের ইঙ্গিত। মাতাপিতাকে তার প্রতি রাগান্বিত দেখা, তার প্রতি আল্লাহতায়ালার রাগের আলামত। আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আরও নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আমার ও তোমাদের মাতাপিতার কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। আমারই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (সুরা লোকমান, আয়াত: ১৪)
- আল্লাহতায়ালা স্বপ্নদ্রষ্টার প্রতি রাগ করেছেন দেখলে, সে উঁচু মর্যাদা হতে ছিটকে পড়বে। আল্লাহ বলেছেন, ‘যার প্রতি আমার ক্রোধ নেমে আসবে, তার ধ্বংস নিশ্চিত।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮৯৯)
- পরিচিত জায়গায় আল্লাহতায়ালার সামনে নিজেকে উপস্থিত দেখলে, সেখানে ইনসাফ ছড়িয়ে পড়বে। ওই এলাকা শস্য-শ্যামল প্রান্তরে পরিণত হবে। সেখানকার অত্যাচারীরা ধ্বংস হবে। সাহায্য পাবে নিপীড়িতরা।
(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক