শায়খ আবু সাদ (রহ.) বলেন, ফেরেশতাদের স্বপ্নে দেখা—যদি পরিচিত এবং সুসংবাদবাহী ফেরেশতাকে কেউ স্বপ্ন দেখে, তবে যে স্বপ্ন দেখেছে, তার কাছে কোনো আশ্চর্য বিষয় প্রকাশের, অত্যাচারের পর আল্লাহর সাহায্য, মান-সম্মান ও খোশখবরের, অসুস্থতার পর রোগমুক্তির, ভয়-ভীতির পর স্বস্তি ও নিরাপত্তার, অভাব-অনটনের পর সুখভোগের, দুর্ভিক্ষের পর সচ্ছলতার, দুশ্চিন্তার পর নিষ্কৃতির, হজ পালন বা জিহাদে শহিদ হওয়া বোঝায়।
যদি কেউ জিবরাইল-মিকাইল ফেরেশতার সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করতে বা ঝগড়া করতে দেখে, তা হলে সে এমন কোনো কাজে আছে, যার কারণে যেকোনো মুহূর্তে তার ওপর আল্লাহর শাস্তি আসতে পারে। বুঝতে হবে তার চিন্তাধারা ইহুদিদের চিন্তাধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
জিবরাইল (আ.)-এর কাছ থেকে খাদ্যগ্রহণ করতে দেখা, জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া বুঝায়। তাঁকে দুঃখিত ও চিন্তিত দেখা, স্বপ্নদ্রষ্টার ওপর কঠোরতা এবং শান্তি আসার অর্থ বহন করে।
যে ব্যক্তি মিকাইল (আ.)-কে স্বপ্নে দেখতে পায়, সে উভয় জাহানে কামিয়াব হবে যদি সে পরহেজগার হয়। যদি সে পরহেজগার না হয়, তবে তাকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বপ্নে কেউ তাঁকে কোনো শহর বা গ্রামে দেখলে, সেখানে প্রচুর বৃষ্টি হবে এবং নিত্যপণ্যের দাম কমবে। যে স্বপ্ন দেখেছে, তার সঙ্গে যদি মিকাইল কথা বলেন বা কিছু দেন, তবে তিনি ধন্য ও সন্তুষ্ট হবেন।
স্বপ্নে ইসরাফিল (আ.)-কে চিন্তিত অবস্থায় শিংগা ফুঁক দিতে দেখলে এবং স্বপ্নদ্রষ্টা যদি ধারণা করে যে সে একাই তা শুনেছে। অন্য কেউ শোনেনি, তা হলে স্বপ্নদ্রষ্টা মারা যাবে। স্বপ্নদ্রষ্টা যদি ধারণা করে যে, উক্ত এলাকার সকলেই শিংগার আওয়াজ শুনেছে, তবে সেখানে দেখা দেবে মহামারি।
স্বপ্নে আজরাইল (আ.)-কে আনন্দিত দেখা শহিদি মৃত্যুর ইঙ্গিত। তাঁকে ক্রোধান্বিত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখা তওবা ছাড়াই মারা যাওয়ার লক্ষণ। তাঁকে ধরাশায়ী করতে দেখা এবং সেও তাকে ধরাশায়ী করতে দেখা স্বপ্নদ্রষ্টার মারা যাওয়ার ইশারা।
যদি স্বপ্নে কেউ ফেরেশতাদের হাতে ফলের ফলক দেখতে পান, তবে তিনি শহিদ হয়ে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবেন।
যদি স্বপ্নে দেখেন যে, ফেরেশতাদের দল হতে কোনো ফেরেশতা তার বাড়িতে প্রবেশ করেছেন, তবে তাকে সতর্ক থাকতে হবে যে, যেকোনো সময় চোর বাড়িতে ঢুকতে পারে। যদি দেখে যে, কোনো ফেরেশতা তার হাতিয়ার বা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গেছে, তবে তার শক্তি ও অনুগ্রহ চলে যাবে। কখনো এটা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানোর ইঙ্গিত দেয়। যদি কেউ ফেরেশতাদের কোনো এক জায়গায় সমবেত দেখে ভয় পেতে দেখে, তবে সে সেখানকার কলহ ও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
ফেরেশতাদের যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধরত অবস্থায় দেখা শত্রুদের ওপর বিজয় লাভের লক্ষণ। ফেরেশতাদের তার সামনে রুকু-সেজদা করতে দেখা, স্বপ্নদ্রষ্টার সব কামনা-বাসনা পূরণ হওয়ার লক্ষণ। এতে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে। পক্ষান্তরে, ফেরেশতাকে পরাস্ত করতে দেখা, স্বপ্নদ্রষ্টার সম্মাননার পর অবমাননার কথা বোঝায়। কোনো রুগ্ন ব্যক্তি যদি দেখে যে, এক ফেরেশতা আরেক ফেরেশতার ওপর পড়ছেন, তা হলে বুঝতে হবে তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে।
ফেরেশতাদের যদি স্বাভাবিক অবস্থায় আকাশ থেকে ভূমণ্ডলে নামতে দেখে, তবে এটা হকপন্থিদের বিজয়, ভ্রান্ত গোষ্ঠীর পরাজয় এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরতদের সাহায্যের জানান দেয়। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৪০)
কেউ যদি স্বপ্নে দেখে, ফেরেশতারা তাকে অভিশাপ দিচ্ছে, তা হলে বুঝতে হবে, এটা তার দ্বীনী দুর্বলতার লক্ষণ। কেউ যদি স্বপ্নে দেখে, ফেরেশতারা ঝগড়া করছে, তা হলে এটা তার বাড়ি বা আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার আলামত। কেউ যদি স্বপ্নে দেখে, ফেরেশতারা তার মতোই কোনো কাজ করছে, তা হলে বুঝতে হবে, এটা তার পেশার ক্রম-উন্নতির লক্ষণ।
স্বপ্নে কিরামান-কাতিবিনকে দেখা, দুনিয়া-আখিরাতে শান্তি ও আনন্দ পাওয়ার লক্ষণ। স্বপ্নদ্রষ্টা সৎকর্মশীল হলে, ঈমানের ওপর মারা যাবে। অসৎকর্মশীল হলে, তার জন্য ভয়ের কারণ আছে। (সুরা ইনফাতির, আয়াত: ১১-১২)
(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক