ইসলামে বেশ কয়েকটি আমল পালনের ক্ষেত্রে অজু করা শর্ত। এর মধ্যে নামাজ অন্যতম। নামাজ আদায়ের পূর্বশর্ত হলো অজু। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াও, তখন তোমাদের মুখ হাত কনুই পর্যন্ত ধোবে ও তোমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে নেবে, আর গিঁট পর্যন্ত ধোবে। যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। যদি তোমরা অসুস্থ থাকো বা সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসো কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গত হও, আর পানি না পাও, তবে তাইয়াম্মুম করবে। পরিষ্কার মাটি দিয়ে এবং তা মুখে ও হাতে বুলিয়ে নেবে। আল্লাহ্ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না এবং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জানাতে পারো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬)
ইসলামে শরিয়তে সাতটি কারণে অজু ভেঙে যায়। এখানে সেগুলো তুলে ধরা হলো—
এক. পায়খানা ও প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন: বায়ু, প্রস্রাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া, ১/৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়...।’ (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস: ৫৬৮)
দুই. রক্ত, পুঁজ বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া, ১/১০)। আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.)-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝরত, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন। (মুয়াত্তা মালেক, হাদিস: ১১০)
তিন. মুখ ভরে বমি করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির বমি হয়, অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে বা মজি (সহবারের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হয়, তা হলে ফিরে গিয়ে অজু করে নেবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১২২১)
চার. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তা হলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার ওপর অজু করা আবশ্যক হয় না। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ১৩৩০)
পাঁচ. চিত বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সিজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয় না, তবে চিত হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙে যাবে। কেননা চিত বা কাত হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়।’ (ফলে বাতকর্ম হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে)। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩১৫)
ছয়. পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে। হাম্মাদ (রহ.) বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অজু করতে হবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস: ৪৯৩)
সাত. নামাজে উচ্চৈঃস্বরে হাসি দিলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে নামাজে উচ্চৈঃস্বরে হাসে, সে অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। হাসান বিন কুতাইবা (রহ.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চৈঃস্বরে হাসি দেয়, সে অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে।’ (দারা কুতনি, হাদিস: ৬১২)
লেখক: আলেম ও অনুবাদক