মানুষ সফলতাপ্রিয়। সবাই সফলতা চায়। কিন্তু চাইলেই পাওয়া যায় না। এর জন্য নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম করতে হয়। মেধা ও বুদ্ধি খাটাতে হয়। দীনি বা ইসলামের ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের জন্য তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক। এখানে গুণ তিনটি উল্লেখ করা হলো—
তওবা করা
তওবা আল্লাহতায়ালার কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় কাজ। খাঁটি দিলে তওবা করলে আল্লাহ বান্দার যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা সকলে মিলে আল্লাহতায়ালার কাছে তওবা করো, তা হলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩১)। আরেক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তবে যে ব্যক্তি তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে, সৎ কর্ম করেছে, আশা করা যায়, সে সফলতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৬৭)
আল্লাহ বলেন, ‘তবে তারা নয় যারা তওবা করবে, ঈমান আনবে, আর সৎ কাজ করবে। আল্লাহ এদের পাপগুলো পুণ্যে পরিবর্তিত করে দেবেন; আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৭০)
আত্মশুদ্ধি
মানুষের অন্তরে দুটি বিপরীতমুখী শক্তি আছে—একটি নফস, অপরটি রুহ। মানব সৃষ্টির সূচনা থেকেই এই রুহ এবং নফসের দ্বন্দ্ব চলছে। যাবতীয় নেক কাজের মাধ্যমে মানুষের রুহের শক্তি বাড়তে থাকে এবং নফস দুর্বল হতে থাকে। আল্লাহতায়ালার ইবাদত-বন্দেগি ও নেক কাজের মাধ্যমে রুহকে শক্তিশালী করে নফসের দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করা মানুষের ঈমানি দায়িত্ব। রুহ শক্তিশালী হলেই শুধু নফস দুর্বল হয়। আর নফস দুর্বল হলে অন্যায় ও পাপাচারের প্রতি আকর্ষণ কমে আসে। এভাবে ক্রমাগত মোজাহাদা বা প্রচেষ্টার মাধ্যমে যে নিজের নফসকে আত্মশোধন করবে, পবিত্র কোরআনে তাকে সফল বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘শপথ প্রাণের আর তাঁর, যিনি তা সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছেন, অতঃপর তাকে তার অসৎ কর্ম ও সৎ কর্মের জ্ঞান দান করেছেন। সেই সফলকাম হয়েছে যে নিজ আত্মাকে পবিত্র করেছে।’ (সুরা শামস, আয়াত: ৭-৯)
নামাজ আদায় করা
ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ বা খুঁটির মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ অন্যতম। ঈমানের পরে মুসলমানদের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ আমল নামাজ। নামাজের প্রভাব মুমিনের জীবনে প্রতিফলিত হয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সফলতা অর্জন করেছে মুমিনরা। যারা তাদের নামাজে আন্তরিকভাবে বিনীত।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১-২)
সফলতা এমন আনন্দ আর খুশির বিষয়, যার পরে কোনো দুশ্চিন্তা নেই, অকৃতকার্যতা নেই, ব্যর্থতা নেই। সফলতা অর্জনকারীদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘পার্থিব জীবনে আর আখেরাতে আমরাই তোমাদের সঙ্গী-সাথি। আর সেখানে (অর্থাৎ জান্নাতে) তোমাদের জন্য তোমাদের মন যা চায় তা-ই আছে; তোমরা যে জিনিসের আকাঙ্ক্ষা করো, তোমাদের জন্য সেখানে তা-ই আছে।’ (সুরা হামিম সেজদা, আয়াত: ৩১)
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা মধুপুর, টাঙ্গাইল