ঢাকা ১৭ কার্তিক ১৪৩১, শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩৫ এএম
বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত
ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত বন্যায় আক্রান্ত মানুষের ছবি

ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বানের জলে ভেসে গেছে গ্রামীণ সব সড়ক ও বাড়িঘর। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। ভেসে গেছে গোয়ালঘরের গরু এবং পুকুর ও খামারের মাছ। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গত বুধবার আখাউড়ায় মারা গেছেন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য- অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের কিছুই বাকি নেই। সব হারিয়ে এখন পথের ফকির অনেকে; বরং কোথাও এর চেয়ে করুণ অবস্থা। ঠাঁই নেওয়ার মতো জায়গাটুকুও অবশিষ্ট নেই। 


এই দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আমাদের বসে থাকার সুযোগ নেই। মনে করুন এই বিপদ রবের পক্ষ থেকে পরীক্ষা। মানুষ হওয়ার পরীক্ষা। কিংবা কৃতকর্মের ফল। এই জীবনে কম পাপ তো করিনি। হয়তো নদী ভরাট, খাল দখলের শাস্তি এই বন্যা। তাই অধৈর্য না হয়ে ধৈর্য ধরি। আল্লাহতায়ালার কাছে তওবা করি। তাঁর কাছে সাহায্য চাই এবং বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই। সহযোগিতার হাত বাড়াই। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, যে অর্থ তোমরা উপার্জন করেছ এবং যা কিছু আমি জমিন থেকে তোমাদের জন্য বের করে দিয়েছি, তা থেকে উৎকৃষ্ট অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করো...।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬৭)


মানুষের বিপদে দাঁড়ানো ইসলামের শিক্ষা। যে নবির উম্মত পরিচয়ে গর্ব করি, সেই নবি মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শই হলো মানবসেবা। অন্যের উপকার করে তিনি আনন্দিত হতেন। অন্যের বেদনায় ব্যথিত হতেন। কারও চোখে পানি দেখলে নিজের চোখকে ধরে রাখতে পারতেন না। এমন দরদি নবির উম্মত হয়ে আমরা কি দরদি না হয়ে পারি? নিরীহ মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের প্রয়োজনীয় খাবার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। তাদের সহযোগিতা করা ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ সেই ব্যক্তি, যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী।’ (সহিহুল জামে, হাদিস: ৩২৮৯)


আজ যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই। সাহায্যের হাত না বাড়াই। তাহলে আমাদের মানুষ জন্মই বৃথা। অনেক মানুষ অর্ধাহারে, অনাহারে আছেন। তাদের অভুক্ত রেখে আমরা কীভাবে আহার করতে পারি? পরিধেয় বস্ত্রের অভাবে অনেকেরই ইজ্জত রক্ষা হচ্ছে না। তাদের ইজ্জত হেফাজতের দায়িত্ব আমাদেরও। আমাদের ভাইদের এই ঘোর বিপদে ফেলে রাখতে পারি না। যদি এখনই কিছু না করি, তাহলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। পানিবাহিত রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে মহামারির রূপ নিতে পারে। আমরা যদি প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা করি, তাহলে আল্লাহর রহমতে অনেকগুলো মানুষ বেঁচে যাবে। আমরা পাব উত্তম প্রতিদান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মুমিন কোনো মুমিনের ক্ষুধা নিবারণ করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে কেয়ামতের দিন জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে মুমিন কোনো মুমিনের তৃষ্ণা দূর করেছে, আল্লাহতায়ালা তাকে কেয়ামতের দিন মোহরাঙ্কিত জান্নাতি সুধা থেকে পান করাবেন। যে মুমিন কোনো মুমিনকে বস্ত্র দান করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের উন্নতমানের সবুজ কাপড় পরাবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮৬)


বন্যাদুর্গতদের সাহায্যের ক্ষেত্রে এককভাবে না গিয়ে দলবদ্ধভাবে যাবেন। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নেবেন। দুর্গত এলাকায় গিয়ে প্রথমে উদ্ধার কাজ করতে হবে। উদ্ধারকাজের জন্য রেসকিউ টিম গঠন করতে হবে। অস্থায়ী মেডিকেল বা মেডিকেল টিম গঠনের বিকল্প নেই। বিশুদ্ধ পানি, ওরস্যালাইন, পানি বিশুদ্ধ করার মেডিসিন ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম এবং পর্যাপ্ত ওষুধপাতির ব্যবস্থা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন মেটাবেন। একইভাবে যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিনে তার বিপদ দূর করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৯৩)


বন্যাদুর্গতদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ খেয়াল ও যত্ন নেওয়া দরকার। তেমনি বিষাক্ত সাপ, পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকেও সতর্ক থাকতে হবে। এই বিপদের দিনে সব দ্বন্দ্ব ভুলে, দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই সবার বন্ধু, ভাই ভাই। তাই আসুন, আজ এই দুঃসময়ে মানুষকে সাহায্য করি। আল্লাহও আমাদের সাহায্য করবেন। মনে রাখবেন, ‘যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৩১৯) 

লেখক : খতিব, কসবা জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বইমেলায় ইসলামি লেখক ফোরামের আয়োজন

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ পিএম
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম
বইমেলায় ইসলামি লেখক ফোরামের আয়োজন
ইসলামি বইমেলার মূল মঞ্চে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি : খবরের কাগজ

ইসলামি বইমেলায় তারকা আলেম লেখকদের গল্প শুনে মুগ্ধ হয়েছেন শ্রোতারা। নবীনরা পেয়েছেন লেখক হওয়ার অনুপ্রেরণা ও পাথেয়। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল এক অন্যরকম ভালোলাগা ও নান্দনিকতার ছোঁয়া।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরামের আয়োজনে বায়তুল মোকাররমের পূর্ব চত্বরে ইসলামি বইমেলার মূল মঞ্চে এ মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান হয়। ‘লেখক হওয়ার গল্প শুনি’ ছিল অনুষ্ঠানের মূল বিষয়। এতে দেশের বিশিষ্ট আলেম লেখকরা তাদের লেখক হওয়ার গল্প বলেছেন।

লেখকদের গল্পে উঠে এসেছে কেন তারা লেখক হলেন, কীভাবে হলেন, কাদের লেখা পড়েছেন, লেখালেখির কৌশল কী ইত্যাদি। শ্রোতারা বেশ প্রেরণা ও খোরাক পেলেন তাদের কথায়। শ্রোতাদের কেউ কেউ প্রশ্নও করলেন। লেখকরা সাধুবাদ জানিয়ে চমৎকার করে উত্তর দিলেন। প্রাণবন্ত এক আড্ডায় রূপ নিয়েছিল সে আয়োজন। যেন লেখকদের সাহিত্যসভা চলছে। 

বিকেল ৪টার আগেই মূল মঞ্চে দর্শনার্থীদের ভিড় চোখে পড়ে। বেলা গড়াবার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীর কলকাকলি বাড়তে থাকে। তাদের চোখে-মুখে নতুন কিছু জানবার আগ্রহ। পাথেয় সংগ্রহের তৃষ্ণা। অনেকের হাতে বই। কারও হাতে খাতা-কলম। অতিথিরাও যথাসময়ে শুনিয়ে গেলেন জীবনের গল্প। তন্ময় হয়ে শুনলেন অনেকে। কেউ নোট করলেন পছন্দের কথা। মনে গাঁথলেন ভালো লাগার অমৃত বাণী। কেউ কেউ প্রশ্নও ছুঁড়লেন লেখককে। 

ফোরামের সভাপতি মুনীরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আমিন ইকবালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে লেখক হওয়ার গল্প শোনান বিশিষ্ট লেখক ও মুহাদ্দিস মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন, মাসিক আদর্শ নারীর সম্পাদক মুফতি আবুল হাসান শামসাবাদী, মাসিক মদিনার সম্পাদক আহমদ বদরুদ্দীন খান, লেখক ও শিক্ষক জুবাইর আহমদ আশরাফ, ঢাকামেইলের বার্তা সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর, লেখক ও সাংবাদিক মাসউদুল কাদির, লেখক ও শিক্ষাবিদ মাওলানা মুসলেহুদ্দীন গহরপুরী, লেখক ও আলোচক হাবিবুর রহমান মিছবাহ, লেখক ও শিক্ষক আমীর ইবনে আহমদ, লেখক ও প্রকাশক মাহমুদুল ইসলাম, লেখক ও প্রকাশক মুফতি আমিমুল এহসান, লেখক আব্দুল মুমিন প্রমুখ। এ ছাড়া ইসলামি লেখক ফোরামের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। 

গল্প শোনার ফাঁকে ফাঁকে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়। উপস্থিত সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযোগতাও হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ১০ জনের হাতে তুলে দেওয়া হয় চমৎকার চমৎকার গ্রন্থ। 

লেখক ফোরামের এ আয়োজনটি যেন শেষ হতে চাইছিল না। সময় ফুরিয়ে যায়, গল্প ফুরোয় না। কিন্তু রাত গভীর হওয়ার আগেই যে ভাঙতে হবে গল্পের আসর। পথ ধরতে হয় গন্তব্যের। এক সময় মজমা ভাঙলেও শ্রোতাদের মন পড়ে থাকে লেখকদের গল্পে। এ গল্পের ফিতা দীর্ঘ হলে বেশ হয়। কুড়ানো যাবে আরও মণিমুক্তা, জীবন চলার পাথেয়। মুগ্ধতার আবহ ছড়িয়ে থাকে লেখক ও শ্রোতাদের দেহ ও প্রাণে। মুগ্ধতা ও পাথেয় নিয়ে ফিরেন তারা।

রায়হান/সালমান/

সিন্ডিকেট করে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ছয় শাস্তি

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৬ পিএম
সিন্ডিকেট করে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ছয় শাস্তি
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতীকী ছবি

অতিরিক্ত মুনাফার আশায় পণ্য মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হারাম। এটি নোংরা ও ঘৃণিত কাজ। এক দল অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে মুনাফা লাভের আশায় এ ঘৃণিত কাজ করে। ইসলামে তাদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে। এসেছে ভয়াবহ শাস্তির কথাও। এখানে সিন্ডিকেট করে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ছয়টি শাস্তির কথা তুলে ধরা হলো

পাপী ও অপরাধী: সিন্ডিকেটের ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্ষুণ্ণ হয় এবং বাজারে পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং বেশির ভাগ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়। মামার ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জনগণের জীবিকা সংকীর্ণ করে যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করবে, সে বড় অপরাধী।’ আরও জেনে রাখো, ‘সে পাপী হিসেবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৬০৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.)  মজুতদারকে পাপী বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘পণ্যদ্রব্য আটক করে অধিক মূল্যে বিক্রয়কারী অবশ্যই পাপী।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৩৮)

আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত: আল্লাহর রহমত ও করুণার ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই জগৎ ও পৃথিবীর মানুষ। কারও ওপর থেকে তাঁর রহমতের দৃষ্টি চলে গেলে পৃথিবী ও জীবন তার জন্য সংকীর্ণ হয়ে যায়। তার যাপিত জীবন থেকে শান্তি চলে যায়। মূল্যবৃদ্ধির জন্য পণ্য মজুতকারী আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যায়। আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মূল্য বাড়ার উদ্দেশ্যে যে ৪০ দিন পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুত রাখে, সে আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট। সে মজুতকৃত সম্পদ দান করে দিলেও তার গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে না।’ (মেশকাত, হাদিস: ২৭৭২)

আল্লাহর অভিশাপ : রাসুলুল্লাহ (সা.) মজুতদার ও কালোবাজারিদের অভিশপ্ত উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যে আমদানি করবে সে রিজিকপ্রাপ্ত হবে। আর যে গুদামজাত করবে, সে অভিশপ্ত হবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২১৪৪)

কিয়ামতের দিন আগুনের শাস্তি: অবৈধভাবে অর্থোপার্জনের জন্য দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা ইসলামে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ জাতীয় লোকদের জন্য শাস্তির ধমকি রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ঘটালে কিয়ামতের দিন আল্লাহ আগুনের ওপর তাকে বসিয়ে শাস্তি দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৯৪২৬)

নিকৃষ্ট মানসিকতার ধারক: মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘মজুতদার খুবই নিকৃষ্ট ব্যক্তি। যদি জিনিসপত্রের দর হ্রাস পায়, তখন সে চিন্তিত হয়ে পড়ে। আর যদি দর বেড়ে যায়, তখন আনন্দিত হয়।’ (মেশকাত, হাদিস: ২৭৭১)

মহামারি ও দারিদ্র্য: সিন্ডিকেটের কারণে আল্লাহতায়ালা মজুতদারদের মহামারি ও দারিদ্র্যে নিক্ষেপ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মজুতদারদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘কেউ যদি মুসলমানদের থেকে নিজেদের খাদ্যশস্য আটকিয়ে রাখে (মজুতদারি করে), তবে আল্লাহতায়ালা তার ওপর মহামারি ও দরিদ্রতা চাপিয়ে দেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫৫)
সিন্ডিকেট বা  মজুতদারির মতো ঘৃণ্য অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে অবস্থান করা সব মানুষের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব। স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে বৈধ ও ভারসাম্যপূর্ণ কাজ করতে পারলে জীবন ও পৃথিবী সুন্দর হবে। শোষণমুক্ত সংকটহীন সুখময় সমাজ বিনির্মাণ হবে।  

 

লেখক: খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী

 

সাক্ষাৎকার মুহতামিম ও শিক্ষকের জন্য বোর্ডগুলোর সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকা দরকার‌

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ পিএম
আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৫ পিএম
মুহতামিম ও শিক্ষকের জন্য বোর্ডগুলোর সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকা দরকার‌
মারকাযু শাইখিল ইসলাম আল মাদানী ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল আলীম। খবরের কাগজ

মাওলানা আবদুল আলীম—মারকাযু শাইখিল ইসলাম আল মাদানী ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। দীর্ঘ আট বছর ধরে এ দায়িত্বে আছেন। এর আগে শিক্ষকতা করেছেন পাঁচ বছর। জন্ম দিনাজপুরের বীরগঞ্জে। দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেছেন ইদারাতুল উলুম আফতাবনগর থেকে। বেশ কিছু বইয়ের  অনুবাদকও তিনি। স্মার্ট ফোন ব্যবহারে মাদরাসা ছাত্রদের ক্ষতি, দক্ষ ও চিন্তাশীল ছাত্র গঠনের উপায়, মুহতামিমের গুণাবলি, মাদরাসা পরিচালনার নিয়ম-কানুন, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও মারকাযু শাইখিল ইসলাম আল মাদানী ঢাকার বৈশিষ্ট্য নিয়ে তিনি কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে।

কওমি মাদরাসায় একসময় ছাত্রদের জন্য মোবাইল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। এখন অনেক মাদরাসায় নিয়মটি কিছুটা শিথিল হয়েছে। কিন্তু আপনার এখানে এখনও আছে। এতে কোন ধরনের সুফল পাচ্ছেন? 
শুধু মাদরাসা নয়; মোবাইলের বিষয়টা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট। আমাদের বিশ্বাস, যেকোনো ডিভাইস শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর। শিক্ষার্থীদের জন্য মোবাইল নিষিদ্ধের ব্যাপারটি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। মোবাইলের ব্যাপারে যত কঠোর হওয়া যায়, শিক্ষার্থীদের জন্য তত ভালো। আমাদের মুরব্বিরা এটাকে বিষধর সাপের সঙ্গে তুলনা করেন। 
আমাদের মারকাযে শুরু থেকেই এ ব্যাপারে যথেষ্ট কঠোরতা রয়েছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কঠোরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের এখানে ছাত্রদের সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যবস্থাপনায় থাকতে হয়। প্রতি রুমে শিক্ষকরা পর্যবেক্ষণ করেন। নিরাপত্তার খাতিরে সিসি ক্যামেরাও আছে। স্মার্ট ফোন নিয়ে প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। তবে বিরতির পর বাসা থেকে আসার সময় বাটন ফোন আনতে পারে। কিন্তু সেটা অফিসে জমা রাখতে হয়। বাড়িতে যাওয়ার দিন আবার নিয়ে যায়। আমাদের পক্ষ থেকে মারকাযের সত্যায়ন সিলসহ প্রত্যেক ক্লাসে ছাত্রদের কাছে দুই তিনটি বাটন ফোন দেওয়া আছে। ছাত্ররা সেটা দিয়ে নির্ধারিত সময়ে বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারে। অভিভাবকরাও সেখানে ফোন করেন। 
মোবাইল নিষিদ্ধের কারণে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। যোগ্য ও শাস্ত্রীয় আলেম তৈরি হচ্ছে। বোর্ড পরীক্ষায় রেজাল্টও ভালো হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। তবে উচ্চতর ফিকহ বিভাগের ছাত্রদের আমরা কম্পিউটার দিয়েছি। শিক্ষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ইন্টারনেট সংযোগ করে দিয়েছি। তারা প্রয়োজনমতো ব্রাউজিং করতে পারে। 

সভ্য, দক্ষ ও আদর্শিক ছাত্র গঠন এবং তাদের জীবন ও সময় নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে একটি প্রতিষ্ঠানের কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
মাদরাসায় তালিম (শিক্ষা) ও তরবিয়ত (দীক্ষা) দুটিই সমান থাকতে হবে। শিক্ষা মোটামুটি সব জায়গায় আছে, কিন্তু দীক্ষার বড়ো অভাব। বর্তমানে আদর্শ শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। ফলে আদর্শ ছাত্র গঠন একটু কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আগের অধিকাংশ শিক্ষকরা আদর্শবান ছিলেন। তাঁরা দেশের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষাকেও সমান গুরুত্ব দিতেন। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখতে হবে, তাঁর আমল ও চরিত্র কেমন? তাঁর মাঝে নববি আদর্শ আছে কিনা? তিনি ছাত্রদের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ কিনা? তার ভেতরে ছাত্রগঠনের তীব্র ইচ্ছা ও স্বপ্ন আছে কিনা? তা হলে আদর্শ ছাত্র গঠন হবে। অন্যথায় আদর্শ ছাত্রগঠন খুবই দুরহ ব্যাপার হবে। 

মাদরাসা পরিচালক বা মুহতামিম হওয়ার জন্য কী কী গুণ বা যোগ্যতা থাকা আবশ্যক?
মাদরাসাগুলো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা—আল হাইয়াতুল উলয়া, বেফাক ও অন্য বোর্ডগুলো—তাদের থেকে এ ধরনের কোনো নীতিমালা আজও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। কারা মুহতামিম হবেন, কারা কোন ধরনের শিক্ষক হবেন, এ ধরনের কোনো নিয়ম বোর্ডগুলোর নেই। ফলে সবাই নিজেদের মতো নিয়ম বানাচ্ছেন। ইচ্ছামতো মাদারাসা করছেন। মুহতামিম হচ্ছেন। মুহতামিম ও শিক্ষক হওয়ার জন্য বোর্ডগুলো থেকে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকা দরকার। মাদরাসা পরিচালনা করা গুরুদায়িত্ব। নানা দিক সামলাতে হয় তাদের—ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবক ইত্যাদি। আমল, জ্ঞান ও গুণে যারা সমৃদ্ধ, তাদেরই কেবল মুহতামিম হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

অনেকে বলেন, বর্তমান সময়ের মাদরাসার ছাত্ররা আগের মতো যোগ্য, দক্ষ, চিন্তাশীল হয়ে উঠছে না। অনেকে বলেন, কর্মজীবন নিয়েও মাদরাসাছাত্ররা হতাশ। কেন এমনটি হচ্ছে? 
এখানে দুটিই পরিপূরক প্রশ্ন। প্রবাদ আছে, বৃক্ষ তার ফলে পরিচয়। যোগ্য, দক্ষ, চিন্তাশীল শিক্ষকের বিকল্প নেই। শিক্ষকদের থেকেই ছাত্ররা শিখবে। প্রথমে শিক্ষকদের বিশুদ্ধ চিন্তা লালন করতে হবে, তাদের দক্ষ হতে হবে। তাহলে ছাত্ররা দক্ষ ও চিন্তাশীল হবে। 
বর্তমান সময়ের ছাত্ররা হতাশ—এটি দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। আমাদের ছেলেরা কি করবে, এটা আমাদের ঠিক করে দিতে হবে। প্রতি বছর মাদরাসা থেকে যে পরিমাণ আলেম বের হচ্ছে, এ পরিমাণ কর্মসংস্থান কি আছে আমাদের? আমাদের কর্মক্ষেত্র খুবই ছোট। কর্মক্ষেত্র বাড়াতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষা গড়ে তুলতে হবে। ধর্ম ও কর্ম দুটিই লাগবে। ছাত্রদের বল‌ব, রি‌জিকদাতা একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহর সন্তু‌ষ্টির জন‌্য আমরা দ্বীনের জন‌্য নি‌বে‌দিতপ্রাণ হ‌য়ে আজীবন খেদমত কর‌ব। তাওয়াক্কুল ও অল্পতুষ্টি যেন আমা‌দের পা‌থেয় হয়। তাহ‌লে কখনও হতাশা আসবে না। 
 অনেক আলেম মাদরাসার পরিচালক বা মুহতামিম হওয়ার যোগ্যতা ও দক্ষতা না থাকার পরও তা হচ্ছেন। এতে পড়াশোনার মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ছে, আপনি কি মনে করেন। 
সবাই যেন মুহতামিম না হতে পারেন, সে জায়গায় কাজ করা প্রয়োজন। অযোগ্যরা মুহতামিম হলে শিক্ষাব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। পড়াশোনার মান ক্ষুণ্ন হবে। অযোগ্য মুহতামিমদের নিয়ে নানা রকম অভিযোগও আছে। 

অনেকে বলেন, ‘পরিচালক বা মুহতামিমের জীবন চলে রাজার হালে, শিক্ষকরা মরে ধুকে ধুকে’—আসলেই কি ব্যাপারটি তাই? এর থেকে উত্তরণের পথ কী? 
অনেকাংশে সত্য না হলেও কিছুটা হয়তো সত্য। অনেক মাদরাসার ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ আসে, শিক্ষকরা কষ্টে দিনাতিপাত করেন, মুহতামিমরা আয়েশে থাকেন। মাস শেষে বেতন পান না শিক্ষকরা। এমনটি না হওয়া উচিত। মুহতামিম বা পরিচালকের আয়-উপার্জনটা একটু বেশি হবে, এটা স্বাভাবিক। মুহতামিমের জীবনের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষকরা যেন তাদের জীবনের তুলনা না করেন। মুহতামিম তো একটা জায়গায় পৌঁছেছেন। তবে মুহতামিমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করব, শিক্ষকদের প্রতি যেন সুনজর থাকে। 
অনেক মুহতামিম অনিয়ম করেন। এমনটি না করা উচিত। যাদের আয় ভালো, সামর্থ্য আছে, তারা ভালো বেতন-বোনাস দিতে পারেন। আমাদের উপার্জন কম, তারপরও আমরা দেওয়ার চেষ্টা করি। অবিবাহিত শিক্ষকদের বিয়ের সময় মোটা অঙ্কের হাদিয়া দিই। প্রতি বছর একজন শিক্ষককে উমরায় পাঠাই। শিক্ষকদের মূল্যায়ন করলে প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যায়। শিক্ষার মান ভালো হয়।

 

বাজার নিয়ন্ত্রণে ইসলামের নির্দেশনা

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৩ পিএম
বাজার নিয়ন্ত্রণে ইসলামের নির্দেশনা
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত এআই দিয়ে বানানো আরবের বাজার মনিটরিংয়ের ছবি

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষত বিপ্লবপরবর্তী নতুন বাংলাদেশে জাতির বড় সমস্যা হচ্ছে বাজারব্যবস্থা। নিয়ন্ত্রণহীন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। এর পেছনে বিবিধ কারণ থাকলেও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রধান সমস্যা। এ ব্যাপারে কোরআন ও সুন্নাহে রয়েছে বাস্তবসম্মত চমৎকার নির্দেশনা।

ইসলাম শুধু ইবাদতের কথা বলেনি, লেনদেন ও কায়কারবার ঠিক করার কথাও বলেছে। মুহাম্মাদ (রহ.) বলেন, ‘ব্যবসা ও লেনদেনের মধ্যে মানুষের তাকওয়া ও পরহেজগারি নিহিত। যার লেনদেন ভালো, সেই প্রকৃত মুত্তাকি ও আত্মশুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি।’ 

আজ মুসলিম উম্মাহর সংকটটা কোথায়? একজন অমুসলিম দার্শনিক এক মুসলিমকে বলেন, ‘তোমাদের নবি (সা.)-এর আইডলজিকে কাজে লাগিয়ে আমরা পৃথিবীতে সফল হচ্ছি। তাঁর আইডলজি, আচার-আচরণ আর লেনদেনের সুন্নাহ তোমাদের মাঝে নেই। তাই আমরা মুসলিম দেশে কাজের জন্য যাই না; বরং মুসলিমরাই বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে কাজের জন্য আসে।’ পৃথিবীতে অর্থনীতির দুটি ব্যবস্থা বিদ্যমান—সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ। সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থয় ব্যক্তি পরিশ্রম করবে কিন্তু ব্যক্তি সম্পদের মালিক নয়, সম্পদের মালিক রাষ্ট্র। যার দরুন ব্যক্তির কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। পুঁজিবাদ মানুষের মালিকানা প্রসারিত করেছে, অবাধ করেছে। যত বুদ্ধি আর শ্রম, তত আয় আর সমৃদ্ধি। এখানে সব ধরনের কাজ হালাল করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যেকোনো উপায়ে ব্যক্তিকে ধনী হওয়ার সুযোগ করে দেয়। যে কারণে পুঁজিবাদে পেশাটাই মুখ্য; সেটা বৈধ বা অবৈধ যাই হোক।

ইসলামি অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তির মালিকানা অবশ্যই স্বীকৃত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং আমি তাদেরকে যে উপজীবিকা প্রদান করেছি তা থেকে দান করে থাকে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩)। আল্লাহতায়ালা বান্দাকে সম্পদের মালিক বানিয়ে দিচ্ছেন। এই মালিকানা দিচ্ছেন আল্লাহ, অর্থাৎ মালিকের ওপরও মালিক আছে। ইসলামি অর্থনীতিতে ব্যক্তি হালাল পথে অবাধে আয় করতে ও ব্যয় করতে পারবে। কিন্তু হারাম পথে আয় ব্যয়-নিষেধ। তার মালিক আল্লাহ তাকে হালাল-হারামের মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন আয় ও ব্যয়ে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭৫)

ইসলামি জীবনব্যবস্থায় ইচ্ছে করলেই কেউ অবৈধ পথে আয়-ব্যয় করতে পারে না। কারণ সে জানে তাকে তার মালিক আল্লাহর কাছে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। অপরদিকে পুঁজিবাদ ব্যক্তিকে আয় ও ব্যয়ে অবাধ করে দেয়, যেখানে থাকে না বৈধ-অবৈধের কোনো সীমা। 

পুঁজিবাদের থাবায় এখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে হারাম ব্যবসা ছেয়ে গেছে। যতই তাদের সতর্ক করা হোক না কেন, লাভ হচ্ছে না। কেউ সেখান থেকে বের হতে পারছে না, হারাম থেকে বাঁচতে পারছে না। কারণ ঘরে ঘরে হারামে ছয়লাব হয়ে গেছে। আজ বাজারে অস্থিরতা, কোনোভাবেই তার লাগাম টেনে রাখা যাচ্ছে না। এর কারণ পণ্য মজুত এবং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দাপট। ইসলাম এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, তারা ‘খাতিই’ বা অপরাধী। এটা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়; বরং কোরআনে এই শব্দটি ব্যবহার হয়েছে কারুন ও হামানের ক্ষেত্রে। সুতরাং যারা এ কারবার করবে তারা কারুন ও হামানের উত্তরসূরি, তাদের সাথেই তাদের হাশর হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদের মধ্যে তোমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না এবং তা বিচারকদের (ঘুষ হিসেবে) প্রদান করো না। যাতে মানুষের সম্পদের কোনো অংশ পাপের মাধ্যমে জেনে-বুঝে খেয়ে ফেলতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

অর্থনৈতিক মুক্তি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইসলামি অর্থনীতির মূলনীতি, ইসলামি অর্থব্যবস্থার রোডম্যাপ বাস্তবায়ন ছাড়া মুক্তি নেই। সরকার কর মাফ করছে পণ্যের। আরও নানা উদ্যোগ নিয়েও কাজ হচ্ছে না। কেন? কারণ সরকার চাইছে, কিন্তু এই লোভী পুঁজিপতিরা চাইছে না মূল্য কমুক। তাদের পেটের হাবিয়া দোজখ অল্পতে ভরছে না। এদের সোজা করার জন্য প্রচলিত নানা আইনের আগে দরকার আল্লাহর ভয়। তাকওয়া ছাড়া আর কি প্রতিষেধক হতে পারে! ইসলামে সব কিছুর আগে ঈমান। ঈমান পাকাপোক্ত হলে তারপর আইন নির্ধারণ করলে আইনের শাসনের সুফল পাওয়া যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নবুয়াত লাভের পর ১৩ বছর মক্কায় মানুষের ঈমান মেরামত করেছেন। মদিনায় গিয়ে হালাল-হারামের আইন করে তা বাস্তবায়ন করেছেন। যার কারণে সাহাবিরা (রা.) খুব সহজে মানতে পেরেছেন। বাংলাদেশেও আইন আছে বাজার সিন্ডিকেটের ব্যাপারে কিন্তু ৫৩ বছরেও তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। ফলে সিন্ডিকেট হোল্ডাররা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তাই নেতা নয়, নীতির পরিবর্তন দরকার। আর এই পরিবর্তন আনতে হবে কোরআন দিয়ে। কোরআনই হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, মুক্তির সনদ। বাজারব্যবস্থার মূলে আঘাত করতে হবে। মানুষের মধ্যে তাকওয়ার গভীরতা বাড়াতে হবে। দুনিয়া আল্লাহর কাছে মূল্যহীন এই চেতনা মানুষের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। 

বাজারের অস্থিরতা ও ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানার জন্য দেশের যে আইন আছে, তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। দু-একজনকে শাস্তির আওতায় নিলে বাকিরা দেখেই শিক্ষা নেবে। ইসলাম নিজের ব্যাপারে নরম কিন্তু অন্যের হকের ব্যাপারে কঠোর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বাজারে পণ্য আমদানিকারক রিজিকপ্রাপ্ত হয়। আর পণ্য মজুতকারী অভিশপ্ত হয়।’ (ইবনে মাজাহ, ২১৪৪)

 

লেখক: খতিব, আন-নূর জামে মসজিদ, টঙ্গী

 

, , , 

ব্যবসায় সততা বজায় রাখা ঈমানি দায়িত্ব

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩৭ পিএম
ব্যবসায় সততা বজায় রাখা ঈমানি দায়িত্ব
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

ব্যবসায় সততা রক্ষা করা একজন ব্যবসায়ীর জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ। কারণ সম্পদের চাকচিক্য দেখে অনেকে লোভে পড়ে যায়। তাই ব্যবসায় সততা রক্ষাকারীর পুরস্কার এমন জান্নাত, যার ব্যাপ্তি সকল আসমান ও জমিনের সমান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন নবি, সিদ্দিক ও শহিদদের সঙ্গে অবস্থান করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১২০৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হালাল রিজিক অন্বেষণ করা ফরজ ইবাদতের সমান গুরুত্বপূর্ণ।’ (কানজুল উম্মাল, খণ্ড ২) 

উমর (রা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন জীবিকার অন্বেষণ ছেড়ে অলস বসে না থাক।’ (কানজুল উম্মাল, খণ্ড ২)

পণ্যের যাবতীয় দোষ-গুণ বলে দেওয়া সততার মধ্যেই পড়ে। এ কারণেই কেনা-বেচার সময় বিক্রেতা কর্তৃক পণ্যের দোষ-গুণ প্রকাশ করা সুন্নাহ। অন্যথায় সে প্রতারক ও ধোঁকাবাজ বিবেচিত হবে। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, “একবার রাসুল (সা.) স্তূপীকৃত খাদ্যশস্যের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি স্তূপের মধ্যে হাত ঢোকালে তাঁর হাতের আঙুলগুলো আর্দ্র দেখতে পান। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে খাদ্যওয়ালা, এটা কী?’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, এতে বৃষ্টি পড়েছিল।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘কেন তুমি ভেজা অংশ খাদ্যশস্যের ওপরে রাখোনি, তা হলে লোকেরা দেখতে পেত? যে ব্যক্তি ধোঁকা দেয়, সে আমার দলভুক্ত নয়।” (মুসলিম, হাদিস: ১০২)

সুতরাং কেনা-বেচার সময় মুসলিমদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখা উচিত। প্রতারণা না করা ঈমানি দায়িত্ব। ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে বলল, ‘আমাকে ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকা দেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘ক্রয়-বিক্রয়ের সময় তুমি বলবে, ‘ধোঁকা দেবে না।’ এরপর লোকটি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় এই কথা বলত।” (বুখারি, হাদিস: ২০১১)

আরও পড়ুন: সুরা ফাতিহার পর আমিন বলতে হবে?

বিক্রেতার কর্তব্য হলো, পণ্যে কোনো ত্রুটি থাকলে তা বলে দেওয়া এবং উপযুক্ত মূল্য চাওয়া। বিক্রেতার এ অনুভূতি লালন করা উচিত যে, সে যেন পণ্যটি নিজের জন্য ক্রয় করছে। বিক্রয়ের সময় এটাই হলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ।

আবদুল মজিদ ইবনে ওয়াহাব (রহ.) বলেন, “একদিন আদ্দা ইবনে খালেদ ইবনে হাওজা (রা.) আমাকে বললেন, ‘আমাকে যে পত্রখানা রাসুল (সা.) লিখে দিয়েছিলেন, তোমাকে কি তা পড়ে শোনাব?’ আমি বললাম, ‘অবশ্যই।’ তখন তিনি আমাকে শোনানোর জন্য একটি পত্র বের করলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘এ হলো মুহাম্মাদ রাসুল (সা.) থেকে আদ্দা ইবনে খালেদ ইবনে হাওজা যা কিনেছেন (তার দলিল)। তিনি তাঁর কাছ থেকে এমন একটি দাস বা দাসী ক্রয় করেছেন, যার মধ্যে কোনো দোষ নেই। এটি পলায়ন করে না এবং তা দুশ্চরিত্রের নয়। এ হলো এক মুসলিমের সঙ্গে আরেক মুসলিমের ক্রয়-বিক্রয়।” (তিরমিজি, হাদিস: ১২১৬)

মুসলিমদের পরস্পর কেনা-বেচার মাঝে এই সততা বজায় রাখবে। তবেই রাসুল (সা.)-এর প্রতিশ্রুত বরকত সে লাভ করবে। 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক