আরবি ক্যালিগ্রাফি, ওয়াল ম্যুরাল, দৃশ্যপট ও ফিউশন আর্ট করেন সাজু তাওহীদ। তার শিল্পকর্ম গেছে দেশের বাইরেও। মোহরে নবুয়াত এঁকে মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এটি বিক্রির টাকায় করেছেন উমরাও। বিক্রিও হয়েছে অনেক। গড়ে তুলেছেন ইন্টেরিয়র ক্যালিগ্রাফি ও ফিউশন আর্ট প্রতিষ্ঠান ক্যালিমাজিদ।
যেভাবে শুরু করলেন
তখন ২০২০ সালের শেষ সময়। শিল্পী সাজু তাওহীদ বায়িং হাউজে কাজ করতেন। নিজে কিছু করার তাড়না পেয়ে বসল তাকে। চিন্তা করে পেলেন-লেখালেখি, ইসলামি সংগীত কিংবা আর্ট করা যেতে পারে। নানা কারণে আর্ট জুতসই মনে হলো তার। শুরু করলেন একদিন। অবশ্য এর আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলপনা করেছেন। শিল্পী মাহবুব মোর্শেদ সে সময় আর্টের ওপর কর্মশালা করাতেন। বন্ধুর থেকে টাকা ধার নিয়ে পাঁচ দিনের একটা কর্মশালায় ভর্তি হলেন। ক্যানভাস তৈরির ধারণা পেলেন। জানলেন, কাজটা বিস্তর পরিসরে শিখতে হবে। আরবি অক্ষর লেখার কাজ শুরু করলেন। দেশি-বিদেশি উস্তাদের থেকে প্রশিক্ষণ নিলেন। সাজু বললেন, ‘আরবি অক্ষর শিখতে প্রচুর চেষ্টা ও শ্রম দিয়েছি। এখনো প্র্যাকটিস করছি।’
সম্মানটা পেয়েছিলেন গোড়াতেই
নিজের আঁকা ক্যালিগ্রাফি ফেসবুকে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতেন সাজু। ২০২১ এর শুরুতে আঁকলেন ‘ওয়া রাব্বিকা ফাকাব্বির’ (এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো)-এর আরবি ক্যালিগ্রাফি। ফেসবুকে দিলেন। এটি ছিল তার প্রথম কাজ। এই কাজটিই একজনের মনে ধরল। তিনি খুশি হয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে হাজার টাকা বাড়তি দিয়েছিলেন। ‘তখন পকেটের অবস্থা খুবই খারাপ। এটি বিক্রি করতে পেরে দারুণ উদ্দীপনা পেয়েছি। সাহস বেড়ে গেল।’ বললেন সাজু। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশ নিতেন সাজু। ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শন করতেন। মানুষ আগ্রহভরে দেখত সেসব। দুবাইতে আন্তর্জাতিক একটা প্রদর্শনীতে তার প্রতিফলন দেখেছে দেশবাসী। জাতীয় শিল্পকলায় প্রদর্শনীতে তার ক্যালিগ্রাফিটা ছিল সবচেয়ে বড় এবং যেখানে মানুষের দেখার আগ্রহ ছিল বেশ।
ক্যালিগ্রাফি গেছে দেশের বাইরে
ওয়াল ম্যুরাল, দৃশ্যপট ও ফিউশন আর্ট আঁকেন সাজু। ২০২১ সালে আমেরিকায় প্রদর্শনীর খবর পেলেন। কী আঁকবেন ভাবনায় পড়ে গেলেন। ঠিক করলেন, মোহরে নবুয়াত আঁকবেন। শুরুতে পেইন্টিং করলেন; যেন পুরোনো দিনের চামড়ার ওপর আঁকা। অনেকদিন লেগেছিল আঁকতে। আমেরিকায় পাঠিয়ে ছিলেন। সময়ের সঙ্গে এটাতে আরও ফিউশন করতে লাগলেন। এর মধ্যে ইন্দো-ইরানের একটি প্রদর্শনীতে ছবি পাঠালেন। ইন্দো-ইরান-২-তেও ছবি পাঠালেন। কাজটি লন্ডনপ্রবাসী একজন নিলেন। ‘বাইরের অনেক দেশেই আমার কাজ গিয়েছে। আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, সৌদি আরব, দুবাই, কাতার উল্লেখযোগ্য।’ জানালেন সাজু।
ক্যালিগ্রাফির টাকায় উমরা
সাজুর মন পড়ে থাকল মোহরে নবুয়াত ক্যালিগ্রাফিতে। এটাকে নানাভাবে ফিউশন করতে থাকলেন। বেশ সাড়া পড়ল। সেসময় উমরায় যাওয়ার ইচ্ছা করলেন। পকেটের অবস্থা তেমন ভালো নয়। ভাবনায় পড়ে গেলেন। মোহরে নবুয়াত শিল্পকর্মটি বিক্রির টাকায় উমরা করার মনস্থির করলেন। ফেসবুকে ঘোষণা দিলেন, ‘উমরার টাকার বিনিময়ে এই কাজ দেব।’ সিলেটের একজন নিতে চাইলেন। দিন-তারিখ ঠিক হলো। কিন্তু আর এলেন না। সাজুর মন খারাপ হয়েছিল। খুব বেদনা পেয়ে বসেছিল তাকে। পরে ধানমন্ডি মসজিদ-উত-তাকওয়ার খতিব মুফতি সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে কাজটি বিক্রি হয়েছিল। উমরায় গেলেন সাজু। কাবার প্রধান ক্যালিগ্রাফার মুখতার আহমাদের সঙ্গে দেখা হলো তার। তিনি দিকনির্দেশনা দিলেন। সাজু বললেন, ‘মোহরে নবুয়াত আমার প্রিয় ও সেরা কাজ। এটা আমাকে খ্যাতি এনে দিয়েছে। এটার অরিজিনাল ভার্সন অনেক মানুষের কাছে গেছে। প্রিন্ট ভার্সন বিক্রি হয়েছে কয়েক হাজার। আমি এ কাজের মায়ায় ও প্রেমে পড়ে গেছি। এটি চোখে পড়লেই হৃদয় ও জবান দুরুদ পড়বে।’
স্বপ্ন
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের ক্যালিগ্রাফি ইনস্টিটিউট করতে চান সাজু। সরকারি স্থাপনা, মসজিদ ও মাদরাসার সৌন্দর্য বর্ধনে ক্যালিগ্রাফি করতে চান। শখের পর্যায়ে না রেখে মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ব্যবহার্যে ক্যালিগ্রাফি আঁকতে চান।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক