ঢাকা ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪

বানভাসিদের পাশে আল-মারকাজুল ইসলামী

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম
বানভাসিদের পাশে আল-মারকাজুল ইসলামী
লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন আল-মারকাযুল ইসলামীর স্বেচ্ছাসেবীরা। ছবি: সংগৃহীত

ভারী বর্ষণ আর ভারত থেকে নামা ঢলে দেশের ১২ জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। দেশের এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে আল-মারকাজুল ইসলামী। বন্যার শুরু থেকে ত্রাণ বিতরণ, পানিবন্দিদের উদ্ধার ও আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো, মৃতদের উদ্ধার ও কাফন-দাফন এবং বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে সংস্থাটি। বন্যায় মৃত ৯ জনের মরদেহ উদ্ধারপূর্বক কাফন-দাফন করেছে তারা। 

জানা গেছে, ৪ হাজার পরিবারকে শুকনো খাবার, ৬ হাজার পরিবারের মাঝে ভারী ফুড আইটেম, ১৫ হাজার পরিবারকে ৫ লিটারের বিশুদ্ধ পানি দেওয়া হয়েছে। ময়লা পানি বিশুদ্ধকরণ ৭০ হাজার পিস ট্যাবলেট বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

এদিকে সংস্থাটির নেতৃত্বে ফেনীর ৬টি উপজেলায় ৮ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। জনপ্রতি বিনামূল্যে ১,২০০ টাকার ওষুধ দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালীতে মেডিকেল ক্যাম্প করে ফ্রিতে ১০ হাজার রোগী দেখার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। 

সংস্থাটির চেয়ারম্যান হামজা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মারকাজুল ইসলামী প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিপন্ন, অসহায় ও দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ১৯৮৭ সালে আমার বাবা মুফতি শহীদুল ইসলাম বিন-নুরী টাউনে পড়াকালে বন্ধুদের নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাও হয়েছে বন্যার্তদের সহায়তাকে কেন্দ্র করে। ৮৮ এর বন্যায় বিপুল পরিমাণ সহায়তা করেছে। ৯৮ এর বন্যায় ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল দিয়েছে সংস্থাটি। ১২ কোটি টাকার নগদ অর্থও সহায়তা করা হয় সেসময়। কভিড-১৯ এ মৃতদের কাফন-দাফনের পাশাপাশি ব্যাপক কাজ করেছি আমরা। এবারের বন্যায় শুরু থেকে আমরা কাজ করেছি। প্রথমে উদ্ধার কাজ করেছি। শুকনো ও রান্না করা খাবার থেকে শুরু করে বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়েছি।’ 

প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সাল থেকে মানবসেবায় নিবেদিত আল-মারকাজুল ইসলামী (এএমআই)। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুফতি শহীদুল ইসলাম। বিশেষত ১৯৮৮ ও ১৯৯৮-এর বন্যা ও কোভিড-১৯-এ সংস্থাটির কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো। কোভিড-১৯-এ জীবন বাজি রেখে মৃতদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছে সংস্থার লোকজন। সংস্থাটির সরাসরি তত্ত্বাবধান ও অর্থায়নে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্যও তাদের মাদরাসা রয়েছে। সংস্থাটি তিনটি কাজ সামনে রেখে কাজ করছে- শিক্ষা, আত্মশুদ্ধি ও সেবা। 

এ ছাড়া সংস্থাটির অধীনে স্বল্প খরচে চিকিৎসার জন্য নিজস্ব হাসপাতাল, ফ্রি লাশ গোসল ও কাফনসেবা, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, দুর্যোগে জরুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসন, স্বাবলম্বীকরণ, বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য ডিপ টিউবওয়েল বা সাধারণ টিউবওয়েল স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম রয়েছে। 

রায়হান/মিরাজ রহমান

স্বপ্নে মৃতের খাটিয়া দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৭ পিএম
স্বপ্নে মৃতের খাটিয়া দেখলে কী হয়?
মৃত ব্যক্তিকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার ছবি। পিন্টারেস্ট

স্বপ্নদ্রষ্টাকে খাটে বহন করতে দেখলে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে এবং সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। নিজেকে খাটিয়ার ওপরে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হবে। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা পরস্পর ভাই ভাইয়ের মতো সামনাসামনি খাটের ওপরে বসবে।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৭) 

কারও মতে, জানাজা দেখা বন্ধুবাৎসল্য ও সমমনা ব্যক্তি বোঝায়। যার হাতে নিকৃষ্ট লোকেরাও তওবা করবে। যদি দেখে তাকে খাটিয়ার ওপর রাখা হয়েছে, কিন্তু উঠানোর মতো কোনো লোক পাওয়া যাচ্ছে না। তা হলে সে প্রভাবশালী লোকের অনুসরণ করবে এবং তার সম্পদের দ্বারা উপকৃত হবে। যদি দেখ স্বপ্নদ্রষ্টাকে উঠিয়ে খাটিয়ায় রেখে লোকেরা তাকে তাদের কাঁধে বহন করছে, তবে সে নেতৃত্ব এবং উচ্চমর্যাদা লাভ করবে। মানুষ তার অধীনস্থ হবে। যে পরিমাণ লোক তার জানাজার পেছনে পেছনে চলছিল, সেই পরিমাণ লোক তার নেতৃত্বে অনুগত হবে। যদি দেখে লোকেরা তার জানাজার পেছনে পেছনে কাঁদছে, অথবা তার সুনাম গাইছে, অথবা তার জন্য দোয়া করছে তা হলে তার পরিণতি খুব ভালো ও প্রশংসনীয় হবে। লোকদের তার জন্য না কেঁদে বদনাম করতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টার পরিণতি শুভ হবে না। 

জানাজার পেছনে পেছনে চলতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা কোনো বদদীন শাসকের অনুসরণ করবে। বাজারে কোনো জানাজা দেখা এটা ওই বাজারের লোকদের মুনাফিকির প্রতীক। কোনো পরিচিত কবরস্থানের দিকে জানাজা বহন করতে দেখলে এটা ওই হকের প্রতি ইঙ্গিত করে, যা হকওয়ালাদের কাছে পৌঁছবে। কোনো জানাজা হাওয়ায় উড়তে দেখলে বিদেশে কোনো সম্ভ্রান্ত বা শীর্ষ পর্যায়ের লোক মারা গেছে বোঝাবে। অথবা কোনো নেতা বা আত্মপরিচয় গোপনকারী কোনো শীর্ষ আলেমের মৃত্যু হবে। নিজেকে খাটিয়ায় আর খাটিয়াটি মাটিতে চলতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা কোনো জাহাজে ভ্রমণ করবে।

অনেক জানাজা কোনো একস্থানে রাখা দেখলে, উক্ত স্থানের লোকেরা অধিক মাত্রায় অশ্লীল কাজে লিপ্ত হবে। যদি কোনো নারী দেখে সে মারা গেছে এবং তার জানাজা খাটে বহন করা হচ্ছে, তা হলে সে যদি অবিবাহিতা হয়, বিয়ে করবে। আর যদি বিবাহিতা হয়, তা হলে সে বদদীনি কাজ করবে। কোনো মৃত লাশ বহন করতে দেখলে, সে হারাম সম্পদ প্রাপ্ত হবে।

মৃত লাশ মাটিতে টানতে দেখলে সে হারাম সম্পদ উপার্জন করবে। কোনো মৃতকে কবরস্থানে স্থানান্তরিত করতে দেখলে সে সত্য ও ন্যায়ের ওপর আমল করবে। বাজারে স্থানান্তরিত করতে দেখলে তার লক্ষ্য পূরণ হবে। ব্যবসায় সফল হবে।

(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত)  

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কখন তায়াম্মুম করতে হয়?

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৫ এএম
কখন তায়াম্মুম করতে হয়?
দুই হাতের তালু মাটি বা এ জাতীয় বস্তুর ওপর মেরে তায়াম্মুম করতে হয়। ছবি: ইন্টারনেট

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন,  ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা যখন নামাজ আদায়ের ইচ্ছা করবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করো। তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং পদযুগল গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করো। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তা হলে ভালোভাবে পবিত্র হও।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৬)
 
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া কোনো নামাজ কবুল হয় না। খিয়ানতের সম্পদ দিয়ে সদকা কবুল হয় না।’ (বুখারি, হাদিস: ৪২৩) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির হাদাস হয় (অপবিত্র থাকে) তার নামাজ হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে অজু করে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৩৫) 

শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় পানি বা মাটি দিয়ে পবিত্র অর্জন করাকে তাহারাত বলা হয়। তাহারাত বা পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি মোট তিনটি—

১. অজু করা।

২. গোসল করা।

৩. তায়াম্মুম করা। 

অজু ও গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য পানি প্রয়োজন আর তায়াম্মুম করার জন্য প্রয়োজন মাটি। সাধারণত সমুদ্র, নদী-নালা, ঝরনা, কুয়া, টিউবওয়েল ও বৃষ্টির পানি পবিত্র এবং এর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ। নাপাক জিনিস মিশ্রিত হওয়ার কারণে যদি পানির রঙ, গন্ধ বা স্বাদ পরিবর্তিত হয়ে যায়, তা হলে সেটা নাপাক পানি বলে বিবেচিত হয় এবং সে পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা শুদ্ধ হয় না। (নায়লুল আওতার, ১/৩৫)

এ ছাড়া গোসল বা অজুতে যে পানি ব্যবহার করা হয় তাকে পরিভাষায় ব্যবহৃত পানি বলা হয়। এ পানি পবিত্র কিন্তু এর দ্বারা দ্বিতীয়বার পবিত্রতা অর্জন করা যাবে না। (বুখারি, হাদিস: ৩২)

আরও পড়ুন : নামাজের আগে যেসব কাজ করতে হয়?

পবিত্রতা অর্জন বা নাপাক দূর করার জন্য কিংবা অজু-গোসল করার জন্য পানির ব্যবস্থা না থাকলে অথবা পানির সংকট দেখা দিলে কিংবা পানির ব্যবহারে অসুস্থ হওয়ার শঙ্কা বা অসুখ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তায়াম্মুম করে নিতে হবে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অথবা তোমাদের কেউ শৌচাগার থেকে বের হলে কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর (পবিত্রতা অর্জন করার জন্য) পানি না পেলে পবিত্র ভূমি থেকে তায়াম্মুম করবে। চেহারা ও হাতে তা (মাটি) মাসেহ করবে।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৬) 

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমার ওপর গোসল ফরজ হয়েছিল কিন্তু পানি না থাকায় আমি মাটিতে গড়াগড়ি করেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবে হাত দিয়ে মাটিতে চাপড় দাও বলে নিজেই দুই হাত দিয়ে মাটিতে চাপড় দিলেন এবং চেহারা মাসেহ করলেন। পুনরায় দুই হাত দিয়ে মাটিতে চাপড় দিলেন এবং দুই হাত কনুইসহ মাসেহ করলেন।’ (বাইহাকি, ১/২০৭)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের দুই হাতের তালু মাটির ওপর মারলেন এবং উভয় হাতে ফুঁ দিলেন। তারপর দুই হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করলেন। এরপর দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করলেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৩৮)

তায়াম্মুমের দুই ফরজ

এক. সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করা। (দারাকুতনি, হাদিস : ৭১২)
দুই. দুই হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করা। (দারাকুতনি, হাদিস: ৬৯৭)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

স্বপ্নে জাহান্নাম দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১১ পিএম
স্বপ্নে জাহান্নাম দেখলে কী হয়?
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত জাহান্নামের প্রতীকী ছবি।

আবু বাকরাহ বলেন, কেউ যদি স্বপ্নে তাকে আগুনে জ্বালানো হচ্ছে দেখে, সে জাহান্নামে যাবে। ফেরেশতা স্বপ্নদ্রষ্টার কপালের চুল ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে দেখলে ওই স্বপ্ন তার জন্য অপমান ও লাঞ্ছনার কারণ হবে। কাছ থেকে জাহান্নামের আগুন দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা পরিশ্রম ও কষ্টে ভুগবে। তা থেকে সে মুক্তি পাবে না। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘অপরাধীরা আগুন দেখে বুঝে নেবে যে, তাদের তাতে পতিত হতে হবে এবং তারা তা থেকে রাস্তা পরিবর্তন করতে পারবে না।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৫৩) 

স্বপ্নদ্রষ্টা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই জাহান্নামের শাস্তি অত্যন্ত নিশ্চিত বিনাশকারী।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৬৫) 

ওই স্বপ্ন স্বপ্নদ্রষ্টার জন্য সতর্ককারী; সে যেন ওইসব পাপ থেকে তওবা করে, যা সে করে যাচ্ছে।

জাহান্নামে প্রবেশ করতে দেখার ব্যাখ্যা হলো, সে অশ্লীল বা কবিরা গুনাহে লিপ্ত হবে। ফলে স্বপ্নদ্রষ্টা শাস্তির যোগ্য হবে। কারও মতে, সে বিচারক নিযুক্ত হবে। যদি দেখে, তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছে, তাহলে যে ব্যক্তি তাকে প্রবেশ করিয়েছে, সে তাকে পথভ্রষ্ট করবে এবং অশ্লীল কাজে প্ররোচনা জোগাবে। যদি দেখে, জাহান্নাম থেকে বিনা কষ্টে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই বের হয়েছে, তাহলে সে জাগতিক দুশ্চিন্তায় পড়বে।

জাহান্নামের উত্তপ্ত পানি পান করতে বা জাককুম গাছ থেকে খেতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা এমন ধরনের ইলম শিক্ষায় লিপ্ত হবে, যা তার জন্য হবে ধ্বংস ও বিপদের কারণ। কারও মতে, তার কাজগুলো কঠিন হবে এবং ওই স্বপ্ন তার হত্যাযজ্ঞ চালানোর লক্ষণ। যদি দেখে, জাহান্নামে স্বপ্নদ্রষ্টা চেহারা কালো হয়ে গেছে, তাহলে এর ব্যাখ্যা হলো, সে এমন লোকের সঙ্গে ওঠাবসা করবে যারা আল্লাহতায়ালার শত্রু এবং যারা তার খারাপ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট। ফলে মানুষের সামনে সে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে এবং তার চেহারা কালো হবে আর তার শেষ পরিণাম শুভ হবে না। 

যদি দেখে স্বপ্নদ্রষ্টা সবসময় জাহান্নামে বন্দি রয়েছে এবং বুঝতে পারছে না কখন সেখানে প্রবেশ করেছে, তবে সে দুনিয়াতে সবসময় দুস্থ, চিন্তিত ও বঞ্চিত থাকবে। নামাজ, রোজা ও সব ইবাদত ছেড়ে দেবে।

কয়লা বা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ওপর দিয়ে অতিক্রম করতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা ইচ্ছাকৃতভাবে মজলিস-মাহফিলে মানুষের ঘাড় মেড়ে চলবে। স্বপ্নে জাহান্নামের আগুন দেখা, স্বপ্নদ্রষ্টা তাড়াতাড়ি ফেতনা-ফাসাদে পতিত হওয়ার প্রতীক। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ফেতনার স্বাদ গ্রহণ করো, এটা সেটাই যার সম্পর্কে তোমরা তাড়াহুড়া করছিলে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৪)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক 

নামাজের আগে যেসব কাজ করতে হয়

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪১ এএম
আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৫ এএম
নামাজের আগে যেসব কাজ করতে হয়
সিজদারত ব্যক্তির ছবি। পিন্টারেস্ট

ঈমানের পরে ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল নামাজ। এর মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে তার রবের বিশেষ সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। নামাজের আগে কিছু কাজ করতে হবে। মানতে হবে কিছু নিয়ম। এখানে সেসব কাজ ও নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হলো—

১. আজান দেওয়া 
আজান আরবি শব্দ। এর অর্থ ডাকা বা আহ্বান জানানো। বিশেষ কিছু শব্দের মাধ্যমে নামাজের জন্য আহ্বান জানানোকে পরিভাষায় আজান বলা হয়। নামাজের জন্য আজান দেওয়া ইসলামি বিধানমতে সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

২. পবিত্রতা অর্জন
শরীর, পরিধেয় পোশাক, নামাজের জায়গা বা যার ওপর নামাজ আদায় করা হবে, তা পবিত্র হতে হবে। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন শৌচাগারে ঢুকতেন তখন আমি ও আমার মতো এক যুবক পানির লোটা ও একটি ছোট বর্শা নিয়ে যেতাম। অতঃপর তিনি পানি দিয়ে ইসতেনজা করতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ১৫২)

৩. অজু করা
পবিত্রতা অর্জন করার পর সুন্নতসম্মত পদ্ধতিতে অজু করে নিতে হবে।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নামাজ আদায়ের ইচ্ছা করবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করো। তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং পদযুগল গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করো। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তা হলে ভালোভাবে পবিত্র হও।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া কোনো নামাজ কবুল হয় না। খিয়ানতের সম্পদ দিয়ে সদকা কবুল হয় না।’ (বুখারি, হাদিস: ৪২৩)

৪. নামাজের ওয়াক্ত বা সময় হওয়া
প্রত্যেক নামাজের নির্ধারিত ওয়াক্ত বা সময় হলে নামাজ আদায় করতে হবে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করার জন্য মুমিনদের ওপর ফরজ করা হয়েছে।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৩)

৫. সতর ঢাকা
নামাজের জন্য পুরুষের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং নারীর মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের গোড়ালি ছাড়া পূর্ণ শরীর ঢাকাকে সতর বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘উরু (পুরুষের) সতরের অন্তর্ভুক্ত।’ (বুখারি, ১/৫৩)। তিনি আরও বলেছেন, ‘কাপড় যদি বড় হয় তা হলে গোটা শরীর আবৃত করো। আর কাপড় যদি ছোট হয়, তা হলে লুঙ্গির মতো পরিধান করো।’ (বুখারি, ১/৫২)

৬. মাথা ঢেকে রাখা
রাসুলুল্লাহ (সা.) টুপি মাথায় দিয়ে নামাজ আদায় করেছেন—সে মর্মে সহিহ কোনো বর্ণনা না পাওয়া গেলেও তিনি যে নামাজে পাগড়ি পড়েছেন, সেটা নিশ্চিত। জাবের ইবনে আমর ইবনে হুরায়েস (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পাগড়ি ও মোজার ওপর মাসেহ করতে দেখেছি।’ (বুখারি, হাদিস: ২০৫)। সুতরাং পাগড়ি পরে নামাজ আদায় করা সুন্নত। আর খালি মাথায় নামাজ পড়ার তুলনায় নামাজে মাথা ঢেকে রাখা উত্তম।
 
৭. টাখনুর ওপর কাপড় তোলা
পুরুষের জন্য সর্বদা টাখনুর ওপর কাপড় পরা আবশ্যক। তদুপরি নামাজের সময় টাখনুর ওপর কাপড় তোলার বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজের মধ্যে টাখনুর নিচে কাপড় পরে, সে নামাজের মধ্যে আছে নাকি হারামের মধ্যে আছে—তাতে আল্লাহর কিছু আসে-যায় না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৩৭)

৮. কিবলামুখী হওয়া
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘এবং তোমরা যেখানেই থাকো, সেদিকে (মসজিদুল হারাম) মুখ ফিরাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৪) 

৯. বিনয়ের সঙ্গে নামাজে দাঁড়ানো
সক্ষম ব্যক্তিকে অবশ্যই দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। দাঁড়ানোর সক্ষমতা না থাকলে বসে আর বসার সক্ষমতা না থাকলে শুয়েও নামাজ পড়ার অনুমতি রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করো। যদি তাতে অপারগতা থাকে তা হলে বসে এবং তাতেও যদি অপারগতা থাকে তা হলে শুয়ে নামাজ আদায় করো।’ (বুখারি, ১/১৫০)

১০. জামাতে নামাজ আদায় করা
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কেরআনে এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো এবং জাকাত দাও। আর রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৪৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি মর্যাদার।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৫)

১১. ইমাম নির্বাচন করা
জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য ইমাম নির্বাচন করতে হবে এবং ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করতে হবে। ইমাম নির্বাচন নিয়েও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকনির্দেশনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দলের মধ্য থেকে (নামাজের জন্য) ইমাম তিনি হবেন, যিনি কোরআনের জ্ঞানে সবার চেয়ে অগ্রগণ্য। এ বিষয়ে যদি সবাই সমান হন, তা হলে যিনি সুন্নাহর জ্ঞানে অগ্রগণ্য তিনি ইমাম হবেন। এ বিষয়ে যদি সবাই সমান হন, তা হলে যিনি আগে হিজরতকারী তিনি ইমান হবেন। এ বিষয়ে যদি সবাই সমান হন, তা হলে যিনি আগে ইসলাম গ্রহণকারী তিনি ইমাম হবেন। কেউ যেন কারও কর্তৃত্বের স্থানে তার ইমাম না হয় এবং কেউ যেন কারও গৃহে তার সম্মানের স্থানে অনুমতি ছাড়া না বসে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৭৩)

১২. সুতরা রেখে নামাজে দাঁড়ানো 
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নামাজ পড়বে, তখন সে যেন তার নামাজের জন্য সুতরা ঠিক করে নেয়। যদিও সেটি একটি তীর দ্বারাও হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৫৩৪০)। কমপক্ষে আধা হাত উঁচু বা লম্বা কোনো লাঠি বা এ জাতীয় কিছুকে নামাজের সামনে রাখাকে সুতরা বলা হয়। 

১৩. কাতার সোজা করে দাঁড়ানো এবং সামনের কাতার আগে পূরণ করা
জামাতে নামাজ পড়ার জন্য কাতার সোজা করে দাঁড়ানো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নামাজের কাতারগুলো সোজা করে দাঁড়াও। কারণ কাতার সোজা করা নামাজ পূর্ণতার অংশ।’ (বুখারি, হাদিস: ৭২৩)

১৪. ইকামত দেওয়া
একাকী বা জামাতে আদায়কৃত নামাজের জন্য ইকামত দেওয়া সুন্নত। এমনকি দ্বিতীয় জামাতের নামাজের জন্যও ইকামত দেওয়া উচিত। ইকামত আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে কোনো কিছু সোজা করা বা প্রতিষ্ঠা করা। (লিসানুল আরব, ১১/৩৫২) 
শরিয়ত অনুমোদিত শব্দমালা বা বাক্যমালা দ্বারা নামাজের সূচনা হওয়ার ঘোষণা দেওয়াকে ইকামত বলা হয়। ইকামতকে দ্বিতীয় আজানও বলা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ জুমা ও দুই ঈদের নামাজের জন্য ইকামত দেওয়া ফরজে কিফায়া।

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করা সুন্নত

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৫ পিএম
বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করা সুন্নত
একজন বয়স্ক ও একটি ছোট শিশুর ছবি। ইন্টারনেট

আমাদের সমাজ থেকে দিন দিন সভ্যতা, নৈতিকতা ও আদর্শ হারিয়ে যাচ্ছে। এখনকার অনেক মানুষের মাঝে ছোট ও বড়র পার্থক্য নেই। নেই বড়দের সম্মান, ছোটদের স্নেহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহের বিষয়ে অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। ছোটদের স্নেহ করা আর বড়দের সম্মান করা, তাঁর নির্দেশ ও অন্যতম সুন্নত আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের হক আদায় করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৩)


হাদিসে আছে, ‘কয়েকজন লোক একটি হত্যা মামলা নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসেছেন। নিহতের ছোট সন্তান আগে কথা বলতে চাইলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে থামিয়ে বড় ভাইকে কথা বলার আদেশ দিলেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৬১৪২)


রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মত হওয়ার ফলে পৃথিবীর সব নবির উম্মত থেকে আমরা শ্রেষ্ঠ। এটা আমাদের গৌরবের ব্যাপার। কিন্তু বড়দের সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ না করলে তাঁর উম্মত থাকা যায় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সে আমার উম্মতভুক্ত নয়, যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না এবং আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না, আর আমাদের আলেমের অধিকার বিষয়ে সচেষ্ট নয়।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ, ৮/১৪)


দয়া মহৎ গুণ। দয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর নাতি হাসানকে চুমু খেলেন। একজন বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমার ১০টি সন্তান রয়েছে। আমি কখনো তাদের কাউকে চুমু খাইনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হবে না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৫১)


আজকের এই সমাজে বড়দের সম্মান, ছোটদের স্নেহ কমে গেছে। কারণ আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পাঠ করি না। তাঁকে পূর্ণাঙ্গভাবে জানি না। তাঁর আদর্শের অনুসরণ করি না। সুন্দর ও হৃদ্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণ করতে হলে বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করতে হবে। নবিজি (সা.)-এর আদর্শের বাস্তবায়ন করতে হবে। 

 

লেখক: মাদরাসা শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক