ঢাকা ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, সোমবার, ০২ জুন ২০২৫
English

রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সঠিকভাবে জানা ছাড়া পরিপূর্ণরূপে ইসলাম অনুসরণ সম্ভব নয়

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:২০ এএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ এএম
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সঠিকভাবে জানা ছাড়া পরিপূর্ণরূপে ইসলাম অনুসরণ সম্ভব নয়
বহু গ্রন্থ প্রণেতা সাব্যসাচী লেখক মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন

মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন—সুপ্রসিদ্ধ আলেম, গবেষক, লেখক ও কথাসাহিত্যিক। আশিটির বেশি মৌলিক ও অনূদিত বইয়ের কারিগর তিনি। যুক্ত রয়েছেন মাদরাসার পরিচালক ও মসজিদের খতিব হিসেবেও। রবিউল আউয়াল মাস উপলক্ষে সিরাতে রাসুল (সা.) পাঠ করার প্রয়োজনীয়তা, কোন কোন গ্রন্থ পাঠ করার মাধ্যমে সঠিকভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জানা যাবে এবং পাঠের ক্ষেত্রে কি কি সতর্কতা বা নিয়ম অনুসরণ করা উচিত ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা হয়েছে তার সঙ্গে। আলোচনার চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো। 

প্রশ্ন: মুসলমানের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনী পাঠ করা জরুরি কেন?
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন: ইসলামকে পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের সঙ্গে তুলনা করে বুঝতে চাইলে, একটি প্রতিষ্ঠিত ও সুরক্ষিত সৌন্দর্য সামনে চলে আসবে, তা হলো—ইসলাম বলতে আমরা যে জীবনদর্শনকে বলি বা বুঝি, তার একটা বাস্তব আদর্শ রয়েছে এবং সেটি হলেন আমাদের প্রিয়নবি মুহাম্মাদ (সা.)। কোনো দর্শন যতক্ষণ পর্যন্ত বাস্তবে চিত্রিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য সেটা অনুসরণযোগ্য হয়ে ওঠে না। 
কোনো জীবনদর্শন বা চিন্তা মানুষের জীবনে সফলতা বয়ে আনার জন্য সেখানে যেমন সহজ বিষয় থাকবে, কঠিন বিষয় থাকবে এবং দৃশ্যত এমন কিছু বিষয় সামনে আসবে—মনে হবে যেন এ কাজগুলো করা ঠিক সম্ভব নয়। একাধারে ত্রিশ দিন রোজা রাখা—নির্দিষ্ট ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় নিয়ম মেনে ইফতার করাকে যে কেউ অসম্ভব মনে করতে পারেন। কিন্তু ইসলামের পক্ষ থেকে যিনি এ দাওয়াতটা দিচ্ছেন, তিনি রমজানসহ সারা বছর এভাবে রোজা রেখে, ইফতার করে যখন দেখিয়েছেন—তখন আর কারও এ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না, ভাবতে হয় না বা শয়তান তাকে প্ররোচিত করতে পারে না যে, এটা অসম্ভব। 
এটা সম্ভব, তার কারণ যিনি এ দাওয়াতটা দিয়েছেন, তিনি আমাদের কাছে যা চেয়েছেন, এর চেয়ে বেশি কিছু করে দেখিয়েছেন। ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব এটি।
মুসলমানদের জাকাত দিতে বলেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। আর দান করার ক্ষেত্রে তিনি নিজেকে এমন এক উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন—তাঁর ওপর জীবনে কখনো জাকাত ফরজ হওয়ার সুযোগই হয়নি। রাসুলুল্লাহ (সা.) সবটা বিলিয়ে দিয়ে অন্যদের বলেছেন, তোমরা ৪০ ভাগের এক ভাগ দাও। ফলে সবার কাছে সহজ মনে হয়েছে। 
মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনী জানা, তাঁর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চোখের সামনে রাখা প্রত্যেক মুমিনের জন্য জরুরি। কারণ এটাকে বাদ দিয়ে ইসলামকে যথাযথভাবে বোঝা এবং সেটাকে জীবনে প্রয়োগ করা, চর্চা করা, অনুসরণ করা কোনো ব্যক্তির পক্ষে যথাযথভাবে সম্ভব নয়। মুহাম্মাদ (সা.)-কে পাঠ করা ছাড়া এবং তাঁকে সঠিকভাবে জানা ছাড়া পরিপূর্ণরূপে ইসলাম অনুসরণ করা সম্ভব নয়। 

প্রশ্ন: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনী পাঠ করার ক্ষেত্রে কোন কোন বইগুলো পড়া যেতে পারে? 
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন: কোনো শিক্ষিত মুসলিম পরিবার এমন হওয়া উচিত নয়, যে ঘরে পবিত্র কোরআন, কোরআনের সরল অনুবাদ এবং সহজ কোনো ব্যাখ্যাগ্রন্থ থাকবে না এবং যেখানে প্রিয়তম নবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর কোনো জীবনীগ্রন্থ থাকবে না। মুহাম্মাদ (সা.)-কে জানার মাধ্যম দুটি—এক. শুনে জানা। দুই. পড়ে জানা। দুই জানার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। পড়ে জানার মাধ্যমটি তুলনামূলক নিরাপদ ও উত্তম। 
প্রত্যেক মানুষের অবশ্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে লিখিত গ্রন্থাবলি পাঠ করা কর্তব্য। মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য এটা অনেক বড় আনন্দের বিষয়, মুহাম্মাদ (সা.) যেহেতু ইসলামের সচিত্র রূপ, তাই ইসলামের সূচনাকাল থেকে মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনচিত্রকে সনদসহকারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাঁকে জানার ক্ষেত্রে সমাজে একটা অসম্পূর্ণ ধারণা প্রচলিত রয়েছে। মনে করা হয়—জীবনীমূলক গ্রন্থ থেকেই তাঁকে জানতে হবে। অথচ তাঁকে জানার প্রথম এবং সবচেয়ে শক্তিমান মাধ্যম হলো পবিত্র কোরআন। দ্বিতীয় মাধ্যম হাদিস। তৃতীয় মাধ্যম হলো তাঁকে নিয়ে লিখিত জীবনীগ্রন্থ। 
এই জায়গাতেও আমাদের জন্য একটা সম্মানের অবস্থা হলো, বাংলা ভাষাটা চর্চার দিক থেকে যতটা পুরোনো, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সিরাত চর্চা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ততটাই পুরোনো। পুঁথি সাহিত্য যখন থেকে শুরু, তখন থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) পুঁথি সাহিত্যে আলোচিত। এটা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়—আমরা আমাদের বিশ্বাসটাকে চর্চায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। 
বাংলা ভাষায় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম শেখ আব্দুর রহিম (রহ.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে নিয়ে লিখেছেন। এর আগে অন্য ধর্মের তিনজন লিখেছেন তাঁকে নিয়ে। সম্ভবত ১৮৮৬ বা ৮৭ সালে শেখ আব্দুর রহিমের বই প্রকাশিত হয়েছে। 
সিরাত বিষয়ে খুব আলোচিত গ্রন্থ কবি গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’। তিনি ছিলেন মাদরাসাপড়ুয়া মানুষ। মৌলবি কবি গোলাম মোস্তফা। আরও একটি সিরাতগ্রন্থ খুব বেশি আলোচিত হয়েছে, সেটা হলো মওলানা আকরম খাঁর মোস্তফাচরিত। তবে আকরম খাঁ তার বইয়ে বিজ্ঞানকে মাপকাঠি নির্ধারণ করেছেন। ফলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মুজেঝার মতো গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় ছেড়ে দিয়েছেন। যা একজন ধর্মপরায়ণ পাঠক আশা করে না। সে জায়গায় কবি গোলাম মোস্তফা এমন একটা গ্রন্থ রচনা করলেন—বিশেষ করে সাহিত্য ও ভক্তিপূর্ণ উপস্থাপনায়, সেটা কালোত্তীর্ণ। পরবর্তী সময়ে ঢাকার বড় কাটারা মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা তফাজ্জুল হোসাইনের ‘হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সমকালীন পরিবেশ ও জীবন’; মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের ‘স্বপ্নযোগে রাসুলুল্লাহ (সা.)’ ও ‘রওজা শরীফের ইতিহাস’—এগুলো অনন্য কাজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। 
এ ছাড়া আরবি ও উর্দু ভাষা থেকে বাংলায় অনূদিত সিরাতগ্রন্থের মধ্যে সামগ্রিক বিবেচনায় যে কাজগুলো অনন্য সেগুলো হলো—ইবনে হিশাম (রহ.) রচিত ‘সিরাতে ইবনে হিশাম’; ইবনে কাসির (রহ.) রচিত ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’; হাফেজ জাহাবি (রহ.) রচিত সিয়ারের প্রথম তিন খণ্ড; ইবনে কাসির (রহ.) রচিত ‘আলফুসুল ফি ইখতিসারি সিরাতে রাসুল’; সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি (রহ.) রচিত ‘আস-সিরাতুন নববিইয়া’ ও ‘রহমতে আলম’; মাওলানা ইদ্রিস কান্ধলভি (রহ.) রচিত ‘সিরাতুল মোস্তফা’; সাইয়েদ সুলায়মান নদভি (রহ.) রচিত ‘খুতুবাতে মাদরাজ’; মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানি (রহ.) রচিত ‘পয়গাম্বরে ইনসানিইয়াত’ এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) রচিত ‘খাসায়েসে কুবরা’ উল্লেখযোগ্য। 

প্রশ্ন: সিরাত পাঠের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সতর্কতা বা নিয়ম মানা আবশ্যকীয় কি না?
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন: রাসুলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে প্রথমে সতর্কতার সঙ্গে বুঝতে হয়, কাদের লেখা পড়ব? কারণ, তাঁর জীবনী পড়া মানে ইসলাম পড়া। তিনিই ইসলাম। এ জায়গায় এসে আমাদের মানতেই হয়— যেহেতু বিষয়টি ইসলাম, এ চর্চার জায়গায় মূলধারাটা হলো আলেমসমাজ। তারাই শেকড় থেকে ইসলাম পড়েন, শেকড় থেকে জানেন, বোঝেন, সত্যিকার বুঝটা বিচার করার ক্ষমতা রাখেন এবং সত্যিকারের বুঝটার প্রচার করেন। এ জন্য আলেমদের লেখা সিরাতগ্রন্থগেুলো বেছে বেছে পাঠ করতে হবে। যার লেখা পড়ছি, তার সম্পর্কেও জানতে হবে—তিনি কতটা নির্ভরযোগ্য। 
আর অনুবাদগ্রন্থ পড়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা জরুরি। কারণ অনুবাদে সামান্য ভুল করার কারণে ইতিহাস পাল্টে যায়! অনেক সময় বড় রকমের বিতর্কের জন্ম হয়। সর্বোপরি কথা হলো, ইসলাম সম্পর্কে যিনি বিশেষজ্ঞ অর্থাৎ যিনি কোরআনকে উৎস থেকে বোঝেন, হাদিসকে উৎস থেকে বোঝেন এবং ফিকাহ বোঝেন—এমন তিনটি গুণ বা শক্তি যার মধ্যে রয়েছে; এমন ব্যক্তি যদি নবিজীবনী লেখেন, তার বই যে কেউ চোখ বন্ধ করে পড়লে, তার হাত ধরে মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব। অন্যথা বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা প্রকট।

 

যেসব পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
যেসব পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়
গরুর ছবি । সংগৃহীত

বারা ইবনে আযেব (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, চার প্রকারের পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়। যথা : পশুর উভয় বা কোনো এক চোখের দৃষ্টিহীনতা স্পষ্ট হলে, কোনো এক পা খোড়া হলে, অতি রুগ্ন হলে এবং এত শীর্ণ পশু, যার অস্থিমজ্জা সারশূন্য হয়ে পড়েছে। (ইবনে হিব্বান, ৫৯২১; আবু দাউদ, ২৮০২; নাসায়ী, ৪৩৬৯; ইবনে মাজাহ, ৩১৪৪)
আলি ইবনে আবি তালেব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কানের অগ্রভাগ কাটা প্রাণী, কানের গোড়া থেকে কেটে ঝুলে আছে এমন প্রাণী, কান ফেটে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়া প্রাণী, কানে গোল ছিদ্রবিশিষ্ট প্রাণী ও কান বা নাক একেবারে কেটে গেছে- এমন প্রাণী কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, ৩১৪২; মুসনাদে আহমাদ, ৬০৯)

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

 

জবাইয়ের সময় ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলা কেন জরুরি?

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
জবাইয়ের সময় ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলা কেন জরুরি?
পশু জবাইয়ের পূর্বের ছবি । সংগৃহীত

ঈদুল আযহা এলে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে পশু কোরবানি করে থাকেন। এই মহান ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম-কানুন রয়েছে, যা মেনে চলা আবশ্যক। এর মধ্যে অন্যতম হলো পশু জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলা। এটি কেবল একটি বাক্য নয়, বরং মহান আল্লাহর নাম ও মহিমা ঘোষণার মাধ্যমে এই ইবাদতকে পূর্ণাঙ্গ করার একটি অপরিহার্য অংশ।

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন বড় শিংবিশিষ্ট সাদা-কালো বর্ণের দুটি নর দুম্বা কোরবানি করতেন, তখন তিনি বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলতেন। বর্ণনাকারী আরও বলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পশুর ঘাড়ের ডানপাশে পা রেখে নিজ হাতে যবাই করতে দেখেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, ১১৯৬০, ১২১৪৭)। এই হাদিস থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, কোরবানি বা যেকোনো হালাল পশু যবাইয়ের পূর্বে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র নাম উচ্চারণ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং এর মাধ্যমে যবাইকৃত পশু হালাল হয়।

বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলার অর্থ হলো, আল্লাহর নামে শুরু করছি, আল্লাহ মহান। এর মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং স্বীকার করে যে, এই কোরবানি কেবল তাঁরই জন্য। এটি শুধু পশু জবাইয়ের একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং একটি আত্মিক সংযোগের বহিঃপ্রকাশ। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এই তাসমিয়া (বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার) বাদ দেয়, তবে সে পশু হালাল হবে না বলে অধিকাংশ ফকিহগণ অভিমত দিয়েছেন।

কাজেই, কোরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালনের সময় আমাদের সকলের উচিত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করা এবং পূর্ণাঙ্গ সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে সঠিক নিয়ম মেনে বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলে পশু কোরবানি করা। এটি শুধু কোরবানিকে বৈধই করে না, বরং ইবাদতের মান ও গুরুত্বকেও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

ঈদের দিনে মোরগ কোরবানি করার শরয়ী বিধান কী?

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১২:০০ পিএম
ঈদের দিনে মোরগ কোরবানি করার শরয়ী বিধান কী?
মোরগের ছবি । সংগৃহীত

ঈদুল আযহা এলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে ঈদের দিন মোরগ কোরবানি করার একটি প্রচলন দেখা যায়, যা শরিয়তের দৃষ্টিতে না জায়েজ।

এখানে বিষয়টা হলো, ঈদের দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়। আপনি প্রয়োজনে বা খাওয়ার উদ্দেশ্যে মোরগ জবাই করতেই পারেন। তবে এটিকে কোরবানির নিয়তে করা যাবে না। অর্থাৎ, ঈদের যে কোরবানি, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা হয়, সেই ইবাদতের উদ্দেশ্যে মোরগ কোরবানি বৈধ নয়।

এর কারণ হলো, ইসলামে কোরবানির জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু পশুকে নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। এই পশুগুলোই কোরবানির জন্য নির্ধারিত এবং এগুলোর দ্বারাই কোরবানি আদায় হয়। মোরগ বা অন্য কোনো পাখি দ্বারা কোরবানি আদায় হয় না, এমনকি তা কোরবানির সওয়াবও বহন করে না।

অতএব, যদি কেউ কোরবানির সওয়াবের আশায় মোরগ জবাই করেন, তবে তিনি সওয়াব তো পাবেনই না, বরং একটি অননুমোদিত কাজ করার কারণে গুনাহগার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এই বিষয়ে আমাদের সকলের সতর্ক থাকা উচিত এবং শরীয়তের বিধান মেনেই কোরবানি করা উচিত। মনে রাখতে হবে, ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নির্দেশ পালন এবং তার সন্তুষ্টি অর্জন।

 

লেখক: আলেম,গবেষক ও সাংবাদিক

 

অর্থসহ রাসুল (সা.)-এর সাহাবিদের নাম

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ১১:৪২ এএম
অর্থসহ রাসুল (সা.)-এর সাহাবিদের নাম
এক বৃদ্ধার বই পাঠের ছবি । সংগৃহীত

সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গীগণ, ইসলামের ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো। তাঁরা ছিলেন ইসলামের প্রথম অনুসারী, যারা নিজেদের জীবন, সম্পদ এবং সবকিছু আল্লাহর পথে উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁদের নামগুলো শুধু ঐতিহাসিক স্মারক নয়, বরং প্রতিটি নামেই রয়েছে এক গভীর অর্থ, যা তাঁদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আত্মত্যাগ এবং ইসলামের প্রতি নিবেদিত প্রাণকে তুলে ধরে। এই বরকতময় নামগুলো আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কিছু প্রিয় সাহাবির নাম, তাঁদের আরবি উচ্চারণ, বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ উল্লেখক করা হলো।

সাহাবিগণের বরকতময় নাম ও অর্থ

আরবি নাম

বাংলা উচ্চারণ

অর্থ

عياض

আইয়ায (রা.)

অধিক দানকারী

عوف

আওফ (রা.)

সিংহ, নেকড়ে, অতিথি

أوس

আওস (রা.)

উপহার, নেকড়ে

أقرع

আকরা (রা.)

টাকযুক্ত

عفرية

আকরাবা (রা.)

ঘোড়ার জিন বাঁধার হুক। উহুদযুদ্ধে শহিদ সাহাবি

 عاقل

আকেল (রা.)

বুদ্ধিমান

الأخش

আখনাস (রা.)

সিংহ, প্রত্যাবর্তনকারী। তিনি,তার পুত্র ও নাতি তিনজনই বদরযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন

ابن عجلان

ইবনে আজলান  (রা)   

দ্রুতগতিসম্পন্ন

عطية

আতিয়্যা (রা.)

দান

عدي

আদি (রা.)

আগ্রাসী

عنترة

আনতারা (রা.)

বীরত্ব

أنس

আনাস (রা.)

বন্ধু (নবিজির দীর্ঘদিনের সেবক)

أنسة

আনাসা (রা.)

ঘনিষ্ঠ হওয়া, পছন্দ হওয়া (নবিজির গোলাম, বদরি সাহাবি)

عبدة

আবদা (রা.)

ধার্মিক, পরিচারিকা

عبد الرحمن

আব্দুর রহমান (রা.)

করুণাময়ের বান্দা (জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জনের একজন)

عبد الله

আব্দুল্লাহ (রা.)

আল্লাহর বান্দা

عبس

আবস (রা.)

ভ্রুকুটি করা (একজন বদরি সাহাবি)

     

أبو حبيب

আবু হাবিব (রা.)

বন্ধু

أبو حية

আবু হাব্বা (রা.)

শস্যদানা

أبو حرام

আবু হারাম (রা.)

সম্মানিত

     

أبو هريرة

আবু হুরাইরা (রা.)

বিড়াল পালক (সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি)

أبو حسين

আবু হুসাইন (রা.)

সুন্দর

أبو اليسر

আবুল ইয়াসার (রা.)

সহজ

أبو الهيثم

আবুল হাইসাম (রা.)

ইগল

عباد

আব্বাদ (রা.)

অধিক ইবাদতকারী

عباس

আব্বাস (রা.)

সিংহ, কঠোর (নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচা)

عمرو

আমর (রা.)

দীর্ঘজীবী (শাম ও মিশর বিজয়ে নেতৃত্ব দানকারী)

عامر

আমের (রা.)

সভ্য

عمار

আম্মার (রা.)

ধর্মপরায়ণ

عائد

আয়িদ (রা.)

প্রত্যাবর্তনকারী

الأرقم

আরকাম (রা.)

কলম (ইসলাম প্রচারের প্রথম কেন্দ্র তাঁর ঘর)

علي

আলি (রা.)

মর্যাদাবান, মহৎ (ইসলামের চতুর্থ খলিফা)

أسعد

আসআদ (রা.)

অধিকতর ভাগ্যবান (আনসার সাহাবিদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী)

عاصم

আসেম (রা.)

প্রতিরোধকারী

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কাজের লোককে কোরবানির গোশত দেওয়া যাবে কী?

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১০:০০ পিএম
কাজের লোককে কোরবানির গোশত দেওয়া যাবে কী?
কাজের লোককে কোরবানির গোশত দেওয়ার ছবি। সংগৃহীত

কোরবানি ঈদে আমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করি। এই কোরবানির গোশত বিতরণ ও ব্যবহারের নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন ইসলামে রয়েছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, কোরবানির গোশত কাজের লোককে তাদের শ্রমের বিনিময়ে দেওয়া যাবে কিনা।

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, কোরবানির পশুর কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েজ নয়। এর মানে হলো, যারা কোরবানি প্রক্রিয়ায় সাহায্য করেন, যেমন—পশু জবেহ করা, চামড়া ছাড়ানো বা মাংস কাটায় যারা শ্রম দেন, তাদের এই কাজের বিনিময়ে কোরবানির মাংস, চামড়া বা অন্য কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। ফিকহের প্রসিদ্ধ গ্রন্থগুলোতে এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে, যেমন—আহকামুল কুরআন জাস্সাস (৩/২৩৭), বাদায়েউস সানায়ে’ (৪/২২৪), আলবাহরুর রায়েক (৮/৩২৬) এবং ইমদাদুল মুফতীন।

কোরবানি একটি খালেস ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়। এতে কোনো জাগতিক লেনদেনের উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। পারিশ্রমিক হিসেবে কিছু দিলে তা ইবাদতের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে।

তবে এর অর্থ এই নয় যে, কাজের লোকেরা কোরবানির গোশত থেকে বঞ্চিত হবেন। বরং, ঘরের অন্য সদস্যদের মতোই কাজের লোকদেরকেও কোরবানির গোশত খাওয়ানো যাবে। আপনি চাইলে তাদের মেহমান হিসেবে আপ্যায়ন করতে পারেন অথবা গরিব-মিসকিনদের অংশে বা নিজেদের অংশের যে কোনো গোশত তাদের উপহার হিসেবে দিতে পারেন। এখানে মূল বিষয়টি হলো, এটি তাদের শ্রমের বিনিময় নয়, বরং কোরবানির বরকত থেকে একটি উপহার।

কোরবানি ঈদে কাজের লোকদের প্রতি উদারতা দেখানো এবং তাদের আপ্যায়ন করা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। কিন্তু তাদের পারিশ্রমিক অবশ্যই আলাদাভাবে নগদ অর্থ বা অন্য কোনো বস্তুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। কোরবানির বিধান মেনে চলা আমাদের ইবাদতকে ত্রুটিমুক্ত করে।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক