ঢাকা ৩০ কার্তিক ১৪৩১, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

বৃষ্টিতে ভেজা সুন্নত

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০২ এএম
আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ পিএম
বৃষ্টিতে ভেজা সুন্নত
বৃষ্টির ছবি। ইন্টারেনট

রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টিতে ভিজতেন। তিনি বৃষ্টি পছন্দ করতেন। বৃষ্টিতে ভেজা সুন্নত। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম, এমন সময় আমাদের ওপর বৃষ্টি নামল। রাসুলুল্লাহ (সা.) শরীরের ওপরিভাগ থেকে কাপড় সরিয়ে দিলেন। ফলে তাঁর শরীর বৃষ্টিতে ভিজে গেল। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কেন এমন করলেন? তিনি উত্তরে বললেন, যেহেতু তা মহান প্রভুর পক্ষ থেকে সদ্য আগত, তাই আমি বরকতের জন্য শরীরে লাগিয়ে নিলাম।’ (মুসলিম, হাদিস: ৮৯৮) 

বৃষ্টি নামলে দেহের ওপরিভাগ অবমুক্ত করে বৃষ্টিস্নান করা সুন্নত। যেন সরাসরি বৃষ্টির বরকত লাভ করা যায়। অর্থাৎ কোনো ছাতা বা কাপড় যেন গায়ে না থাকে। তবে সতর খোলা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, এটি মহান প্রভুর পক্ষ থেকে সদ্য আগত। কারণ, বৃষ্টি আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আসমান থেকে। বৃষ্টি হলো নতুন পানি ও নতুন সৃষ্টি। বৃষ্টি দয়া ও কল্যাণের বার্তাবাহক। আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। বৃষ্টি এসে জমিন, মানুষ ও সব সৃষ্টির মাঝে প্রাণ সঞ্চার করে। 

বৃষ্টি সৃষ্টিকর্তার একনিষ্ঠ সৈনিক। কারও ওপর তা বর্ষে রহমত ও নেয়ামত হয়ে। আর কারও ওপর বর্ষে প্রতিশোধ ও আজাব হয়ে। কাজেই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই আনন্দ উদযাপন দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এর মাধ্যমে তিনি বান্দাদের মনে এই ধারণা তৈরি করেছেন যে, মানুষ ও বৃষ্টি একই সুতায় গাঁথা। উভয়েই আল্লাহর ইবাদত করছে অবিরাম। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই, যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পারো না। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীল (এবং) ক্ষমাপরায়ণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৪৪)

বৃষ্টির এই সুখময় নেয়ামত পেয়ে আল্লাহর বন্দনা করা উচিত। আমরা নিজেদের ও সন্তানদের শরীরকে অবমুক্ত করে দেব বৃষ্টিস্নানের জন্য। 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

সিজদায় যেসব তাসবিহ ও দোয়া পাঠ করা যায়

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২০ পিএম
সিজদায় যেসব তাসবিহ ও দোয়া পাঠ করা যায়
শিল্পীর তুলিতে আঁকা সিজদা আদায়রত ব্যক্তির ছবি। পিন্টারেস্ট

সিজদায় কমপক্ষে একবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পাঠ করা সুন্নত। আর তিনবার এ তাসবিহ পাঠ করা উত্তম। হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সিজদা করতেন এবং সিজদায় সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বলতে থাকতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৬৯৯)
  
নির্দিষ্ট এ তাসবিহটি ছাড়াও সিজদাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বেশকিছু জিকির পাঠের বর্ণনা পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম একটি জিকির হলো—

বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলি।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, হে আমাদের রব, আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন। (বুখারি, হাদিস: ৮১৭)

সিজদাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও যে জিকিরটি করতেন, 

বাংলা উচ্চারণ: সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বুল মালাইকাতি ওয়া রুহ। 

বাংলা অর্থ: সকল ফেরেশতা ও রুহের (জিবরাইল আ.) প্রতিপালক মহিমান্বিত ও অত্যন্ত পবিত্র। (মুসলিম, হাদিস: ৯৭৮) 

তবে সিজদা অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি বলেছেন, ‘সাবধান, আমাকে নিষেধ করা হয়েছে, আমি যেন রুকু বা সিজদা অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত না করি। তোমরা সিজদা অবস্থায় বেশি বেশি দোয়া করবে। কারণ সিজদা হলো তোমাদের দোয়া কবুল হওয়ার উপযোগী সময়।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯৬১)

আরও পড়ুন: সিজদায় আগে হাঁটু নাকি হাত?

সিজদায় বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। কারণ সিজদায় করা দোয়া কবুল হওয়ার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা যখন সিজদারত অবস্থায় থাকে, তখন সে প্রভুর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। সুতরাং তোমরা এ সময় (সিজদায়) বেশি বেশি দোয়া করো।’ (মুসলিম, ১/৩৫০)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সিজদা অবস্থায় তোমার সাধ্যমতো বেশি দোয়া করবে। কারণ এ সময় তোমাদের দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।’ (মুসলিম, ১/৩৪৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভ করার সর্বোত্তম মুহূর্ত হলো বান্দার সিজদারত অবস্থা। অতএব তোমরা এ সময় অধিক পরিমাণে দোয়া করো।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯৭০)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

অপবিত্র ফিড খেয়ে বড় হওয়া মুরগি খাওয়া যাবে?

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ এএম
অপবিত্র ফিড খেয়ে বড় হওয়া মুরগি খাওয়া যাবে?
মুরগির ছবি। ইন্টারনেট

প্রশ্ন: আমি জার্মানে থাকি। এখানকার মুরগির খামারগুলোর মালিক সাধারণত অমুসলিম। খামারগুলোতে মুরগিকে যে ফিড খাওয়ানো হয়, তাতে অন্যান্য পবিত্র বস্তুর সঙ্গে শূকরের হাড্ডি ও চামড়ার গুঁড়ার কথাও লেখা থাকে। পরিমাণে খুবই সামান্য। আমরা মুরগি কিনতে চাইলে এসব খামারের মুরগিই কিনতে হয়। এ ছাড়া আমাদের জানামতে এমন কোনো খামারও নেই, যেখানে মুরগিকে সম্পূর্ণ পবিত্র ফিড খাওয়ানো হয়। জানার বিষয় হলো, এসব মুরগি হালাল পদ্ধতিতে জবাই করা হলে তা খাওয়া যাবে কি?

তানজিন আরাফাত, জার্মান প্রবাসী

উত্তর: শূকরের উপাদান মিশ্রিত যে ফিডের কথা আপনি উল্লেখ করেছেন; তা মুরগিকে খাওয়ানো হলেও যেহেতু ফিডের অন্যান্য উপাদানের তুলনায় শূকরের অংশের পরিমাণ খুবই সামান্য, ফলে মুরগির গোশতের মধ্যে এর বড় কোনো প্রভাব পড়ে না। সুতরাং যথাযথভাবে জবাই করা হলে এসব মুরগি খাওয়া জায়েজ হবে। তবে এসব থেকে বিরত থাকা ভালো, যেহেতু মুসলমানদের জন্য মানুষের আহারযোগ্য কোনো প্রাণীর ফিডে শূকরের কোনো অংশ ব্যবহার করা জায়েজ নয়। (বাদায়েউস সানায়ে, ৪/১৫৩; আল মুহিতুর রাঘাবি, ২/৫০৯, আদ দুররুল মুখতার, ৬/৩৪০, ৫/৫৫)

সাধারণত প্রাণী দুই ধরনের—স্থলজ প্রাণী ও জলজ প্রাণী। জলজ প্রাণীর মধ্যে মাছ ছাড়া সব প্রাণী খাওয়া হারাম।

আরও পড়ুন: জবাইকৃত পশুর চামড়া ছাড়ানোর বিধান
 
স্থলজ প্রাণী তিন প্রকার। যথা—

  • ওই সব প্রাণী, যার কোনো রক্ত নেই, যেমন : মশা-মাছি, মাকড়সা, পিঁপড়া, টিড্ডি ইত্যাদি।
  • প্রবাহিত রক্তবিশিষ্ট প্রাণী নয়। যেমন—সাপ, ইঁদুর ইত্যাদি। উভয় প্রকার প্রাণীর মধ্যে টিড্ডি ছাড়া বাকি সব ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট হওয়ায় সেগুলো খাওয়া হারাম।
  • ওই সব প্রাণী, যা প্রবাহিত রক্তবিশিষ্ট হয়, যেমন—পাখি ও অন্যান্য চতুষ্পদ জন্তু। সেগুলো আবার দুই প্রকার: প্রথমত, পাখি। পাখির মধ্যে যেসব পাখি থাবা ও নখরবিশিষ্ট হয়। যেমন—চিল, শকুন, বাজ, ঈগল ইত্যাদি খাওয়া মাকরুহে তাহরিমি; মানে খাওয়া নিষেধ।

আবু সালাবা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক শিকারি দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র প্রাণী ও প্রত্যেক শিকারি নখবিশিষ্ট পাখি খেতে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৫৩০)

লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক

রমজান সামনে রেখে প্রস্তুত হচ্ছে রিয়্যালিটি শো ‘পবিত্র কুরআনের আলো’

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ পিএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩২ পিএম
রমজান সামনে রেখে প্রস্তুত হচ্ছে রিয়্যালিটি শো ‘পবিত্র কুরআনের আলো’
১৬তম আসরের বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার ছবি। সংগৃহীত

পবিত্র রমজান সামনে রেখে প্রস্তুত হচ্ছে দেশের সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ কুরআনিক রিয়্যালিটি শো ‘পবিত্র কুরআনের আলো’র ১৭তম আসর। এরই মধ্যে এই আসরের ঢাকা বিভাগের প্রতিযোগীদের বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশের সেরা হাফেজ সন্ধানের এই বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে পয়লা রমজান থেকে। বাংলাভিশনে প্রচারিত হতে যাওয়া এই আয়োজনের পাওয়ার্ড বাই স্পন্সর গ্রেটওয়াল সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

গত ৯ নভেম্বর জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে ১৭তম আসরের এই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। একই অনুষ্ঠানে ১৬তম আসরের বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। 

তারবিয়াহ ফাউন্ডেশন ও মাহিরস প্রোডাকশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোখতার আহমাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ শামসুল আলম।

এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান বিচারক হাফেজ মাওলানা নাজির মাহমুদ ও কারি আতাউল্লাহ আল মামুন, বাংলাভিশনের হেড অব প্রোগ্রাম তারেক উল্লাহ আখন্দ, গ্রেটওয়াল সিরামিকের হেড অব সাপ্লাই চেইন মো. শাহিন আলম, আস সুন্নাহ ট্রাভেলসের সিইও শফিকুল ইসলাম ও কুরআনের আলো প্রোগ্রামের ডিরেক্টর তোফায়েল সরকার।

অনুষ্ঠানে ১৬তম আসরের প্রথম স্থান অধিকারী হাফেজ মোহাম্মদ হুযাইফার হাতে তুলে দেওয়া হয় শিক্ষাবৃত্তিসহ ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকার চেক। ২য় স্থান অধিকারী হাফেজ ফয়যুল্লাহ সালমানের হাতে তুলে দেওয়া হয় শিক্ষাবৃত্তিসহ ২ লাখ ৭২ হাজার টাকার চেক। তৃতীয় স্থান অধিকারী হাফেজ আবরার যাওয়াদকে দেওয়া হয় শিক্ষাবৃত্তিসহ ১ লাখ ২২ হাজার টাকার নগদ চেক। তিনজনকে দেওয়া হয় আস সুন্নাহ ট্যাভেলসের সৌজন্যে উমরাহ টিকেট, মূল্যবান বই ও ক্রেস্ট। এছাড়া বাকি সব প্রতিযোগী হাফেজদের দেওয়া হয় নগদ অর্থ ও মূল্যবান বই।

রায়হান/মিরাজ রহমান 

 

জবাইকৃত পশুর চামড়া ছাড়ানোর বিধান

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩২ পিএম
জবাইকৃত পশুর চামড়া ছাড়ানোর বিধান
পশু জবাই করার ছবি। ইন্টারেস্ট

প্রশ্ন: আমাদের এলাকায় একজন কসাই আছেন। দিনে সে কয়েক জায়গায় কাজ করে। তাই দ্রুত কাজ করার জন্য গরু জবাইয়ের একটু পরেই আরেকজনের সাহায্যে গরুর সামনের পা থেকে চামড়া খসানো শুরু করে। অথচ গরু তখনো পেছনের পা নাড়তে থাকে। তার এ কাজটি কেমন? শরিয়তে এর হুকুম কী?

উত্তর: জবাইয়ের পর পশু পুরোপুরিভাবে নিস্তেজ হওয়ার আগেই তার চামড়া খসানো মাকরুহে তাহিরিমি। কেননা, এতে পশুকে অহেতুক কষ্ট দেওয়া হয়। তাই ওই কসাইকে এমনটি করা থেকে বারণ করা কর্তব্য। হাদিসে জবাইয়ের সময় পশুকে অনর্থক কষ্ট না দেওয়ার হুকুম করা হয়েছে। শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক বস্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শন করা আল্লাহতায়ালা আবশ্যক করেছেন। তাই কোনো জন্তু হত্যা করতে হলে উত্তমপন্থা গ্রহণ করো। জবাই করতে হলে উত্তমভাবে জবাই করো। ছুরি-চাকু ধারালো করো। জবাই করা পশুর জন্য সহজ করো।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৯৫৫)

তাবেয়ি ফারাফেসা (রহ.) বলেন, ‘জবাইকৃত প্রাণীর রুহ চলে যাওয়ার পর নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত তাকে রেখে দাও। (অর্থাৎ নিস্তেজ হওয়ার আগে গোশত কাটা বা চামড়া খসানো শুরু করো না)। (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক, হাদিস: ৮৬১৪)

আরও পড়ুন: সাপ খেলা দেখানো ও এর বিনিময় নেওয়া কি জায়েজ?

চামড়া ছাড়ানোর জন্য পশু জবাইয়ের পর তার প্রাণ বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা কর্তব্য। প্রাণ থাকতে তার চামড়া ছাড়িয়ে কষ্ট না দেওয়া। জবাইয়ের পর পশুর শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া। পশুর দেহের প্রাণস্পন্দন একেবারে থেমে যাওয়ার পর চামড়া ছাড়ানো শুরু করতে হবে। নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা যাবে না। (বাদায়েউস সানায়ে, ৪/১৮৯; আদ্দুররুল মুখতার, ৬/২৯৬)

লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক

সিজদায় আগে হাঁটু নাকি হাত?

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২২ এএম
সিজদায় আগে হাঁটু নাকি হাত?
সিজদারত ব্যক্তির ছবি। ইন্টারনেট

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন সিজদা করার ইচ্ছা পোষণ করতেন, তখন তাকবির (আল্লাহু আকবার) দিতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৮০৩; মুসলিম, হাদিস: ৭৫৪)

দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সিজদায় যাওয়ার সময় জমিনে আগে হাঁটু রাখতে হবে নাকি আগে হাত রাখতে হবে—এ বিষয়টা নিয়ে দুই ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। ওয়াইল ইবনে হুজর (রা.) বলেন, ‘আমি দেখেছি সিজদায় গমনকালে রাসুলুল্লাহ (সা.) জমিনে হাত রাখার আগে হাঁটু রাখতেন এবং সিজদা থেকে ওঠার সময় হাঁটুর আগে হাত উঠাতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৮৩৮; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৮৮২)

অন্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন সিজদার সময় উটের মতো না বসে। সিজদার সময় যেন জমিনে হাঁটু রাখার আগে হাত রাখে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৮৪০; নাসায়ি, হাদিস: ১০৯১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি সাত অঙ্গের দ্বারা বা সাত অঙ্গের ওপর ভর করে সিজদা করার ব্যাপারে নির্দেশিত হয়েছি—কপাল দ্বারা। এরপর তিনি হাত দ্বারা নাকের প্রতি ইশারা করলেন। আর দুই হাত, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের আঙুলসমূহের অগ্রভাগ দ্বারা।’ (বুখারি, হাদিস: ৮১২)

আরও পড়ুন: রুকু থেকে ওঠার সময় কোন দোয়া পড়তে হয়?

সিজদা অবস্থায় হাতের আঙুলগুলো মিলিয়ে কিবলামুখী করে, দুই বাহু পার্শ্বদেশ থেকে আলাদা, পায়ের আঙুলগুলো উন্মুক্ত এবং মুখমণ্ডল দুই হাতের মাঝে রাখতে হবে। ওয়াইল ইবনে হুজর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন রুকু করতেন তখন হাতের আঙুলগুলো ছড়িয়ে রাখতেন আর যখন সিজদা করতেন তখন হাতের আঙুলগুলো মিলিয়ে রাখতেন।’ (মুসতাদরেকে হাকেম, হাদিস: ৮১৪)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘হাতের আঙুলগুলোর অগ্রভাগ কিবলামুখী করে রাখতেন।’ (ইবনে খুজাইমা, হাদিস: ৬৪৩)

দুই বাহু দুই বগল থেকে আলাদা এবং দুই পায়ের আঙুল উন্মুক্ত রাখতে হবে। আবু কাতাদা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সিজদায় তাঁর দুই বাহু দুই বগল থেকে আলাদা রাখতেন এবং দুই পায়ের আঙুলগুলো উন্মুক্ত রাখতেন।’ (ইবনে খুজাইমা, হাদিস: ৬৮৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.) সিজদাতে কপালের মতো নাকও মাটিতে রাখতেন। হাতের আঙুলগুলো সোজাভাবে নরম করে কিবলামুখী করে রাখতেন। দুই পায়ের গোড়ালি একত্রে মিলিয়ে আঙুলগুলো কিবলামুখী করে পা খাড়া করে রাখতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯৭৭)

সিজদায় দুই বাহু কুকুরে মতো জমিনে বিছিয়ে দেওয়া যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সিজদার সময় তোমাদের কেউ যেন তার দুই বাহু কুকুরের মতো জমিনে বিছিয়ে না দেয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৮২২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রুকু ও সিজদায় পিঠ সোজা না রাখে, তার নামাজ পূর্ণ হয় না।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৬৫)

বারা ইবনে আজিব (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) সিজদায় মুখমণ্ডল কোথায় রাখতেন? তিনি বলেন, ‘দুই হাতের মাঝখানে রাখতেন।’ (তিরমিজি, ১/৩৭)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক