ঢাকা ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

আজানের শব্দাবলি

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৯ এএম
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২২ এএম
আজানের শব্দাবলি
শিল্পীর তুলিতে আঁকা মুয়াজ্জিনের ছবি। পিন্টারেস্ট

প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের জন্য সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পড়া ফরজ। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের জন্য আজান দেওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। আজান অর্থ ডাকা, আহ্বান করা বা জানানো। নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগে আজান দেওয়া যাবে না। কখনো দিয়ে ফেললে ওয়াক্ত হলে আবার আজান দিতে হবে। নারীদের আজান ও ইকামাত দেওয়া জায়েজ নয়। 

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মোট চারজন মুয়াজ্জিন ছিলেন। মদিনায় ছিলেন দুইজন। এক. বেলাল ইবনে রাবাহ (রা.)। দুই. আমর ইবনে উম্মে মাকতুম কুরাশি (রা.)। আর কুবায় ছিলেন সাদ আলকুরজা (রা.)। এ ছাড়া মক্কায় ছিলেন আবু মাহজুরা আওস ইবনে বিন মুগিরা জুমাহি (রা.)। (জাদুল মাআদ, ১/১২৪)

আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, বেলাল (রা.)-এর আজানের শব্দাবলি এমন— 

আল্লাহু আকবার—৪ বার। অর্থ—আল্লাহ মহান বা বড়।
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ—২ বার। অর্থ—আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাসক নেই।
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ—২ বার। অর্থ—আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। 
হাইয়া আলাস সালাহ—২ বার। অর্থ—নামাজের জন্য আসো।
হাইয়া আলাল ফালাহ—২ বার। অর্থ—কল্যাণের দিকে আসো।
আল্লাহু আকবার— ২ বার। অর্থ—আল্লাহ মহান বা বড়।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ—১ বার। অর্থ—আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাসক নেই। (আবু দাউদ, ১/৭১-৭২)

আবু মাহজুরা (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে আজান শিখিয়েছিলেন, তা এমন—

আল্লাহু আকবার—৪ বার। অর্থ—আল্লাহ মহান বা বড়।
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ—২ বার। চুপে চুপে বা নিম্নস্বরে। অর্থ—আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাসক নেই। 
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ—২ বার। চুপে চুপে বা নিম্নস্বরে। অর্থ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। 
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ—২ বার। উঁচু আওয়াজে বা উচ্চৈঃস্বরে। অর্থ—আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই।
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ—২ বার। উঁচু আওয়াজে বা উচ্চৈঃস্বরে অর্থ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।
হাইয়া আলাস সালাহ—২ বার। অর্থ—নামাজের জন্য আসো।
হাইয়া আলাল ফালাহ—২ বার। অর্থ—কল্যাণের দিকে আসো।
আল্লাহু আকবার—২ বার। অর্থ—আল্লাহ মহান বা বড়।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ—১ বার। অর্থ—আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ বা ইলাহ নেই। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯)
 

উভয় পদ্ধতিতে ফজরের আজানে হাইয়া আলাল ফালাহ— ২ বার বলার পর আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম— ২ বার বলতে হবে। অর্থ— ঘুম অপেক্ষা নামাজ উত্তম। (বাইহাকি, ১/৪২৩)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

নামাজে কাতার সোজা করে দাঁড়াতে হয় কেন?

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৫ এএম
আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৮ এএম
নামাজে কাতার সোজা করে দাঁড়াতে হয় কেন?
জামাতে নামাজ আদায়ের ছবি। ইন্টারনেট

জামাতে নামাজ পড়ার জন্য কাতার সোজা করে দাঁড়ানো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নামাজের কাতারগুলো সোজা করে দাঁড়াও। কারণ কাতার সোজা করা নামাজ পূর্ণতার অংশ।’ (বুখারি, হাদিস: ৭২৩; মুসলিম, হাদিস: ৮৬১)

নুমান ইবনে বাশির (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসল্লিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, তোমরা কাতারগুলো সোজা করে নাও। এ কথাটি তিনি তিনবার বলতেন। আরও বলতেন, আল্লাহর কসম করে বলছি, তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নাও, নতুবা আল্লাহ তোমাদের অন্তরে বিভেদ সৃষ্টি করে দেবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৮৬৪)

আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের কাতারে পরস্পর মিলে মিলে দাঁড়াও। একে অপরের নিকটবর্তী হও এবং ঘাড়কে সমানভাবে সোজা করে দাঁড়াও। সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! আমি দেখতে পাই কাতারের কোথাও ফাঁকা থাকলে সেখানে কালো ভেড়ার আকৃতিতে শয়তান ঢুকে পড়ে।’ (আবু দাউদ, হাদিস:৬৬৬)

আরও পড়ুন: টাখনুর নিচে কাপড় থাকলে নামাজ হবে?

জাবের ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে এলেন এবং আমাদের বৃত্তাকার অবস্থায় দেখে বললেন, আমি তোমাদেরকে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখছি কেন? আরও কাছে এসে তিনি বললেন, তোমরা সেভাবে সারিবদ্ধ হচ্ছো না কেন, যেভাবে ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের সামনে সারিবদ্ধ হয়? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, ফেরেশতারা কীভাবে তাদের প্রতিপালকের সামনে সারিবদ্ধ হয়? তিনি বললেন, তারা প্রথম কাতার আগে পূরণ করে এবং প্রাচীরের মতো সারিবদ্ধ হয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ৪৩০)

আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে ফাঁকা বন্ধ করে দাঁড়ায়, এর বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন এবং জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করেন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ৩৮২৪)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

স্বপ্নে টুপি দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫৭ পিএম
স্বপ্নে টুপি দেখলে কী হয়?
টুপির ছবি। পিন্টারেস্ট

টুপি দেখা দূরবর্তী সফর, বিয়ে ও দাসী ক্রয় করার লক্ষণ। মাথায় টুপি পরা রাজত্ব ও কর্তৃত্ব এবং বাদশাহ থেকে সুযোগ-সুবিধা ভোগের লক্ষণ। বাদশাহর শক্তি জোগানদাতার ইঙ্গিত। তবে তা খুলে ফেলা বাদশাহ ও তার মাঝে বিচ্ছেদের ইশারা। যদি কেউ তার টুপি ছেঁড়া বা ময়লা দেখে, তবে যে পরিমাণ ছেঁড়া-ময়লা দেখবে, তার শাসক ততটুকু দুর্ভোগ পোহাবে।

স্বপ্নে যদি কেউ তার মাথা থেকে অপরিচিত যুবক বা অপরিচিত শাসক টুপি খুলে ফেলে, তা হলে শাসকের মৃত্যু হবে। কিংবা উভয়ের মাঝে জীবদ্দশায় বিচ্ছেদ ঘটবে। যদি কোনো ব্যক্তি তার নিজ মাথায় টুপি দেখে, তবে স্বপ্নদ্রষ্টা শাসকের আশ্রয়ে থাকবে। সর্বদা সাদা টুপি পরে অভ্যস্ত ব্যক্তি স্বপ্নে সাদা টুপি দেখলে, প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়বে। অভ্যস্ত না হলে সে প্রকৃত দীনের প্রতি আকৃষ্ট হবে।

যদি কেউ স্বপ্নে দেখে, বাদশাহ লোকদের টুপি দিচ্ছে, তা হলে স্বপ্নদ্রষ্টা প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী হবে। সবার ওপর কর্তৃত্ব লাভ করবে। স্বপ্নে টুপি উল্টা পরিধান করার ব্যাখ্যা হলো, শাসক তাকে কাজে নিয়োগ দেবে। সৎ শাসক যদি স্বপ্নে বাহ্যিক কোনো বিপদের সম্মুখীন হতে দেখে, তবে তার ওপরে কিছু বিপদ আসবে। আল্লাহ মুসলমানদের এর দ্বারা ইজ্জত সম্মান ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী করবেন।

আরও পড়ুন: স্বপ্নে জিন-শয়তান দেখলে কী হয়?

যদি কেউ স্বপ্নে কারুকার্যখচিত টুপি দেখে—যা সাধারণত বুজুর্গ ও নেককার লোকের পরে থাকে, তবে স্বপ্নদ্রষ্টা তাদের মতো হবে এবং সব ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করবে। নিজ টুপি অপবিত্র বা অপরিচ্ছন্ন দেখা স্বপ্নদ্রষ্টার পাপের কথা জানান দেয়। যদি কোনো বিধবা নারী স্বপ্নে তার মাথায় টুপি দেখে, তা হলে আবারও সে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হবে। গর্ভবতী নারী নিজ মাথায় টুপি দেখলে, সে টুপির রং অনুপাতে সন্তান প্রসব করবে।

স্বপ্নে শিয়াল, কাঠবিড়াল বা বেজির মতো প্রাণীর চামড়া দিয়ে তৈরি টুপি দেখলে, যদি তার শাসক বা মনিব খুব প্রভাবশালী হয়, তা হলে ওই মনিব বা শাসক চরম অত্যাচারী হবে। স্বপ্নদ্রষ্টার শাসক বা মনিব ব্যবসায়ী হলে সে অসৎ ব্যবসায়ী বলে বিবেচিত হবে। পক্ষান্তরে, ভেড়া বা মেষের চামড়া দিয়ে তৈরি টুপি দেখা ভালো অর্থ বহন করে।

এক ব্যক্তি স্বপ্নবিশারদের কাছে এসে বলল, আমি আমার এক ফকিহ শত্রুকে কালো গাধার আরোহী দেখেছি—যার পরনে ছিল কালো জামা ও কালো টুপি। তখন তিনি বললেন, কালো টুপি বিচারক হওয়ার ইঙ্গিত। কালো কাপড় এর ব্যাখ্যা হলো, তুমি মন্ত্রী হবে। কালো গাধার ব্যাখ্যা হচ্ছে, নেতৃত্বের পাশাপাশি সম্পদও পাবে।

(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত)  

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

টাখনুর নিচে কাপড় থাকলে নামাজ হবে?

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
টাখনুর নিচে কাপড় থাকলে নামাজ হবে?
নামাজ আদায়রত ব্যক্তির ছবি। পিন্টারেস্ট

পুরুষের জন্য সর্বদা টাখনুর ওপর কাপড় পরা আবশ্যক। তদুপরি নামাজের সময় টাখনুর ওপর কাপড় তোলার বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজের মধ্যে টাখনুর নিচে কাপড় পরে, সে নামাজের মধ্যে আছে নাকি হারামের মধ্যে আছে—তাতে আল্লাহর কিছু আসে-যায় না।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৬৩৭)

নামাজে টাখনুর নিচে কাপড় পরা গুনাহের কাজ। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি এক বেদুঈনকে দেখলেন যে, সে তার লুঙ্গি (টাখনু গিরার নিচে) ঝুলিয়ে নামাজ আদায় করছে। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি নামাজে লুঙ্গি (কাপড় টাখনু গিরার নিচে) ঝুলিয়ে রাখে, সে যেন আল্লাহর হালাল-হারামের সীমারেখার কোনো তোয়াক্কা করল না। (মুজামুল কাবির, তাবরানি হাদিস, ৯৩৬৮)

নামাজে টাখনুর নিচে কাপড় পরা অন্যায় হলেও নামাজ আদায় হয়ে যাবে। এ কারণে নামাজ নষ্ট হবে না। (আরিজাতুল আহওয়াজি, ৭/২৩৭; ফয়জুল বারি, ৪/৩৭৩)

আরও পড়ুন: নামাজে মাথা ঢেকে রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন প্রকার লোকের সঙ্গে আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা হলো—টাখনুর নিচে কাপড় (অন্য বর্ণনায় লুঙ্গি) পরিধানকারী, খোঁটাদানকারী (অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে খোঁটা না দিয়ে কোনো কিছু দান করে না) ও মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়কারী।’ (মুসলিম, হাদিস: ১০৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন,‘যে ব্যক্তি অহংকার বশে তার লুঙ্গি মাটির সঙ্গে টেনে নিয়ে বেড়াবে, কেয়ামত দিবসে আল্লাহতায়ালা তার প্রতি দৃষ্টি দেবেন না।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৬৬৫)

টাখনুর নিচে কাপড়ের যে অংশ থাকবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘টাখনুর নিচে কাপড়ের যেটুকু থাকবে তা জাহান্নামে যাবে।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৫৩৩০) 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

স্বপ্নে জিন-শয়তান দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫৩ পিএম
স্বপ্নে জিন-শয়তান দেখলে কী হয়?
আরবিতে ‘জিন’ লেখা ছবি। ইন্টারনেট

শায়খ আবু সাদ বলেন, নিজেকে জিনে রূপান্তরিত হতে দেখলে, তার চক্রান্ত অত্যন্ত শক্তিশালী হবে। জিনের জাদুমন্ত্র স্বপ্নে দেখা ধোঁকার আলামত। বাড়ির কাছে জিন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে, তার এই স্বপ্ন তিনটির যে কোনো একটির অর্থ বহন করবে। যথা—১. ক্ষতি ও অনিষ্টের প্রতি, ২. অপমান ও লাঞ্ছনার প্রতি ৩. অথবা ওই ওয়াজিব মান্নতের প্রতি—যা সে এখনো আদায় করেনি।

যদি দেখে, জিনকে কোরআন শেখাচ্ছে বা জিনেরা তার কাছ থেকে কোরআন শুনছে, তবে সে নেতৃত্ব এবং শাসনক্ষমতা পাবে। স্বপ্নে যদি দেখে জিনেরা তার ঘরে প্রবেশ করে কোনো কাজ করেছে, তবে তার ঘরে চোর প্রবেশ করবে এবং তার ক্ষতিসাধন করবে। অথবা শত্রুরা তার ঘরে তার ওপর অতর্কিত আক্রমণ করবে।

জিনকে স্বপ্নে দেখলে, দুনিয়া তার ব্যাপারে অত্যন্ত চক্রান্তকারী এবং প্রতারক হবে। শয়তান দীন-দুনিয়া উভয়ের শত্রু, ধোঁকাবাজ, প্রতারক ও ধূর্ত এবং উদাসীন, কারও সে পরোয়া করে না।

শয়তানকে স্বপ্নে দেখার ব্যাখ্যা মাঝে-মধ্যে বাদশা বা কখনো স্ত্রী হয়ে থাকে। যদি দেখে, বিচরণকারী শয়তানের দল তাকে স্পর্শ করেছে, অথচ সে আল্লাহতায়ালার জিকিরে লিপ্ত, তা হলে বুঝতে হবে, তার অনেক শত্রু আছে। যারা তাকে ধ্বংস করতে চায়। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। কারণ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘যাদের অন্তরে আল্লাহতায়ালার ভয় আছে, যখনই তাদের ওপর শয়তানের আগমন ঘটে, তখনই তারা সাবধান হয়ে যায় বা আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করে এবং তাদের বিবেচনা শক্তি জাগ্রত হয়ে ওঠে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ২০১) 

আরও পড়ুন: স্বপ্নে জান্নাত এবং জান্নাতের নেয়ামত দেখলে কী হয়?

যদি দেখে, উৎক্ষিপ্ত অগ্নিগোলক শয়তানকে ধাওয়া করছে, তবে তা তার দীন থাকার লক্ষণ। শয়তান স্বপ্নদ্রষ্টাকে ভয় দেখাতে দেখা, তার দীনে একনিষ্ঠতার আলামত। যে ভয়ের আশঙ্কায় সে আছে, তা থেকে নিরাপত্তার আলামত। কারণ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৫) 

শয়তানকে আনন্দিত দেখলে, বুঝতে হবে সে কামোত্তেজক কাজে লিপ্ত আছে। যদি দেখে, শয়তান তার পোশাক ছিনিয়ে নিয়েছে, সে প্রশাসক হলে, তার বেলায়েত বা প্রশাসন ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়া হবে। ভূ-সম্পত্তির মালিক হলে তার সম্পত্তি নষ্ট হবে।

শয়তান তাকে স্পর্শ করতে বা ঘা মারতে দেখলে, তার এমন শত্রু থাকবে, যে তার স্ত্রীর ওপর ব্যভিচারের অপবাদ রটাবে ও ধোঁকায় পতিত করবে। কারও মতে, ওই স্বপ্ন তার অসুস্থ থেকে সুস্থতা লাভ করা এবং চিন্তামুক্ত হওয়ার আলামত।

যদি দেখে, শয়তান তার পেছনে পেছনে ধাওয়া করছে, তবে তার শত্রু রয়েছে। যে তাকে ধোঁকায় ফেলবে। তার আমল ও মান মর্যাদার ক্ষতি করবে। যদি দেখে, সে শয়তানের মালিক হয়েছে এবং শয়তানরা তার আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকার করেছে, তবে সে নেতৃত্ব লাভ করবে। তার ব্যক্তিত্বের প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে এবং দুশমনদের পদানত করতে পারবে। শয়তানকে বন্দি করতে দেখলে আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। যদি দেখে, শয়তান তার ওপর অবতরণ করেছে, তবে সে গুনাহে লিপ্ত হবে এবং মিথ্যা কথা বলবে।

শয়তানের সঙ্গে কানে কানে কথা বলতে দেখলে, সে তার দুশমনদের সঙ্গে পরামর্শ করবে এবং সৎলোকদের বিরুদ্ধে তাদেরকে সাহায্য করবে। কিন্তু সফল হবে না। যদি দেখে, শয়তান তাকে কোনো কথা শিক্ষা দিচ্ছে, তবে সে মিথ্যা অপবাদকারীদের মতো কথা বলবে। অথবা মানুষকে ধোঁকা দেবে। অথবা মিথ্যা কবিতা আবৃত্তি করবে।

(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত)  

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

নামাজে মাথা ঢেকে রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৩ এএম
নামাজে মাথা ঢেকে রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
জামাতে নামাজ আদায়ের ছবি। পিন্টারেস্ট

রাসুলুল্লাহ (সা.) টুপি মাথায় দিয়ে নামাজ আদায় করেছেন—সে মর্মে সহিহ কোনো বর্ণনা না পাওয়া গেলেও তিনি যে নামাজে পাগড়ি পড়েছেন, সেটা নিশ্চিত। জাবের ইবনে আমর ইবনে হুরায়েস (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পাগড়ি ও মোজার ওপর মাসেহ করতে দেখেছি।’ (বুখারি, হাদিস: ২০৫)

সুতরাং পাগড়ি পরে নামাজ আদায় করা সুন্নত। আর খালি মাথায় নামাজ পড়ার তুলনায় নামাজে মাথা ঢেকে রাখা উত্তম। তবে কোনো ওজর কিংবা প্রতিবন্ধকতার কারণে নামাজের সময় টুপি পরিধান করতে না পারলে সমস্যা নেই। খালি মাথায় নামাজ আদায়ের অভ্যাস করে নেওয়া অনুত্তম।
 
আল্লামা নিজামুদ্দিন (রহ.) বলেন, ‘পাগড়ি (অথবা টুপি ইত্যাদি) থাকা অবস্থায় গাফলতি কিংবা নামাজকে গুরুত্বহীন মনে করে খালি মাথায় নামাজ আদায় করা মাকরুহ। কিন্তু টুপিবিহীন খোলা মাথায় নামাজ আদায় যদি খুশুখুজু (আল্লাহর ভয় ও তাঁর প্রতি বিনয়-নম্রতা) প্রকাশের জন্য হয়, তাহলে সমস্যা নেই; বরং এটি প্রশংসনীয়।’ (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি, ১/১০৬)

আরও পড়ুন: নামাজে শরীরের কতটুকু অংশ ঢেকে রাখতে হয়?

আল্লামা আলাউদ্দিন হাসকাফি (রহ.) বলেন, ‘গাফিলতির কারণে খোলা মাথায় নামাজ আদায় করা মাকরুহ। কিন্তু যদি এটি হয় অক্ষমতা কিংবা প্রতিবন্ধকতার কারণে, তাহলে অসুবিধা নেই।’ 

নামাজের মধ্যে কারও মাথা থেকে টুপি পড়ে গেলে সম্ভব হলে এক হাত দিয়ে টুপিটি উঠিয়ে আবার মাথায় দেবে। জুহাইর (রহ.) বলেন, ‘আমি প্রখ্যাত তাবেয়ি আবু ইসহাক সাবিয়িকে দেখেছি, তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ পড়েছেন। তিনি মাটি থেকে টুপি উঠিয়ে মাথায় পরেছেন।’ (তাবাকাতে ইবনে সাদ, ৬/৩১৪)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক