ঢাকা ২৬ কার্তিক ১৪৩১, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

স্বপ্নে মৃত ব্যক্তির বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০৫ পিএম
স্বপ্নে মৃত ব্যক্তির বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা
কবরস্থানের সামনে এক যুবক। এআই

মৃত ব্যক্তিকে মাথার অভিযোগ করতে দেখলে বুঝতে হবে, সে পিতামাতার হকের ব্যাপারে বা তার প্রশাসকের হকের ব্যাপারে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি করেছে, সে সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃত ব্যক্তিকে ঘাড়ের অভিযোগ করতে দেখলে বুঝতে হবে, তাকে স্ত্রীর মোহর আদায় না করা অথবা অহেতুক সম্পদ নষ্ট করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতকে হাতের অভিযোগ করতে দেখলে, বুঝতে হবে, তাকে ভাইবোন বা অংশীদারের হক অথবা মিথ্যা কসম খাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 

মৃতকে এক পার্শ্বের অভিযোগ করতে দেখার ব্যাখ্যা হলো, তাকে স্ত্রীর হক সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতকে পেটের অভিযোগ করতে দেখলে বুঝতে হবে, তাকে পিতা, নিকট আত্মীয়-স্বজন অথবা সম্পদের হক সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতকে পায়ের অভিযোগ করতে দেখা, তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্যত্র সম্পদ খরচ করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার আলামত। মৃতকে রান বা ঊরু সম্পর্কে অভিযোগ করতে দেখলে বুঝতে হবে, তাকে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতকে পায়ের গোছা সম্পর্কে অভিযোগ করতে দেখা, তাকে অন্যায় পথে জীবন ধ্বংস করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার ইঙ্গিত।

যদি দেখে মৃত ব্যক্তি তাকে কোথাও থেকে ডাকছে, কিন্তু তাকে দেখছে না, কিন্তু তার ডাকে সাড়া দিয়ে এমনভাবে বের হয়েছে যে, নিজেকে ফিরিয়ে রাখতে পারছে না; এর ব্যাখ্যা হলো, মৃত ব্যক্তি যে রোগে বা কারণে মারা গেছে, সেও ওই রোগে বা কারণে মারা যাবে। যেমন দেয়াল ধসে, পানিতে ডুবে বা আকস্মিক দুর্ঘটনা ইত্যাদিতে পতিত হয়ে।

মৃত ব্যক্তির পেছনে পেছনে চলে এক অপরিচিত ঘরে প্রবেশ করতে এবং সেখান থেকে আর বের না হওয়ার ব্যাখ্যা হলো, সে মারা যাবে। যদি দেখে মৃত ব্যক্তি তাকে বলছে, তুমি অমুক সময় মারা যাবে, তা হলে তার কথা সত্য। কেননা সে সত্যের ঘরে পৌঁছেছে। যদি দেখে মৃত ব্যক্তির পেছনে পেছনে চলেছে, কিন্তু তার সঙ্গে কোনো ঘরে প্রবেশ করেনি বা প্রবেশ করলেও সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে চলে এসেছে, তা হলে সে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছেও বেঁচে যাবে। মৃত ব্যক্তির সঙ্গে সফর করতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা তার কাজ সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবে।

মৃত ব্যক্তি স্বপ্নদ্রষ্টাকে দুনিয়ার কোনো প্রিয় বস্তু দান করেছে দেখলে, যেখান থেকে তার কোনো আশা ছিল না সেখান থেকে কল্যাণ ও বরকত পাবে। যদি দেখে মৃত ব্যক্তি তাকে নতুন বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামা দিয়েছে, তা হলে মৃত ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় যেমন জীবিকা লাভ করেছিল, সেও তেমন জীবিকা পাবে। মৃত ব্যক্তি স্বপ্নদ্রষ্টাকে চাদর দিতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা মৃত ব্যক্তির মতো পদমর্যাদা ও সম্মান পাবে। পুরাতন ছেঁড়া-ফাটা কাপড় দিতে দেখলে সে দরিদ্র হবে। ময়লা কাপড় দিতে দেখলে গুনাহে লিপ্ত হবে। খাদ্য দিতে দেখলে এমন স্থান থেকে সম্মানের জীবিকা পাবে, যেখান থেকে পাওয়ার কল্পনাও ছিল না। মৃতের পক্ষ থেকে মধু দিতে দেখলে যেখান থেকে কোনো আশা ছিল না, সেখান থেকে গনিমতলব্ধ সম্পদ পাবে। মৃতের পক্ষ থেকে বাঙ্গি দিতে দেখলে যার কল্পনা সে কখনো করোন, সেই দুশ্চিন্তায় পতিত হবে।

মৃত ব্যক্তিকে ওয়াজ-নসিহত করতে বা কোনো এম শেখাতে দেখলে সেই পরিমাণ ধর্মীয় কল্যাণ পাবে, যেই পরিমাণ যে তাকে নসিহত করেছে বা ইলম শিখিয়েছে। যদি কেউ মৃত ব্যক্তিকে কাপড় দিতে দেখে, কিন্তু সে তা খোলেনি বা পরিধানও করেনি, তা হলে তার সম্পদের ক্ষতি হবে অথবা সে অসুস্থ হবে, কিন্তু অবশেষে সুস্থ হয়ে উঠবে। মৃতকে পরিধান করানোর জন্য কাপড় দিতে দেখলে সে মারা যাবে এবং কাপড়ের মালিকানা জীবিতের হাত থেকে চলে যাবে।

জীবিতের পক্ষ থেকে মৃতকে কোনো কিছু দেওয়া উত্তম নয়; তবে দুটি ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। এক. বাঙ্গি দিতে দেখলে, ধারণাতীত ভাবে তার চিন্তা দূর হবে। দুই. মৃত চাচা বা ফুফুকে কোনো কিছু দিতে দেখলে তার ঋণ পরিশোধ হবে।

(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত)  

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

মূল্যবৃদ্ধির আশায় পণ্য গুদামজাত করা যাবে?

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ এএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
মূল্যবৃদ্ধির আশায় পণ্য গুদামজাত করা যাবে?
পণ্য গুদামজাতের ছবি। ইন্টারনেট

প্রশ্ন: গত ধানের মৌসুমে আমি ৯০০ টাকা দরে ৪০ মণ ধান কিনে রেখেছি। কয়েক মাস পরে ধানের দাম বাড়লে সেগুলো বিক্রি করব। স্বাভাবিকভাবে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ধানের দাম বাড়ে। তখন ধানগুলো বিক্রি করার ইচ্ছা করেছি। কিন্তু শুনেছি, ইসলামে পণ্য মজুত করে রাখা নিষেধ। জানার বিষয় হলো, আমার এ কাজ কী শরিয়ত-নিষিদ্ধ মজুতের আওতায় পড়বে নাকি এভাবে ব্যবসা করা আমার জন্য বৈধ হবে? 

নাদিম আহমেদ, মুন্সিগঞ্জ

উত্তর: প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি যে পরিমাণ ধান কিনে রেখেছেন এর পরিমাণ যেহেতু সামান্য, যার কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়বে না এবং এলাকায় ধানের সংকট তৈরি হবে না, তাই তা শরিয়ত-নিষিদ্ধ মজুতকরণের আওতায় পড়বে না। কিন্তু একই এলাকায় বহু মানুষ এ পরিমাণ ধান (বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য) কিনে মজুত করে রাখে, যার ফলে এলাকায় ধানের সংকট দেখা দেয় এবং বাজারে ধানের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, তাহলে তখন তা অন্যায় ও গুনাহের কাজ হবে। (বাদায়েউস সানায়ে, ৪/৩০৮; আদ দুররুল মুখতার, ৬/৩৯৮)

তবে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা লাভের আশায় নিজের খেতের ফসল বিক্রি না করে মূল্যবৃদ্ধির অপেক্ষায় রেখে দেওয়া শরিয়ত নিষিদ্ধ মজুতদারির অন্তর্ভুক্ত নয় এবং নাজায়েজও নয়।

পণ্য মজুতের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়ানো নাজায়েজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পণ্য মজুত করে রাখবে সে গুনাহগার হবে। (মুসিলম, হাদিস: ১৬০৫)

আরও পড়ুন: কাস্টমার শরবতের গ্লাস ভাঙলে জরিমানা নেওয়া যাবে?

যেসব ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বাড়তি মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যবসা করে, তারা কখনো প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। তারা কখনো জান্নাতে যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো কৃপণ, ছদ্মবেশধারী ধোঁকাবাজ, খিয়ানতকারী ও অসচ্চরিত্র ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথম যারা জান্নাতের দরজার কড়া নাড়বে, তারা হবে দাস-দাসী, যদি তারা আল্লাহ ও তাদের মনিবের সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৩২) 

লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক

রুকুতে পিঠ ও মাথা সোজা রাখতে হয়

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৭ পিএম
রুকুতে পিঠ ও মাথা সোজা রাখতে হয়
রুকু আদায়রত ব্যক্তির ছবি। ইন্টারনেট

রুকুতে পিঠ ও মাথা সোজা রাখতে হবে। শরীরের পার্শ্বদেশের সঙ্গে হাত না মিলিয়ে ডান হাঁটুর ওপর ডান হাত এবং বাম হাঁটুর ওপর বাম হাত রেখে উভয় হাতের আঙুলগুলো ছড়িয়ে রাখতে হবে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন রুকু করতেন তখন ঘাড় থেকে মাথা নিচু করতেন না, উঁচুও করতেন না; বরং একই সমতলে রাখতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯৯৭)

আবু হুমাইদ সাইদি (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখেছি, তিনি যখন নামাজ শুরু করতেন তখন তাকবির বলে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। আর যখন রুকু করতেন তখন দুই হাত দিয়ে হাঁটু শক্তভাবে ধরতেন এবং পিঠ সমান করে রাখতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৮২৮)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রুকুতে হাতের তালু দিয়ে মজবুতভাবে হাঁটু ধরতেন, হাতের আঙুলগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন রাখতেন এবং মাথা পিঠের সঙ্গে সমান্তরাল রাখতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৭৩১)। আরেক হাদিসে এসেছে, ‘রুকুতে দুই হাতকে রাসুলুল্লাহ (সা.) পার্শ্বদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৭৩৪)

আরও পড়ুন: তাকবির বলে ধীরস্থিরভাবে রুকুতে যেতে হবে

ওয়াবিসা ইবনে মাবাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে নামাজ আদায় করতে দেখেছি। তিনি যখন রুকু করতেন, তখন তার পিঠ এমনভাবে সোজা করতেন, যেন তার ওপর পানি ঢাললেও তা স্থির থাকবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৮৭২)

রুকুতে মাথা, পিঠ, কোমর বরাবর না করে বা পিঠ বিছিয়ে না রেখে উঁচু করে রাখা কিংবা মাথা নিচু করে রাখা মাকরুহ। রুকুতে হাঁটু বাঁকা করে রাখা, সামনের দিকে বাড়িয়ে রাখা নাজায়েজ। কিরাত পাঠের পর তাকবির বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে কমপক্ষে তিনবার রুকুর তাসবিহ (সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম) পড়তে হয়। (আবু দাউদ, হাদিস, ৮৮৯)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

‘ইয়াহইয়া সিনওয়ারের বই ফিলিস্তিনকে যুগ যুগ জাগরুক রাখবে’

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ পিএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
‘ইয়াহইয়া সিনওয়ারের বই ফিলিস্তিনকে যুগ যুগ জাগরুক রাখবে’
‘কাঁটা ও ফুল’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ার রচিত ‘কাঁটা ও ফুল’ বইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘ইয়াহইয়া সিনওয়ারের এ বই ফিলিস্তিনকে যুগ যুগ জাগরুক রাখবে।’

আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) বাদ মাগরিব জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম পূর্ব চত্বরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বইমেলা-২০২৪ এ ইলহাম আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বইটি নিয়ে লেখক, কবি ও অনুবাদকরা আলোচনা করেন। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক, লেখক ও সম্পাদক মনযূর আহমাদ, কবি ও অনুবাদক জহির হাসান, মুফতি ও শায়খুল হাদিস জুবাইর আহমদ আশরাফ, বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরামের সভাপতি কবি মুনীরুল ইসলাম, লেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর, অনুবাদক রাকিবুল হাসান ও অনুবাদক আবদুল্লাহ আল ফারুক প্রমুখ। 

বক্তারা তাদের আলোচনায় লেখক শহিদ সিনওয়ার এবং ফিলিস্তিনের চলমান সংঘাত, স্বাধীনতা আন্দোলন এবং বিপ্লব বিষয়ে আলোচনা করেন। তাদের আলোচনায় ফিলিস্তিনের সাহিত্য ও শিল্প সংস্কৃতির বৃত্তান্তও উঠে আসে। তারা অভিমত ব্যক্ত করেন যে, ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে সামগ্রিক চিত্রকল্প অবহিত হওয়ার জন্য ইয়াহইয়া সিনওয়ার রচিত ‘কাঁটা ও ফুল’ বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের অনন্য সংযোজন ৷ 

বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইলহাম। অনুবাদ করেছেন মনযূরুল হক।

রায়হান/মিরাজ রহমান 

কাস্টমার শরবতের গ্লাস ভাঙলে জরিমানা নেওয়া যাবে?

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ এএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩১ এএম
কাস্টমার শরবতের গ্লাস ভাঙলে জরিমানা নেওয়া যাবে?
শরবত বিক্রেতার ছবি। ইন্টারনেট

প্রশ্ন: আমি রাস্তায় ফলমূল ও লেবুর শরবত বিক্রি করি। কখনো শরবত পান করার সময় কাস্টমারের হাত থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে গ্লাস পড়ে ভেঙে যায়। এক্ষেত্রে কাস্টমারের থেকে ওই গ্লাসের জরিমানা আমি নিতে পারব কি? 

হুসাইন আহমাদ, ঢাকা

উত্তর: কাস্টমারের হাত থেকে গ্লাস পড়ে যাওয়ার পেছনে যদি কাস্টমারের অবহেলা না থাকে; যেমন—ভালোভাবে না ধরা, তাহলে এক্ষেত্রে তার থেকে গ্লাসের জরিমানা দাবি করা বৈধ নয়। অবশ্য গ্লাসটি তার হাতে যাওয়ার পর সেটিকে যদি সে ভালোভাবে না ধরে কিংবা তার কোনো অবহেলার কারণে যদি সেটি পড়ে ভেঙে যায়, তাহলে তার থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন। সে যদি সাধারণ নিয়মে সতর্কতার সঙ্গে গ্লাসটি ধরে; এর পরও হাত ফসকে পড়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে এর ক্ষতিপূরণ দাবি করা জায়েজ হবে না।

আরও পড়ুন: মসজিদে বিপদগ্রস্তের জন্য সাহায্য চাওয়া যাবে?

তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, কোনো ধরনের ত্রুটি বা অবহেলা কাস্টমারের ত্রুটি বা অবহেলা গণ্য করা হবে তা নির্ণয় করা সূক্ষ্ম বিষয়। মাসয়ালার হুকুমের ওপরই নির্ভরশীল। অতএব বাস্তবে কখনো এমন ঘটলে কোনো বিজ্ঞ মুফতির কাছে ঘটনার পুরো বিবরণ দিয়ে মাসয়ালা জেনে নিতে হবে। (ফাতাওয়া খানিয়া, ৩/৩৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া, ৪/৩৬৮)

মুহাম্মাদ ইবনে সিরিন (রহ.) শ্রমিকের ওপর ওই সময় ক্ষতিপূরণ আরোপ করতেন যখন শ্রমিকের অবহেলা ও ত্রুটি প্রমাণিত হতো। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ২০৮৬৭)

লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক

সৎ সাংবাদিকতা অন্যতম ইবাদত

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২০ পিএম
সৎ সাংবাদিকতা অন্যতম ইবাদত
প্রতীকী ছবি।

সাংবাদিকতা শব্দটি এসেছে সংবাদ থেকে। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ নিউজ। আরবি প্রতিশব্দ খবর, হাদিস বা নাবা। নাবা শব্দ থেকেই নবির উৎপত্তি। নবি অর্থ সংবাদদাতা, সংবাদবাহক, দূত ইত্যাদি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রত্যেক নবিই একেকজন সাংবাদিক, সংবাদদাতা বা বার্তাবাহক। কোরআন ও হাদিসে নাবা শব্দটি বহুবার এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাণীকেও এক অর্থে সংবাদ বা খবর বলা হয়। প্রত্যেক নবি-রাসুল আল্লাহর দেওয়া সংবাদ বা বার্তা পৃথিবীর মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁরা আল্লাহর বাণীর সংবাদকর্মী। 

একজন সৎ সংবাদকর্মীর খবর সংগ্রহ ও পরিবেশন সমাজে কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। হাদিসে সাধারণ মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ কামনাকে দ্বীন আখ্যা দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীন হলো নসিহত বা কল্যাণ কামনা। আমরা বললাম, কার জন্য? তিনি বলেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য, মুসলিম শাসকদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানের জন্য।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৪)

গণমানুষের কল্যাণে কাজ করা সুস্থ ও সৎ সাংবাদিকতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। ভালো কথার মাধ্যমে মানুষের উপকার করা সওয়াবের কাজ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং ভালো কাজ করে, তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে ফেরদাউসের বাগান।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ১০৭)

হাদিসে ভালো কথাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাধ্যম বলা হয়েছে। আদি বিন হাতিম (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা এক টুকরো খেজুরের বিনিময়ে হলেও আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করো। খেজুরের টুকরো না পেলে ভালো কথার মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করো।’ (মুসলিম, হাদিস: ২২২১)

যেকোনো বিষয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া গুরুতর পাপ। মানুষের কাছে সত্যকে মিথ্যা বলে প্রচার করা এবং মিথ্যাকে সত্য বলে বেড়ানো আরও ভয়াবহ গুনাহ। মানুষের মুখের কথা বা হাতের লেখা যেমন পুণ্য অর্জনের মাধ্যম হতে পারে, তেমনি পাপের কারণও হতে পারে। তাই যেকোনো সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সত্যতা যাচাই জরুরি। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর সে বিষয়ের পেছনে ছোটো না, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। কান, চোখ আর অন্তর—এগুলোর সব বিষয়ে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৬)

সততা একজন সাংবাদিকের সবচেয়ে বড় গুণ। সাংবাদিকের উচিত নয়, মনমতো লেখা। ইচ্ছা করেই ভুল লেখা বা সত্যতা যাচাই না করে সংবাদ পরিবেশন করা সুস্থ সাংবাদিকতার বিপরীত কাজ। অন্যায়ও বটে। সৎ সাংবাদিকতা অন্যতম ইবাদত। 

মানবকল্যাণের জন্য সত্য সংবাদ পৌঁছে দিতে হবে। তাই সংবাদ সংগ্রহের সময় চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। সাংবাদিকতার পেশা দ্বারা যেভাবে ইসলাম, দেশ ও মানুষের কল্যাণ করা সম্ভব, তেমনি এর দ্বারা ক্ষতি করাও সম্ভব। সৎ ও সুস্থ সাংবাদিকতা এবং কল্যাণকর কাজে সংবাদ পরিবেশন করা হলে সওয়াব পাওয়া যাবে। বিপরীতে মিলবে গুনাহ। 

 

লেখক: সহকারী শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, পাংশা