নামাজের জন্য পুরুষের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং নারীর মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের গোড়ালি ছাড়া পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখতে হবে। নামাজে কিংবা নামাজের বাইরে শরীরের যে অংশ ঢেকে রাখা ফরজ, সেই অংশকে শরিয়তের পরিভাষায় সতর বলা হয়। পুরুষের সতর হলো নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। মাহরামের (যার সঙ্গে পর্দা ফরজ নয়) সামনে নারী মাথা, চুল, গর্দান, কান, হাত, পা, টাখনু, চেহারা, গর্দানসংশ্লিষ্ট সিনার ওপরের অংশ ছাড়া বাকি শরীর ঢেকে রাখতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ৫/৩২)
বিনা কারণে পুরুষের মাথা, পেট-পিঠ, হাতের কনুই খোলা রেখে নামাজ পড়লে তা আদায় হয়ে গেলেও মাকরুহ হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১০৬)
ঢেকে রাখা অঙ্গগুলোর কোনো একটির এক-চতুর্থাংশ বা এর অধিক ইচ্ছাকৃত এক মুহূর্তের জন্য খুললেও নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃত এক-চতুর্থাংশ বা ততধিক খুলে যায়, তাহলে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। এক-চতুর্থাংশের কম খোলা থাকলে নামাজ নষ্ট হবে না। (রদ্দুল মুহতার, ১/৩৭৯, তাবইনুল হাকায়েক, ১/৯৭)
যার সঙ্গে পর্দা ফরজ, তাদের সামনে পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখতে হবে। তবে বেশি প্রয়োজনে চেহারা, পা ও হাত খুলতে পারবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আদমসন্তান, আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, যা তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দূষণীয় তা আবৃত করে এবং যা শোভাস্বরূপ। বস্তুত তাকওয়ার যে পোশাক, সেটাই সর্বোত্তম। এসব মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলির অন্যতম, যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ২৬)
আরও পড়ুন: নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা ফরজ
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘উরু (পুরুষের) সতরের অন্তর্ভুক্ত।’ (বুখারি, ১/৫৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো পুরুষ অন্য পুরুষের সতরের দিকে তাকাবে না। পুরুষের সতর হলো নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত।’ (আবু দাউদ)
জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কাপড় যদি বড় হয় তাহলে গোটা শরীর আবৃত করো। আর কাপড় যদি ছোট হয়, তাহলে লুঙ্গির মতো পরিধান করো।’ (বুখারি, ১/৫২)
শরয়ি প্রয়োজন ছাড়া কারও সামনে সতরের কোনো অংশ খোলা হারাম। অপারেশন কিংবা রোগ নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে প্রয়োজন পরিমাণে ডাক্তারের সামনে সতর খোলার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের জন্য শুধু নির্ধারিত জায়গাটি দেখার অনুমতি রয়েছে।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক