ঢাকা ২১ কার্তিক ১৪৩১, বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪

টাখনুর নিচে কাপড় থাকলে নামাজ হবে?

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
টাখনুর নিচে কাপড় থাকলে নামাজ হবে?
নামাজ আদায়রত ব্যক্তির ছবি। পিন্টারেস্ট

পুরুষের জন্য সর্বদা টাখনুর ওপর কাপড় পরা আবশ্যক। তদুপরি নামাজের সময় টাখনুর ওপর কাপড় তোলার বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজের মধ্যে টাখনুর নিচে কাপড় পরে, সে নামাজের মধ্যে আছে নাকি হারামের মধ্যে আছে—তাতে আল্লাহর কিছু আসে-যায় না।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৬৩৭)

নামাজে টাখনুর নিচে কাপড় পরা গুনাহের কাজ। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি এক বেদুঈনকে দেখলেন যে, সে তার লুঙ্গি (টাখনু গিরার নিচে) ঝুলিয়ে নামাজ আদায় করছে। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি নামাজে লুঙ্গি (কাপড় টাখনু গিরার নিচে) ঝুলিয়ে রাখে, সে যেন আল্লাহর হালাল-হারামের সীমারেখার কোনো তোয়াক্কা করল না। (মুজামুল কাবির, তাবরানি হাদিস, ৯৩৬৮)

নামাজে টাখনুর নিচে কাপড় পরা অন্যায় হলেও নামাজ আদায় হয়ে যাবে। এ কারণে নামাজ নষ্ট হবে না। (আরিজাতুল আহওয়াজি, ৭/২৩৭; ফয়জুল বারি, ৪/৩৭৩)

আরও পড়ুন: নামাজে মাথা ঢেকে রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন প্রকার লোকের সঙ্গে আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা হলো—টাখনুর নিচে কাপড় (অন্য বর্ণনায় লুঙ্গি) পরিধানকারী, খোঁটাদানকারী (অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে খোঁটা না দিয়ে কোনো কিছু দান করে না) ও মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়কারী।’ (মুসলিম, হাদিস: ১০৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন,‘যে ব্যক্তি অহংকার বশে তার লুঙ্গি মাটির সঙ্গে টেনে নিয়ে বেড়াবে, কেয়ামত দিবসে আল্লাহতায়ালা তার প্রতি দৃষ্টি দেবেন না।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৬৬৫)

টাখনুর নিচে কাপড়ের যে অংশ থাকবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘টাখনুর নিচে কাপড়ের যেটুকু থাকবে তা জাহান্নামে যাবে।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৫৩৩০) 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

রুকুতে যাওয়ার আগে সামান্য বিরতি নিতে হয় কেন?

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম
রুকুতে যাওয়ার আগে সামান্য বিরতি নিতে হয় কেন?
কিরাত পাঠ শেষ করে সামান্য বিরতি নিয়ে রুকু করতে হয়। ছবি: ইন্টারনেট

নামাজে দাঁড়িয়ে কিরাত পাঠ শেষ করার পর সঙ্গে সঙ্গে রুকুতে না গিয়ে সামান্য বিরতি নিয়ে রুকু করতে হবে। সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে (নামাজে) দুটি বিরতির জায়গা মুখস্থ করেছি। আর ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) বলেন, আমি (নামাজে) একটি বিরতির জায়গা মুখস্থ করেছি। সামুরা (রা.) বলেন, আমরা এর মীমাংসার জন্য মদিনায় উবাই ইবনে কাব (রা.)-এর কাছে চিঠি লিখলাম। তিনি উত্তরে জানালেন, সামুরা (রা.) সঠিক মুখস্থ রেখেছ। সাইদ (রহ.) বলেন, আমরা কাতাদাকে (রা.) জিজ্ঞাসা করলাম, (নামাজে) বিরতি দুটি কোন কোন জায়গায়? তিনি বললেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে প্রবেশ করতেন মানে তাকবিরে তাহরিমা বলার পর এবং যখন তিনি কিরাত শেষ করতেন মানে রুকুতে যাওয়ার আগে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৫১)

জামাতের নামাজে ইমাম তাকবির বলে পুরোপুরি রুকুতে যাওয়ার পর মুক্তাদিদের রুকু করতে হবে। ইমামের আগে, বহু পরে ও সমানতালে কোনো রুকন আদায় করা যাবে না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি কি ভয় পাচ্ছে না, যে ইমামের আগেই রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে নেয়, আল্লাহতায়ালা তার মাথাকে গাধার মাথায় রূপান্তরিত করবেন বা তার গঠনকে গাধার গঠনে পরিণত করবেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৯১) 

আরও পড়ুন: স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে কোরআন তেলাওয়াত করতে হয়

আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইমাম তোমাদের আগেই রুকু করবেন এবং তোমাদের আগেই রুকু থেকে মাথা উঠাবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৪০৪)

ইমামের আগে কখনো কোনো রুকন আদায় করা যাবে না। ইমাম রুকু করার পর রুকু, সিজদা করার পর সিজদা, ওঠা-বসার পর ওঠা-বসা ও সালাম আদায়ের পর মুক্তাদি সালাম আদায় করবে। আনাস (সা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমার আগে রুকু, সিজদা, ওঠা-বসা ও সালাম আদায় করো না।’ (মুসলিম, হাদিস: ৪২৬) 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

 

সন্তান প্রসবের সময় নারী মারা গেলে সওয়াব পাবে?

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৪ এএম
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৫ এএম
সন্তান প্রসবের সময় নারী মারা গেলে সওয়াব পাবে?
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

প্রশ্ন: অনেক সময় সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু হয়। এমন মায়ের জন্য বিশেষ সওয়াব আছে কি?

আশরাফ হাসান, বগুড়া

উত্তর: পবিত্র কোরআনে মায়ের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করে মাকে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে, ‘তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভধারণ করেছেন এবং দুই বছর দুগ্ধপান করিয়েছেন।’ (সুরা লোকমান, আয়াত: ১৪)। একজন গর্ভবতীর জন্য মহান আল্লাহ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। গর্ভকালে সে আল্লাহর পথে সর্বদা রোজা পালনকারী ও সারা রাত নফল ইবাদতকারীর মতো সওয়াব পায়। তার যখন প্রসবব্যথা শুরু হয়, তখন তার জন্য নয়ন শীতলকারী কী কী নেয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান-জমিনের কোনো অধিবাসী জানে না। সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোঁটার পরিবর্তে একটি করে নেকি দেওয়া হয়। এই সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে (অসুখ ইত্যাদির কারণে বিরক্ত করে মাকে ঘুমাতে না দেয়), তা হলে সে আল্লাহর পথে নিখুঁত ৭০টি দাস আজাদ করার সওয়াব পাবে। (তাবরানি, হাদিস: ৬৯০৮)

সন্তান প্রসবের সময় নারী মারা গেলে শহিদের মর্যাদা পায়। তার আমলনামায় অনেক সওয়াব লেখা হয়। সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে শহিদ। পানিতে ডুবে মরলে শহিদ। পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকরী শহিদ এবং যে স্ত্রীলোক সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যায়, সেও শহিদ।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৫৩০৭)

আরও পড়ুন: হাতের কনুই দেখা গেলে নামাজ হবে?

হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, ইবনুত তিন (রহ.) বলেছেন, ‘এমন মৃত্যু অনেক কষ্টের। আল্লাহতায়ালা উম্মতে মুহাম্মাদির ওপর অনুগ্রহ করে এমন মৃত্যু তাদের জন্য গুনাহ মাফ ও সওয়াব বৃদ্ধির মাধ্যম বানিয়েছেন। এর মাধ্যমেই আল্লাহতায়ালা তাদের শহিদের মর্যাদায় উন্নীত করবেন।’ (ফাতহুল বারি, ৬/৫২)

শুধু সওয়াব ও মর্যাদার দিক থেকে তারা শহিদের মতো। তবে তাদের গোসল ও কাফন সাধারণ মৃতদের মতোই হবে। (ফাতহুল কাদির, ২/১০৩; আদ-দুররুল মুখতার, ২/২৫২)

লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক

স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে কোরআন তেলাওয়াত করতে হয়

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৭ পিএম
স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে কোরআন তেলাওয়াত করতে হয়
পবিত্র কোরআনের ছবি। ইন্টারনেট

নামাজে তারতিলের (স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে) সঙ্গে পরিষ্কারভাবে কিরাত পাঠ করা বা কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। কারণ আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘আর কোরআন তেলাওয়াত করুন ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ৪)

হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কোরআনকে তোমাদের সুর দিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত করো।’ (ইবনে মাজহ, হাদিস : ১৩৪২)

নামাজে লাহনে জলি বা মারাত্মক ভুল পড়ার দ্বারা নামাজ নষ্ট হয়ে যায় এবং লাহনে খফি বা অসুন্দর পড়ার দ্বারা নামাজ মাকরুহ হয়ে যায়। মারাত্মক ভুল যেমন—ভিন্ন মাখরাজের ভুল উচ্চারণ। যদিও শুনতে কাছাকাছি মনে হয়। হরকত বা জের, জবর ও পেশের পরিবর্তন। যার দ্বারা অর্থের সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায়, এমনকি কুফরিও হয়ে যায়। মদের হরফকে টেনে না পড়া। 

আরও পড়ুন: জোহর-আসর নামাজে অনুচ্চস্বরে কিরাত পড়তে হয় কেন?

অসুন্দর পড়া যেমন—গুন্নাহ, ঈদগাম, ইজহার, ইখফা ও কলকলা ইত্যাদি যথাযথ নিয়মে আদায় না করা। এর দ্বারা অর্থ ঠিক থাকে, কিন্তু তেলাওয়াত অসুন্দর হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোরআনকে সুন্দর স্বরে পড়ে না, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৭৫২৭)

নামাজে কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে মধ্যপন্থায়। আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, তোমরা আল্লাহ বা রহমান যে নামেই ডাকো না কেন, সব সুন্দর নাম তো তাঁরই। নামাজে তোমাদের স্বর খুব উচ্চ বা অতিশয় ক্ষীণ করো না, বরং এ দুইয়ের মধ্যপন্থা অবলম্বন করো।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ১১০) 

নামাজে যে পরিমাণ কেরাত যথেষ্ট, তার সর্বনিম্ন পরিমাণ ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে এক আয়াত। আর ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ (রহ.)-এর মতে, ছোট তিন আয়াত অথবা দীর্ঘ এক আয়াত।

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

হাতের কনুই দেখা গেলে নামাজ হবে?

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ এএম
হাতের কনুই দেখা গেলে নামাজ হবে?
নামাজ আদায় করছেন এক নারী। ছবি: ইন্টারনেট

প্রশ্ন: গরমকালে মাঝেমধ্যে থ্রি-কোয়ার্টার হাতাবিশিষ্ট জামা পরি আমি। এর হাতা কব্জি ও কনুইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত লম্বা হয়। এর সাথে ছোট ওড়না পরে নামাজ পড়লে রুকুর সময় ও রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো অবস্থায় হাতের খালি অংশ খোলা দেখা যায়। হাতের এতটুকু অংশ খোলা থাকলে নামাজে কোনো সমস্যা হবে?

খাদিজা আখতার, নারায়ণগঞ্জ

উত্তর: থ্রি-কোয়ার্টার হাতাবিশিষ্ট জামা পরে নামাজ পড়া অবস্থায় হাতের খালি অংশ যদি এক রোকন পরিমাণ (তিন তাসবিহ পড়ার পরিমাণ) বা তার চেয়ে বেশি সময় অনাবৃত থাকে, তা হলে নামাজ বিশুদ্ধ হবে না। কেননা নামাজে নারীদের হাত কব্জি পর্যন্ত ঢেকে রাখা আবশ্যক। হাতের কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত এ অংশ থেকে এক চতুর্থাংশ বা তার বেশি যদি এক তাসবিহ পরিমাণ খোলা থাকে এবং এ অবস্থায় এক রোকন পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়, তা হলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এ ধরনের জামা পরে ছোট ওড়না দিয়ে নামাজ আদায় করা নিরাপদ নয়। সামান্য অসতর্কতার কারণে নামাজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ছোট হাতাবিশিষ্ট জামা পরে নামাজ পড়তে চাইলে করণীয় হলো, বড় ওড়না বা হিজাব পরে নেওয়া। যেন হাতের খোলা এ অংশ নামাজের সময় অনাবৃত না হয় এবং নামাজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও না থাকে। (আলমাবসুত, সারাখসি, ১/২৯৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৯; রদ্দুল মুহতার, ১/৪০৯)

আরও পড়ুন: ডায়মন্ডের গয়নার জাকাত দিতে হবে?

নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো সতর ঢেকে রাখা। নামাজে পুরুষের নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরজ। নারীদের মুখমণ্ডল, দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ও টাখনুর নিচে পায়ের পাতা ছাড়া সব অঙ্গ ঢেকে রাখা ফরজ। তবে বিনা ওজরে পুরুষের মাথা, পেট-পিঠ, হাতের কনুই খোলা রেখে নামাজ পড়লে তা আদায় হয়ে গেলেও মাকরুহ হবে। (ফতোওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১০৬)

ঢেকে রাখা অঙ্গগুলোর কোনো একটির এক-চতুর্থাংশ বা এর অধিক ইচ্ছাকৃত এক মুহূর্তের জন্য খুললেও নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃত এক-চতুর্থাংশ বা ততোধিক খুলে যায়, তা হলে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। এক-চতুর্থাংশের কম হলে চাই ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়- নামাজ নষ্ট হবে না। (রদ্দুল মুহতার, ১/৩৭৯, তাবইনুল হাকায়েক, ১/৯৭) 


লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক

জোহর-আসর নামাজে অনুচ্চস্বরে কিরাত পড়তে হয় কেন?

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১১ পিএম
জোহর-আসর নামাজে অনুচ্চস্বরে কিরাত পড়তে হয় কেন?
সৌদি আরবের মদিনার মসজিদে নববিতে জামাতে নামাজ আদায়ের ছবি। হারামাইন

জোহর ও আসরের নামাজে অনুচ্চস্বরে কিরাত পাঠ করতে হয়। মাগরিব, এশা এবং ফজরের নামাজে কিরাত জোরে বা উচ্চৈঃস্বরে পড়তে হয়। এটা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত। আবু মামার (রহ.) খাব্বাব (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) জোহর ও আসরের নামাজে কিরাত পাঠ করতেন? তিনি (খাব্বাব) বলেন, হ্যাঁ। মামার (রহ.) পুনরায় জানতে চাইলেন, সেটা কীভাবে বোঝা যেত? খাব্বাব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাড়ি মোবারকের নড়া দেখে বোঝা যেত।’ (বুখারি, ১/১০৫)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক নামাজে তেলাওয়াত করতেন। তিনি যে নামাজগুলোতে আমাদের শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন; সেসব নামাজে আমরাও তোমাদের শুনিয়ে তেলাওয়াত করি। আর তিনি যেসব নামাজে আমাদের না শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন, সেসব নামাজে আমরাও তোমাদের না শুনিয়ে তেলাওয়াত করি।’ (বুখারি, হাদিস: ৭৩৮)

আরও পড়ুন: সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সুরা পড়ার বিধান

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘সুন্নত হচ্ছে ফজর, মাগরিব ও এশার দুই রাকাতে এবং জুমার নামাজে উচ্চৈঃস্বরে তেলাওয়াত করা। আর জোহর ও আসরের নামাজে এবং মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে এবং এশার তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে চুপে চুপে তেলাওয়াত করা। সুস্পষ্ট সহিহ হাদিসের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্যের ভিত্তিতে এসব বিধান সাব্যস্ত।’ (আল-মাজমু, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৮৯)

জোহর ও আসরের নামাজে নিচু আওয়াজে আর মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজে উঁচু আওয়াজে কিরাত পড়ার বিধান খুবই যুক্তিসঙ্গত।  এতে হেকমতও রয়েছে। মাগরিব, এশা ও ফজরের সময় লোকেরা কাজকর্ম, কথাবার্তা ও আওয়াজ থেকে নীরব থাকে। পরিবেশ থাকে নীরব। রাতের বেলা কথা কান অতিক্রম করে অন্তরে গিয়ে প্রবেশ করে এবং পূর্ণ প্রভাব সৃষ্টি করে। জোহর ও আসরের নামাজে নিচু আওয়াজে কোরআন পড়ার হিকমত হলো, দিনের বেলা হাট-বাজারে ও বাড়ি-ঘরে শোরগোল থাকে, বিভিন্ন আওয়াজ ও চিন্তা-ফিকিরের কারণে অন্তর বেশি ব্যস্ত থাকে এবং কথার প্রতি মনোযোগ থাকে না। 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক