ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

বিশেষ প্রতিবেদন ইসলামি প্রকাশনাশিল্প : সমস্যা-সম্ভাবনা

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৩ পিএম
ইসলামি প্রকাশনাশিল্প : সমস্যা-সম্ভাবনা
মতামত প্রদানকারী ছয়জন প্রকাশকের ছবি ও নাম। খবরের কাগজ

প্রতি বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বইমেলা ও অমর একুশে বইমেলায় ইসলামি প্রকাশকদের স্টল পেতে বেশ বেগ পোহাতে হয়। অনেকে পানও না। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মেলা নিয়ে এবার আন্দোলনও হয়েছে জোরেশোরে। প্রকাশকদেরও নেই সম্মিলিত কোনো অ্যাসোসিয়েশন। ইসলামি প্রকাশনীগুলো ব্যক্তিগত উদ্যোগে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় ছোট পরিসরে মেলা করছেন। ইসলামি প্রকাশনাশিল্পের সমস্যা-সম্ভাবনা, অমর একুশে বইমেলা ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন মেলা, প্রকাশনী ও লেখকদের মাঝে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত এবং দেশি লেখকদের মৌলিক বই প্রকাশে প্রকাশকদের আগ্রহ কেমন—এমন নানা বিষয়ে ছয়জন প্রকাশক কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। 

ইসলামি প্রকাশনীগুলোর অংশগ্রহণে মেলা হোক
— ওবায়দুল্লাহ আযহারী 
স্বত্বাধিকারী, মাকতাবাতুল আযহার 

প্রতিটি জাতীয় বইমেলায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক আমরা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইসলামি বইমেলা ও একুশের বইমেলা—দুটোতেই আমরা সব শর্ত মেনেই নিয়মিত আবেদন করেছি। কখনো পেতাম, কখনো পেতাম না।
আমাদের দাবি হলো, ইসলামি বইমেলা যেন সব ইসলামি প্রকাশনীর অংশগ্রহণমূলক হয়। যারা নিয়ম মেনে আবেদন করবে, তারা যেন স্টল বরাদ্দ পায়। অমর একুশে বইমেলাতেও যেসব ইসলামি প্রকাশনী নিয়ম-কানুন মেনে আবেদন করবে, তাদেরও যেন স্টল দেওয়া হয়। মেলা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এমন কোনো নিয়ম যেন না আসে, যা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যা ইসলামি ভাবধারার প্রকাশনীর চেতনাবিরোধী। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখতে চাই, ইসলামি বইয়ের প্রকাশকদের দুটি ভিন্ন সমিতি রয়েছে। একটি হলো, বাংলাদেশ সৃজনশীল ইসলামী পুস্তক প্রকাশক সমিতি, অন্যটি হলো বাংলাদেশ ইসলামী প্রকাশক ফোরাম।
আমাদের দাবি হলো—এই দুটো সমিতির সব সদস্য যেন স্টল পায়। রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য ও মিডিয়ার যথাযথ প্রচার পায়, এমন বৃহৎ পরিসরে মেলা আয়োজন করা। সেটা বাইতুল মুকাররমসংলগ্ন কোনো চত্বরে হোক, বা অন্য কোনো বড় জায়গায় হোক, আমরা সাধুবাদ জানাই। 

প্রকাশকদের দাবি মানলে ইফা গৌরব ফিরে পাবে
— দেওয়ান মো. মাহমুদুল ইসলাম
স্বত্বাধিকারী, রাহনুমা প্রকাশনী

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইমেলা মারাত্মকভাবে অবহেলিত হয়ে আছে। কোনো নীতিমালা নেই, কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছা নেই এবং মানসম্মত সৃজনশীল প্রকাশকদের অংশগ্রহণেরও তেমন সুযোগ নেই। বিগত কয়েক বছরে সৃজনশীল প্রকাশকদের পক্ষ থেকে একটি অংশগ্রহণমূলক ভালো ও আন্তর্জাতিক মানের মেলা করার জন্য ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা অনেকবার বসেছি, অনুরোধ করেছি, সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি, কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনো সহযোগিতা আমরা পাইনি; উল্টো আমরা নানারকম অবিচার ও নিগ্রহের শিকার হয়েছি।
দেশের সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মেলা নিয়ে বাংলাবাজারসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার প্রকাশকদের পক্ষ থেকে ধর্ম উপদেষ্টা, ইফার ডিজি ও মেলা কমিটিকে (বর্তমানে মেলা কমিটি নেই) কিছু অধিকারের কথা জানানো হয়। এই অধিকারগুলোর সঠিকভাবে প্রয়োগ হলে একটি সুশৃঙ্খল, দৃষ্টিনন্দন, পাঠকপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য আলোচিত বইমেলার আয়োজন করা সম্ভব।  প্রকাশকদের দাবিগুলোর প্রতিফলন ঘটলে ইফা তার পুরোনো গৌরব ফিরে পাবে। বাংলাদেশের আপামর ধর্মপরায়ণ মানুষ একটি ধর্মীয় সংস্কৃতি উপহার পাবে। ইসলামি প্রকাশক ও লেখকরা ইসলামি সাহিত্যের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবেন। 

ইসলামি পুস্তক প্রকাশকদের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন
— আহমাদ গালিব
স্বত্বাধিকারী, মাকতাবাতুল ইসলাম

ইসলামি বই প্রকাশ করেন এমন প্রকাশকের সংখ্যা তিন শতাধিক। তাদের মধ্য থেকে শ-খানেক প্রকাশক দুটি সমিতিতে বিভক্ত। একটি বাংলাদেশ সৃজনশীল ইসলামী পুস্তক প্রকাশক সমিতি, অপরটি বাংলাদেশ ইসলামী প্রকাশক ফোরাম। একটি ব্যবসায়িক অ্যাসোসিয়েশন যেসব বৈশিষ্ট্য ও নিয়ম-কানুন ধারণ করে সক্রিয় থাকে, এই দুটি সমিতি তেমন নয়। তাই বলা যায়, ইসলামি পুস্তক প্রকাশকদের শক্তিশালী কোনো ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম নেই। যদি বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সব ইসলামি পুস্তক প্রকাশক ঐক্যবদ্ধভাবে একটি অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তুলে সক্রিয় থাকেন, তা হলে তা তুলনামূলক অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী রূপ লাভ করবে। সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে সহায়ক হবে। 
এদিকে ইসলামি পুস্তক প্রকাশকদের মাঝে যোগাযোগের ঘাটতি এবং মাজহাবকেন্দ্রিক নানা মতপার্থক্যের কারণে সম্প্রীতির বন্ধন কিছুটা দুর্বল। ফলে শক্তিশালী অ্যাসোসিয়েশন তাদের মাঝে গড়ে উঠবে কি না এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। তবে আশা রাখি, সবাই শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গড়তে এগিয়ে আসবে। 

একুশে বইমেলাতে স্টল বরাদ্দে বৈষম্য দূর হোক
— নূর মোহাম্মাদ আবু তাহের 
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স

স্টল না পাওয়ার দায় একাডেমি কর্তৃপক্ষ ও প্রকাশনা সংস্থা দুই পক্ষেরই। বাংলা একাডেমি নির্ধারিত শর্তাবলি না মেনে ছলচাতুরী করে বইমেলায় স্টল নেওয়ার আকাঙ্ক্ষার দায় কিছু প্রকাশনাকে নিতে হবে। বিপরীতে সব শর্তপূরণ করার পরও শুধু চিন্তাকাঠামোর ভিন্নতায় পরিকল্পিতভাবে কোনো কোনো প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার সম্পূর্ণ দায় একাডেমির কর্তাব্যক্তিদের। বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে কাজ করা মানুষগুলোও যখন কেবল রাজনৈতিক বিবেচনাকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন প্রচণ্ড হতাশা এসে ভর করে। 
রাজনৈতিক বিবেচনা পরিহার করে পেশাদার ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে স্টল বরাদ্দ দিলে কারও আপত্তিই গ্রহণযোগ্য হবে না। স্টলবঞ্চিত প্রকাশনীগুলো বাংলা একাডেমি বর্ণিত শর্তাবলি পূরণ করে শুধু ইনসাফের দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বৈষম্যবিরোধী স্পিরিট দেশের সর্বত্র যেমন আকাঙ্ক্ষিত, বাংলা একাডেমির বইমেলাতেও সেই স্পিরিট অনেক বেশি প্রত্যাশিত। বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলাতে স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হোক। যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করা প্রকাশনাকে স্টল দেওয়া হোক। 

মৌলিক বই আরও প্রকাশ করা প্রয়োজন
— শাহাদাৎ হুসাইন
প্রকাশক, মাকতাবাতুত তাকওয়া

ইসলামি প্রকাশনীগুলো বাংলাদেশি লেখকদের মৌলিক বই প্রকাশ করতে চান না; অভিযোগটি অবান্তর নয়। এর বাস্তবতা আছে। তবে এখন অনেক প্রকাশনী মৌলিক বই প্রকাশ করছেন। তারা সফলও হচ্ছেন। আমাদের দেশের অনেক লেখক যোগ্যতার বাইরে গিয়ে ভিন্ন বিষয়ে লেখেন। তখন বইটি প্রকাশ করা হলে মার্কেটে কদর থাকে না। পাঠকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। দেশের যোগ্যতাসম্পন্ন যেসব ব্যক্তি মৌলিক বই লিখেছেন, তাদের বইগুলো বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। যারা অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি, তারা যদি মৌলিক বিষয়ে কাজ করেন, তা হলে খুব ভালো চলে। প্রকাশকরাও ছাপতে আগ্রহী হন। পাঠকও আগ্রহভরে কেনেন। 
আমাদের কওমি জগৎটা আকাবির, আসলাফ ও মুরব্বিকেন্দ্রিক। সবাই তাদের বই পড়ার চেষ্টা করে। ভিনদেশি ইসলামি স্কলারদের বই প্রকাশ করলে পাঠকরাও নিতে আগ্রহ দেখান বেশি, প্রকাশকরাও প্রকাশ করে লাভবান হন। তবে দেশি লেখকদের মৌলিক বই আরও বেশি প্রকাশ করা প্রয়োজন। মৌলিক বই লেখার ক্ষেত্রে লেখকদেরও যথেষ্ট জ্ঞান ও গবেষণা করে লেখা উচিত। 

লেখক-প্রকাশকদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটুক
— আহমেদ ইয়াসিন
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সমকালীন প্রকাশন 

লেখকদের বইয়ের সম্মানী দেওয়া নিয়ে আগে নানা ধরনের আলাপ ছিল। বিশেষ করে ২০১৫ সালের আগে অনেক প্রকাশনী সম্মানী দিতেন না। এর পর প্রকাশনা অঙ্গনে বড় পরিবর্তন এসেছে। শুধু প্রকাশকরাই নন; লেখকরাও এ ব্যাপারে বেশ সচেতন। প্রকাশক ও লেখকদের মধ্যকার সম্পর্কও আগের তুলনায় এখন ভালো ও স্বচ্ছ। আমার মনে হয়, সম্মানী নিয়ে লেখকরা অভিযোগ করেন না এখন। যদি থেকেও থাকে, আমার জানা নেই। 
যেসব লেখককে আমরা চিনি, জানি বা যাদের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়, ওঠাবসা আছে—তাদের কাছ থেকে আমরা এ রকম কোনো অভিযোগ শুনিনি। এটা এখন মীমাংসিত বিষয়। 
একটা সময় লেখক এবং অনুবাদকরা কাজের বিনিময়ে যে পারিশ্রমিক বা সম্মানী পাওয়ার কথা, সেটা থেকে বঞ্চিত হতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই অবস্থা আর বিরাজমান নেই। আমরা চাই এ অবস্থার আরও উন্নতি ঘটুক। প্রকাশনাশিল্প আরও সমৃদ্ধ হোক। লেখক-প্রকাশকদের চাওয়া-পাওয়াগুলো আরও সুন্দর ও সুগম হোক।

 

স্বপ্নে কাউকে হত্যা করতে দেখা কিসের বার্তা?

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৫ পিএম
স্বপ্নে কাউকে হত্যা করতে দেখা কিসের বার্তা?
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্ন মানুষের মনের অবস্থা, চিন্তা এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নানা ইঙ্গিত প্রদান করে। তবে কিছু স্বপ্ন রহস্যময় ও ভীতিকর হয়, বিশেষ করে স্বপ্নে হত্যার দৃশ্য, যা অত্যন্ত জটিল এবং ভয়াবহ হতে পারে। ইসলামিক স্বপ্নতত্ত্ব অনুসারে, এ ধরনের স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়, যা ব্যক্তির আধ্যাত্মিক ও মানসিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত।

১. কাউকে হত্যা করা: যদি আপনি স্বপ্নে কাউকে হত্যা করতে দেখেন, এটি একটি বড় ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। কিছু মানুষ মনে করেন, এ ধরনের স্বপ্ন দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও নির্দেশ করতে পারে। অন্যদিকে, যদি আপনি নিজেকে হত্যা করতে দেখেন, তা হলে এটি হতে পারে যে, আপনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজের তওবা গ্রহণ করবেন এবং জীবনে কল্যাণ লাভ করবেন।

২. নিজেকে হত্যা করা: বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বপ্নে নিজেকে হত্যা করা মানে দীর্ঘ আয়ু লাভের লক্ষণ। এটি একটি ইতিবাচক সঙ্কেত হিসেবে ধরা হয়, যা জীবনের কষ্ট বা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করে।

৩. জবাই করা: যদি আপনি কাউকে জবাই করতে দেখেন, এর মানে হতে পারে যে, আপনি সেই ব্যক্তির চেয়ে উন্নত বা উত্তম হয়ে উঠবেন। তবে, যদি আপনি কাউকে জবাই করতে দেখেন এবং তিনি আপনার পরিচিত হন, তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আপনি তার প্রতি কোনো ভুল বা অন্যায় কাজ করবেন। এই স্বপ্নে উন্নতি আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তা ওই ব্যক্তির কাছ থেকেই আসবে।

৪. পিতা-মাতা বা পিতাকে জবাই করা: স্বপ্নে যদি বাবা-মাকে জবাই করতে দেখেন, এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আপনি তাদের প্রতি অবাধ্য বা সীমা লঙ্ঘনকারী হয়ে উঠতে পারেন। আবার যদি কোনো মহিলা বা প্রাণীকে জবাই করতে দেখেন, এটি সাধারণত আপনার যৌন জীবন বা সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত দেয়, যা ভুল পথে চলে যেতে পারে।

৫. শিশু বা অন্য কোনো প্রাণীকে জবাই করা: শিশুদের জবাই করা বা তাদের গোশত খাওয়া দেখতে পেলে, এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আপনি আপনার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছেন এবং আপনার কর্ম ও আচরণ থেকে আপনি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সম্মান এবং কল্যাণ লাভ করবেন।

৬. বাদশাহ বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক: স্বপ্নে যদি বাদশাহ কাউকে জবাই করেন এবং তার মাথাবিহীন লাশ আপনার ঘাড়ে রাখেন, এটি একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। এ ধরনের স্বপ্ন নির্দেশ করে যে, কর্তৃপক্ষ মানুষের প্রতি অন্যায় করতে পারে এবং তাদের চাহিদা পূরণে অক্ষম থাকবে।

এভাবেই হত্যার স্বপ্নের ব্যাখ্যা নানা দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন হতে পারে। তবে, এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সীরীনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত। স্বপ্নের সম্পূর্ণ অর্থ অনুধাবন করার জন্য ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপট এবং অনুভূতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা জরুরি।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক 

 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে মেলবে যে প্রতিদান

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে মেলবে যে প্রতিদান
ফোণে অন্যের সাথে রেগে কথা বলার দৃশ্য । ছবি সংগৃহীত

শয়তান সাধারণত ঝগড়া-বিবাদ ও দ্বন্দ্বের মাধ্যমে মানুষের রাগ উসকে দেয়। রাগের সময় মানুষকে নিয়ন্ত্রণে আনা তার পক্ষে সহজ। এর মাধ্যমে শয়তান মানুষকে তার কাঙ্ক্ষিত অকল্যাণের দিকে ঠেলে দেয়। সৃষ্টির সূচনাতেই আদম (আ.) এবং তার সন্তানদের এ সহজাত প্রবৃত্তি সম্পর্কে শয়তান খুব ভালোভাবে অবহিত ছিল।


আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা যখন জান্নাতে আদম (আ.)-এর আকৃতি গঠন করলেন, তখন আল্লাহ তার আকৃতিকে যত দিন ইচ্ছা ফেলে রাখলেন। এ সময় ইবলিস তার চতুর্দিকে ঘুরাফেরা করতে লাগল। দেখতে দেখতে সে অনুভব করল, এটি একটি শূন্য কাঠামো। তখন সে বুঝল যে, (আল্লাহ) এমন একটি সত্তা সৃষ্টি করেছেন, যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬১১)


এই বর্ণনার বিভিন্ন অর্থের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ হলো—রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা কঠিন হলেও, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সুন্নাহর মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে রাগের মুহূর্তে নিজেকে সংযত রাখতে হয়, যাতে শয়তানের ফাঁদে পড়া থেকে বাঁচা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত বীর সেই ব্যক্তি নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং প্রকৃত বাহাদুর সে, যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংবরণ করতে সক্ষম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৬৩)


রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, রাগ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহতায়ালা কত বড় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমরা ছুটে যাও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের মতো। এটি মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতার সময়ে (অর্থ) খরচ করে, যারা নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪)


মুয়াজ ইবনে আনাস জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হলেও ক্রোধ সংবরণ করে, (এজন্য) কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সব সৃষ্টির সামনে ডেকে বলবেন, তুমি যে হুর চাও, পছন্দ করে নিয়ে যাও।’ (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস: ৪৭৭৭)


এই সুন্নাহ আমাদের জন্য এক চমৎকার শিক্ষা। রাগ নিয়ন্ত্রণ করা কেবল আমাদের দুনিয়ার শান্তি ও সুখের জন্য নয়, বরং আখেরাতে আমাদের জন্য এক বিশাল পুরস্কার অপেক্ষা করছে। রাগ সংবরণ করার মাধ্যমে আমরা শয়তানের ফাঁদে না পড়তে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হই। এটি আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের উন্নতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পথ।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

স্বপ্নে তরবারি ও তলোয়ার দেখা: কীসের পূর্বাভাস?

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
স্বপ্নে তরবারি ও তলোয়ার দেখা: কীসের পূর্বাভাস?
দুটি ধারলো তরবারির ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্ন শুধু ঘুমের জগতের কল্পনা নয়— অনেক সময় এটি হয়ে ওঠে গভীর বার্তাবাহী। যেখানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা সংকেত ও ইঙ্গিত লুকিয়ে থাকে। স্বপ্নে তরবারি বা তলোয়ার দেখার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অস্ত্রগুলোর প্রতীকী অর্থ রয়েছে যা আমাদের ভবিষ্যৎ, পারিবারিক সম্পর্ক, সন্তান কিংবা জীবনের বড় পরিবর্তন নিয়ে নানা বার্তা দেয়।

বীরত্ব ও নেতৃত্বের আগমন: স্বপ্নে তরবারি দেখার অন্যতম অর্থ হলো বীরত্ব বা শক্তি লাভ। তরবারি দেখলে এটি সাধারণত বীরপুরুষ হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। যদি স্বপ্নে আপনি তরবারি দিয়ে কাউকে আঘাত করেন বা হত্যার দৃশ্য দেখেন, এটি সাধারণত গোত্রের ঝগড়া বা পারিবারিক অশান্তি নির্দেশ করে। 

কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব:  গলায় তরবারি ঝোলাতে দেখলে, এটি রাজত্বের বড় দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বাভাস হতে পারে। তরবারি এখানে রাজকীয়তা ও কর্তৃত্বের প্রতীক হিসেবে উপস্থিত থাকে। তবে যদি তরবারিটি ভারী মনে হয় এবং আপনি সেটিকে টেনে নিয়ে চলেন, তা হলে এটি নির্দেশ করে যে, আপনি হয়তো অক্ষম হতে পারেন রাজত্ব বা নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করতে।

সন্তানবিষয়ক সংকেত: স্বপ্নে যদি গলায় চারটি তরবারি ঝোলানো দেখেন, তা হলে এটি চারটি সন্তানের জন্ম হতে পারে। এখানে তরবারির ধাতু অনুযায়ী সন্তানের বৈশিষ্ট্যও প্রতিফলিত হয়—লোহার তরবারি বীর সন্তানের, পিতল তরবারি ধনী সন্তানের, সীসার তরবারি নপুংসক সন্তানের এবং কাঠের তরবারি মোনাফিক সন্তানের আলামত। অন্যদিকে, মরিচাযুক্ত তরবারি দেখে কোষ থেকে বের করার স্বপ্ন, দুষ্টু সন্তান বা দুর্ঘটনার আগমনের সংকেত দিতে পারে।

স্বপ্নের প্রেক্ষাপট: স্বপ্নে তরবারি যদি কোষ থেকে বের করার চেষ্টা করেন, তা হলে এর মধ্যে কিছু বিপদের সঙ্কেত থাকতে পারে। যদি তরবারি ভেঙে যায়, তা হলে এটি মৃত্যু বা বড় ধরনের ক্ষতির পূর্বাভাস হতে পারে। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন তরবারিটি যদি ভারী হয়, তবে এটি জড়তা বা সংকোচ বোঝাতে পারে এবং তরবারিতে ছিদ্র থাকলে, এর অর্থ হতে পারে যে সন্তান বোবা হবে।

পারিবারিক জীবন ও বিবাহ: যদি স্বপ্নে তরবারি দেখে আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো পরিবর্তন দেখতে পান, তা সাধারণত সন্তানের আগমনের প্রতীক। গলায় দুটি বা তিনটি তরবারি ঝোলানো দেখলে, এটি তিন তালাকের পূর্বাভাস হতে পারে। তরবারিকে খাপের মধ্যে দেখতে পেলে, এটা স্ত্রী বা গর্ভাবস্থার প্রভাব বা সম্পর্কের অবনতি নির্দেশ করতে পারে।

সামাজিক প্রেক্ষাপট: স্বপ্নে তরবারি ও বেল্ট দেখলে, এটি প্রমাণ করে যে আপনি নিজের দায়িত্ব পালন করবেন এবং আমানত রক্ষা করবেন। তরবারি যদি পাশের দিকে রাখা থাকে, তা হলে এটি একটি কঠিন সাহসী ব্যক্তি হওয়ার ইঙ্গিত। তরবারিকে যদি বাতাসে দেখা যায়, তবে এটি মহামারি বা বিপদ সংকেত দিতে পারে।

এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত। স্বপ্নের সম্পূর্ণ অর্থ অনুধাবন করার জন্য ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপট এবং অনুভূতির সাথে মিলিয়ে দেখা জরুরি।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

বাজারে যে দোয়া পড়লে ১০ লাখ নেকি পাওয়া যায়

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৬ এএম
বাজারে যে দোয়া পড়লে ১০ লাখ নেকি পাওয়া যায়
বাজারে পণ্য বিক্রয়ের ছবি । সংগৃহীত

ইসলামে কিছু সুন্নাহ রয়েছে, যেগুলো পালন করা সহজ হলেও তার পুরস্কার অনন্ত। অনেক সময় আমরা কিছু সহজ কাজের মাধ্যমে অশেষ পুরস্কার লাভ করতে পারি, আর তা যেন চোখ কপালে উঠানোর মতো! তবে, আল্লাহতায়ালা তার রহমত দিয়ে আমাদের জন্য এসব সোনালি সুযোগ রেখেছেন। এর মধ্যে একটি মহৎ ও দারুণ সুযোগ হলো বাজারে দোয়া পড়া, যার প্রতিদান অগণিত নেকি এবং গুনাহ মাফ।


উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশ করে এবং এই দোয়া পড়ে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য ১০ লাখ নেকি লেখেন, ১০ লাখ গুনাহ মাফ করেন এবং তার ১০ লাখ স্তর উন্নীত করেন।’

দোয়াটি বাংলা উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইয়ুহয়ি ওয়াহুয়া ইয়ামুতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।

দোয়াটি অর্থ: ‘আল্লাহতায়ালা ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, সব ক্ষমতা তাঁরই, সব প্রশংসা তাঁর জন্য, তিনিই প্রাণ দান করেন ও মৃত্যু দেন, তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর কোনো মৃত্যু নেই, তাঁর হাতে কল্যাণ এবং তিনিই সবকিছু করতে সক্ষম।’(সুনানুত তিরমিজি, হাদিস: ৩৪২৮)


ধারণা করুন, আপনি বাজারে প্রবেশ করে এই দোয়া পাঠ করেছেন এবং আল্লাহতায়ালা আপনাকে ১০ লাখ নেকি দিয়েছেন, ১০ লাখ গুনাহ মাফ করেছেন এবং আপনার স্তর ১০ লাখ উন্নীত করেছেন! কী দারুণ সুযোগ, ভাবুন তো! এমন একটি অবস্থা যেখানে আপনার সব পাপকর্ম ক্ষমা হয়ে যাবে এবং সঠিক পথের দিকে আপনার পদক্ষেপ আরও দৃঢ় হবে।


বাজার পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত ও চ্যালেঞ্জিং স্থান, যেখানে মানুষ তাদের দ্বীন ও ধর্মীয় কর্তব্য ভুলে যেতে পারে। এখানে যেহেতু অর্থ উপার্জন এবং বাণিজ্যিক লাভের প্রতি আকর্ষণ থাকে, তাই অনেক সময় মানুষ নামাজ এবং অন্যান্য নেক কাজ থেকে বিরত থাকে। বাজারের পরিবেশে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা, মিথ্যা ও প্রতারণা সাধারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা মুসলিমদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।


আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে বলেছেন, ‘তোমরা ধনসম্পদকে প্রাণভরে ভালোবাসো।’ (সুরা ফাজর, আয়াত: ২০) এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, অর্থের প্রতি মানুষের এই অতিরিক্ত আকর্ষণ তাদের অন্তর থেকে আল্লাহর স্মরণ সরিয়ে নিয়ে যায়। আর এ কারণে বাজারের পরিবেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।


আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দের স্থান হলো মসজিদ। আর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দের স্থান হলো বাজার।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৭১)


এমন এক পরিবেশে, যেখানে আল্লাহর স্মরণে উদাসীনতা থাকে, সেখানে যদি কেউ এই দোয়া পড়ে, সে যেন আল্লাহর তাওহিদ এবং স্মরণকে উচ্চারণ করছে। এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহর কাছ থেকে বিরাট পুরস্কার লাভ করেন। তাই, এই সুন্নাহটি আমরা পালন করতে পারি, তেমনি বাজারে যাওয়ার সময় যেন আমাদের সময় নষ্ট না হয় এবং সম্ভব হলে বাজারে কম সময় কাটানোর চেষ্টা করি।


বাজারে দোয়া পড়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে এই সুন্নাহ অনুসরণের তৌফিক দিন এবং আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে তাঁর সন্তুষ্টি এবং রহমতের দিকে পরিচালিত করুন। আমিন।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক 

স্বপ্নে যুদ্ধ দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৭ পিএম
স্বপ্নে যুদ্ধ দেখলে কী হয়?
গাজায় বোমার ভয়াবহ আগুনের ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্ন আমাদের অবচেতন মনের এক রহস্যময় জগৎ। ঘুমের ঘোরে আমরা কত না বিচিত্র দৃশ্য দেখি। কখনো তা বাস্তব ঘটনার ইঙ্গিত দেয়, আবার কখনো প্রতীকী অর্থ বহন করে। বিশেষ করে স্বপ্নে যুদ্ধ দেখা— এটি নিছক দুঃস্বপ্ন না হয়ে হতে পারে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ কোনো বার্তার প্রতিফলন।

ইসলামী ব্যাখ্যা অনুযায়ী, স্বপ্নে যুদ্ধ দেখা বিভিন্ন অর্থ বহন করতে পারে। স্বপ্নদ্রষ্টা ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এই স্বপ্নের ভালো-মন্দ উভয় ধরনের ইঙ্গিত থাকতে পারে। সাধারণভাবে স্বপ্নে তিন ধরনের যুদ্ধ দেখার কথা বলা হয়েছে:

১. রাজা ও রাজার মধ্যে যুদ্ধ: যদি স্বপ্নে দুই রাজার মধ্যে যুদ্ধ দেখেন, তবে এটিকে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও মহামারির পূর্বাভাস হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি একটি অশুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা থেকে আল্লাহতায়ালার কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত।

২. রাজা ও প্রজার মধ্যে যুদ্ধ: স্বপ্নে রাজা ও প্রজার মধ্যে যুদ্ধ দেখলে, এটিকে খাদ্যদ্রব্যের দাম কমার ইঙ্গিত হিসেবে ধরা হয়। এটি একটি ইতিবাচক স্বপ্ন, যা অর্থনৈতিক স্বস্তির বার্তা বয়ে আনতে পারে।

৩. প্রজা ও প্রজার মধ্যে যুদ্ধ: যদি সাধারণ মানুষের মধ্যে যুদ্ধ দেখেন, তবে এটি খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস। এটি একটি নেতিবাচক স্বপ্ন, যা অর্থনৈতিক কষ্টের ইঙ্গিত দিতে পারে।

যদি কেউ স্বপ্নে তার শহরে সৈন্যের আগমন দেখে, তবে এটিকে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস হিসেবে ধরা হয়। অন্যদিকে, দলবদ্ধ সৈন্য দেখলে, এটিকে সত্যের সাহায্য ও মিথ্যার ধ্বংসের আলামত হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। কারণ, আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘অবশ্যই এখন আমি তাদের বিরুদ্ধে এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসব, যার প্রতিরোধের শক্তি তাদের নেই।’ (সুরা নামল,আয়াত: ৩৭)

স্বপ্নে সৈন্যদের সংখ্যা কম দেখলে, এটিকে বিজয়ের নিকটবর্তী হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। কারণ, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘কত সামান্য দল বিশাল দলের মোকাবিলায় আল্লাহর ইচ্ছায় বিজয়ী হয়েছে!’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৪৯)

কোনো সৈনিক যদি স্বপ্নে তার হাতে তীর বা চাবুক দেখে, তবে স্বপ্নদ্রষ্টার সুন্দর জীবনযাপনের ইঙ্গিত বহন করে। স্বপ্নে ধুলাবালি দেখলে, তা ভ্রমণের পূর্বাভাস হতে পারে। তবে ধুলাবালির সঙ্গে গর্জন ও বিজলী দেখলে, দুর্ভিক্ষ ও অভাবের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু যদি শুধু ধুলাবালি দেখা যায় এবং গর্জন বা বিজলী না থাকে, তবে এটি যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভের ইঙ্গিত দিতে পারে। কারণ, মাটি হলো সম্পদের উৎস, আর ধূলি তারই অংশ। কারও মতে, নিজের গায়ে ধুলা দেখলে, তা সফরের আলামত। আবার কারও মতে, এটি যুদ্ধে সম্পদশালী হওয়ার ইঙ্গিত।

স্বপ্নে ঘোড়ায় চড়ে সেটিকে হাঁকাতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা কোনো কাজে সফলতা অর্জন করে অহংকারী হতে পারে এবং ভুল পথে চালিত হতে পারে।
স্বপ্ন এক রহস্যময় জগৎ, যার ব্যাখ্যা ব্যক্তি ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। যদিও এখানে স্বপ্নের যুদ্ধের কিছু সাধারণ ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো, তবুও এর চূড়ান্ত অর্থ একমাত্র আল্লাহই জানেন। তাই কোনো স্বপ্ন দেখলে দুশ্চিন্তা না করে আল্লাহতায়ালার কাছে কল্যাণ কামনা করা উচিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক