ব্যবসায় সততা রক্ষা করা একজন ব্যবসায়ীর জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ। কারণ সম্পদের চাকচিক্য দেখে অনেকে লোভে পড়ে যায়। তাই ব্যবসায় সততা রক্ষাকারীর পুরস্কার এমন জান্নাত, যার ব্যাপ্তি সকল আসমান ও জমিনের সমান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন নবি, সিদ্দিক ও শহিদদের সঙ্গে অবস্থান করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১২০৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হালাল রিজিক অন্বেষণ করা ফরজ ইবাদতের সমান গুরুত্বপূর্ণ।’ (কানজুল উম্মাল, খণ্ড ২)
উমর (রা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন জীবিকার অন্বেষণ ছেড়ে অলস বসে না থাক।’ (কানজুল উম্মাল, খণ্ড ২)
পণ্যের যাবতীয় দোষ-গুণ বলে দেওয়া সততার মধ্যেই পড়ে। এ কারণেই কেনা-বেচার সময় বিক্রেতা কর্তৃক পণ্যের দোষ-গুণ প্রকাশ করা সুন্নাহ। অন্যথায় সে প্রতারক ও ধোঁকাবাজ বিবেচিত হবে। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, “একবার রাসুল (সা.) স্তূপীকৃত খাদ্যশস্যের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি স্তূপের মধ্যে হাত ঢোকালে তাঁর হাতের আঙুলগুলো আর্দ্র দেখতে পান। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে খাদ্যওয়ালা, এটা কী?’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, এতে বৃষ্টি পড়েছিল।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘কেন তুমি ভেজা অংশ খাদ্যশস্যের ওপরে রাখোনি, তা হলে লোকেরা দেখতে পেত? যে ব্যক্তি ধোঁকা দেয়, সে আমার দলভুক্ত নয়।” (মুসলিম, হাদিস: ১০২)
সুতরাং কেনা-বেচার সময় মুসলিমদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখা উচিত। প্রতারণা না করা ঈমানি দায়িত্ব। ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে বলল, ‘আমাকে ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকা দেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘ক্রয়-বিক্রয়ের সময় তুমি বলবে, ‘ধোঁকা দেবে না।’ এরপর লোকটি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় এই কথা বলত।” (বুখারি, হাদিস: ২০১১)
আরও পড়ুন: সুরা ফাতিহার পর আমিন বলতে হবে?
বিক্রেতার কর্তব্য হলো, পণ্যে কোনো ত্রুটি থাকলে তা বলে দেওয়া এবং উপযুক্ত মূল্য চাওয়া। বিক্রেতার এ অনুভূতি লালন করা উচিত যে, সে যেন পণ্যটি নিজের জন্য ক্রয় করছে। বিক্রয়ের সময় এটাই হলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ।
আবদুল মজিদ ইবনে ওয়াহাব (রহ.) বলেন, “একদিন আদ্দা ইবনে খালেদ ইবনে হাওজা (রা.) আমাকে বললেন, ‘আমাকে যে পত্রখানা রাসুল (সা.) লিখে দিয়েছিলেন, তোমাকে কি তা পড়ে শোনাব?’ আমি বললাম, ‘অবশ্যই।’ তখন তিনি আমাকে শোনানোর জন্য একটি পত্র বের করলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘এ হলো মুহাম্মাদ রাসুল (সা.) থেকে আদ্দা ইবনে খালেদ ইবনে হাওজা যা কিনেছেন (তার দলিল)। তিনি তাঁর কাছ থেকে এমন একটি দাস বা দাসী ক্রয় করেছেন, যার মধ্যে কোনো দোষ নেই। এটি পলায়ন করে না এবং তা দুশ্চরিত্রের নয়। এ হলো এক মুসলিমের সঙ্গে আরেক মুসলিমের ক্রয়-বিক্রয়।” (তিরমিজি, হাদিস: ১২১৬)
মুসলিমদের পরস্পর কেনা-বেচার মাঝে এই সততা বজায় রাখবে। তবেই রাসুল (সা.)-এর প্রতিশ্রুত বরকত সে লাভ করবে।
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক