অতিরিক্ত মুনাফার আশায় পণ্য মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হারাম। এটি নোংরা ও ঘৃণিত কাজ। এক দল অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে মুনাফা লাভের আশায় এ ঘৃণিত কাজ করে। ইসলামে তাদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে। এসেছে ভয়াবহ শাস্তির কথাও। এখানে সিন্ডিকেট করে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ছয়টি শাস্তির কথা তুলে ধরা হলো—
পাপী ও অপরাধী: সিন্ডিকেটের ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্ষুণ্ণ হয় এবং বাজারে পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং বেশির ভাগ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়। মামার ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জনগণের জীবিকা সংকীর্ণ করে যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করবে, সে বড় অপরাধী।’ আরও জেনে রাখো, ‘সে পাপী হিসেবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৬০৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) মজুতদারকে পাপী বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘পণ্যদ্রব্য আটক করে অধিক মূল্যে বিক্রয়কারী অবশ্যই পাপী।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৩৮)
আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত: আল্লাহর রহমত ও করুণার ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই জগৎ ও পৃথিবীর মানুষ। কারও ওপর থেকে তাঁর রহমতের দৃষ্টি চলে গেলে পৃথিবী ও জীবন তার জন্য সংকীর্ণ হয়ে যায়। তার যাপিত জীবন থেকে শান্তি চলে যায়। মূল্যবৃদ্ধির জন্য পণ্য মজুতকারী আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যায়। আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মূল্য বাড়ার উদ্দেশ্যে যে ৪০ দিন পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুত রাখে, সে আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট। সে মজুতকৃত সম্পদ দান করে দিলেও তার গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে না।’ (মেশকাত, হাদিস: ২৭৭২)
আল্লাহর অভিশাপ : রাসুলুল্লাহ (সা.) মজুতদার ও কালোবাজারিদের অভিশপ্ত উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যে আমদানি করবে সে রিজিকপ্রাপ্ত হবে। আর যে গুদামজাত করবে, সে অভিশপ্ত হবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২১৪৪)
কিয়ামতের দিন আগুনের শাস্তি: অবৈধভাবে অর্থোপার্জনের জন্য দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা ইসলামে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ জাতীয় লোকদের জন্য শাস্তির ধমকি রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ঘটালে কিয়ামতের দিন আল্লাহ আগুনের ওপর তাকে বসিয়ে শাস্তি দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৯৪২৬)
নিকৃষ্ট মানসিকতার ধারক: মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘মজুতদার খুবই নিকৃষ্ট ব্যক্তি। যদি জিনিসপত্রের দর হ্রাস পায়, তখন সে চিন্তিত হয়ে পড়ে। আর যদি দর বেড়ে যায়, তখন আনন্দিত হয়।’ (মেশকাত, হাদিস: ২৭৭১)
মহামারি ও দারিদ্র্য: সিন্ডিকেটের কারণে আল্লাহতায়ালা মজুতদারদের মহামারি ও দারিদ্র্যে নিক্ষেপ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মজুতদারদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘কেউ যদি মুসলমানদের থেকে নিজেদের খাদ্যশস্য আটকিয়ে রাখে (মজুতদারি করে), তবে আল্লাহতায়ালা তার ওপর মহামারি ও দরিদ্রতা চাপিয়ে দেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫৫)
সিন্ডিকেট বা মজুতদারির মতো ঘৃণ্য অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে অবস্থান করা সব মানুষের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব। স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে বৈধ ও ভারসাম্যপূর্ণ কাজ করতে পারলে জীবন ও পৃথিবী সুন্দর হবে। শোষণমুক্ত সংকটহীন সুখময় সমাজ বিনির্মাণ হবে।
লেখক: খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী