ঢাকা ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
English
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সিন্ডিকেট করে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ছয় শাস্তি

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৬ পিএম
সিন্ডিকেট করে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ছয় শাস্তি
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতীকী ছবি

অতিরিক্ত মুনাফার আশায় পণ্য মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হারাম। এটি নোংরা ও ঘৃণিত কাজ। এক দল অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে মুনাফা লাভের আশায় এ ঘৃণিত কাজ করে। ইসলামে তাদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে। এসেছে ভয়াবহ শাস্তির কথাও। এখানে সিন্ডিকেট করে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ছয়টি শাস্তির কথা তুলে ধরা হলো

পাপী ও অপরাধী: সিন্ডিকেটের ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্ষুণ্ণ হয় এবং বাজারে পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং বেশির ভাগ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়। মামার ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জনগণের জীবিকা সংকীর্ণ করে যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করবে, সে বড় অপরাধী।’ আরও জেনে রাখো, ‘সে পাপী হিসেবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৬০৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.)  মজুতদারকে পাপী বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘পণ্যদ্রব্য আটক করে অধিক মূল্যে বিক্রয়কারী অবশ্যই পাপী।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৩৮)

আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত: আল্লাহর রহমত ও করুণার ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই জগৎ ও পৃথিবীর মানুষ। কারও ওপর থেকে তাঁর রহমতের দৃষ্টি চলে গেলে পৃথিবী ও জীবন তার জন্য সংকীর্ণ হয়ে যায়। তার যাপিত জীবন থেকে শান্তি চলে যায়। মূল্যবৃদ্ধির জন্য পণ্য মজুতকারী আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যায়। আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মূল্য বাড়ার উদ্দেশ্যে যে ৪০ দিন পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুত রাখে, সে আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট। সে মজুতকৃত সম্পদ দান করে দিলেও তার গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে না।’ (মেশকাত, হাদিস: ২৭৭২)

আল্লাহর অভিশাপ : রাসুলুল্লাহ (সা.) মজুতদার ও কালোবাজারিদের অভিশপ্ত উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যে আমদানি করবে সে রিজিকপ্রাপ্ত হবে। আর যে গুদামজাত করবে, সে অভিশপ্ত হবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২১৪৪)

কিয়ামতের দিন আগুনের শাস্তি: অবৈধভাবে অর্থোপার্জনের জন্য দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা ইসলামে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ জাতীয় লোকদের জন্য শাস্তির ধমকি রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ঘটালে কিয়ামতের দিন আল্লাহ আগুনের ওপর তাকে বসিয়ে শাস্তি দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৯৪২৬)

নিকৃষ্ট মানসিকতার ধারক: মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘মজুতদার খুবই নিকৃষ্ট ব্যক্তি। যদি জিনিসপত্রের দর হ্রাস পায়, তখন সে চিন্তিত হয়ে পড়ে। আর যদি দর বেড়ে যায়, তখন আনন্দিত হয়।’ (মেশকাত, হাদিস: ২৭৭১)

মহামারি ও দারিদ্র্য: সিন্ডিকেটের কারণে আল্লাহতায়ালা মজুতদারদের মহামারি ও দারিদ্র্যে নিক্ষেপ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মজুতদারদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘কেউ যদি মুসলমানদের থেকে নিজেদের খাদ্যশস্য আটকিয়ে রাখে (মজুতদারি করে), তবে আল্লাহতায়ালা তার ওপর মহামারি ও দরিদ্রতা চাপিয়ে দেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫৫)
সিন্ডিকেট বা  মজুতদারির মতো ঘৃণ্য অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে অবস্থান করা সব মানুষের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব। স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে বৈধ ও ভারসাম্যপূর্ণ কাজ করতে পারলে জীবন ও পৃথিবী সুন্দর হবে। শোষণমুক্ত সংকটহীন সুখময় সমাজ বিনির্মাণ হবে।  

 

লেখক: খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী

 

নামাজ শেষে যেসব জিকির, দোয়া ও আমল করবেন

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
নামাজ শেষে যেসব জিকির, দোয়া ও আমল করবেন
তাসবিহের ছবি। ইন্টারনেট

নামাজ শেষে রাসুলুল্লাহ (সা.) বেশ কিছু আমল করতেন। আমলগুলো করলে ব্যক্তির জীবন সুন্দর হবে। আমলের ঝুলি সওয়াবে ভরে উঠবে। মুমিনদের উচিত, নামাজ শেষে এই আমলগুলো করা। 

ইসতিগফার ও দোয়া পড়া
সাওবান (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ শেষে তিনবার ইসতিগফার পড়তেন, এরপর বলতেন—

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু তাবারকতা জালজালালি ওয়াল ইকরাম।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি সব ধরনের দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র এবং আপনার থেকেই পবিত্রতা ও নিরাপত্তা লাভ করা যায়। হে দান ও মহত্ত্বের মালিক! আপনি সুমহান! (মুসলিম, হাদিস: ৫৯১, ১২২১)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ওয়ালিদ (রহ.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইসতেগফার কীভাবে পড়ব? তিনি বললেন, আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ বলবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৯২৮)

৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘দরিদ্র মুহাজিররা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ধনীরা জান্নাতের মর্যাদা ও চিরস্থায়ী নেয়ামত লাভে আমাদের তুলনায় অগ্রগণ্য হয়ে যাচ্ছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) জানতে চাইলেন, কীভাবে? তারা বলল, নামাজ-রোজা আমরাও করি, তারাও করেন। কিন্তু তারা ধনী হওয়ার কারণে দান-সদকা করেন, ক্রীতদাস মুক্ত করেন—যা আমরা করতে পারি না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি কি তোমাদের এমন আমল শিখিয়ে দেব, যার মাধ্যমে তোমরা অগ্রগামীদের কাছে পৌঁছবে এবং পরবর্তীদের তুলনায় অগ্রগামী হবে? আর এ আমল করা ছাড়া কেউ অগ্রগামী হতে পারবে না। তারা বলল, অবশ্যই বলুন হে রাসুলুল্লাহ। তিনি বললেন, তোমরা প্রতি নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পড়বে।’ অন্য এক বর্ণনায়, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার এসেছে। (মুসলিম, ১/২১৯)   

একবার এ দোয়াটি পড়া
মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) মুয়াবিয়া (রা.)-কে একটি পত্রে লিখে পাঠান যে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পড়তেন— 

বাংলা উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। আল্লাহুম্মা লা মানিয়া লিমা আতাইতা ওয়া লা মুতিয়া লিমা মানায়তা ওয়া লা ইনফায়ু জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। 

বাংলা অর্থ: এক আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা উপাসক নেই, সার্বভোমত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য, তিনি সব কিছুর ওপরই ক্ষমতাশীল। হে আল্লাহ, আপনি যা প্রদান করতে চান তা রোধ করার কেউ নেই। আপনি ছাড়া কোনো সম্পদশালীর সম্পদ কোনো উপকারে আসে না।’ (বুখারি, হাদিস: ৮০৪)
এক বর্ণনায় এসেছে, ‘এই দোয়াটি পাঠ করলে গুনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ১২৪০)

আরও পড়ুন: সিজদার বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

আয়াতুল কুরসি পাঠ করা
আবু উমামা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না। অর্থাৎ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আয়াতুল কুরসি—

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল মিহি ইল্লা বিমা শা আ, ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলি ইয়ুল আজিম।

বাংলা অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সব কিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছো এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৯৪৪৮; তাবারানি (কাবির), হাদিস: ৭৪০৮, ৭৮৩২)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

মসজিদ কর্তৃপক্ষ জমিতে প্রিএমশনের দাবি করতে পারবে?

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০২ পিএম
মসজিদ কর্তৃপক্ষ জমিতে প্রিএমশনের দাবি করতে পারবে?
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ, সংযুক্ত আরব আমিরাত। ছবি: ইন্টারনেট

প্রশ্ন: আমাদের মসজিদের উত্তর পাশে একটা বড় জমি আছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা ছিল, জমিটা কিনে মসজিদের স্থায়ী আয়ের লক্ষ্যে সেখানে মার্কেট বানিয়ে ভাড়া দেবে। কিন্তু কিছুদিন আগে জমিটা বিক্রি হয়ে যায়। মসজিদ কর্তৃপক্ষ এটা জানার পর জমিটা যিনি কিনেছেন তার কাছে আবেদন করেন, তিনি যেন জমিটা মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করে দেন। কিন্তু তিনি জমি বিক্রি করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এখন মসজিদ কর্তৃপক্ষ বলছেন, ওই লোক স্বেচ্ছায় জমিটা বিক্রি না করলে তারা আদালতে প্রিএমশনের (অগ্রাধিকার ক্রয়) দাবি করবেন। কারণ জমিটা মসজিদের পাশেই অবস্থিত। জানার বিষয় হলো, শরিয়তের দৃষ্টিতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ উক্ত জমিতে প্রিএমশনের দাবি করতে পারবে কী? 

উত্তর: শরিয়তের দৃষ্টিতে প্রিএমশন বা অগ্রাধিকার ক্রয় দাবির অধিকারী হলেন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মালিকরা। কোনো ওয়াকফিয়া প্রতিষ্ঠান প্রিএমশনের অধিকার রাখেন না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিক্রীত জমিটি মসজিদ সংলগ্ন হলেও মসজিদ কর্তৃপক্ষ মসজিদের পক্ষে তাতে প্রিএমশন দাবি করতে পারবেন না। (আদ্দুররুল মুখতার, ৬/২২৩; শরহুল মাজাল্লা, আতাতি, ৩/৫৮৪)

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব সম্পত্তি ভাগবাঁটোয়ারা হয়নি, তাতে শুফআর (অগ্রাধিকার ক্রয়) ফায়সালা দিয়েছেন। যখন সীমানা নির্ধারিত হয়ে যায় এবং রাস্তাও পৃথক হয়ে যায়, তখন শুফআর অধিকার থাকে না।’ (বুখারি, হাদিস: ২১১৪) 

আমর ইবনু শারিদ (রহ.) বলেন, আমি সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রা.)-এর কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রা.) এসে তার হাত আমার কাঁধে রাখেন। এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আজাদ করা গোলাম আবু রাফি (রা.) এসে বললেন, হে সাদ, আপনার বাড়িতে আমার যে দুটি ঘর আছে, তা আপনি আমার থেকে খরিদ করে নিন। সাদ (রা.) বললেন, আল্লাহর কসম, আমি সে দুটি ঘর খরিদ করবে না। তখন মিসওয়ার (রা.) বললেন, আল্লাহর কসম, আপনি এ দুটি অবশ্যই খরিদ করবেন। সাদ (রা.) বললেন, আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে কিস্তিতে ৪ হাজারের (দিরহাম) অধিক দেব না। আবু রাফি (রা.) বললেন, এই ঘর দুটির বিনিময়ে আমাকে ৫০০ দিনার দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। আমি যদি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ কথা বলতে না শুনতাম যে, প্রতিবেশী অধিক হকদার তার নৈকট্যের কারণে, তাহলে আমি এ দুটি ঘর আপনাকে ৪ হাজারের (দিরহাম) বিনিময়ে কিছুতেই দিতাম না। আমাকে এ দুটি ঘরের বিনিময়ে ৫০০ দিনার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারপর তিনি তা তাকে (সাদকে) দিয়ে দিলেন।’ (বুখারি, হাদিস: ২১১৫) 

লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক

নামাজে সাহু সিজদা দিতে হয় কেন?

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ এএম
নামাজে সাহু সিজদা দিতে হয় কেন?
সিজদা আদায় করছেন মুসল্লি। ছবি: ইন্টারনেট
নামাজে ভুলক্রমে কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে, ওয়াজিব বা কোনো রোকন আদায়ের ক্ষেত্রে সন্দেহ দেখা দিলে বা কোনো ওয়াজিব বা রোকন অতিরিক্ত আদায় করলে সাহু সিজদার মাধ্যমে তার সংশোধন করতে হয়। এক্ষেত্রে নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পাঠের পর আল্লাহু আকবার বলে দুটি সিজদা করা এবং এরপর ডানে ও বামে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করা। (বুখারি, হাদিস: ৪৮২, ১২৩০)
 
এ ছাড়া একটি সালাম দিয়ে দুটি সাহু সিজদা করার বর্ণনাও রয়েছে। আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) জোহরের নামাজ পাঁচ রাকাত পড়ে ফেললেন। সালাম ফেরানোর পর জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, নামাজের রাকাত সংখ্যা কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি (রাসুল) জানতে চাইলেন, কেন কি হয়েছে? সাহাবিরা বলল, নামাজ পাঁচ রাকাত পড়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন সালামের পর দুটি সাহু সিজদা করলেন।’ (বুখারি, ১/১৬৩)
 
 
ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আসরের নামাজ তিন রাকাত পড়ে সালাম ফেরালেন এবং উঠে ঘরে চলে গেলেন। এক সাহাবি আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, নামাজের রাকাত সংখ্যা কি কমানো হয়েছে? তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) কামরা থেকে বেরিয়ে চতুর্থ রাকাত নামাজ পড়ালেন। এরপর দুটি সাহু সিজদা করলেন এবং সালাম ফিরিয়ে নামাজ সমাপ্ত করলেন।’ (মুসলিম, ১/২১৪)
 
আরও কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায়, সাহু সিজদার নিয়ম হলো, শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ার পর ডান দিকে একটি সালাম ফেরাতে হবে। এরপর তাকবির বলে নামাজের মতো দুটি সিজদা করে বসতে হবে এবং তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করতে হবে। এরপর শুধু ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে। (বুখারি, হাদিস: ১১৫০, ১১৫৩; তিরমিজি, হাদিস: ৩৬১)
 
এক নামাজে একাধিক ওয়াজিব ছুটে গেলেও একবার সাহু সেজদা আদায় করাই যথেষ্ট। প্রত্যেক ভুলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সাহু সেজদা করতে হয় না। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া, ১/১৩০; আদ্দুররুল মুখতার, ২/৮০)
 
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক 

খাওয়ানোর মানত করে তার মূল্য দেওয়া যাবে?

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২২ এএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
খাওয়ানোর মানত করে তার মূল্য দেওয়া যাবে?
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

প্রশ্ন: আমি মানত করেছিলাম, আমার ছেলে পরীক্ষায় পাস করলে ২০ জন দরিদ্র মানুষকে এক বেলা খাওয়াব। আলহামদুলিল্লাহ, আমার ছেলে পাস করেছে। কিন্তু ২০ জন মানুষকে বাড়িতে এনে খাওয়ানো আমার জন্য কষ্টের ব্যাপার। জানার বিষয় হলো, ২০ জনকে কি খাওয়ানো জরুরি। নাকি তাদের খাবারের টাকা দিয়ে দিলেও মানত আদায় হয়ে যাবে?

মাসউদুর রহমান, নোয়াখালী

উত্তর: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে খাবার খাওয়ানোর পরিবর্তে টাকা দিলেও মানত আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ২০ জনের প্রত্যেকে এক বেলা তৃপ্তিসহকারে খেতে পারে এই পরিমাণ টাকা দিতে হবে। (ফাতাওয়া খানিয়া, ১/২৬৯; ফাতাহুল কাদির, ২/১৪৪)

মানত হলো কোনো মুকাল্লাফ (শরিয়তের বিধান প্রযোজ্য) ব্যক্তির নিজের ওপর এমন কোনো কাজ আবশ্যক করা, যা শরিয়ত প্রণেতা আবশ্যক করেননি।’ (আল-ফিকহু আলা মাজাহিবিল আরবায়া, ২/৭৭৯)

মানত করতে হবে নেক কাজের। মানতকারীর সাধ্যের মধ্যে তা হতে হবে। নিজের মালিকানাধীন হতে হবে। পাপের কারণ বা উপলক্ষ হয়, এমন মানত করা যাবে না। মানত করলে তা পূরণ করা আবশ্যক। মানতের বিষয় ব্যক্তির জন্য কষ্টসাধ্য হলে বিকল্প জিনিস দ্বারা মানত পূরণ করা বৈধ। মানত পূরণ না করলে ব্যক্তি কাফফারা দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানতের কাফফারা কসমের কাফফারার মতো।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৩৮৩৪)

আরও পড়ুন: ইমামের ভুল হলে মুকতাদি কী করবেন?

কসমের কাফফারা সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর এর কাফফারা ১০ জন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের খাবার দান করা, যা তোমরা তোমাদের পরিবারকে খেতে দাও, অথবা তাদের কাপড় দান করা কিংবা একজন দাস মুক্তি। যার সামর্থ্য নেই তার জন্য তিন দিন রোজা পালন করা।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৮৯)

শরিয়ত মানতকে বৈধ বললেও তাকে নিরুৎসাহ করেছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মানত করতে নিষেধ করেছেন। কেননা তা মানুষের কোনো কল্যাণ করতে পারে না। এর মাধ্যমে শুধু কৃপণ ব্যক্তি থেকে সম্পদ বের করা হয়।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৩৮০১)

লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক

ইমামের ভুল হলে মুকতাদি কী করবেন?

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৭ পিএম
ইমামের ভুল হলে মুকতাদি কী করবেন?
জামাতে নামাজ আদায়ের ছবি। ইন্টারনেট

নামাজ আদায়কালে ইমাম কোনো ভুল করলে মুসল্লি পেছন থেকে লোকমা দিতে পারবেন। অর্থাৎ ইমামের ভুল সংশোধনে সহযোগিতা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ইমামের পেছনে থাকা পুরুষ মুসল্লিরা সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেবেন আর নারী মুসল্লিরা ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের ওপর মেরে আওয়াজ দিয়ে লোকমা দেবেন। (বুখারি, হাদিস: ১২০৩; মুসলিম, হাদিস: ৮৪০)

আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষের জন্য (লোকমা দেওয়ার) নিয়ম হলো সুবহানাল্লাহ বলা এবং নারীর জন্য (লোকমা দেওয়ার) নিয়ম হলো হাত চাপড়ানো।’ (মুসলিম, ১/১৮০)

সাহল ইবনু সাদ (রা.) বলেন, আমর ইবনু আওফ গোত্রের কিছু লোকের মধ্যে সামান্য বিবাদ ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের একটি জামাত নিয়ে তাদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দিতে সেখানে গেলেন। এদিকে সালাতের সময় হয়ে গেল। কিন্তু তিনি মসজিদে নববিতে এসে পৌঁছেননি। বেলাল (রা.) সালাতের আজান দিলেন, কিন্তু তিনি তখনো এসে পৌঁছেননি। বেলাল (রা.) আবু বকর (রা.)-এর কাছে এসে বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে সালাতেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি সালাতে লোকদের ইমামতি করবেন? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি ইচ্ছা কর।’ 

আরও পড়ুন: দুধ ভাগনির সঙ্গে দেখা করা যাবে?

তারপর বেলাল (রা.) সালাতের ইকামত বললেন, আর আবু বকর (রা.) এগিয়ে গেলেন। পরে নবিজি (সা.) এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম করে প্রথম কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকজন হাততালি দিতে শুরু করল এবং তা অধিক মাত্রায় দিতে লাগলেন। আবু বকর (রা.) সালাত অবস্থায় কোনো দিকে তাকাতেন না, কিন্তু (হাততালির কারণে) তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন নবিজি তাঁর পেছনে দাঁড়িয়েছেন। নবিজি তাকে হাতের ইশারায় আগের মতো সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিলেন। আবু বকর (রা.) তাঁর দুই হাত ওপরে তুলে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেখে পেছনে ফিরে এসে কাতারে শামিল হলেন।

তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আগে বেড়ে লোকদের ইমামত করলেন এবং সালাত সমাপ্ত করে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, ‘হে লোকসকল, সালাত অবস্থায় তোমাদের কিছু ঘটলে তোমরা হাততালি দিতে শুরু কর। অথচ হাততালি দেওয়া নারীদের কাজ। সালাত অবস্থায় কারও কিছু ঘটলে সে যেন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে। কেননা এটা শুনলে তার দিকে দৃষ্টিপাত না করে পারত না। ‘হে আবু বকর, তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন সালাত আদায় করাতে তোমার কিসের বাধা ছিল?’ তিনি বললেন, ‘আবু কুহাফার পুত্রের জন্য শোভা পায় না রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে ইমামতি করা। (বুখারি, হাদিস: ১২১৮;  মুসলিম, হাদিস: ৪২১)

লোকমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা উত্তম। তবে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে লোকমা দিলেও নামাজের ক্ষতি হবে না। ইমাম কেরাতে ভুল করলে বা আটকে গেলে মুক্তাদি কেরাত ঠিক করে দিতে পারবেন। 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক