রাসুলুল্লাহ (সা.) শামের জন্য বরকতের দোয়া করেছেন। শামকে ‘আমাদের শাম’ বলে উল্লেখ করেছেন। ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের শামে বরকত দাও, আমাদের ইয়ামেনে বরকত দাও। তখন উপস্থিত সাহাবিরা বলল, আমাদের নিজেদের জন্যও বরকতের দোয়া করুন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সেখানে তো রয়েছে ভূমিকম্প ও ফেতনা-ফ্যাসাদ। শয়তানের শিং সেখান থেকেই বের হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৯৯০)
জায়েদ বিন সাবেত (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, শাম কতই না কল্যাণময়! শাম কতই না কল্যাণময়! আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, শাম কেন এত কল্যাণকর? রাসুলুল্লাহ বললেন, রহমানের ফেরেশতারা তার ওপরে ডানা বিছিয়ে রাখেন।’ (তিরিমিজি, হাদিস: ৩৯৫৪)
সিরিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন, জর্ডান প্রভৃতি অঞ্চলকে সে সময় ‘মুলকে শাম’ বলা হতো। বিশ্বজুড়ে এখন আলোচনার বিষয় সিরিয়া। সিরিয়ার নাম শুনলেই এই প্রজন্মের কল্পনায় ভাসে যুদ্ধবিধ্বস্ত এক নগরীর ছবি। যেখানে তীব্র খাদ্য সংকট, ভঙ্গুর অর্থনীতি, বিপর্যস্ত জনজীবন, শরণার্থী মানুষের মিছিল ও বিশ্ব মোড়লদের যুদ্ধ যুদ্ধ ধ্বংসাত্মক খেলা। বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসেও সিরিয়া সব সময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগে রাসুলুল্লাহ (সা.) সিরিয়া নিয়ে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এখানে ছয়টি ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করা হলো—
কোরআনের ঘাঁটি হবে সিরিয়া
প্রসিদ্ধ সাহাবি আমর ইবনে আস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি একদিন স্বপ্নে দেখলাম, কোরআনকে আমার বালিশের নিচ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। অতঃপর আমি এর দিকে চেয়ে আছি, হঠাৎ দেখি সেটি একটি উজ্জ্বল আলোর বস্তুতে পরিণত হলো। আর তাকে রাখা হলো শামদেশে। (এতটুকু বর্ণনার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) উপস্থিত সাহাবিদের উদ্দেশ করে) বলেন, যখন পৃথিবীময় ফেতনা বিস্তার লাভ করবে, তখন ইমান থাকবে শামদেশে। অর্থাৎ শামবাসীদের কাছেই থাকবে ইমানের আলো, তারাই ইসলাম ও কোরআনকে সব ধরনের ভ্রান্তি থেকে রক্ষা করবে।’ (আল-মুসতারেক, হাদিস: ৮৫৫৪)
খাঁটি মুমিনদের বাসস্থান
আলি (রা.) সম্পর্কে হজরত শুরাইহ ইবনে উবাইদ (রহ.) বর্ণনা করেন, ‘এক সময় আলি (রা.) ইরাকে থাকতেন। সেই সময় তাকে কেউ একজন বলল, আপনি শামবাসীদের জন্য বদদোয়া করুন। তখন তিনি বলেন, না, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, শাম হলো খাঁটি মুমিনদের বাসস্থান। তারা আল্লাহর খাস বা বিশেষ বান্দা। তারা এক সময়ে একসঙ্গে ৪০ জন থাকেন। যখনই তাদের একজন মৃত্যুবরণ করেন, আল্লাহ তদস্থলে আরেকজনকে বসিয়ে দেন। তাদের উছিলায় বৃষ্টি হয়, শত্রুর ওপর বিজয়ও লাভ করে। তাদের উছিলায় এক সময় শামবাসীদের থেকে আজাব উঠিয়ে নেওয়া হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৮৬৯)
নিরাপদ আশ্রয়
দুনিয়াজুড়ে যখন ফেতনা ও বিপদাপদ বেড়ে যাবে, তখন শামই হবে একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অচিরেই তোমাদের দিকে হাজরামাউতের দিক থেকে একটি আগুন ধেয়ে আসবে। উপস্থিত সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করল, তখন আমাদের করণীয় কী হে আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তখন তোমরা শামদেশের দিকে গমন করবে এবং সেখানেই আঁকড়ে থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২২১৭)
মুসলিমদের ঘাঁটি
আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যুদ্ধের দিন মুসলিমদের শিবির স্থাপন করা হবে গুতা নামক শহরে। যা সিরিয়ার সর্বোত্তম শহর দামেস্কের পাশে অবস্থিত।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪২৯৮)
কিয়ামতের আগে ইসা (আ.)-এর অবতরণের স্থান
ইসা (আ.)-কে আল্লাহতায়ালা দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি আকাশে আছেন। কিয়ামতের আগে তিনি দুনিয়াতে নেমে আসবেন। তাঁর অবতরণের স্থান হবে সিরিয়া। নাওয়াস ইবনে সিময়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা ইসা (আ.)-কে দুনিয়াতে পাঠাবেন। তিনি দুজন সাদা কাপড় পরা ফেরেশতার কাঁধের ওপর ভর করে দামেস্কের শুভ্র-সফেদ উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৭৫৬০)
শাম হবে হাশরের ময়দান
হাশরের ময়দান হবে বর্তমান শাম অঞ্চলটি। মুসনাদে আহমাদে হজরত বাহজা থেকে একটি রেওয়াত বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সিরিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সেটিই হবে তোমাদের জড়ো হওয়ার ময়দান। হাকিম বিন মুয়াবিয়া (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সেখানেই তোমাদের হাশর হবে (তোমরা একত্র হবে)। সেখানেই তোমাদের হাশর হবে। সেখানেই তোমাদের হাশর হবে। তখন লোকেরা আরোহী, পদাতিক ও অধঃমুখী এই তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। ইবনে বুকাইর (রহ.) বলেন, সেখানেই তোমাদের হাশর হবে বলার সময় তিনি শাম দেশের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২০০৩১)
লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক