ঢাকা ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

তাকবির বলে ধীরস্থিরভাবে রুকুতে যেতে হবে

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৩ পিএম
তাকবির বলে ধীরস্থিরভাবে রুকুতে যেতে হবে
রুকু আদায়কারীর ছবি। ইন্টারনেট

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন যখন নামাজে থাকে, সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে নিভৃতে কথা বলে।’ (বুখারি, হাদিস: ৪১৩)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, নামাজে বান্দা আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে। তাই পূর্ণ ধীরস্থিরতা, একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতার সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজ ছাড়া ভিন্ন কোনো দিকে মনোযোগী হওয়া যাবে না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘এক সাহাবি মসজিদে এসে নামাজ আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদের এক কোনায় অবস্থান করছিলেন। সাহাবি এসে তাঁকে সালাম দিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, যাও তুমি আবার নামাজ আদায় করো। কেননা তুমি (যথাযথভাবে) নামাজ আদায় করোনি। সাহাবি ফিরে গেলেন এবং নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর তাঁকে সালাম করলেন। তিনি বললেন, তোমার প্রতিও সালাম। তুমি ফিরে যাও এবং নামাজ আদায় করো। কেননা তুমি (যথাযথভাবে) নামাজ আদায় করনি। তৃতীয়বার সাহাবি বললেন, আমাকে অবগত করুন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তার আগে ভালোভাবে অজু করবে। অতঃপর কেবলার দিকে ফিরবে এবং তাকবির দেবে। কোরআনের যতটুকু তোমার কাছে সহজ মনে হয় তা পাঠ করবে। অতঃপর ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে এবং রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে এবং সিজদা থেকে ধীরস্থিরভাবে সোজা হয়ে বসবে। আবার ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে এবং সিজদা থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর পুরো নামাজ এভাবে আদায় করবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৬৬৭)

নামাজের প্রতিটি রুকন ধীরস্থিরভাবে আদায় করতে হবে। তাকবির বলে ধীরস্থিরভাবে রুকুতে যেতে হবে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা রুকু করো।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৭৭)

আরও পড়ুন: রুকুতে যাওয়ার আগে সামান্য বিরতি নিতে হয় কেন?

আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন নামাজে দাঁড়াতেন তখন আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করতেন। অতঃপর তিনি তাকবির বলে রুকুতে যেতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৭৮৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘অতঃপর তুমি ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৬২৫১)

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন নামাজ শুরু করতেন উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। আবার যখন রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবির বলতেন এবং রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখনও দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৭৩৫)

বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু নামাজ শুরু করার সময় একবার কানের কাছাকাছি পর্যন্ত হাত উঠাতেন। এরপর আর হাত উঠাতেন না।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৭৪৯)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

সিজদার বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৩ পিএম
সিজদার বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
শিল্পীর তুলিতে আঁকা সিজদারত ব্যক্তির ছবি। ইন্টারনেট

সিজদা আরবি শব্দ। অর্থ মাথা নত করা, আত্মসমর্পণ করা। আল্লাহতায়ালার ইবাদতের উদ্দেশ্যে বিনম্রচিত্তে মাটিতে কপালসহ সাতটি অঙ্গ রাখাকে সিজদা বলা হয়। একমাত্র আল্লাহতায়ালার ইবাদত হিসেবে সিজদা করতে হবে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করো এবং ইবাদত করো।’ (সুরা নজম, আয়াত: ৬২)

সিজদা করা ইবাদত। সিজদা আল্লাহতায়ালা নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। তাঁর অনুগ্রহ কামনা করা এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উপায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(আল্লাহকে) সিজদা করো এবং (তাঁর) নৈকট্য লাভ করো।’ (সুরা আলাক, আয়াত: ১৯)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সিজদাবস্থায় বান্দা তার প্রভুর সর্বাধিক নৈকট্যে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা এ সময় বেশি বেশি দোয়া করো।’ (মুসলিম, হাদিস: ৪৮২)। সুতরাং আল্লাহতায়ালার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য, একমাত্র তাঁর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ইবাদত হিসেবে সিজদা করতে হবে।

আধ্যাত্মিক উৎকর্ষসাধনের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায় হলো সিজদা। সিজদার মাধ্যমে মানুষ তার দেহের সর্বোচ্চ পয়েন্ট বা অঙ্গ মাথার ফ্রন্টাল লোবকে সর্বনিম্ন স্তর মাটির সঙ্গে ঠেকিয়ে যাবতীয় অহংকারকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। মহাকবি শেখ সাদি তার কবিতায় লিখেছেন, ‘নিজের বড়ত্ব-অহংকারকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দাও, যদি তুমি প্রকৃত অর্থে বড় হতো চাও। বীজ মাটির সঙ্গে মিশে বাগানের ফুল হয়ে সুশোভিত হয়।’ সুতরাং আত্ম-অহমিকা, আমিত্ব, বড়ত্ব এবং অহংকার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে প্রকৃত অর্থে উৎকর্ষ লাভ করার অনন্য মাধ্যম সিজদা।
  
এর পাশাপাশি সিজদার কিছু আশ্চর্যজনক বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। এ বিষয়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞ জিয়াইল হক সিজদাহর বিজ্ঞান নামে একটি বই লিখেছেন। গবেষণালব্ধ বইটির সারসংক্ষেপ হলো—

সিজদাবস্থায় ব্রেনে তুলনামূলক বেশি রক্তপ্রবাহ ঘটে

আমরা জানি মানুষের ব্রেন হলো ৮৬ বিলিয়ন বা ৮৬০০ কোটি নিউরন বা কোষের সমষ্টি। এটি আবার কয়েক ভাগে বিভক্ত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে লোব বলা হয়। আধুনিক গবেষণায় নির্ণীত মানুষের ব্রেন মোট চারটি লোবে বিভক্ত—

১. ফ্রন্টাল লোব। মাথার একদম সামনে অর্থাৎ কপালের পেছনে এর অবস্থান। বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগীয় কার্যকম নিয়ন্ত্রণ করা এর মূল কাজ।

২. প্যারাইটাল লোব। ফ্রন্টাল লোবের পেছনে এর অবস্থান। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে গৃহীত তথ্যের সমন্বয় করার এর মূল কাজ।

৩. টেম্পোরাল লোব। ফ্রন্টাল লোব ও প্যারাইটাল লোবের নিচে এর অবস্থান। ঘ্রাণ, শ্রবণ, কথা বলা, শোনা ও দেখা এবং দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি তৈরি করা মূলত এর কাজ।

৪. অক্সিপিটাল লোব। মাথার একদম পেছনে এর অবস্থান।

সিজদা অবস্থায় মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগীয় কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রক ফ্রন্টাল লোবকে মাটির সঙ্গে মিলিয়ে রাখার কারণে ব্রেনে অন্যান্য লোবসহ বাকি কোষগুলি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি পরিমাণে রক্ত সরবরাহ পায়। আর বেশি রক্ত সরবরাহ পাওয়া মানে বেশি অক্সিজেন পাওয়া। এতে ব্রেনের কোষগুলো পুষ্টি পায় এবং কার্বন-ডাই-অক্সইড বের হয়ে যায়। ফলে সিজদা থেকে উঠলে রিল্যাক্স ও সতেজ লাগে। 

সিজদার কারণে অতিমাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়

সিজদা দেওয়ার ফলে ফুসফুসের ওপর পেটের ডায়াফ্রামসহ পুরা পেটের চাপ পড়ে। এর ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের গভীরতা বাড়ে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হয়ে যায়। রক্তে কার্বন-ডাই-অক্সইড বেশি থাকাতে শরীর ক্লান্ত থাকে। বর্জ্যরূপী এ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হয়ে যাওয়ার কারণে শরীর চাঙ্গা হয়, মন ফুরফুরে লাগে এবং মেজাজ সতেজতা লাভ করে। ফলে কাজে মনোযোগী হওয়া সহজ হয়। 

আরও পড়ুন: সুদি কারবারে জড়িত ব্যক্তি ইমাম হতে পারবে?

মানসিক স্থিতিশীলতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম

মানুষের ব্রেন হলো একটি বিস্ময়কর পাওয়ার হাউস অথবা পাওয়ার প্লান্ট বা বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র। মানব শরীরের শত শত কোষের মেমব্রনের ভেতরে ও বাইরে নির্দিষ্ট মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। উৎপাদিত এ বৈদ্যুতিক প্রবাহ অ্যাটোমিক বন্ডের মাধ্যমে শরীরের কোষগুলো একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে বার্তা প্রেরণ করতে সক্ষম হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে নিউরোট্রান্সমিশন বলা হয়। শরীরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে বা এক কোষ থেকে অন্য কোষে বৈদ্যুতিক প্রবাহের চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে জীবনের অবসান ঘটা। মানুষের শরীরের এ বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় বলয়কে বায়োম্যাগনেটিক ফিল্ড বলা হয়। এ ছাড়া জমিন বা মাটি অথবা ভূতলে একপ্রকার চুম্বকীয় বলয় রয়েছে, যাকে জিওম্যাগনেটিক ফিল্ড বলা হয়। জমিনের জিওম্যাগনেটিক ফিল্ডের সঙ্গে মানব শরীরের বায়োম্যাগনেটিক ফিল্ডের সংযোগ ঘটিয়ে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের মাধ্যমে মানসিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা সম্ভব। এর সুক্ষ্ম ইশারা পবিত্র কোরআন থেকে পাওয়া যায়। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘আর তোমাদের জন্য জমিনে রয়েছে নির্দিষ্টকালের স্থিতিশীলতা ও জীবিকা।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩৬)

সিজদা করার দ্বারা মানুষের শরীরের বায়োম্যাগনেটিক ফিল্ডের অতিমাত্রার বৈদ্যুতিক প্রবাহকে মাটি বা জমিনের জিওম্যাগনেটিক ফিল্ডে আর্থিং করা সম্ভব হয় এবং এতে মানসিক স্বস্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়। বিষয়টা অনেকটা ঘর বা বাড়ির বৈদ্যুতিক সার্কিটের ভোল্টেজের মাত্রাকে স্থিতিশীল বা নিরাপদ করতে বৈদ্যুতিক সিস্টেমটিকে মাটিতে সংযুক্ত করার মাধ্যমে অতিরিক্ত ভোল্টেজ বা স্ট্যাটিক চার্জ নিষ্কাশন করার মতো।

হতাশা, উৎকণ্ঠা, বিষণ্ণতা ও মানসিক চাপ দূর করে

অ্যাংজাইটি, স্ট্রেস, হতাশা, উৎকণ্ঠা, বিষণ্ণতা ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তির জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের থেরাপি চিকিৎসার প্রচলন রয়েছে। এর মধ্যে রিলাক্সেশন থেরাপি, ডিপ ব্রিদিং থেরাপি, ইলেকট্রো কনভালসিভ থেরাপি অন্যতম। এসব থেরাপির প্রধানতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানসিক চাপ দূর করে সতেজতা ও প্রফুল্লতা ফিরিয়ে আনা। ব্রেন ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে বিষাক্ত বর্জ্যতুল্য কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ানো। আর এসব কিছুই সহজভাবে প্রাকৃতিন নিয়মে অর্জন করা সম্ভব হয় সিজদার মাধ্যমে।

ব্যাক পেইন বা কোমর ব্যথার উপশম ঘটায়

ইউনির্ভাসিটি অব হার্ভার্ডে ২০১৪ সালে দ্য বেস্ট মেডিসিন ফর ব্যাক পেইন মে বি গুড ওল্ড-ফ্যাশন্ড মুভমেন্ট অ্যান্ড এক্সারসাইজ শিরোনামে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, সিজদা মানুষের ব্যাকবোন বা ভারটেব্রা ও এর মধ্যকার নার্ভসহ রক্তনালিকে শক্তিশালী করে এবং মাংসপেশীকে পরিপুষ্ট করে। ফলে নিশ্চিতভাবে বলা হয়, সিজদা মানুষের ব্যাক মেইন বা কোমর ব্যথা প্রতিরোধে বা উপশমে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। 

ব্রেনের প্রি-ফন্টাল কার্যক্রমে পজেটিভ পরিবর্তন ঘটে

আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ যৌথভাবে দ্য ইফেক্ট অব প্রসট্রেশন (সিজদা) অন দ্য প্রি-ফন্টাল ব্রেইন অ্যাকটিভিটি: অ্যা পাইলট স্ট্যাডি শিরোনামের এক গবেষণায় সিজদা করার আগে ও পরে কিছু নারী-পুরুষের ব্রেন ম্যাপিং করে দেখেছেন, সিজদা করার কারণে মানুষের ব্রেনের প্রি-ফন্টাল কার্যক্রমে পজেটিভ তারতম্য ঘটে। ১০ সেকেন্ড সময় ধরে নিয়মিত সিজদা করার দ্বারা এ পরিবর্তন সূচিত হতে থাকে এবং বিশ সেকেন্ড সময়কালব্যাপী সিজদা করলে এ পরিবর্তন আরও বেশি প্রগাঢ় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিজতা কারলে মানুষের ব্রেনে যেসব পরিবর্তন সাধিত হয় এর ফলে ব্যক্তির স্মৃতি, মানসিক স্থিতিশীলতা ও প্রশান্তি, জটিল ও কঠিন চিন্তা করা এবং বিশ্লেষণ করার সামর্থ্যে, এমনকি আচরণেও তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। (সিজদাহর বিজ্ঞান, জিয়াউল হক, ঋদ্ধ প্রকাশন, পৃষ্ঠা : ৫৬-৬৮)    

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

 

সুলতান লেদারের ই-কমার্স ওয়েবসাইট উদ্বোধন

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৩ পিএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ পিএম
সুলতান লেদারের ই-কমার্স ওয়েবসাইট উদ্বোধন
সাবেক প্রধান বিচারপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রউফের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বারাকাত বিডির (সুলতান লেদার) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এম. মুফাজ্জল ইবনে মাহফুজ ও অন্যান্যরা। ছবি : সংগৃহীত

বারাকাত বিডি ও সুলতান লেদারের উদ্যোগে ‘চামড়া শিল্পের উন্নয়ন দেশীয় চামড়াজাত পণ্যের বিকাশ ও সমকালীন অর্থনৈতিক বিষয়ক সেমিনার-২০২৪’ এবং সুলতান লেদারের ই-কমার্স ওয়েবসাইট ‘সুলতান এক্সপ্রেস.কম.বিডি’র শুভ উদ্বোধন হয়েছে।  

শনিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকার ধানমন্ডি কনভেনশলে এ সেমিনার ও শুভ উদ্বোধন হয়। 

মাওলানা মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে ও মুহিব ইমতিয়াজের সঞ্চালনায় সেমিনারের শুরুতে শুভেচ্ছা দেন বারাকাত বিডি ও সুলতান লেদারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এম. মুফাজ্জল ইবনে মাহফুজ। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রউফ। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মুফতি মুনির হোসাইন কাসেমী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, মিশন শিক্ষা পরিবারের প্রিন্সিপাল প্রফেসর মো. হুমায়ুন কবীর, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহের।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতি কামরাঙ্গীচরের সভাপতি আবুল বাশার, বাংলাদেশ লেদার অ্যান্ড লেদার গুডস ম্যানুফেকচারারের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ চামড়া দ্রব্য প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি হাজি আবু হানিফ, ইশাতুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান ও সুলতান লেদার এর বিভাগীয় প্রতিনিধিরা।

এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন জাতীয় কারিকুলাম বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মাদ ফরহাদুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, ঢাকাস্থ চাঁদপুর উলামা পরিষদের সদস্য সচিব মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ আমিনী, দৈনিক খবরের কাগজের ইসলাম বিভাগের প্রধান লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক মিরাজ রহমান, ইনসাফ ২৪-এর সম্পাদক সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার প্রমুখ। 

সেমিনারে অতিথিরা চামড়া শিল্পের বিকাশে করণীয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নে চামড়া শিল্পের ভূমিকা ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন।    

রায়হান রাশেদ/এমআর

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের লালবাগ জোন কমিটি গঠন

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ এএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৮ এএম
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের লালবাগ জোন কমিটি গঠন
কাউন্সিল অধিবেশনে নেতাকর্মীরা। ছবি : সংগৃহীত

মাওলানা জোবায়ের আহমাদকে সভাপতি ও মাওলানা বশিরুল হাসান খাদিমানীকে সাধারণ সম্পাদক করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের লালবাগ জোন কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

রোববার (১ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় লালবাগ জামেয়া মিলনায়তনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হকের প্রধান অতিথিতে কাউন্সিল অধিবেশনে এ কমিটি গঠন করা হয়। 

অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব ও ঢাকা মহানগর যুগ্ম সচিব মাওলানা মুনির হোসাইন কাসেমী, কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা জসিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুফতি বশিরুল্লাহ, ঢাকা মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজহারুল ইসলাম প্রমুখ।

১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি করা হয়েছে মাওলানা আনিসুর রহমানকে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মাওলানা সাইফুল্লাহ হাবিবীকে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন মাওলানা সানাউল্লাহ খান। মাওলানা নাসির বিন নুরকে করা হয়েছে প্রচার সম্পাদক। 

রায়হান রাশেদ/মিরাজ রহমান

সুদি কারবারে জড়িত ব্যক্তি ইমাম হতে পারবে?

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ এএম
সুদি কারবারে জড়িত ব্যক্তি ইমাম হতে পারবে?
জামাতে নামাজ আদায়ের ছবি। ইন্টারনেট

প্রশ্ন: যারা কলেজে, উচ্চ বিদ্যালয়ে বা এমন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা বা চাকরি করেন, যেখানে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে পড়ালেখা করে বা নারী-পুরুষ অবাধে একসঙ্গে কাজ করে। মেয়েরা বোরকা পরে এলেও মুখ খোলা থাকে। এমন ব্যক্তির ইমামতি করা শরিয়তসম্মত হবে? এ ছাড়া যারা বেপর্দা মেয়েদের প্রাইভেট পড়ান বা কোনো সুদি প্রতিষ্ঠান যেমন—সুদি ব্যাংক, বিমা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তাদের ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার হুকুম কী? 

আরমান হোসাইন, নাটোর

উত্তর: ইসলামে ইমামতি গুরুত্বপূর্ণ ও মহান দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন হাদিসে এর গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইমাম মুসল্লিদের নামাজের জিম্মাদার।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৯৪২৮) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যদি তোমরা চাও তোমাদের নামাজ কবুল হোক, তা হলে তোমাদের ইমাম যেন হয় তোমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তি। কারণ ইমাম হলো তোমাদের ও তোমাদের রবের মধ্যকার প্রতিনিধি।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৫০৩৪)

ফকিহরা বলেন, ‘ইমাম হতে হবে সহিহ আকিদাসম্পন্ন ব্যক্তি, বিশুদ্ধ তেলাওয়াতের অধিকারী, খোদাভীরু ও সুন্নতের অনুসারী আলেম। প্রকাশ্য গুনাহের কাজে লিপ্ত ব্যক্তি ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। মসজিদের দায়িত্বশীল বা মহল্লাবাসীর কর্তব্য হলো, ইমাম নিয়োগ দেওয়ার সময় উক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে দ্বীনদার-পরহেজগার যোগ্য আলেম নিয়োগ দেওয়া।

আরও পড়ুন: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার উপকারিতা

প্রশ্নে যে কয়টি কাজ বা চাকরির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন—গায়রে মাহরাম (যাদের সঙ্গে পর্দা করা ফরজ) মেয়েদের সরাসরি পড়ানো, সহশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, বেগানা নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করে এমন চাকরি, সুদি ব্যাংক বা বিমা কোম্পানিতে চাকরি—এসবই সম্পূর্ণ নাজায়েজ কাজ ও শরিয়ত পরিপন্থি পেশা। এ ধরনের নাজায়েজ চাকরি বা প্রকাশ্য নাজায়েজ কাজে জড়িত ব্যক্তি ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। এমন ব্যক্তির পেছনে নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমি। সুতরাং মসজিদের দায়িত্বশীলদের কর্তব্য এ ধরনের ব্যক্তিকে ইমাম নিয়োগ না দেওয়া।

এসব নাজায়েজ পেশায় যুক্ত কেউ ইমাম হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে তারই উচিত, ইমামতির গুরুত্ব ও মহত্ত্ব উপলব্ধি করে নিজ থেকে এ ধরনের নাজায়েজ চাকরি ছেড়ে দেওয়া। মসজিদের দায়িত্বশীলরাও ইমামকে এমন চাকরি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করবে। কিন্তু ইমাম যদি উক্ত চাকরি না ছাড়েন, তা হলে মসজিদের দায়িত্বশীলদের উচিত হবে, তার পরিবর্তে দ্বীনদার পরহেজগার যোগ্য আলেমকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া। তবে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে মসজিদের দায়িত্বশীল, মুসল্লিরা এবং ইমামের মধ্যে পরস্পর বোঝাপড়ার মাধ্যমে, শরিয়তের বিধানের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিয়ে। এ নিয়ে কোনো প্রকার দলাদলি বা ফেতনা-ফাসাদ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

হ্যাঁ, এ ধরনের ব্যক্তিদের পেছনে নামাজ পড়া যদিও মাকরুহ, তবে কেউ পড়ে ফেললে তা আদায় হয়ে যাবে। আদায়কৃত নামাজ পুনরায় পড়তে হবে না। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৩; তাফসিরে ইবনে কাসির, ৩/৫০৬; মুসলিম, হাদিস: ১৫৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া, ১/৯২) 

লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক

 

মাওলানা সালাহ উদ্দীন (রহ.)-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১০ পিএম
আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৫ পিএম
মাওলানা সালাহ উদ্দীন (রহ.)-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
আলোচনা সভা ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকাস্থ ভোলা জেলা ওলামা তলাবার উদ্যোগে শায়েখজি মাওলানা সালাহ উদ্দিন (রহ.)-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) ঢাকার ইকোনোমিকস রিপোর্টার ফোরামে এ আয়োজন হয়। 

ঢাকাস্থ ভোলা জেলার আলেমদের সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ঢাকাস্থ ভোলা জেলা ওলামা তলাবার সভাপতি লেখক অনুবাদক ও মুহাদ্দিস মাওলানা আবুল ফাতাহ কাসেমীর সভাপতিত্বে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য লেখক গবেষক ও জামিয়া কাসেম নানুতবী ঢাকার শাইখুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন। উপস্থিত ছিলেন নন্দিত লেখক ও সিরাত গবেষক মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, বাইতুল উলুম ঢালকানগর মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি হাবিবুল্লাহ মেসবাহ, দারুল উলুম দেওভোগ নারায়ণগঞ্জের নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আবদুর রহমান, বরিশাল বিভাগীয় কওমী মাদরাসা ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব ও দৈনিক খবরের কাগজের বিভাগীয় প্রধান মাওলানা মিরাজ রহমান, মুফতি শরীফুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা ফরীদুদ্দীন আল মাদানী, হাফেজ মাওলানা শামসুদ্দিন, মাওলানা কামালুদ্দীন প্রমুখ।

সভায় বক্তারা হাজারো আলেমের শিক্ষক যাত্রাবাড়ী ও লালবাগ মাদরাসার সাবেক মুহাদ্দিস, ঢালকানগর মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা অন্যতম মাওলানা সালাউদ্দিন (রহ.)-এর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। বর্তমান সময়ে আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী গঠনে মাওলানা সালাউদ্দিন (রহ.)-এর কর্মপন্থা অনুসরণের তাগিদ দেন তারা।

রায়হান রাশেদ/মিরাজ রহমান