প্রশ্ন: গত বছর আল্লাহতায়ালার রহমতে আমি হজ পালন করি। পূর্ব অভ্যাস অনুযায়ী হাতে আংটি পরেই হজে চলে যাই। হজের পুরো সময় আংটি আমার হাতেই ছিল। হজ শেষে এক সফরসঙ্গী প্রশ্ন করলেন, ইহরাম অবস্থায় আংটি পরা যায় নাকি? তার এ কথা শুনে আমার সংশয় তৈরি হয় যে, ইহরাম অবস্থায় আংটি পরা আমার জন্য ঠিক হয়েছে কি না? জানার বিষয় হলো, ইহরাম অবস্থায় আংটি পরার কারণে হজের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না?
আদিল রহমান, ঢাকা
উত্তর: ইহরাম অবস্থায় আংটি পরা জায়েজ আছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘ইহরাম অবস্থায় আংটি পরতে কোনো অসুবিধা নেই।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ১৪৪২৭; আদ দুররুল মুখতার, ২/৪৯১)
ইহরাম বাঁধার পর যেসব কাজ নিষিদ্ধ হয়ে যায়, সেগুলো তিন ভাগে ভাগ করা যায়—
ক. পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ
মাথা এবং মুখমণ্ডল আবৃত করা যাবে না। (বুখারি, ১২৬৫)। কান, ঘাড় ও পা ঢাকা যাবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য একান্ত প্রয়োজন হলে ফেসমাস্ক পরা যাবে। (মানাসিক, ১২৩)
সেলাই করা পোশাক পরা যাবে না। (বুখারি, হাদিস: ১৫৪৩)। পাঞ্জাবি, জুব্বা, শার্ট-প্যান্ট, গেঞ্জি, পায়জামা, আন্ডারওয়্যার ইত্যাদি পরা যাবে না। তবে ঘড়ি, বেল্ট ও সাথে থাকা ব্যাগ ইত্যাদিতে সেলাই থাকলে সমস্যা নেই। (ইবনে আবি শাইবা, ১৫৬৯৯)
পায়ের পাতার ওপরের অংশ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা নিষেধ। (বুখারি, হাদিস: ১৫৪২)
চুল-দাড়ি আঁচড়ানো ও চুলে সিঁথি করা নিষেধ।
আরও পড়ুন: আইয়ামে বিজের রোজা রেখে মেন্থলের ভাপ নেওয়া যাবে?
খ. নারীর জন্য নিষিদ্ধ
চেহারায় কাপড় লাগানো নিষেধ। (বুখারি, হাদিস: ১৮৩৮) তবে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। (মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, হাদিস: ৪১৮)
মেহেদি, লিপস্টিকসহ বিভিন্ন সাজসজ্জার প্রসাধনী ঘ্রাণমুক্ত হলেও ব্যবহার করা নিষেধ।
চুলে তেল দেওয়া ও সিঁথি করা নিষেধ। তবে চুল বেঁধে রাখতে পারবেন। আর চুল না আঁচড়ানোর কারণে যদি খুব বেশি অস্বস্তি লাগে কিংবা চুলে জট লেগে যায়, তা হলে সাজসজ্জার নিয়ত ছাড়া প্রয়োজনমতো চুল আঁচড়ানো যাবে।
যদি মাসিক স্রাব বা সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব অবস্থায় ইহরাম করেন তা হলে তার জন্য শুধু তাওয়াফ করা, নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত ও মসজিদে প্রবেশ করা নিষেধ। এ ছাড়া তিনি উমরার অন্য সব কাজ করতে পারবেন।
গ. পুরুষ-নারী উভয়ের জন্য নিষিদ্ধ
ঝগড়া-বিবাদ নিষিদ্ধ।
সাজসজ্জা গ্রহণ করা নিষেধ। (তিরমিজি, হাদিস: ২৯৯৮)। এমনকি চুলে তেল দেওয়া থেকে বিরত থাকাতে হবে।
শরীরে বা কাপড়ে সুগন্ধি ব্যবহার করা নিষেধ। (মুসলিম, হাদিস: ১১৭৭) এমনকি সুগন্ধি তেলও ব্যবহার করা যাবে না।
সুগন্ধি সাবান, পাউডার, ক্রিম, পারফিউম ব্যবহার নিষিদ্ধ। এমনকি সুগন্ধি জর্দাও খাওয়া যাবে না।
হাত বা পায়ের নখ উপড়ে ফেলা, কর্তন বা ছোট করা যাবে না। (মানাসিকুল হাজ ওয়াল উমরা, ৪৪)
পশু-পাখি শিকার করা, কোনো শিকারে সহযোগিতা করা নিষেধ। তবে গবাদিপশু জবাই করা যাবে। (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৯৫-৯৬; মুসলিম, হাদিস: ১১৯৬)
বিবাহসংক্রান্ত আলোচনা করা নিষেধ। (মুসলিম, হাদিস: ১৪০৯)
সহবাস করা, কামভাব সৃষ্টি হয় এমন কথা ও কাজ করা নিষেধ। কামোত্তেজনাসহ স্বামী-স্ত্রীর চুম্বন, স্পর্শও নিষেধ। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৭)
কাপড় বা শরীরের উকুন মারা নিষেধ। (ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ১৫৮৭৬)
লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক