পৃথিবীতে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদ। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত মসজিদেই আদায় করতে হয়। মসজিদ আল্লাহর ঘর। এই ঘরের বিশেষ কিছু আদব ও শিষ্টাচার আছে। আছে কিছু বিধি-নিষেধ। এখানে কয়েকটি নিষিদ্ধ কাজ উল্লেখ করা হলো—
হারানো জিনিসের ঘোষণা দেওয়া: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শুনে অথবা দেখে যে, মসজিদে এসে কেউ তার হারানো জিনিস খুঁজছে, সে যেন বলে, তোমার হারানো জিনিস তুমি যেন না পাও, আল্লাহ সেটিই করুন। কারণ হারানো জিনিস খোঁজার জন্য এই ঘর তৈরি করা হয়নি।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৩)
ক্রয়-বিক্রয় করা: মসজিদ নির্মাণ করা হয় আল্লাহর ইবাদত, তাঁর জিকির এবং তাঁর ইবাদতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি পালনের জন্য। মসজিদ পার্থিব কোনো কাজের জন্য বানানো হয়নি। মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে কবিতা আবৃত্তি, ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং জুমার নামাজের আগে বৃত্তাকারে বসতে নিষেধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৭৯)
গল্প-গুজব করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অচিরেই এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষ মসজিদে বসে নিজেদের দুনিয়াবি কথাবার্তা বলবে। অতএব, তোমরা এসব লোকের গল্প-গুজবে বসবে না। আল্লাহতায়ালার এমন লোকের প্রয়োজন নেই।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস: ২৯৬২)
ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটানো: আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে ইতিকাফ করছিলেন। তিনি সাহাবিদের তেলাওয়াত শুনতে পেলেন। তারা উচ্চ আওয়াজে কোরআন তেলাওয়াত করছে। তাদের তেলাওয়াত শুনে তিনি পর্দা খুলে বললেন, মুসল্লি তার রবের সঙ্গে কানে কানে কথা বলে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকে যেন লক্ষ করে, সে তার রবের সঙ্গে কী বলছে। আর তোমাদের কেউ যেন একে অপরের ওপরে উচ্চৈঃস্বরে কোরআন তেলাওয়াত না করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৩৩২)
আরও পড়ুন: মানবতার ফেরিওয়ালা তাকওয়া ফাউন্ডেশনের গাজী ইয়াকুব
দুর্গন্ধযুক্ত খাবার খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করা: দুর্গন্ধযুক্ত কোনো খাবার খেয়ে মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ। পেঁয়াজ, রসুন, মুলা, বিড়ি, সিগারেট ও তামাকজাতীয় কোনো কিছু খেয়ে মসজিদে যাওয়া দোষনীয়। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) খায়বার যুদ্ধের সময় বলেন, যে ব্যক্তি এসব গাছের কোনো একটি খায়, অর্থাৎ রসুন বা অনুরূপ স্বাদ ও গন্ধের কোনো কিছু খায়, সে যেন মসজিদে না আসে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১১৩৫)
সহবাস করা: মসজিদে স্বামী-স্ত্রী সহবাস করা হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীগমন করো না, যখন তোমরা মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় থাকো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭)
আজানের পর মসজিদ থেকে বের হওয়া: আবু শাসা (রা.) বলেন, ‘আসরের নামাজের আজান হয়ে যাওয়ার পর এক ব্যক্তি মসজিদ থেকে বেরিয়ে চলে গেল। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এই ব্যক্তি আবুল কাসিম (সা.)-এর নির্দেশ অমান্য করল।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২০৪)
কাউকে জায়গা থেকে উঠিয়ে সেখানে বসা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তোমার ভাইকে তার জায়গা থেকে না উঠায় এবং তাকে তার জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়ে সে জায়গায় না বসে। তবে তাকে বলবে, তুমি জায়গা প্রশস্ত করো।’ (মুসলিম, হাদিস: ৫৫৮১)
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম মাদরাসা, মধুপুর, টাঙ্গাইল