নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ প্রদান করে মূলধনের অতিরিক্ত মুনাফা নেওয়া হলো সুদ। সুদ দুই প্রকার। এক. রিবা আন-নাসিয়া: ঋণের ওপর নির্ধারিত অতিরিক্ত অর্থ—যা নির্দিষ্ট সময় শেষে মূল ঋণের পাশাপাশি ফেরত নেওয়া হয়। দুই. রিবা আল-ফাজল: পণ্য বা সম্পদ বিনিময়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্য দাবি করা, যখন একই ধরনের পণ্য বিনিময় করা হয়।
ইসলামে সুদ হারাম। সুদে অন্যায়ভাবে ব্যক্তির সম্পদ বাড়ানো হয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা ছেড়ে দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭৮)
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা সুদ খেও না ক্রমবর্ধিতভাবে, আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩০)
আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধ: সুদে জড়িত হওয়ার দ্বারা আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। যারা সুদ খায়, তারা যেন আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু যদি তোমরা তা না কর তা হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা অত্যাচার করবে না এবং তোমাদের অত্যাচার করা হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭৯)
আরও পড়ুন: মসজিদে যেসব কাজ নিষেধ
শয়তানের স্পর্শে পাগল: সুদি লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি মারা গেলে কিয়ামতের দিন তাকে এমনভাবে উঠানো হবে, যেন তাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা সুদ খায়, তারা তার মতো (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭৫)
লাঞ্ছিত-অপদস্থ: হাশরের মাঠে সুদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে গলা চেপে উঠানো হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুদ গ্রহণকারীকে কিয়ামত দিবসে এমনভাবে উঠানো হবে, যেন সে পাগল এবং গলা চেপে ধরা হয়েছে। তাকে বলা হবে, তুমি তোমার যুদ্ধের সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য।’ (উমদাতুত তাফসির, ১/৩৩০)
দুর্ভিক্ষ: সুদের কারণে এলাকায় দুর্ভিক্ষ আসে। সেখানে আগের মতো ফসল ফলে না। সময়মতো বৃষ্টি হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে এলাকার সুদের প্রচলন প্রকাশ হয়ে যায়, সে এলাকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৭৮২২)
আল্লাহর গজব: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো এলাকায় যখন ব্যভিচার ও সুদের লেনদেন ব্যাপক ও অতি সহজ হয়ে যায়, তা হলে তারা নিজেদের ওপর আল্লাহর আজাব বৈধ করে নিল।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)
মায়ের সঙ্গে ব্যভিচার: সুদ খাওয়া মানে আপন মায়ের সঙ্গে ব্যভিচার করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (ব্যভিচার) করা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৭৪)
লেখক: ইমাম ও খতিব, আজগর আলী প্রধান জামে মসজিদ, ঢাকা