পার্থিব জীবনে সফলতা ও আর্থিক সচ্ছলতা লাভের অন্যতম উপায় আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারাই বিবেকবান; আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আদেশ দিয়েছেন, যারা তা অক্ষুণ্ন রাখে এবং তাদের প্রতিপালককে ভয় করে আর ভয় করে কঠোর হিসাবকে।’ (সুরা রাদ, আয়াত: ২১)
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় রিজিক ও আয়ু বাড়ে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি, হাদিস: ৪৮৩০)
অনেকে আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করা গুনাহ মনে করে না। আত্মীয়দের প্রাপ্য অধিকার দিতে অস্বীকার করে অনেকে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘অতএব আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। এটি উত্তম তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা রুম, আয়াত: ৩)
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সবার সঙ্গে ন্যায় ও সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছেন এবং নির্দেশ দিচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনের হক আদায়ের জন্য।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৯০)
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারীর প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তিকে সম্পর্ক রক্ষাকারী বলা যায় না, যে অন্যের থেকে সম্পর্ক রক্ষা হলে সম্পর্ক রক্ষা করে। বরং ওই ব্যক্তিকে সম্পর্ক রক্ষাকারী বলা যায়, যে অন্য পক্ষ সম্পর্ক ছিন্ন করলেও সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৯৯১)
আরও পড়ুন: সুদের ভয়াবহতা
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তাহলে কি এমন হতে পারে যে, ক্ষমতা পেলে তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে।’ (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২২)
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যা জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে শরিক করো না, নামাজ আদায় করো এবং জাকাত দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখো।’ (বুখারি, হাদিস: ১৩০৯)
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার সর্বোচ্চ স্তর হলো জীবন ও সম্পদ দিয়ে সাহায্য করা। আত্মীয়দের মধ্যে অনেকে আছে আর্থিকভাবে দুর্বল ও অভাবগ্রস্ত, যথাসম্ভব তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করতে হবে। কল্যাণ কামনা করতে হবে। আত্মীয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছাড়া জীবন একাকী, বিচ্ছিন্ন ও আনন্দহীন হয়ে পড়ে। হিংসা-বিভেদ ভুলে পরস্পরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়