ঢাকা ৮ মাঘ ১৪৩১, বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

সুদি কারবারে জড়িত ব্যক্তি ইমাম হতে পারবে?

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ এএম
সুদি কারবারে জড়িত ব্যক্তি ইমাম হতে পারবে?
জামাতে নামাজ আদায়ের ছবি। ইন্টারনেট

প্রশ্ন: যারা কলেজে, উচ্চ বিদ্যালয়ে বা এমন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা বা চাকরি করেন, যেখানে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে পড়ালেখা করে বা নারী-পুরুষ অবাধে একসঙ্গে কাজ করে। মেয়েরা বোরকা পরে এলেও মুখ খোলা থাকে। এমন ব্যক্তির ইমামতি করা শরিয়তসম্মত হবে? এ ছাড়া যারা বেপর্দা মেয়েদের প্রাইভেট পড়ান বা কোনো সুদি প্রতিষ্ঠান যেমন—সুদি ব্যাংক, বিমা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তাদের ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার হুকুম কী? 

আরমান হোসাইন, নাটোর

উত্তর: ইসলামে ইমামতি গুরুত্বপূর্ণ ও মহান দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন হাদিসে এর গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইমাম মুসল্লিদের নামাজের জিম্মাদার।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৯৪২৮) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যদি তোমরা চাও তোমাদের নামাজ কবুল হোক, তা হলে তোমাদের ইমাম যেন হয় তোমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তি। কারণ ইমাম হলো তোমাদের ও তোমাদের রবের মধ্যকার প্রতিনিধি।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৫০৩৪)

ফকিহরা বলেন, ‘ইমাম হতে হবে সহিহ আকিদাসম্পন্ন ব্যক্তি, বিশুদ্ধ তেলাওয়াতের অধিকারী, খোদাভীরু ও সুন্নতের অনুসারী আলেম। প্রকাশ্য গুনাহের কাজে লিপ্ত ব্যক্তি ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। মসজিদের দায়িত্বশীল বা মহল্লাবাসীর কর্তব্য হলো, ইমাম নিয়োগ দেওয়ার সময় উক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে দ্বীনদার-পরহেজগার যোগ্য আলেম নিয়োগ দেওয়া।

আরও পড়ুন: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার উপকারিতা

প্রশ্নে যে কয়টি কাজ বা চাকরির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন—গায়রে মাহরাম (যাদের সঙ্গে পর্দা করা ফরজ) মেয়েদের সরাসরি পড়ানো, সহশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, বেগানা নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করে এমন চাকরি, সুদি ব্যাংক বা বিমা কোম্পানিতে চাকরি—এসবই সম্পূর্ণ নাজায়েজ কাজ ও শরিয়ত পরিপন্থি পেশা। এ ধরনের নাজায়েজ চাকরি বা প্রকাশ্য নাজায়েজ কাজে জড়িত ব্যক্তি ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। এমন ব্যক্তির পেছনে নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমি। সুতরাং মসজিদের দায়িত্বশীলদের কর্তব্য এ ধরনের ব্যক্তিকে ইমাম নিয়োগ না দেওয়া।

এসব নাজায়েজ পেশায় যুক্ত কেউ ইমাম হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে তারই উচিত, ইমামতির গুরুত্ব ও মহত্ত্ব উপলব্ধি করে নিজ থেকে এ ধরনের নাজায়েজ চাকরি ছেড়ে দেওয়া। মসজিদের দায়িত্বশীলরাও ইমামকে এমন চাকরি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করবে। কিন্তু ইমাম যদি উক্ত চাকরি না ছাড়েন, তা হলে মসজিদের দায়িত্বশীলদের উচিত হবে, তার পরিবর্তে দ্বীনদার পরহেজগার যোগ্য আলেমকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া। তবে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে মসজিদের দায়িত্বশীল, মুসল্লিরা এবং ইমামের মধ্যে পরস্পর বোঝাপড়ার মাধ্যমে, শরিয়তের বিধানের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিয়ে। এ নিয়ে কোনো প্রকার দলাদলি বা ফেতনা-ফাসাদ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

হ্যাঁ, এ ধরনের ব্যক্তিদের পেছনে নামাজ পড়া যদিও মাকরুহ, তবে কেউ পড়ে ফেললে তা আদায় হয়ে যাবে। আদায়কৃত নামাজ পুনরায় পড়তে হবে না। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৩; তাফসিরে ইবনে কাসির, ৩/৫০৬; মুসলিম, হাদিস: ১৫৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া, ১/৯২) 

লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক

 

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৫ পিএম
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব
ইবাদতরত এক নারীর ছবি। পিন্টারেস্ট

কোরআন ও হাদিসে তাহাজ্জুদ নামাজের অনেক গুরুত্বের কথা আলোচনা করা হয়েছে। এটি আদায় করতে হয় রাতের শেষ ভাগে। ফজর নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগে। মুহাম্মাদ (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি রাতের কিছু অংশে (ঘুম থেকে উঠে নামাজের জন্য) দণ্ডায়মান হোন। অর্ধরাত অথবা এর থেকে কিছু সময় কম (তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য ব্যয়) করুন। অর্থাৎ রাতের শেষাংশে নামাজে দাঁড়িয়ে যান।’ (সুরা মুজ্জামিল, আয়াত: ২-৩)

মুফতি মুহাম্মাদ শফি (রহ.) তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে লিখেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে আয়াতে বলা হয়েছে, আপনি রাতের কিছু অংশ বাদ দিয়ে বাকি রাতটুকু তাহাজ্জুদের নামাজে মশগুল থাকুন। সহজ ও সঠিকভাবে কোরআন পাঠ করুন। দ্রুততার সঙ্গে পাঠ করবেন না। বরং কেরাত ও রুকু-সেজদাও ধীরে ধীরে আদায় করবেন। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) দীর্ঘ সময় নিয়ে রাতের নামাজ আদায় করতেন। লম্বা কেরাত পড়তেন। এমনকি তাঁর পা যুগল ফুলে যেত। অনেক সাহাবিদের আমলও এমনটি ছিল। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর রাতের বেলা তাহাজ্জুদের (রাত জেগে আদায় করা) নামাজ আপনার জন্য নফল (অতিরিক্ত) হিসেবে সাব্যস্ত করা হলো। হয়তো বা আপনার প্রতিপালক আপনাকে মাকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ৭৯)

এ আয়াতের তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে লেখা হয়েছে, ‘রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠের সঙ্গে জাগ্রত থাকা বা নামাজের মধ্যে কোরআন পাঠ করা।’ তাফসিরে মাজহারিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রাতের কিছু অংশে নামাজ আদায় করার জন্য নিদ্রা ত্যাগ করা।’ 

আরও পড়ুন: সুরা আর-রহমানের ফজিলত ও নাজিলের কারণ

তাফসিরে ইবনে কাসিরে বিখ্যাত তাবেয়ি হাসান বসরি (রহ.)-এর বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘এশার নামাজ আদায় করার পর যে অতিরিক্ত নামাজ আদায় করা হয়, তাই তাহাজ্জুদ।’ তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবিদের আমল অনুযায়ী, শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করাই উত্তম। 

তাহাজ্জুদ গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ, যা আদায় করতে নবি (সা.)-এর ওপরই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সাহাবিরা গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। আয়েশা (রা.) থেকেই বর্ণিত, ‘রোগ-ব্যাধি কিংবা অন্য কোনো কারণে যদি রাসুলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তবে দিনের বেলায় ১২ রাকাত আদায় করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৭৪৬)  

রাতের তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে চাওয়ার অবারিত সুযোগ লাভ করে। এমনকি এ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে গুনাহ মাফের কথাও এসেছে হাদিসে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা (নফল, সালাতুল হাজত) নামাজ এবং ধৈর্যের মাধ্যমে (আল্লাহর কাছে) সাহায্য কামনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা ধৈর্যধারণকারীদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩) 

আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা আবশ্যক। কারণ, এটা তোমাদের আগের নেক লোকদের অভ্যাস। (আর এটি) তাহাজ্জুদের নামাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও পাপের কাফফারা স্বরূপ। অর্থাৎ গুনাহ মোচনকারী। (আর এই তাহাজ্জুদের নামাজ) তোমাদের গুনাহ থেকেও বিরত রাখে।’ (তিরমিজি)

লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর  

সুরা আর-রহমানের ফজিলত ও নাজিলের কারণ

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৯ এএম
আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:২৫ পিএম
সুরা আর-রহমানের ফজিলত ও নাজিলের কারণ
পবিত্র কোরআনের প্রচ্ছদ। ছবি: ইন্টারনেট

পবিত্র কোরআনের ৫৫তম সুরা—সুরা আর-রহমান। মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরার আয়াত সংখ্যা ৭৮। এ সুরায় ‘ফাবি আইয়ি আলা ই রাব্বি কুমাতু কাজজিবান’ (অতএব (হে জিন ও মানুষ!) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে?) কথাটি একত্রিশবার এসেছে। এ সুরায় প্রতিবারই আল্লাহ নতুন নতুন অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে মানুষ ও জিন উভয় জাতিকে প্রশ্ন করেছেন। তোমরা মহান রবের কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে?

নবি (সা.) এ সুরাটি জিন জাতির সামনে পাঠ করেছিলেন। তারা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করেছে এবং আল্লাহর করা প্রশ্ন ‘তোমরা মহান রবের কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে?’ এর সুন্দর জবাবও দিয়েছে। জাবের (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের কাছে এলেন। তিনি তাদের সামনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুরা আর-রহমান পাঠ করলেন। তারা নিশ্চুপ রইলেন। তিনি বলেন, এ সুরাটি আমি জিনদের সঙ্গে সাক্ষাতের রাতে তাদের সামনে পাঠ করেছি। তোমাদের তুলনায় তারা ভালো উত্তর দিয়েছে। যখনই আমি তিলাওয়াত করেছি, তোমরা জিন ও মানুষ নিজেদের প্রভুর কোন নেয়ামতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে? তখনই তারা বলেছে, হে আমাদের রব, আমরা আপনার কোনো নেয়ামতই অস্বীকার করছি না, আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩২৯১)

আরও পড়ুন: হাদিসের গুরুত্ব ও ফজিলত

সুরা রহমান নাজিলের কারণ 
আল্লাহর নামগুলোর মধ্যে আরবের লোকেরা আল্লাহ শব্দটি বেশি ব্যবহার করত। কিন্তু রহমান নামের সঙ্গে ওদের পরিচয় ছিল কম। অপরদিকে নবুওয়তের মিথ্যা দাবিদার মুসায়লামা নিজ উপাধি ‘রহমানুল ইয়ামামা’ ধারণ করেছিল। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যখন এ আয়াত (তোমরা আল্লাহ বলে ডাক বা রহমান বলে ডাক, তাঁকে যে নামেই ডাকবে, সুন্দর নামসমূহ তো তাঁরই।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ১১০) নাজিল হলো, তখন আবু জাহেল, ওয়ালিদ, ওতবা প্রমুখ মক্কার মুশরিকরা বলল, আমরা তো ইয়ামামার অধিবাসী ভণ্ড নবি মুসায়লামা কাজ্জাব ছাড়া রহমান নামে কাউকে চিনি না। হে মুহাম্মাদ, রহমান কে? এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নাজিল হয় সুরা রহমান।’ (তাফসিরে ইবনে আব্বাস (রা.), খণ্ড: ৩.পৃষ্ঠা: ৪১৬)

সুরা রহমান পাঠের ফজিলত
সুরা রহমান পাঠের অনেক ফজিলত রয়েছে। মানসিক অস্থিরতা দূরীকরণ, রিজিক বৃদ্ধি, শারীরিক সুস্থতার জন্য এ সুরা বেশ কার্যকরী। আলি (রা.) সুরা রহমান সম্পর্কে বলেন, ‘আমি নবি (সা.)-কে বলতে শুনেছি, প্রতিটি জিনিসের আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে। কোরআনের সৌন্দর্য হলো সুরা রহমান। এ সুরা যেকোনো সময় পাঠ করা যেতে পারে।’ 

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

হাদিসের গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
হাদিসের গুরুত্ব ও ফজিলত
ইংরেজিতে ‘হাদিস’ লেখা ছবি। ইন্টারনেট

হাদিস পড়া বা অধ্যয়নের অসংখ্য ফজিলত বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যে পড়ে বা অধ্যয়ন করে, সে আলেম বা জ্ঞানী। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই তাঁকে ভয় করে।’ (সুরা ফাতির, আয়াত: ৮)। এ কথা নিশ্চিত, কোরআন ও হাদিস পাঠ ও অধ্যয়নের মাধ্যমেই একজন মানুষ প্রকৃত আলেম হতে পারে। 

হাদিস পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষ জানতে পারে, কীভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর নির্দেশগুলো অনুসরণ করেছেন। আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে আমরা কীভাবে ইসলামের বিধান মেনে চলব। এখানে হাদিসের কয়েকটি ফজিলত তুলে ধরা হলো–

হাদিস প্রচার করা
হাদিস সম্পর্কে জ্ঞানার্জন ও তা প্রচারকাজে সহযোগী হওয়া সওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার পক্ষ থেকে (মানুষের কাছে) একটি বাক্য হলেও পৌঁছে দাও। বনি ইসরাইলদের থেকে শোনা কথাও বলতে পারো, এতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে প্রস্তুত করে নেয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৪৬১) 

কল্যাণ লাভ করা 
দীন বা ইসলামের জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে কল্যাণ লাভ করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা যার কল্যাণ চান, তাকে দীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন। আমি শুধু বণ্টনকারী, আল্লাহতায়ালা আমাকে দান করেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৭১)

আরও পড়ুনতাশাহুদের গুরুত্ব ও ফজিলত

শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা
হাদিস পাঠের মাধ্যমে উত্তম গুণ বা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সোনা-রুপার খনির ন্যায় মানবজাতিও খনিবিশেষ। যারা অন্ধকারের যুগে উত্তম ছিল, দীনের জ্ঞান লাভ করার কারণে তারা ইসলামের যুগেও উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৩৮৩) 

প্রজ্ঞা লাভ করা
হাদিস অধ্যয়নের মাধ্যমে প্রজ্ঞা অর্জন করে তা প্রচার-প্রসার করা যায়। দ্বীন প্রচারে সহযোগী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুই ব্যক্তি ছাড়া আর কারও ব্যাপারে ঈর্ষা করা যায় না। এক. যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তা যথার্থ ক্ষেত্রে ব্যয় করার তাওফিক দিয়েছেন। দুই. যাকে আল্লাহ্ হিকমাত দান করেছেন, সেই ব্যক্তি তদানুযায়ী কাজ করে এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেয়।’ (বুখারি)

মূর্খতার ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়
হাদিস পড়ার মাধ্যমে মূর্খতা ও অজ্ঞতার ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকা এবং সঠিক ইলম পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ লাভ করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘(শেষ যুগে) আল্লাহতায়ালা ইলম বা জ্ঞানকে তাঁর বান্দাদের অন্তর থেকে টেনে বের করে উঠিয়ে নেবেন না; বরং (জ্ঞানের অধিকারী) আলেমদের দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবার মাধ্যমে ইলম বা জ্ঞানকে উঠিয়ে নেবেন।’ (বুখারি, হাদিস: ১০১) 

নবিদের উত্তরাধিকার
হাদিস পাঠের মাধ্যমে নবিদের ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার হওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,   ‘…আলেমরা নবিদের ওয়ারিশ। আর নিশ্চয়ই নবিরা দিনার ও দিরহাম তথা অর্থকড়ির উত্তরাধিকারী বানিয়ে যান না; বরং তাঁরা ইলম ও জ্ঞানের উত্তরাধিকারী রেখে যান...।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৪১)

মর্যাদার অধিকারী
ইলম অর্জনের মাধ্যমে সাধারণ ইবাদতকারী অপেক্ষা আলেম হিসেবে বেশি মর্যাদা লাভ করা যায়। আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে দুই ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। এদের একজন ছিলেন আবিদ বা ইবাদাতকারী, আর দ্বিতীয়জন ছিলেন আলিম বা জ্ঞানী। তিনি বললেন, আবিদের ওপর আলিমের মর্যাদা হলো যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের একজন সাধারণ ব্যক্তির ওপর।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৬৭৫) 

লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর  

 

তাশাহুদের গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম
তাশাহুদের গুরুত্ব ও ফজিলত
নামাজের প্রথম ও শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়তে হয়। ছবি: ইন্টারনেট

তাশাহুদ অর্থ সাক্ষ্য দেওয়া। আততাহিয়াতু নামেই এটি পরিচিত। নামাজে এই বিশেষ দোয়াটির মাধ্যমে একজন বান্দা তার প্রভুর কাছে সমর্পিত হয়ে পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তি নিবেদন করেন। এই দোয়ার মাধ্যমে নামাজি আল্লাহর প্রশংসা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করেন। মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনা করেন।

তাশাহুদের ইতিহাস 
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে জানা যায়, সাহাবিরা প্রথম দিকে নামাজে জিবরাইল (আ.) ও মিকাইল (আ.)-সহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে সালাম পেশ করতেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের শিক্ষা দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহতায়ালা নিজেই তো সালাম। তাই যখন তোমরা কেউ নামাজ আদায় করবে, তখন সে যেন তাশাহুদ পাঠ করে। কেননা, যখন তোমরা এই দোয়া পড়বে, তখন তা আসমান ও জমিনে অবস্থানকারী আল্লাহর সব নেক বান্দার কাছে পৌঁছে যাবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৪০২; মুসলিম, হাদিস: ৬২৬৫)

নামাজে কখন তাশাহুদ পড়তে হয়
প্রতি দুই রাকাত শেষে বৈঠকে বসে আততাহিয়াতু পাঠ করা ওয়াজিব বা আবশ্যক। এই মহামূল্যবান দোয়াটি পাঠকালে প্রতিটি শব্দ ও বাক্যের গভীর অর্থ হৃদয়ে ধারণ করার চেষ্টা করা উচিত। সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, ‘যখন তোমরা দুই রাকাতের পর বসবে, তখন ‘আততাহিয়াতু’ পাঠ করো। এরপর তোমাদের যার যে দোয়া পছন্দ, তা দিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো।’ (নাসায়ি, হাদিস: ১১১৪)

আরও পড়ুন: হাদিস কাকে বলে?

তাশাহুদ শিখিয়েছেন নবিজি (সা.)
নবিজি (সা.) কতটা যত্ন নিয়ে তাশাহুদ শিক্ষা দিয়েছেন, তা আমরা জানতে পারি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর বর্ণনা থেকে। তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার হাত তাঁর দুই হাতের মাঝে রেখে আমাকে তাশাহুদ শিখিয়েছেন, ঠিক যেভাবে তিনি কোরআনের সুরা শেখাতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৯১০)

তাশাহুদ শুধু একটি দোয়া নয়, এটি আল্লাহর সঙ্গে বান্দার একটি অনন্য সংলাপ। এর মধ্য দিয়ে আমরা সাক্ষ্য দিই- সকল সম্মান, ইবাদত ও পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর জন্য। আমরা স্বীকার করি যে, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। আর এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়েই আমরা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করি।

তাশাহুদ

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

তাশাহুদের বাংলা উচ্চারণ
আততা হিইয়াতু লিল্লাহি, ওয়াস সালা ওয়াতু, ওয়াত তাইয়িবাতু, আস সালামু আলাইকা, আই ইউহান নাবিইয়ু, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

তাশাহুদের বাংলা অর্থ
শ্রদ্ধা আল্লাহর জন্য, পবিত্রতা আল্লাহর জন্য, ভালো কাজ ও নামাজ (সব কিছু) আল্লাহর জন্য। হে নবি, আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ বা উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।

লেখক: খতিব, বাগবাড়ি জামে মসজিদ, গাবতলী 

হাদিস কাকে বলে?

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
হাদিস কাকে বলে?
পবিত্র কোরআন ও সহিহ বুখারির প্রচ্ছদ। ছবি: ইন্টারনেট

হাদিস আরবি শব্দ। অর্থ নতুন (বিষয়), খবর, সংবাদ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মৌখিক কথা, কাজ ও কর্মসমূহ। (আর-রাইদ পৃষ্ঠা: ৩৩৮)। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সুরায় হাদিস শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন- বাণী বা কথা, সংবাদ, গল্প বা কাহিনি ও স্বপ্ন। 

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর  কথা বা বাণী, একইভাবে তাঁর কাজ, কিংবা মৌখিক বা মৌন অনুমোদন। কোনো কাজের আদেশ বা নির্দেশনা। অথবা কোনো কাজ না-করার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা। 
অধিকাংশ আলেমের মতে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কথা, কাজ, বক্তব্য ও সমর্থন। এমনিভাবে সাহাবি–তাবেয়িদের  কথা, কাজ ও সমর্থনও এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এগুলোও হাদিস।  
বিখ্যাত আলেম, গবেষক মুফতি আমিমুল ইহসান (রহ.)-এর মতে, হাদিস হচ্ছে- রাসুলুল্লাহ (সা.), সাহাবি ও তাবেয়িদের উক্তি, কাজ ও সমর্থন।  

আরও পড়ুন: গোসল ফরজ অবস্থায় মৃতব্যক্তিকে কতবার গোসল করাতে হবে?

গবেষক ও মুহাদ্দিস মুফতি আবদুল মালেকের মতে, হাদিস হচ্ছে—নবি (সা.)-এর প্রতি সম্পৃক্ত কথা, কাজ, উক্তি ও সমর্থন; চাই তা তাঁর সৃষ্টিগত হোক বা চারিত্রিক গুণ হোক এবং নবুওয়ত লাভের আগের কিংবা পরের হোক। (শরহে নুখবা, ভূমিকা: পৃষ্ঠা: ৮)

উল্লিখিত আলোচনা থেকে জানা যায়, হাদিস মূলত কয়েকটি অংশে বিভক্ত।

  • কথা বা বাণী: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বক্তব্য বা উক্তি।
  • আচরণ বা কাজ: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ব্যক্তিগত কাজ এবং কার্যক্রম।
  • অনুমোদন: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মতি বা অনুমোদন।
  • সাহাবি এবং তাবেয়িদের  কথা, কাজ ও সমর্থন। 

পবিত্র কোরআনের পর হাদিস হচ্ছে ইসলামি বিধি-নিষেধ ও আইন-কানুন, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি নির্ধারণের অন্যতম মূল উৎস। শরিয়তের মূল দ্বিতীয় স্তম্ভ। যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। 


লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর