ঢাকা ৪ মাঘ ১৪৩১, শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

দুধ ভাগনির সঙ্গে দেখা করা যাবে?

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৫ এএম
আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ এএম
দুধ ভাগনির সঙ্গে দেখা করা যাবে?
হিজাব-পরা নারীর ছবি। ইন্টারনেট

প্রশ্ন: আমার আম্মু থেকে আমার ছোট খালা দুধ পান করেছে। পরবর্তী সময়ে আমার ছোট খালা থেকে আমার মেজো খালার এক মেয়ে দুধ পান করে। মেজো খালার ওই মেয়ের সঙ্গে কি আমি দেখা করতে পারব?

আলিফ রহমান, বরিশাল

উত্তর: তার সঙ্গে দেখা করতে কোনো অসুবিধা নেই। তার সঙ্গে আপনার পর্দা ফরজ নয়। আপনার ছোট খালা আপনার মায়ের দুধ পান করার কারণে সে আপনার দুধ বোন হয়ে গেছে। আর আপনার মেজো খালার মেয়ে ছোট খালার (যিনি আপনার দুধ বোন) দুধ পান করার কারণে আপনার ওই খালাতো বোন আপনার দুধ ভাগনি হয়ে গেছে। আর আপন ভাগনির মতো দুধ ভাগনিও মাহরামের অন্তর্ভুক্ত, তার সঙ্গে দেখা করা জায়েজ। (বাদায়েউস সানায়ে, ৩/৩৯৮; আলমুহিতুর রাজাবি, ২/৪৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া, ১/৩৪৩)

১৪ শ্রেণির নারীকে বিয়ে করা হারাম। তাদের সঙ্গে দেখা করা যাবে। তারা হলো—

১. মা। 
২. দাদি, নানি ও তাদের ওপরের সবাই। 
৩. নিজের মেয়ে, ছেলের মেয়ে, মেয়ের মেয়ে ও তাদের গর্ভজাত কন্যাসন্তান।
৪. সহোদর, বৈমাত্রেয় (সৎমায়ের মেয়ে) ও বৈপিত্রেয় (সৎবাবার মেয়ে) বোন। 
৫. বাবার সহোদর বোন এবং বাবার বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোন।
৬. যে স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক মিলন হয়েছে, তার পূর্ববর্তী বা পরবর্তী স্বামীর ঔরসজাত কন্যাসন্তান, স্ত্রীর আপন মা, নানি শাশুড়ি ও দাদি শাশুড়ি। 
৭. মায়ের সহোদর বোন এবং মায়ের বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোন। 
৮. ভাতিজি অর্থাৎ সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাইয়ের মেয়ে এবং তাদের পরের প্রজন্মের কন্যাসন্তানরা। 
৯. ভাগনি অর্থাৎ সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে ও তাদের পরের প্রজন্মের কন্যাসন্তানরা। 
১০. দুধমেয়ে (স্ত্রীর দুধ পান করেছে এমন), সেই মেয়ের মেয়ে, দুধছেলের মেয়ে ও তাদের পরের প্রজন্মের কোনো কন্যাসন্তান এবং দুধছেলের স্ত্রী।
১১. দুধ মা এবং তার দিকের খালা, ফুফু, নানি, দাদি ও তাদের ঊর্ধ্বতন নারীরা। 
১২. দুধ বোন, দুধ বোনের মেয়ে, দুধ ভাইয়ের মেয়ে এবং তাদের গর্ভজাত যেকোনো কন্যাসন্তান। অর্থাৎ দুধ সম্পর্ককে রক্তসম্পর্কের মতোই গণ্য করতে হবে। 
১৩. ছেলের স্ত্রী। 
১৪. এমন দুই নারীকে একসঙ্গে স্ত্রী হিসেবে রাখা যাবে না, যাদের একজন পুরুষ হলে তাদের মধ্যে বিয়ে বৈধ হতো না। যেমন— স্ত্রীর বোন, খালা, ফুফু।

আরও পড়ুন: সুদি কারবারে জড়িত ব্যক্তি ইমাম হতে পারবে?

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা এবং মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি, ভাগনি, দুধ মা, দুধ বোন, শাশুড়ি, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সঙ্গে সঙ্গম হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত মেয়ে যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে আছে, কিন্তু যদি তাদের সঙ্গে তোমরা সহবাস না করে থাক, তবে (তাদের বদলে তাদের মেয়েদের বিয়ে করলে) তোমাদের প্রতি গুনাহ নেই এবং (তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে) তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী এবং এক সঙ্গে দুই বোনকে (বিবাহবন্ধনে) রাখা, পূর্বে যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ২৩)

লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক

জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান
প্রতীকী ছবি। এআই

ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর নাজিল হওয়া প্রথম শব্দ ছিল ইকরা বা পড়ো। পড়ার মাধমে মানুষ জানতে পারে। হতে পারে বিদ্বান। জ্ঞান লাভ করতে পারে আল্লাহর অভিনব সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘পড়ো তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্তপিণ্ড থেকে। পড়ো, আর তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল। যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম দিয়ে, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’ (সুরা আলাক, ১-৫)

মুহাম্মাদ (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির পর ধীরে ধীরে পৃথিবীব্যাপী ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ে। চার খলিফার হাত ধরে অনেক দেশে ইসলামের পতাকা উড়ে। পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায়ও মুসলিমরা ব্যাপকভাবে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মুসলমানদের থেকে তৈরি হয় পৃথিবীবিখ্যাত ধর্মবেত্তা, সেনাপতি, ইতিহাসবেত্তা, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, মনীষী, জ্যোতিষীশাস্ত্রবিদ, রসায়নবিদ, পদার্থবিদসহ নানা শাখার জ্ঞানী-বিজ্ঞানী। 

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন আলি (রা.)। তিনি ছিলেন হাফেজ ও মুফাসসির। আলি (রা.) থেকেই আরব সভ্যতায় বিজ্ঞান গবেষণার সূচনা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) আলি (রা.) সম্পর্কে বলেন, ‘আমি জ্ঞানের নগরী, আর আলি সেই নগরীর দরজা।’ ইদরিস (আ.) প্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানী এবং মুহাম্মদ (সা.) শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানী। পবিত্র কোরআনের ৯৭টি সুরার ৩৫৫টি আয়াত চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট। এ ছাড়া বুখারিতে ‘তিব্বুন নববি’ শীর্ষক অধ্যায়ে ৮০টি পরিচ্ছেদ রয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইবনে সিনা, আল-রাজি, আল-হিন্দি, আত-তাবারি, ইবনে রুশদদের নাম উল্লেখযোগ্য। ইবনে সিনা চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন, অঙ্কশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যামিতি, বীজগণিত প্রভৃতি বিষয়ে ব্যাপক অবদান রাখেন। তার গ্রন্থ ও প্রবন্ধ সংখ্যা ২৪৬। 

ওষুধশাস্ত্র: চিকিৎসার পাশাপাশি ওষুধ শাস্ত্রেও মুসলিমরা ব্যাপক অবদান রাখেন। ইবনে সিনার কানুন ফিততিব্ব, আল-রাজির কিতাবুল মানসুরি, আল বেরুনির কিতাব আস সায়দালা চিকিৎসাশাস্ত্রের আকরগ্রন্থ। 

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা: মুহাম্মাদ (সা.) যুদ্ধকালে যে হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন, তার ওপর ভিত্তি করে মুসলিম শাসকগোষ্ঠী চিকিৎসা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা ও ব্যবহারিক জ্ঞানচর্চার জন্য স্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলেন। 

অস্ত্রোপচার: মুসলিম বিজ্ঞানী আল-রাজি সর্বপ্রথম অস্ত্রোপচারবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। 

গণিতশাস্ত্র: মুসলিম গণিত শাস্ত্রবিদদের মধ্যে রয়েছে আল-খারেজমি, আল-কারখি, ওমর খৈয়াম প্রমুখ। আল-খারেজমি সংখ্যাবাচক চিহ্ন সম্পর্কে ধারণ দেন এবং দূরত্ব ও নির্ণয় বিষয়ে অবদান রেখেছেন ইবনুল হাইসাম। এ ছাড়া মুসলিম বিজ্ঞানী আল-ফারাবি সমুদ্র ও সূর্যের উচ্চতাবিষয়ক যন্ত্র আবিষ্কার করেন।

পদার্থবিজ্ঞান: পদার্থবিজ্ঞানে নানামুখী অবদান রেখেছেন আল-বেরুনি, আল-খারেজমি, ইবনুল হাইসাম প্রমুখ।

রসায়ন: বিজ্ঞানের প্রাণ বলা হয় রসায়নশাস্ত্র। রসায়নশাস্ত্রের জনক জাবের ইবনে হাইয়ান। এ ছাড়া বিভিন্ন মুসলিম মনীষী ও বিজ্ঞানী ব্যাপক অবদান রাখেন এ শাস্ত্রে। এদের মধ্যে খালিদ বিন ইয়াজিদ, জাকারিয়া আল-রাজি, আল জিলকাদ প্রমুখের নাম সবার আগে আসে। 

ধাতুশাস্ত্র: মুসলিম বিজ্ঞানী ও মনীষী আবুল কাশেম আল ইরাকি প্রথম ধাতুর পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেন।

জ্যোতির্বিদ্যা: জ্যোতির্বিদ্যা হলো মহাকাশ সম্পর্কিত বিজ্ঞান। গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র ও সূর্য সম্পর্কিত আলোচনা। এ বিষয়ে মুসলিম মনীষীদের অবদান অপরিসীম। এ বিষয়ে যারা অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে আল-মনসুর, আল-মামুন, আবু-মাশার, আল-খারেজমি, আবুল-হাসান অন্যতম। 

মানচিত্রের ধারণা: বিশ্বে প্রথম মানচিত্রের ধারণা দেন মুসলিম মনীষী আল ইদরিস। পরে এর ওপরে ভিত্তি করেই বিশ্বে মানচিত্রের প্রতিকৃতি হিসেবে স্বীকৃত হয়। বর্ষপঞ্জি ও নক্ষত্র বিষয়ে প্রথমে ধারণা দেন ওমর খৈয়াম। পরে আল-বাত্তানি প্রথম চার্ট তৈরি করেন। প্রথম জ্যামিতিক গণনার সাহায্যে যেকোনো দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব নির্ণয় করেন বিজ্ঞান ও গণিত শাস্ত্রের অন্যতম মুখ ইবনুল হাইসাম।

লেখক: প্রাবন্ধিক

ফজরের পর ঘুমালে যে ক্ষতি হয়

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৬ পিএম
ফজরের পর ঘুমালে যে ক্ষতি হয়
ঘুমন্ত বালকের ছবি। ইন্টারনেট

ঘুম আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ঘুম অপরিহার্য। জীবনের ভারসাম্য রক্ষায় নির্ধারিত সময়ে ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। ইসলাম মানুষের জীবনকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে কাজ, ইবাদত এবং বিশ্রামের মধ্যে সমন্বয় করার নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ঘুমকে করেছি বিশ্রাম এবং রাতকে করেছি আবরণ।’ (সুরা নাবা, আয়াত: ৯-১০) 

ইসলামে ফজরের নামাজের পর ঘুমানো নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ এ সময়টিকে কাজ ও বরকতের সময় হিসেবে ধরা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য সকালে বরকত দান করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১২১২)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ফজরের নামাজের পর কাজ বা ইবাদতে মনোযোগী হলে জীবনে বরকত বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে অতিরিক্ত ঘুম বা অলসতা এই বরকতের সুযোগ নষ্ট করে। আধুনিক জীবনযাপনের প্রবণতা হিসেবে অনেকেই রাত জেগে বিনোদন বা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় ব্যয় করে, যা ফজরের নামাজ আদায়ে ব্যাঘাত ঘটায় এবং বরকত কমে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রাতের প্রথম ভাগে ঘুমাও এবং শেষ ভাগে ইবাদতের জন্য জেগে ওঠো। কারণ, রাতের শেষভাগে ইবাদত বেশি ফজিলতপূর্ণ।’ (বুখারি, হাদিস: ১১২০) 

যথাসম্ভব রাতের প্রথম ভাগে ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিত। আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় বিছানায় আসে এবং আল্লাহর জিকির করে শোয়; এমনকি তার তন্দ্রা এসে পড়ে এবং রাতের যেকোনো সময় (ডানে-বামে) ফিরতে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করে, আল্লাহতায়ালা নিশ্চয় তাকে তা দান করেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২৬)

ফজরের নামাজের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশেষ কিছু আমলের তাগিদ করেছেন। এই সময় দোয়া-দরুদ, তাসবিহ, তাহলিল, জিকির ও আল্লাহর স্মরণে কাটানোর জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সূর্যোদয় পর্যন্ত নামাজের জায়গায় বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে, এরপর দুই রাকাত (ইশরাক) নামাজ আদায় করে, তার জন্য একটি হজ ও ওমরার পূর্ণ সওয়াব রয়েছে।’ (তিরিমিজি, হাদিস: ৫৮৬)

রাতে ঘুমানোর আগে আল্লাহর নাম স্মরণ করা এবং ইসতেগফার করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে আল্লাহর নাম স্মরণ না করে ঘুমায় এবং ফজরের সময় জেগে না উঠে, তার কানে শয়তান গিঁট বেঁধে দেয়।’ (বুখারি, হাদিস: ১১৪২)
ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী সময়ের সঠিক ব্যবহার ও বরকত লাভের জন্য ফজরের পর ঘুমানোর বদলে কাজে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

জীবনের নিরাপত্তায় ইসলামি অর্থনীতি

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:২৫ পিএম
জীবনের নিরাপত্তায় ইসলামি অর্থনীতি
ইসলামি বিভিন্ন আইকন দিয়ে বানানো ভেক্টর। ছবি : সংগৃহীত

মানুষের জীবনযাত্রায় বড় রকমের প্রয়োজন হয় অর্থনীতির। অর্থ হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অন্যতম পথ্য। এ অর্থই মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রকে বুকটান দিয়ে দাঁড়াতে সাহস জোগায়। ইসলাম মানুষকে শিক্ষা দেয় হালাল অর্থে স্বাবলম্বী হতে। সঠিক পথে আয়-রোজগার করতে। ইসলাম সব বিষয়ে মানুষকে যে সুন্দর, শোভন জীবন উপহার দিয়েছে, কোনো ধর্ম বা মতবাদ এমন সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারেনি। পারবেও না। 

বর্তমান পৃথিবীর সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ অর্থনৈতিক অভিশাপ। সমাজতন্ত্র স্বাধীন মানুষকে পরাধীন, যান্ত্রিক ও ইতর বস্তুতে পরিণত করে। পুঁজিবাদী অর্থনীতি মানুষকে বল্গাহীন স্বাধীন, নিপীড়ক, স্বার্থপর ও স্বেচ্ছাচারী করে তোলে। ইসলামি অর্থনীতি এই দুই মেরুর অর্থনীতি ব্যবস্থার মাঝে সমন্বয় সাধন করে সমৃদ্ধিশালী সর্বজনীন কল্যাণকামী ও সভ্য সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করে। অর্থনৈতিক সফলতা ও মুক্তি একমাত্র আল্লাহ প্রেরিত অভ্রান্ত সত্যের উৎস কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক ইসলামি অর্থনীতির মাঝেই নিহিত আছে। যেসব দেশ এখনো সমাজতন্ত্রের দাবিদার, তারা বহুবার পরিবর্তন, সংযোজন, সংশোধন করেও ফলবান হতে পারেনি। আর পুঁজিবাদের ইতিহাস তো শোষণ, নিপীড়ন, বঞ্চনা, অন্যায় যুদ্ধ ও সংঘাতের রক্তাক্ত ইতিহাস। পুঁজিবাদের দর্শন চরম ভোগবাদী ও ইন্দ্রিয়পরায়ণতার দর্শন। ইসলামি অর্থনীতির দর্শন হলো জনহিতকর, সুষম ও সর্বযুগোপযোগী দর্শন—যা আবহমানকাল থেকে মানবকল্যাণে অবদান রেখে আসছে।

পুঁজিবাদ: বর্তমান বিশ্বে রাজনীতি ও অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক পুঁজিবাদগোষ্ঠী। বিশ্বের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের কথা বলে পুঁজিবাদীরা যে পরিকল্পনা বা কর্মসূচি মানব বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেছে, এতে মানুষ সাময়িক উপকার দেখলেও এসবের গভীরে যে ‘অ্যালোপ্যাথিক’ ওষুধের মতো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণগুলো লুকিয়ে আছে, তা আমরা অনেকেই সাধারণ চোখে দেখতে পাচ্ছি না। পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রধান ক্ষতিকর দিক হলো, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিত্তশালীদের সঙ্গে বিত্তহীনদের আকাশ-পাতাল ব্যবধান। 
পুঁজিবাদের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—

  • ব্যক্তির সম্পত্তিতে অন্য কারও প্রাপ্য বা অধিকার নেই। 
  • অর্থোপার্জনে যেকোনো পথ অবলম্বন করা যাবে। 
  • মালিক ইচ্ছামতো সম্পদ খরচ করতে পারবে। 
  • ইচ্ছামতো সম্পদ সঞ্চয় করা যাবে। 

 

মোটকথা, ব্যক্তি স্বার্থটাই পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। পুঁজিবাদের থিউরিতে ব্যবসা আর সুদে কোনো পার্থক্য নেই। সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে, পুঁজিবাদ আর সুদভিত্তিক অর্থনীতির পোশাক কিংবা সাজসজ্জা দেখতে চমকপ্রদ হলেও তা মানুষের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর। 

আরও পড়ুন: যে তিন কাজে দেরি করতে নিষেধ করেছেন নবিজি (সা.)

সমাজতন্ত্র: কমিউনিজমের জনক বলে খ্যাত কার্ল মার্ক্স মূলত বস্তুবাদ আর ভাববাদের মাঝে দ্বান্দ্বিক ছিলেন। কার্ল মার্ক্স পুঁজিবাদবিরোধী চিন্তাচেতনা ও বস্তুবাদের ভিত্তিতে এক নব্য অর্থনৈতিক মতবাদ কমিউনিজমের জন্ম দিয়েছেন। কমিউনিজমের ইশতেহার হলো— অর্থোপার্জনের সব পথ ও পন্থা সমাজের সম্মিলিত মালিকানায় থাকবে। কোনো কিছু ব্যক্তিগত ইচ্ছায় ব্যবহার কিংবা ব্যবহারের অধিকার কারও থাকবে না। ব্যক্তিগত জীবনের ইচ্ছা, কর্ম—সবই হবে রাষ্ট্রের জন্য। প্রত্যেকের জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় উপকরণাদি দেবে সরকার। ব্যক্তি সরকারের নির্দেশে যেকোনো কাজ করতে বাধ্য। এই ইশতেহার প্রকাশের পরপরই কার্ল মার্ক্স চিন্তা ‘কমিউনিস্ট’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত লাভ করে। 
কার্ল মার্ক্সের চিন্তাচেতনার সঙ্গে বিশ্বের মার্ক্সবাদীদের বক্তব্য ভিন্ন হোক কিংবা অভিন্ন, আজ আমরা বলতে বাধ্য যে, মার্ক্সবাদ ব্যর্থ হয়েছে মানুষের মৌলিক সমস্যার সমাধান দিতে। কার্ল মার্ক্স এত নিবেদিত হয়েও ব্যর্থ হলেন এ জন্য যে, সসীম জ্ঞানের গবেষণা ত্রুটিমুক্ত নয়। অসীম জ্ঞান ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কার্ল মার্ক্স মানুষের অন্ন, বাসস্থান, বস্তুর সমস্যার সমাধানের কথা বলেছেন, কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি ভাত খেয়ে ওষুধ সেবনের পর কাপড় গায়ে দিয়ে যে মানুষের মন একটু আতর কিংবা সুগন্ধি ব্যবহার করতে চায়। এই মন চাওয়াটাকে তিনি আবেগ কিংবা অপ্রয়োজনীয় বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। 

ইসলাম: ইসলামি অর্থনীতির মূল ভিত্তি কোরআন-হাদিস মোতাবেক সর্বক্ষেত্রে ইনসাফসম্মত বণ্টন। ইসলামি অর্থনীতিতে আবেগ কিংবা স্বার্থপরতা কাজ করেনি। ইসলাম মানুষের বাস্তবিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি নীতি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ স্বাভাবিক ও ব্যক্তিগত অধিকার দিয়ে সম্পদ ব্যবহারের ভারসাম্য রক্ষার নিয়মনীতি দিয়েছে। আধুনিক যুগে ইসলামি অর্থব্যবস্থা কায়েম করা হলে বিশ্বে ফিরে আসবে শান্তি, সমৃদ্ধি ও প্রগতি। 

ইসলাম যে অর্থনীতিতে সব মতবাদকে ছাড়িয়ে ছাপিয়ে, এর উদাহরণ মিলবে ইসলামের নবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনকালে। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, তখন মদিনাবাসী ছিল কৃষক। অর্থনীতিতে দরিদ্র। শিক্ষায় জ্ঞানহীন। একটা সময় তারা মুহাম্মাদ (সা.)-এর সাহচর্য পেয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়ে উঠে। পৃথিবীর ইতিহাসে তারা হয় অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র। গরিব-কৃষক-মজদুর সমাজ অর্থনীতিতে হয় স্বাবলম্বী। মদিনাকে গড়ে তোলে অর্থনীতিতে স্বাবলম্বী ও পৃথিবীবাসীর জন্য মাইলফলক রূপে। 

অর্থনীতিতে সফল সমৃদ্ধি পেতে সেসময় ইসলামের নবি মুহাম্মাদ (সা.) দেন ১০ দফা। এই ১০ দফা অনুযায়ী বিশ্বের অর্থনীতি সাজাতে পারলে, বিশ্ব পাবে অর্থনীতিতে সুসজ্জিত নতুন এক মাত্রা। মানুষ পাবে শাসন-শোষণ থেকে মুক্তি। দারিদ্র্য থেকে মুক্তি। ১০ দফা হলো—

  • হালাল উপায়ে উপার্জন ও হারাম পথ বর্জন।
  • সুদ বর্জন।
  • ব্যবসায়িক অসাধুতা উচ্ছেদ।
  • জাকাত ব্যবস্থার প্রবর্তন।
  • বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা।
  • মানবিক শ্রমনীতির প্রবর্তন।
  • ওশরের প্রবর্তন ও ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার ইসলামিকরণ।
  • উত্তরাধিকার ব্যবস্থার যৌক্তিক রূপদান।
  • রাষ্ট্রের ন্যায়সংগত হস্তক্ষেপ বিধান।
  • নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রবর্তন।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়ার ফজিলত

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫২ এএম
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়ার ফজিলত
আরবিতে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ লেখা ছবি। ইন্টারনেট

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়-ভীতি দ্বারা, কখনো ক্ষুধা দ্বারা, কখনো জীবন-সম্পদ ও ফল-ফসলের ক্ষতি দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদের, যারা এসব অবস্থায় সবরের পরিচয় দেয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫) 

বিপদ আসলে মানুষ কী করবে, সেই শিক্ষাও আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা বিপদকালে বলে থাকে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহরই আর আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী)।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)

আমাদের জীবনে বিপদ আসবেই, আর সেই বিপদ এলে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়তে হবে। এটা কোরআনের কথা। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলিম কোনো বিপদে আক্রান্ত হয়ে আল্লাহর নির্দেশিত দোয়া ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়ে, এরপর বলবে ‘আল্লাহুম্মা আজুরনি ফি মুছিবাতি ওয়াখলুফলি খয়রম মিনহুমা’ আল্লাহ অবশ্যই ওই বিপদের তুলনায় তাকে উত্তম প্রতিদান দেবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯১৮)

আরও পড়ুন: গোসলের আগে মৃতব্যক্তির শরীর চাদর দিয়ে ঢাকতে হবে?

এই হাদিসের যিনি রাবি বা বর্ণনাকারী, তার বিষয়টি বেশ আশ্চর্যের। উম্মে সালামা (রা.) এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তার স্বামী ছিলেন আবু সালামা (রা.)। তিনি ইন্তেকাল করলে আল্লাহুর রাসুল (সা.) উম্মে সালামাকে হাদিসটা শোনান এবং এই দোয়ার আমল করতে। উম্মে সালামার ধারণা ছিল, তার স্বামীর চেয়ে উত্তম কোনো স্বামী হতেই পারে না। সুতরাং এ দোয়া পড়ে লাভ কী? তবু রাসুলের কথা, তিনি আমল করলেন। দোয়াটি পড়লেন। ফলে আল্লাহ উম্মে সালামাকে প্রতিদান দিয়েছেন, মহা এক প্রতিদান। যা তার কল্পনাতেও ছিল না। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। বিপদ এলে ধৈর্য ধরতে হবে। চিন্তিত হব না। উল্লিখিত দোয়া পড়তে হবে। 


লেখক: শিক্ষক, মাদরাসাতুল হেরা, ঢাকা

গোসলের আগে মৃতব্যক্তির শরীর চাদর দিয়ে ঢাকতে হবে?

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৭ এএম
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৭ এএম
গোসলের আগে মৃতব্যক্তির শরীর চাদর দিয়ে ঢাকতে হবে?
প্রতীকী ছবি

প্রশ্ন: কোনো ব্যক্তি মারা গেলে গোসল ও কাফনের আগে তাকে চাদর দিয়ে পুরো ঢেকে দেওয়া হবে, নাকি তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা হবে? 

আদনান রহমান, ভোলা

উত্তর: পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ (সুরা আনয়াম, আয়াত: ১৮৫)

আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো (একদিন না একদিন) মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, চাই তোমরা সুরক্ষিত কোনো দুর্গে থাকো না কেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৭৮)

মানুষ জানে না কার মৃত্যু কোথায় কোন জমিনে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং কোনো প্রাণী এটাও জানে না যেকোনো ভূমিতে তার মৃত্যু হবে।’ ( সুরা লুকমান, আয়াত: ৩৪)। তাই  মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা দরকার। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘(দুনিয়ার) স্বাদ গন্ধকে বিলুপ্তকারী মৃত্যুকে তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করো। (তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭)

আরও পড়ুন: প্রতিদিন সুরা নাস কেন পাঠ করবেন?

মৃত্যু বা জগৎ রূপান্তরের দুটি অবস্থা রয়েছে। এক. ভালো মৃত্যু। দুই. মন্দ মৃত্যু। কারও মৃত্যু হবে সহজ-সুন্দর। কারও মৃত্যু হবে কঠিন-ভয়াবহ। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘তুমি দেখতে পেলে মৃত্যুর সময় ফেরেশতরা অবিশ্বাসীদের মুখে ও পিঠে আঘাত করে তাদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে আর বলছে, তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৫০)

মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির পুরো শরীর চাদর বা কোনো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া মুস্তাহাব। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর ইয়ামানি একটি চাদর দিয়ে তাঁকে ঢেকে রাখা হয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৮১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া, ১/১৫৭)

লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক