নামাজ আদায়কালে ইমাম কোনো ভুল করলে মুসল্লি পেছন থেকে লোকমা দিতে পারবেন। অর্থাৎ ইমামের ভুল সংশোধনে সহযোগিতা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ইমামের পেছনে থাকা পুরুষ মুসল্লিরা সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেবেন আর নারী মুসল্লিরা ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের ওপর মেরে আওয়াজ দিয়ে লোকমা দেবেন। (বুখারি, হাদিস: ১২০৩; মুসলিম, হাদিস: ৮৪০)
আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষের জন্য (লোকমা দেওয়ার) নিয়ম হলো সুবহানাল্লাহ বলা এবং নারীর জন্য (লোকমা দেওয়ার) নিয়ম হলো হাত চাপড়ানো।’ (মুসলিম, ১/১৮০)
সাহল ইবনু সাদ (রা.) বলেন, আমর ইবনু আওফ গোত্রের কিছু লোকের মধ্যে সামান্য বিবাদ ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের একটি জামাত নিয়ে তাদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দিতে সেখানে গেলেন। এদিকে সালাতের সময় হয়ে গেল। কিন্তু তিনি মসজিদে নববিতে এসে পৌঁছেননি। বেলাল (রা.) সালাতের আজান দিলেন, কিন্তু তিনি তখনো এসে পৌঁছেননি। বেলাল (রা.) আবু বকর (রা.)-এর কাছে এসে বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে সালাতেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি সালাতে লোকদের ইমামতি করবেন? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি ইচ্ছা কর।’
আরও পড়ুন: দুধ ভাগনির সঙ্গে দেখা করা যাবে?
তারপর বেলাল (রা.) সালাতের ইকামত বললেন, আর আবু বকর (রা.) এগিয়ে গেলেন। পরে নবিজি (সা.) এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম করে প্রথম কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকজন হাততালি দিতে শুরু করল এবং তা অধিক মাত্রায় দিতে লাগলেন। আবু বকর (রা.) সালাত অবস্থায় কোনো দিকে তাকাতেন না, কিন্তু (হাততালির কারণে) তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন নবিজি তাঁর পেছনে দাঁড়িয়েছেন। নবিজি তাকে হাতের ইশারায় আগের মতো সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিলেন। আবু বকর (রা.) তাঁর দুই হাত ওপরে তুলে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেখে পেছনে ফিরে এসে কাতারে শামিল হলেন।
তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আগে বেড়ে লোকদের ইমামত করলেন এবং সালাত সমাপ্ত করে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, ‘হে লোকসকল, সালাত অবস্থায় তোমাদের কিছু ঘটলে তোমরা হাততালি দিতে শুরু কর। অথচ হাততালি দেওয়া নারীদের কাজ। সালাত অবস্থায় কারও কিছু ঘটলে সে যেন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে। কেননা এটা শুনলে তার দিকে দৃষ্টিপাত না করে পারত না। ‘হে আবু বকর, তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন সালাত আদায় করাতে তোমার কিসের বাধা ছিল?’ তিনি বললেন, ‘আবু কুহাফার পুত্রের জন্য শোভা পায় না রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে ইমামতি করা। (বুখারি, হাদিস: ১২১৮; মুসলিম, হাদিস: ৪২১)
লোকমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা উত্তম। তবে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে লোকমা দিলেও নামাজের ক্ষতি হবে না। ইমাম কেরাতে ভুল করলে বা আটকে গেলে মুক্তাদি কেরাত ঠিক করে দিতে পারবেন।
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক