আল্লাহ মুমিন নারী-পুরুষের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন। মুমিনের দায়িত্ব হলো যথাসময়ে ফরজ নামাজ আদায় করা। আল্লাহ বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১০৩)
আল্লাহতায়ালা সর্বাবস্থায় নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘সব নামাজের প্রতি যত্নবান হও; বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও। তোমরা যদি (শত্রুর) ভয় করো, তবে দাঁড়িয়ে বা আরোহী অবস্থায় (নামাজ পড়ে নাও)। এরপর তোমরা যখন নিরাপদ অবস্থা লাভ করো, তখন আল্লাহর জিকির সেভাবে করো, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যা সম্পর্কে তোমরা অনবগত ছিলে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩৮-২৩৯)
ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি নামাজ। নামাজ দ্বীনের খুঁটি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এক. আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা। দুই. নামাজ কায়েম করা। তিন. জাকাত আদায় করা। চার. রমজানের রোজা পালন করা। পাঁচ. হজ করা।’ (বুখারি, হাদিস : ৮) আল্লাহর সঙ্গে বান্দার একান্ত আলাপ, শোক-দুঃখ প্রকাশ ও সম্পর্ক উন্নয়নের প্রধান পথ নামাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন যখন নামাজে থাকে, তখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে নিভৃতে কথা বলে।’ (বুখারি, হাদিস: ৪১৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) যখনই কোনো বৈরী অবস্থার সম্মুখীন হতেন, সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। হুজাইফা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৩১৯)। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)
হালাল চাহিদা পূরণের জন্যও নামাজ পড়া যেতে পারে। ‘হালাল চাহিদা পূরণে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা হলো সালাতুল হাজত।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৫)
ইসলাম মানুষকে নামাজের তাগিদ দিয়েছে সাত বছর থেকে। সাত বছরেই কেন তাগিদ এলো? বিজ্ঞান বলছে, ব্রেনওয়েভ (স্নায়বিক দোলন) ও আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সঠিক মাত্রার ব্রেনওয়েভের ওপরই নির্ভর করে আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বা অসুস্থতা। ব্রেনের কিছু অংশ উদ্দীপ্ত হলে তা আমাদের মধ্যে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে। যেমন- ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়া, উৎকণ্ঠা, খিটখিটে মেজাজ, অবসাদ ও বিষণ্নতা, আচরণে ভারসাম্যহীনতা, আচরণে উগ্রতা ইত্যাদি। অন্যদিকে কম মাত্রায় উদ্দীপ্ত হলে আমাদের মধ্যে নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন- ডিপ্রেশন, নিদ্রাহীনতা, অমনোযোগিতা, শরীরের বিভিন্নস্থানে ব্যথা (স্নায়ুব্যথা) ইত্যাদি। এসব মানসিক রোগের চিকিৎসা দিতে মনোবিজ্ঞানীরা রিল্যাক্সেশন বা ডিপ ব্রিদিং থেরাপির আশ্রয় নেন। এসব থেরাপির তুলনায় অধিক কার্যকরী ফলাফল অর্জন করা সম্ভব নামাজের মাধ্যমে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় যা এসেছে, মায়ের পেটে ভ্রূণ অবস্থা থেকেই ব্রেনের শত শত কোটি নিউরন (একক কোষ) ক্রমশ তৈরি হতে থাকে। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত তা একটা বিশেষ গতিতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং সাত বছর থেকেই সক্রিয় হতে শুরু করে। সেসব কোষগুলো মানুষের আবেগ-অনুভূতি, যুক্তি ও বিচার ক্ষমতা, যাচাই-বাছাইয়ের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা, বাচনশক্তি, মনের ভাবপ্রকাশের সক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। ইসলাম ঠিক এ বয়সে মানুষদের নামাজের প্রতি তাগিদ করেছে। যেহেতু সাত বছর বয়স থেকে একজন মানবসন্তান তার আবেগ-অনুভূতির ব্যাপারে সচেতন হতে শুরু করে, তাই সঙ্গত কারণেই এ বয়স থেকেই তার মনে পারিপার্শ্বিক সব ঘটনাপ্রবাহ ভালো বা মন্দ প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইসলাম এ সময়কাল থেকেই একজন মানবসন্তানের জন্য নামাজ পড়ার তাগিদের মাধ্যমে তাকে হতাশা, অবসাদ ও বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন থেকে সুস্থ থাকার পথ তৈরি করে দিয়েছে। তার জীবনে হতাশা, অবসাদ, মানসিক ক্লান্তি উদ্ভব হওয়ার মতো পরিবেশ যেন সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করেছে।
লেখক : আলেম ও গবেষক