ঢাকা ৫ বৈশাখ ১৪৩২, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
English
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

ইসতেখারার নামাজের নিয়ম ও শর্ত

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
ইসতেখারার নামাজের নিয়ম ও শর্ত
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত নামাজরত মুসল্লির ছবি

ইসলাম আমাদেরকে নতুন কোনো কাজ শুরু করার আগে আল্লাহর নিকট কল্যাণ কামনা করার নির্দেশনা দেয়। আর আল্লাহর নিকট কল্যাণ কামনার নববি বা সুন্নাহ পদ্ধতি হলো সালাতুল ইসতেখারা বা ইসতেখারার নামাজ। যাকে আমরা কল্যাণ প্রার্থনার নামাজও বলে থাকি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ইসতেখারার নামাজ আদায় করতেন এবং উম্মতকে আদায় করার নির্দেশনা দিয়েছেন। 

এ নামাজের নিয়ম হলো─ প্রথমে স্বাভাবিক নিয়মে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে। নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা এবং নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়তে হবে। এরপর ইসতেখারার দোয়া পড়তে হবে। ইসতেখারার দোয়াটা হলো─

উচ্চারণ─ আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্তাখিরুকা বিইলমিকা অআসতাকদিরুকা বি কুদরাতিকা অআসআলুকা মিন ফাযলিকাল আযিম, ফাইন্নাকা তাকদিরু অলা আকদিরু অতালামু অলা আলামু অআন্তা আল্লামুল গুয়ুব। আল্লাহুম্মা ইন কুন্তা তালামু আন্না হাজাল আমরা খাইরুল লি ফি দীনি অমাআশি অআকিবাতি আমরী অআজিলিহী অআজিলিহ, ফাকদুরহু লি, অয়্যাসসিরহু লি, সুম্মা বারিক লি ফীহ। অইন কুন্তা তালামু আন্না হাজাল আমরা শাররুল লি ফি দীনি অমাআশি অআকিবাতি আমরী অআজিলিহী অআজিলিহ, ফাসরিফহু আন্নি অসরিফনী আনহু, অক্বদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কানা সুম্মা রাযযিনী বিহ। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৬২)

ইসতেখারার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে─ ১. মনে মনে ইসতেখারার নিয়ত করা। ২. সাধ্যানুযায়ী প্রয়োজনীয় চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা। ৩. আল্লাহর ফায়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকার মানসিকতা তৈরি করা। ৪. শুধু বৈধ বিষয়ে ইসতেখারা করা, অবৈধ বিষয়ে ইসতেখারা না করা। ৫. ইস্তেগফার (আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা) করা। ৬. হারাম উপার্জন না করা, হারাম খাবার না খাওয়া। 

ইসতেখারার ব্যাপারে কিছু জরুরি কথা─ ১. ইসতেখারার দোয়া মুখস্থ না থাকলে দেখে পড়তে কোনো সমস্যা নেই। তবে মুখস্থ করে নেওয়া এবং মুখস্থ পড়া বেশি ভালো। ২. ইসতেখারার পরে উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হলে আল্লাহর ওপর ভরসা করে দৃঢ়ভাবে কাজে এগিয়ে যাওয়া। পিছপা না হওয়া, হীনম্মন্যতায় না ভোগা। আল্লাহতায়ালা বলেন─ ‘আর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলো তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯) ৩. ইসতেখারার নামাজ ও দোয়া পড়ার পরও সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারলে একধিকবার পড়া জায়েজ আছে। ৪. একজনের পক্ষ থেকে আরেকজন ইসতেখারা করলে তা সহিহ হয় না। ৫. অন্যায়, হারাম এবং মাকরূহ কাজে ইসতেখারা করা বৈধ নয়। 

আল্লাহতায়ালা আমাদের সঠিক নিয়মে ইসতেখারা করে সঠিক এবং কল্যাণময় সিদ্ধান্ত গ্রহণের তাওফিক দান করুন।

 লেখক : শিক্ষক মাদরাসাতুল হেরা, ঢাকা

স্বপ্নে রক্ত দেখা কীসের আলামত?

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৬ পিএম
স্বপ্নে রক্ত দেখা কীসের আলামত?
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্নে রক্ত দেখা সাধারণত মানুষের মনে ভয়, দুশ্চিন্তা বা অপরাধবোধের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা দেয়। বিশেষত বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার স্বপ্নে রক্ত দেখা তাদের মনের গভীরে লুকানো দুশ্চিন্তার ইঙ্গিত বহন করে। তবে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এর রয়েছে আরও গভীর ব্যাখ্যা।

স্বপ্নে রক্ত দেখার অর্থ অনেক সময় হারাম সম্পদ উপার্জন বা বড় কোনো গোনাহের দিকে ইঙ্গিত করে। যদি কেউ দেখে যে সে রক্তে রঞ্জিত, তবে বুঝতে হবে সে হারাম পথে উপার্জনে জড়িয়ে পড়বে অথবা কোনো বড় গোনাহে লিপ্ত হবে।

কেউ যদি স্বপ্নে দেখে তার কাপড়ে রক্ত লেগেছে এবং কোথা থেকে লেগেছে তা সে জানে না, তবে এটি এমন একটি পরিস্থিতির প্রতীক- যেখানে কেউ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেবে, যেমনটি ঘটেছিল হযরত ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনায়।

একটি বিশেষ স্বপ্ন হলো- যদি কেউ দেখে সে কোনো প্রাণীকে তার পেছন দিক থেকে জবাই করছে, তবে এটি একটি ভয়ানক ইঙ্গিত, যা সমকামিতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা হলো: কেউ যদি স্বপ্নে দেখে সে কোনো শিশুকে জবাই করে তা আগুনে ভুনছে এবং সেই ভুনা অপূর্ণ থাকে- তবে এই স্বপ্নের তাৎপর্য বোঝায় যে শিশুটির পিতা-মাতার প্রতি কোনো ধরনের জুলুম হচ্ছে। তবে ভুনা যদি সম্পূর্ণ হয়, তা হলে বোঝাবে যে সেই জুলুম স্বপ্নদ্রষ্টার নিজের ওপরই আসবে।

শিশুকে জবাই করে ভুনা দেখতে পাওয়ার আরেকটি ব্যাখ্যা হলো, এটি শিশুর শৈশব থেকে প্রাপ্তবয়স্কতার দিকে অগ্রগতির ইঙ্গিত। যদি তার পরিবারের সদস্যরা সেই মাংস খেতে দেখায়, তবে বোঝা যায়, শিশুটি ভবিষ্যতে তার পরিবারকে কল্যাণ প্রদান করবে।

বাদশাহ যদি স্বপ্নে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে এবং তার লাশ স্বপ্নদ্রষ্টার ঘাড়ে মাথাবিহীন রেখে দেয়, তবে এর অর্থ বাদশাহ জনসাধারণের ওপর জুলুম করবে। কিন্তু যদি সেই লাশের সঙ্গে মাথাও থাকে, তা হলে বোঝা যাবে বাদশাহ মানুষের প্রয়োজন পূরণে সক্ষম হবেন।

একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে: এক মহিলা ইমাম ইবনে সীরীনের কাছে এসে বললেন, ‘আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি আমার স্বামীকে স্বজাতির সঙ্গে হত্যা করেছি।’ ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.) বললেন, ‘তুমি তোমার স্বামীকে গোনাহের কাজে উদ্বুদ্ধ করেছ।’ মহিলা বললেন, ‘আপনি সত্যই বলেছেন।’

বি.দ্র. এই স্বপ্নগুলোর ব্যাখ্যা আমাদের শেখায়, প্রতিটি স্বপ্নই কেবল নিছক কল্পনা নয়, বরং অন্তর্নিহিত বার্তা বা ইঙ্গিত বহন করতে পারে। তবে, এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রহ.) এর ‘তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

 

পরে যাওয়া খাবার তোলার বিষয়ে নবিজির উপদেশ

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
পরে যাওয়া খাবার তোলার বিষয়ে নবিজির উপদেশ
পরে যাওয়া খাবারের ছবি। সংগৃহীত

শয়তান ও মানুষের মধ্যে এক অবিরাম যুদ্ধ চলতে থাকে। শয়তান মানুষকে বিপথে চালিত করতে সর্বদা চেষ্টা করে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এই যুদ্ধে শয়তানের শক্তি সঞ্চয়ের উৎসগুলো সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। আমাদের উচিত শয়তানের শক্তি সঞ্চয়ের উপায়গুলো জানার পাশাপাশি, তাকে তার লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য না করা। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো খাবারের সময় পড়ে যাওয়া খাদ্যাংশ পরিষ্কার করে তা খেয়ে নেওয়া।


আজকাল অনেকেই এ সুন্নাহকে কিছুটা অদ্ভুত মনে করেন, কিন্তু এটি বাস্তব সত্য। কেননা, যদি আমরা পড়ে যাওয়া খাবার পরিষ্কার করে না খাই, তাহলে শয়তান সে খাবার খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করবে। জাবের (রা.)-এর বর্ণনায় এসেছে, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘শয়তান তোমাদের প্রতিটি কাজে উপস্থিত হয়। এমনকি যখন তোমরা খাবার খেতে বসো, তখনো সে সেখানে উপস্থিত থাকে। তাই যদি খাবারের লোকমা পড়ে যায়, সে যেন ময়লা দূর করে তা খেয়ে নেয়, শয়তান যেন তা খেয়ে শক্তি না অর্জন করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০৩৩)


এ ছাড়া আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন খাবার খেতেন, তখন তাঁর তিনটি আঙুল চেটে খেতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কারও যদি খাবারের কোনো অংশ পড়ে যায়, সে যেন ময়লা দূর করে তা খেয়ে নেয়, শয়তানের জন্য রেখে না দেয়।’ (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস: ৩৮৪৫) এই হাদিসগুলো থেকে আমরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পারি- ১. শয়তানকে খাবার খাওয়ার সুযোগ না দেওয়া। ২. পড়ে যাওয়া খাবারে বরকত থাকতে পারে।


আমরা শয়তানকে দেখতে পাই না, কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ অনুসারে আমরা বিশ্বাস করি যে, শয়তান আমাদের প্রতিটি কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে, এমনকি খাবার খাওয়ার সময়ও। একইভাবে, আমরা খাবারের বরকতও দেখতে পাই না, তবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ অনুসারে আমরা বিশ্বাস করি যে, পড়ে যাওয়া খাদ্যেও বরকত আছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ পালন আমাদের ঈমানের একটি প্রমাণস্বরূপ। আমরা শয়তানকে তার সুযোগ থেকে বিরত রাখতে এবং বরকতের আশায় পড়ে যাওয়া খাদ্য খেয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক 

স্বপ্নে কাউকে হত্যা করতে দেখা কিসের বার্তা?

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৫ পিএম
স্বপ্নে কাউকে হত্যা করতে দেখা কিসের বার্তা?
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্ন মানুষের মনের অবস্থা, চিন্তা এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নানা ইঙ্গিত প্রদান করে। তবে কিছু স্বপ্ন রহস্যময় ও ভীতিকর হয়, বিশেষ করে স্বপ্নে হত্যার দৃশ্য, যা অত্যন্ত জটিল এবং ভয়াবহ হতে পারে। ইসলামিক স্বপ্নতত্ত্ব অনুসারে, এ ধরনের স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়, যা ব্যক্তির আধ্যাত্মিক ও মানসিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত।

১. কাউকে হত্যা করা: যদি আপনি স্বপ্নে কাউকে হত্যা করতে দেখেন, এটি একটি বড় ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। কিছু মানুষ মনে করেন, এ ধরনের স্বপ্ন দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও নির্দেশ করতে পারে। অন্যদিকে, যদি আপনি নিজেকে হত্যা করতে দেখেন, তা হলে এটি হতে পারে যে, আপনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজের তওবা গ্রহণ করবেন এবং জীবনে কল্যাণ লাভ করবেন।

২. নিজেকে হত্যা করা: বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বপ্নে নিজেকে হত্যা করা মানে দীর্ঘ আয়ু লাভের লক্ষণ। এটি একটি ইতিবাচক সঙ্কেত হিসেবে ধরা হয়, যা জীবনের কষ্ট বা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করে।

৩. জবাই করা: যদি আপনি কাউকে জবাই করতে দেখেন, এর মানে হতে পারে যে, আপনি সেই ব্যক্তির চেয়ে উন্নত বা উত্তম হয়ে উঠবেন। তবে, যদি আপনি কাউকে জবাই করতে দেখেন এবং তিনি আপনার পরিচিত হন, তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আপনি তার প্রতি কোনো ভুল বা অন্যায় কাজ করবেন। এই স্বপ্নে উন্নতি আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তা ওই ব্যক্তির কাছ থেকেই আসবে।

৪. পিতা-মাতা বা পিতাকে জবাই করা: স্বপ্নে যদি বাবা-মাকে জবাই করতে দেখেন, এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আপনি তাদের প্রতি অবাধ্য বা সীমা লঙ্ঘনকারী হয়ে উঠতে পারেন। আবার যদি কোনো মহিলা বা প্রাণীকে জবাই করতে দেখেন, এটি সাধারণত আপনার যৌন জীবন বা সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত দেয়, যা ভুল পথে চলে যেতে পারে।

৫. শিশু বা অন্য কোনো প্রাণীকে জবাই করা: শিশুদের জবাই করা বা তাদের গোশত খাওয়া দেখতে পেলে, এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আপনি আপনার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছেন এবং আপনার কর্ম ও আচরণ থেকে আপনি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সম্মান এবং কল্যাণ লাভ করবেন।

৬. বাদশাহ বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক: স্বপ্নে যদি বাদশাহ কাউকে জবাই করেন এবং তার মাথাবিহীন লাশ আপনার ঘাড়ে রাখেন, এটি একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। এ ধরনের স্বপ্ন নির্দেশ করে যে, কর্তৃপক্ষ মানুষের প্রতি অন্যায় করতে পারে এবং তাদের চাহিদা পূরণে অক্ষম থাকবে।

এভাবেই হত্যার স্বপ্নের ব্যাখ্যা নানা দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন হতে পারে। তবে, এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সীরীনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত। স্বপ্নের সম্পূর্ণ অর্থ অনুধাবন করার জন্য ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপট এবং অনুভূতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা জরুরি।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক 

 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে মেলবে যে প্রতিদান

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে মেলবে যে প্রতিদান
ফোণে অন্যের সাথে রেগে কথা বলার দৃশ্য । ছবি সংগৃহীত

শয়তান সাধারণত ঝগড়া-বিবাদ ও দ্বন্দ্বের মাধ্যমে মানুষের রাগ উসকে দেয়। রাগের সময় মানুষকে নিয়ন্ত্রণে আনা তার পক্ষে সহজ। এর মাধ্যমে শয়তান মানুষকে তার কাঙ্ক্ষিত অকল্যাণের দিকে ঠেলে দেয়। সৃষ্টির সূচনাতেই আদম (আ.) এবং তার সন্তানদের এ সহজাত প্রবৃত্তি সম্পর্কে শয়তান খুব ভালোভাবে অবহিত ছিল।


আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা যখন জান্নাতে আদম (আ.)-এর আকৃতি গঠন করলেন, তখন আল্লাহ তার আকৃতিকে যত দিন ইচ্ছা ফেলে রাখলেন। এ সময় ইবলিস তার চতুর্দিকে ঘুরাফেরা করতে লাগল। দেখতে দেখতে সে অনুভব করল, এটি একটি শূন্য কাঠামো। তখন সে বুঝল যে, (আল্লাহ) এমন একটি সত্তা সৃষ্টি করেছেন, যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬১১)


এই বর্ণনার বিভিন্ন অর্থের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ হলো—রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা কঠিন হলেও, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সুন্নাহর মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে রাগের মুহূর্তে নিজেকে সংযত রাখতে হয়, যাতে শয়তানের ফাঁদে পড়া থেকে বাঁচা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত বীর সেই ব্যক্তি নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং প্রকৃত বাহাদুর সে, যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংবরণ করতে সক্ষম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৬৩)


রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, রাগ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহতায়ালা কত বড় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমরা ছুটে যাও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের মতো। এটি মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতার সময়ে (অর্থ) খরচ করে, যারা নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪)


মুয়াজ ইবনে আনাস জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হলেও ক্রোধ সংবরণ করে, (এজন্য) কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সব সৃষ্টির সামনে ডেকে বলবেন, তুমি যে হুর চাও, পছন্দ করে নিয়ে যাও।’ (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস: ৪৭৭৭)


এই সুন্নাহ আমাদের জন্য এক চমৎকার শিক্ষা। রাগ নিয়ন্ত্রণ করা কেবল আমাদের দুনিয়ার শান্তি ও সুখের জন্য নয়, বরং আখেরাতে আমাদের জন্য এক বিশাল পুরস্কার অপেক্ষা করছে। রাগ সংবরণ করার মাধ্যমে আমরা শয়তানের ফাঁদে না পড়তে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হই। এটি আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের উন্নতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পথ।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

স্বপ্নে তরবারি ও তলোয়ার দেখা: কীসের পূর্বাভাস?

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
স্বপ্নে তরবারি ও তলোয়ার দেখা: কীসের পূর্বাভাস?
দুটি ধারলো তরবারির ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্ন শুধু ঘুমের জগতের কল্পনা নয়— অনেক সময় এটি হয়ে ওঠে গভীর বার্তাবাহী। যেখানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা সংকেত ও ইঙ্গিত লুকিয়ে থাকে। স্বপ্নে তরবারি বা তলোয়ার দেখার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অস্ত্রগুলোর প্রতীকী অর্থ রয়েছে যা আমাদের ভবিষ্যৎ, পারিবারিক সম্পর্ক, সন্তান কিংবা জীবনের বড় পরিবর্তন নিয়ে নানা বার্তা দেয়।

বীরত্ব ও নেতৃত্বের আগমন: স্বপ্নে তরবারি দেখার অন্যতম অর্থ হলো বীরত্ব বা শক্তি লাভ। তরবারি দেখলে এটি সাধারণত বীরপুরুষ হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। যদি স্বপ্নে আপনি তরবারি দিয়ে কাউকে আঘাত করেন বা হত্যার দৃশ্য দেখেন, এটি সাধারণত গোত্রের ঝগড়া বা পারিবারিক অশান্তি নির্দেশ করে। 

কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব:  গলায় তরবারি ঝোলাতে দেখলে, এটি রাজত্বের বড় দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বাভাস হতে পারে। তরবারি এখানে রাজকীয়তা ও কর্তৃত্বের প্রতীক হিসেবে উপস্থিত থাকে। তবে যদি তরবারিটি ভারী মনে হয় এবং আপনি সেটিকে টেনে নিয়ে চলেন, তা হলে এটি নির্দেশ করে যে, আপনি হয়তো অক্ষম হতে পারেন রাজত্ব বা নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করতে।

সন্তানবিষয়ক সংকেত: স্বপ্নে যদি গলায় চারটি তরবারি ঝোলানো দেখেন, তা হলে এটি চারটি সন্তানের জন্ম হতে পারে। এখানে তরবারির ধাতু অনুযায়ী সন্তানের বৈশিষ্ট্যও প্রতিফলিত হয়—লোহার তরবারি বীর সন্তানের, পিতল তরবারি ধনী সন্তানের, সীসার তরবারি নপুংসক সন্তানের এবং কাঠের তরবারি মোনাফিক সন্তানের আলামত। অন্যদিকে, মরিচাযুক্ত তরবারি দেখে কোষ থেকে বের করার স্বপ্ন, দুষ্টু সন্তান বা দুর্ঘটনার আগমনের সংকেত দিতে পারে।

স্বপ্নের প্রেক্ষাপট: স্বপ্নে তরবারি যদি কোষ থেকে বের করার চেষ্টা করেন, তা হলে এর মধ্যে কিছু বিপদের সঙ্কেত থাকতে পারে। যদি তরবারি ভেঙে যায়, তা হলে এটি মৃত্যু বা বড় ধরনের ক্ষতির পূর্বাভাস হতে পারে। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন তরবারিটি যদি ভারী হয়, তবে এটি জড়তা বা সংকোচ বোঝাতে পারে এবং তরবারিতে ছিদ্র থাকলে, এর অর্থ হতে পারে যে সন্তান বোবা হবে।

পারিবারিক জীবন ও বিবাহ: যদি স্বপ্নে তরবারি দেখে আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো পরিবর্তন দেখতে পান, তা সাধারণত সন্তানের আগমনের প্রতীক। গলায় দুটি বা তিনটি তরবারি ঝোলানো দেখলে, এটি তিন তালাকের পূর্বাভাস হতে পারে। তরবারিকে খাপের মধ্যে দেখতে পেলে, এটা স্ত্রী বা গর্ভাবস্থার প্রভাব বা সম্পর্কের অবনতি নির্দেশ করতে পারে।

সামাজিক প্রেক্ষাপট: স্বপ্নে তরবারি ও বেল্ট দেখলে, এটি প্রমাণ করে যে আপনি নিজের দায়িত্ব পালন করবেন এবং আমানত রক্ষা করবেন। তরবারি যদি পাশের দিকে রাখা থাকে, তা হলে এটি একটি কঠিন সাহসী ব্যক্তি হওয়ার ইঙ্গিত। তরবারিকে যদি বাতাসে দেখা যায়, তবে এটি মহামারি বা বিপদ সংকেত দিতে পারে।

এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত। স্বপ্নের সম্পূর্ণ অর্থ অনুধাবন করার জন্য ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপট এবং অনুভূতির সাথে মিলিয়ে দেখা জরুরি।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক