
প্রশ্ন: আমাদের বাড়িতে যাওয়ার পথে পদ্মা নদী পার হওয়ার সময় কখনো ফেরিতে নামাজ পড়তে হয়। ফেরির ছাদে অজুর পানির যে ব্যবস্থা থাকে, তা নদী থেকেই তোলা হয়। সেই পানি বেশ ঘোলাটে ও অপরিষ্কার। লঞ্চ-ফেরির সব ধরনের ময়লা-আবর্জনা এবং টয়লেটের ময়লাও নদীতে পড়ে। ফলে ওই পানি দিয়ে অজু করতে, বিশেষত কুলি করতে রুচি হয় না। জানার বিষয় হলো, উক্ত পানি কি পাক এবং তা দ্বারা কি অজু করলে সঠিক হবে?
আরমান রহমান, বরিশাল
উত্তর: পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘... তিনি আকাশ থেকে পানি অবতরণ করেন তোমাদের পবিত্র করার জন্য...।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ১১)। পানি মৌলিকভাবে পবিত্র-পবিত্রকারী। কোরআনে আছে, ‘আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৪৮)। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত পানি নাপাক হওয়ার প্রমাণ না পাওয়া যাবে, ততক্ষণ তা পবিত্র বলে গণ্য হবে।
পবিত্রতা অর্জনের দিক থেকে পানি পাঁচ প্রকার—
- বৃষ্টি, নদী, সাগর, পুকুর, নালা, ঝরনা, কূপ, টিউবওয়েল, শিশির ও বরফ ইত্যাদির পানি নিজে পবিত্র ও অন্য বস্তুকেও পবিত্র করে এবং এর দ্বারা অজু ও গোসল করা মাকরুহ নয়। এটি সাধারণ পানি।
- পালিত বিড়াল, ছাড়া মুরগি, ইঁদুর, পাখি বা এমন কোনো প্রাণীর মুখ দেওয়া পানি, যার উচ্ছিষ্ট মাকরুহ। এ পানি নিজে পবিত্র এবং অন্য বস্তুকেও পবিত্র করে। তবে সাধারণ পানি থাকা অবস্থায় এ পানি দিয়ে অজু না করা উচিত।
- অজু-গোসলের জন্য ব্যবহৃত পানি—যা নাপাকি দূর করার জন্য বা আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও সওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে; এমন পানি শরীর বা কাপড়ে লাগলে তা নাপাক হবে না। তবে অন্য বস্তুকে এ পানি পবিত্র করে না। এ পানি দ্বারা অজু ও গোসল জায়েজ নয়।
- এমন প্রবহমান পানি, যাতে নাপাকি পড়ার কারণে পানির রং, ঘ্রাণ বা স্বাদ পরিবর্তন হয়ে গেছে। অথবা আবদ্ধ অনেক পানি, যাতে নাপাকি পড়ার কারণে সব দিকের পানির রং, ঘ্রাণ বা স্বাদ বদলে গেছে। অথবা আবদ্ধ অল্প পানি, যাতে নাপাকি পতিত হয়েছে। এসব পানি দিয়ে অজু ও গোসল জায়েজ হবে না। কোনো নাপাক বস্তুও পবিত্র করা যাবে না।
- গাধা বা খচ্চরের মুখ দেওয়া পানি। এ পানি দিয়ে অজু করার পর তায়াম্মুম করতে হবে।
আরও পড়ুন: এইচএমপিভি ভাইরাস থেকে বাঁচার দোয়া
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রবাহিত পানিতে নাপাকি পড়লে যদি নাপাকির রঙ, গন্ধ ও স্বাদের কোনো একটিও পানিতে প্রকাশ না পায়, তা হলে ওই পানি পাক। তা দ্বারা অজু-গোসল ও পবিত্রতা অর্জন করতে কোনো সমস্যা নেই। সুতরাং ফেরির ট্যাংকের পানিতে নাপাকির কোনো আলামত বা নিদর্শন প্রকাশ না পেলে শুধু তা ঘোলাটে ও অপরিচ্ছন্ন হওয়ার কারণে নাপাক হিসেবে গণ্য হবে না। বরং তা দ্বারা অজু-গোসল করা সঠিক হবে। অন্য যেকোনো প্রয়োজনে তা ব্যবহার করা যাবে।’ (বাদায়েউস সানায়ে, ১/২১৬)
লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক