
তাশাহুদ এক মহামূল্যবান দোয়া। এটি যেকোনো সময় দোয়া হিসেবে পড়া যায়। এটি সেই পবিত্র ঘোষণা, যেখানে মুসলমান তার বিশ্বাসের সারমর্ম প্রকাশ করে। এই দোয়াটি নামাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নামাজের বৈঠকে পড়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। এর গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক।
কখন পড়তে হয় তাশাহুদ
তাশাহুদ মূলত যেকোনো নামাজের দ্বিতীয় ও শেষ রাকাতে বসে পড়তে হয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন তাশাহুদে বসতেন, তখন তাঁর বাম পা বিছিয়ে রাখতেন এবং ডান পা খাড়া রাখতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৪৯৮)। এই বসার পদ্ধতি ‘তাওয়াররুক’ নামে পরিচিত। তাশাহুদ পাঠকালে ডান হাতের তর্জনী আঙুল উত্তোলন করে একত্ববাদের ইশারা করা সুন্নত।
তাশাহুদের গুরুত্ব ও মর্যাদা
ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার হাত তাঁর দুই হাতের মাঝে রেখে আমাকে তাশাহুদ শেখালেন, যেভাবে তিনি কোরআনের সুরা শেখাতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৩১)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ তাশাহুদে বসে, তখন সে যেন বলে ‘আত্তাহিইয়াতু লিল্লাহি...।’ (মুসলিম, হাদিস: ৪০২)
এই মহামূল্যবান দোয়ার প্রতিটি শব্দে আল্লাহর প্রতি সম্মান, ভালোবাসা ও বিনয়ের প্রকাশ রয়েছে। ইমাম নববি (রহ.) বলেন, তাশাহুদে মানুষ আল্লাহর সামনে সর্বোচ্চ বিনয়ের সঙ্গে উপস্থিত হয়, যেখানে সে তার সকল সম্মান, রাজত্ব ও পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদন করে।
আরও পড়ুন: ময়লা পানি দিয়ে অজু করা যাবে?
তাশাহুদের তাৎপর্য
তাশাহুদের মাধ্যমে মুসলমান বান্দা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও একত্ববাদের পূর্ণ স্বীকৃতি দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রিসালাতের ওপর অটল বিশ্বাস ব্যক্ত করে ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে। আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তাশাহুদ এমন গুরুত্বের সঙ্গে শেখাতেন যেমনভাবে কোরআন শেখাতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৩৫)
তাশাহুদের বাংলা উচ্চারণ
আততাহিইয়াতু লিল্লাহি, ওয়াস সালা ওয়াতু, ওয়াত তাইয়িবাতু, আস সালামু আলাইকা, আই ইউহান নাবিইয়ু, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
তাশাহুদের বাংলা অর্থ
শ্রদ্ধা আল্লাহর জন্য, পবিত্রতা আল্লাহর জন্য, ভালো কাজ ও নামাজ (সব কিছু) আল্লাহর জন্য। হে নবি, আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ বা উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।
লেখক: খতিব, বাগবাড়ি জামে মসজিদ, গাবতলী