
সুস্থতা যেমন নেয়ামত, তেমনি অসুস্থতাও। তাই অসুস্থ হলে ভেঙে পড়া যাবে না। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ধৈর্য ধরতে হবে। তাঁর কাছে সুস্থতার প্রার্থনা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন, তাকে তিনি দুঃখ-কষ্টে পতিত করেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৪৫)
আমাদের নবিজিও (সা.) অনেক রোগ-বালাই সহ্য করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে বেশি রোগ-যন্ত্রণা ভোগকারী কাউকে দেখিনি।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৪৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফোটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৪১)
আরও পড়ুন: ময়লা পানি দিয়ে অজু করা যাবে?
অসুস্থ ব্যক্তির ওপর আল্লাহর করুণা বর্ষণ হয়। ইমানদার অসুস্থ হলে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। মুমিনের বিশ্বাস হলো, সে যে অবস্থায়ই থাকুক, এর মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের বিষয়টা বড়ই আশ্চর্যের! তার সব অবস্থাতেই কল্যাণ থাকে। এটি শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য যে, যখন সে আনন্দে থাকে, তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এবং যখন সে কষ্টে থাকে, তখন ধৈর্য ধরে। আর এ উভয় অবস্থাই তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৯৯৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘মুমিন বান্দা যখন অসুস্থ হয় এবং আল্লাহতায়ালা তা থেকে তাকে সুস্থও করে দেন; এ অসুস্থতা তার পূর্ববর্তী গুনাহের কাফফারা এবং ভবিষ্যতের জন্য উপদেশ হয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩০৮৯)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ঈমানদারের জন্য অসুস্থতার দুটি উপকারিতা রয়েছে—এক. এ রোগ তার আগেরকার গুনাহের কাফফারা হয়। দুই. এ রোগ তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য উপদেশ হয়।
অনেকে অসুস্থতার সময় আল্লাহকে প্রচুর স্মরণ করে, গুনাহ ছেড়ে দেয়, চুপচাপ থাকে, মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে, আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করে, তখন তার বুঝে আসে সুস্থতার কদর এবং সে নিয়ত করে সুস্থতার শুকরিয়া আদায় করবে, ঠিকমতো নামাজ পড়বে, আল্লাহর হুকুম মেনে চলবে। কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের বিষয় হলো, সুস্থ হওয়ার পর সে ভুলে যায় আল্লাহকে। আবার গুনাহ করা শুরু করে, মানুষকে কষ্ট দেয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘মানুষকে যখন বিপদ স্পর্শ করে তখন সে শুয়ে, বসে, দাঁড়ানো অবস্থায় আমাকে ডাকতে থাকে। আর যখন তাকে বিপদমুক্ত করে দিই, তখন এমনভাবে চলে যায় যেন সে বিপদে পড়ে আমাকে ডাকেইনি।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ১২)। মুমিনের জন্য উচিত হলো, সর্বদা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক