
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.) খুশি হন। আল্লাহকে পাওয়া যায়। জান্নাত লাভ হয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে নবি, আপনি বলে দিন তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তা হলে আমার অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অসংখ্য সুন্নত থেকে জীবনঘনিষ্ঠ পাঁচটি সুন্নত এখানে উল্লেখ করা হলো—
সালামের প্রচার-প্রসার
সালাম ইসলামের চমৎকার এক অভিবাদন পদ্ধতি। যা অন্য জাতি-ধর্মে নেই। সালামের মাধ্যমে পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। সওয়াব অর্জিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না ঈমান আনবে। আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বলে দেব না; যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তা হলো তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।’ (মুসলিম, হাদিস: ১০০)
নিয়মিত মেসওয়াক করা
মেসওয়াক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। মেসওয়াকের অনেক উপকারিতা বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মেসওয়াক করো। কেননা মেসওয়াক মুখগহ্বর পবিত্র করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে। আমার কাছে যখনই জিবরাইল (আ.) আসেন, তখনই আমাকে মেসওয়াক করার উপদেশ দেন। এমনকি আমি আশঙ্কা করছিলাম যে, তা আমার ও আমার উম্মতের ওপর ফরজ করা হবে। আমি যদি আমার উম্মতের ওপর কষ্টের আশঙ্কা না করতাম, তা হলে আমি তাদের জন্য মেসওয়াক করা ফরজ করে দিতাম। আর আমি এত বেশি মেসওয়াক করি যে, আমার মুখের সম্মুখভাগের দাঁতের গোড়ায় জখম হওয়ার আশঙ্কা করছি।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৮৯)
আরও পড়ুন: সম্পদ কাউকে অমর করে না
সুগন্ধি ব্যবহার
সুগন্ধি পবিত্রতার নিদর্শন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে সুগন্ধির এক আকর হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। তার যাতায়াতের পথে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ত। সাহাবায়ে কেরাম বুঝতে পারতেন এই পথে রাসুলুল্লাহ (সা.) হেঁটে গিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দুনিয়া থেকে আমার কাছে তিনটি জিনিস অধিক প্রিয়। স্ত্রী, সুগন্ধি আর আমার চক্ষু শীতল হয় নামাজের মাধ্যমে।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৩৯৩৯)
সব সময় আল্লাহর জিকির
জিকির শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এর মাধ্যমে অল্প সময়ে অধিক সওয়াব অর্জন করা যায়। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়। জিকিরকারী ব্যক্তি কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর আরশের ছায়ায় জায়গা পাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাত প্রকার লোককে আল্লাহতয়ালা ছায়া দেবেন। এর মধ্যে এক সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর জিকির করেছে এবং তার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৪৭৯)
মৃত্যুর আগে অসিয়ত
আল্লাহতায়ালা মৃত্যুর আগে অসিয়তের বিধান দিয়েছেন। সুরা বাকারার ১৮০ থেকে ১৮২ পর্যন্ত আয়াতে অসিয়তের পূর্ণ বিবরণ রয়েছে। মৃত্যুর সঠিক সময় কেউ জানে না, তাই মৃত্যুর আগে অসিয়ত করা উত্তম। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয় যে, তার অসিয়তযোগ্য কিছু (সম্পদ) রয়েছে, আর সে দুই রাত কাটাবে অথচ তার কাছে অসিয়ত লিখিত থাকবে না।’ (বুখারি, হাদিস: ২৫৫১)
লেখক: খতিব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, রায়পুর