ঢাকা ২৬ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১

ফজরের পর ঘুমালে যে ক্ষতি হয়

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
ফজরের পর ঘুমালে যে ক্ষতি হয়
ঘুমন্ত বালকের ছবি। ইন্টারনেট

ঘুম আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ঘুম অপরিহার্য। জীবনের ভারসাম্য রক্ষায় নির্ধারিত সময়ে ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। ইসলাম মানুষের জীবনকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে কাজ, ইবাদত এবং বিশ্রামের মধ্যে সমন্বয় করার নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ঘুমকে করেছি বিশ্রাম এবং রাতকে করেছি আবরণ।’ (সুরা নাবা, আয়াত: ৯-১০) 

ইসলামে ফজরের নামাজের পর ঘুমানো নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ এ সময়টিকে কাজ ও বরকতের সময় হিসেবে ধরা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য সকালে বরকত দান করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১২১২)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ফজরের নামাজের পর কাজ বা ইবাদতে মনোযোগী হলে জীবনে বরকত বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে অতিরিক্ত ঘুম বা অলসতা এই বরকতের সুযোগ নষ্ট করে। আধুনিক জীবনযাপনের প্রবণতা হিসেবে অনেকেই রাত জেগে বিনোদন বা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় ব্যয় করে, যা ফজরের নামাজ আদায়ে ব্যাঘাত ঘটায় এবং বরকত কমে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রাতের প্রথম ভাগে ঘুমাও এবং শেষ ভাগে ইবাদতের জন্য জেগে ওঠো। কারণ, রাতের শেষভাগে ইবাদত বেশি ফজিলতপূর্ণ।’ (বুখারি, হাদিস: ১১২০) 

যথাসম্ভব রাতের প্রথম ভাগে ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিত। আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় বিছানায় আসে এবং আল্লাহর জিকির করে শোয়; এমনকি তার তন্দ্রা এসে পড়ে এবং রাতের যেকোনো সময় (ডানে-বামে) ফিরতে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করে, আল্লাহতায়ালা নিশ্চয় তাকে তা দান করেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২৬)

ফজরের নামাজের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশেষ কিছু আমলের তাগিদ করেছেন। এই সময় দোয়া-দরুদ, তাসবিহ, তাহলিল, জিকির ও আল্লাহর স্মরণে কাটানোর জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সূর্যোদয় পর্যন্ত নামাজের জায়গায় বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে, এরপর দুই রাকাত (ইশরাক) নামাজ আদায় করে, তার জন্য একটি হজ ও ওমরার পূর্ণ সওয়াব রয়েছে।’ (তিরিমিজি, হাদিস: ৫৮৬)

রাতে ঘুমানোর আগে আল্লাহর নাম স্মরণ করা এবং ইসতেগফার করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে আল্লাহর নাম স্মরণ না করে ঘুমায় এবং ফজরের সময় জেগে না উঠে, তার কানে শয়তান গিঁট বেঁধে দেয়।’ (বুখারি, হাদিস: ১১৪২)
ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী সময়ের সঠিক ব্যবহার ও বরকত লাভের জন্য ফজরের পর ঘুমানোর বদলে কাজে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

হাদিস অস্বীকারকারীদের আপত্তি ও সংশয় ভাঙাবে ‘কুরআনিস্ট মতবাদ’ বই

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩২ এএম
হাদিস অস্বীকারকারীদের আপত্তি ও সংশয় ভাঙাবে ‘কুরআনিস্ট মতবাদ’ বই
‘কুরআনিস্ট মতবাদ’ বইয়ের প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি কোরআনিস্ট মতবাদ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, তারা কারা? তাদের বক্তব্যই-বা কী? কেউ কেউ হয়তো তাদের মতের দ্বারা প্রভাবিতও হয়ে পড়ছেন এর মধ্যে। কারও মনে জায়গা করে নিয়েছে নানা সংশয়। হাদিসশাস্ত্রের ওপর বিভিন্ন সংশয় ও আপত্তি উত্থাপন করে হাদিসকে শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস মানতে অস্বীকার এবং কোরআনকেই শরিয়তের একমাত্র উৎস হিসেবে সাব্যস্ত করা কোরআনিস্ট মতবাদদের প্রাথমিক কাজ। এ মতবাদের অনুসারীরা নিজেদের আহলে কোরআন বা কোরআনিস্ট দাবি করে। এর পেছনে রয়েছে তাদের বেশ কিছু দাবি, সংশয় বা আপত্তি। তবে এ বিষয়গুলো অনেকের কাছে নতুন মনে হলেও ইতিহাস ও বাস্তবতা বলে, এ জাতীয় দাবি, সংশয় বা আপত্তি আগেও ছিল। এখন শুধু বেশ বা ধরনে কিছুটা পরিবর্তন ও আধুনিকতার ছোঁয়া এসেছে যুগের পরিক্রমায়। এসব আপত্তি বা সংশয়ের নিরসন আমাদের স্বর্ণযুগের তারকাতুল্য মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিস আইম্মায়ে কেরাম যথাযথ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করে গেছেন। কোরআনিস্ট মতানুসারীদের উল্লেখযোগ্য কিছু আপত্তি ও সংশয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে কুরআনিস্ট মতবাদ: পর্যালোচনা ও সংশয় নিরসন বইয়ে। 

আহলে কোরআনরা নিজেদের সংশয়পূর্ণ চিন্তাধারার প্রচার-প্রসার করছে খুব জোরালোভাবেই। আর পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে অনেক সাধারণ মুসলিমদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে এ সংশয়ের প্রভাব। তাদের সংশয় ও আপত্তিকর চিন্তাধারা নিয়ে গঠনমূলক পর্যালোচনা ও সংশয় নিরসন সময়ের দাবি। এ বই সে দাবি পূরণে সক্ষম হয়েছে।  

বইটিতে কোরআনিস্ট মতবাদের অনুসারীরা হাদিসের ওপর বড় বড় যেসব সংশয় ও আপত্তি তুলে থাকে, তা ইনসাফের সঙ্গে উল্লেখ করে আইম্মায়ে মুহাদ্দিসিনের মানহাজের আলোকে পর্যালোচনা ও সংশয় নিরসন করা হয়েছে। যারা কোরআনিস্ট মৌলিক সংশয় ও আপত্তিগুলো জানার পাশাপাশি সংশয়গুলোর সমাধান জানতে চায়, তাদের জন্য এ বইটি খুবই উপকারী। এ বই পাঠে চিন্তাশীল পাঠকদের জন্য হাদিস অস্বীকারের ফেতনা থেকে বাঁচার মাধ্যমে নিজেদের ইমানের হেফাজত করাও সহজ হবে। 

বইয়ে কোরআনিস্টদের ১৯টি সংশয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেসব হাদিস নিয়ে সংশয় উঠেছে, সে ধরনের কিছু হাদিস নিয়ে আলাপ করা হয়েছে। যারা এসব হাদিসের ওপর আঘাত হেনেছে, তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে এসব আক্রমণের যে জবাব আইম্মায়ে মুহাদ্দিসিন ও বিজ্ঞ আলেমরা দিয়েছেন, তা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোনটি সঠিক মত সেটিও বলে দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানমূলক বিশ্লেষণধর্মী তুলনামূলক মানহাজের ওপর নির্ভর করে বইটি প্রস্তুত করেছেন লেখক। 

বইটি শায়খ ড. আবদুল আযীয মুহাম্মাদ আল-খালাফের মাওকিফুল মুহাদ্দিসিন মিন শুবুহাতি মুনকিরিস সুন্নাহ আল-মুয়াসিরিন-এর অনুবাদ। অনুবাদ করেছেন সালমান মাসরুর। বইটি প্রকাশ করেছে পেনফিল্ড পাবলিকেশন। ১৯২ পৃষ্ঠার বইটির মুদ্রিত মূল্য ২৮৬ টাকা। দেশের অভিজাত সব লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন অনলাইন বুকশপে বইটি পাওয়া যায়। সরাসরি পেনফিল্ড পাবলিকেশন থেকে বইটি কিনতে ভিজিট করুন ফেসবুক পেজে

বই: কুরআনিস্ট মতবাদ: পর্যালোচনা ও সংশয় নিরসন
লেখক: ড. আবদুল আযীয মুহাম্মাদ আল-খালাফ
অনুবাদক: সালমান মাসরুর
প্রকাশক: পেনফিল্ড পাবলিকেশন
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৯২
মুদ্রিত মূল্য: ২৮৬ টাকা
মোবাইল: ০১৪০৭-০৫৬৯৬১

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

বাবরি চুল ইসলামের ঐতিহ্য ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম
বাবরি চুল ইসলামের ঐতিহ্য ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি
বাবরি চুলের ছবি। ইন্টারনেট

রাসুলুল্লাহ (সা.) বাবরি বা লম্বা চুল রাখতেন। বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়, তাঁর চুল কখনো কানের লতিতে থাকত, কখনো কাঁধ পর্যন্ত দীর্ঘ হতো। এর মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর অনুসারীদের জন্য একটি সুন্দর উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। তবে বাবরি রাখা ইসলামে একটি ঐচ্ছিক সুন্নত। এতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটি এমন একটি বিষয়, যেখানে ব্যক্তি তার রুচি এবং স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

ইসলামের প্রতিটি বিধান ও নিয়মের পেছনে রয়েছে যুক্তি ও উদ্দেশ্য। বাবরি রাখা শুধু একটি শারীরিক চর্চা নয়; এটি ব্যক্তিত্ব, পরিচ্ছন্নতা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি ইসলামের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। মহানবি (সা.) সবসময় পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্যের প্রতি গুরুত্ব দিতেন। বাবরি রাখার সঙ্গে এই দৃষ্টিভঙ্গির সংযোগ রয়েছে।

পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণ: বাবরি রাখার ক্ষেত্রে মহানবি (সা.) পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। হাদিসে পাওয়া যায়, তিনি নিয়মিত চুল আঁচড়াতেন এবং তেলের ব্যবহার করতেন। চুল বড় রাখার পাশাপাশি এর সঠিক যত্ন নেওয়াও সুন্নতের অংশ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেহারায় সবসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছাপ থাকত। তার লম্বা চুল সেই সৌন্দর্যের অংশ ছিল। ইসলাম চুলের সৌন্দর্যকে স্বাভাবিক উপায়ে রক্ষণাবেক্ষণ করার পরামর্শ দেয়।

পরিচয়ের প্রতীক: মহানবি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা বিভিন্ন সময়ে চুলের মাধ্যমে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতেন। চুলের ধরন ও দৈর্ঘ্য আরব সংস্কৃতির একটি অংশ ছিল। বাবরি রাখা সেই ঐতিহ্য এবং ইসলামের ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে।

ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, বাবরি রাখা সুন্নত হিসেবে বিবেচিত। এখানে কিছু হাদিস উল্লেখ করা হলো, যা এ বিষয়টিকে আরও পরিষ্কার করবে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চুল মাঝেমধ্যে কানের লতি পর্যন্ত থাকত, কখনো কখনো কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছাত।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৫৬৫)

উম্মু হানি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাথার চুল চারভাগে ভাগ করা অবস্থায় দেখেছি। তার মাথায় লম্বা চুল ছিল।’ (তিরমিজি)। এ হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, বাবরি রাখা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অভ্যাস ছিল এবং এটি সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। তবে এই সুন্নত পালনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি তার পরিবেশ ও প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বাবরি রাখার উপকারিতা: বাবরি রাখা শুধু একটি ধর্মীয় সুন্নত নয়; এর কিছু স্বাস্থ্যগত এবং সামাজিক উপকারিতাও রয়েছে—১. চুল বড় থাকলে তা মাথার ত্বককে রোদ ও ধুলাবালি থেকে সুরক্ষা দেয়। ২. লম্বা চুল ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করে তোলে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। ৩. বাবরি রাখা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্মরণ করিয়ে দেয় এবং তাকে অনুসরণের অনুভূতি জাগ্রত করে।

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

যেসব কান্না আল্লাহর পছন্দ

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৮ এএম
যেসব কান্না আল্লাহর পছন্দ
কান্নারত এক ব্যক্তির ছবি। ইন্টারনেট

পৃথিবীর সব জায়গার ও সব ভাষার মানুষ কাঁদে। মানুষের কান্নার ভাষা সবাই বোঝে। একজন নবজাতকও দুনিয়াতে নিজের আগমন ও অস্তিত্বের জানান এই কান্না দিয়েই প্রকাশ করে। সে তখন কান্না না করলে মা-বাবাসহ সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবজাতককে জন্মের সময় শয়তান খোঁচা দেয়, ফলে সে শয়তানের খোঁচায় চিৎকার করে।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৪৩১)। কান্নায় কি শুধু মনের দুঃখ-কষ্টের প্রকাশ ঘটে, না অন্য কিছুও থাকে? আসলে কান্নার আছে আরও অনেক প্রকার। এখানে পাঁচটি প্রকার উল্লেখ করা হলো—

বিপদের কান্না: বিপদে পড়লে সবাই মন খারাপ করে। কান্না করে। হাদিসে আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তার শিশুপুত্র ইবরাহিমের মৃত্যুর সময় কান্নারত অবস্থায় বলেছেন, চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে, হৃদয় ব্যথিত হয়। তবে আমরা তাই বলি যার ওপর আমাদের সব সন্তুষ্টি। আর তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত।’ (বুখারি, হাদিস: ১৪০৭)
 
বিচ্ছেদের কান্না: আপনজন ও প্রিয়জনের বিচ্ছেদে মানুষ কান্না করে। ইয়াকুব (আ.) আপন সন্তান ইউসুফ (আ.)-এর বিচ্ছেদে কান্না করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তার চোখ দুটি কাঁদতে কাঁদতে সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং তার হৃদয় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছিল।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৪) 

কোরআন পড়ে বা শুনে কান্না: এমন অনেক সৌভাগ্যবান ব্যক্তি আছেন, যারা কোরআন তেলাওয়াতের সময় কান্না করেন। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কেঁদে কেঁদে কোরআন তেলাওয়াত করো, যদি কান্না না আসে তা হলে কান্নার ভান ধরো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৩৭) 
ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, সাহাবায়ে কেরামের কোরআন তেলাওয়াতের সময় আশ্চার্যজনক অবস্থা সৃষ্টি হতো, সাহাবিদের  ভেতর কেউ তেলাওয়াতের সময় কান্না করতেন, কেউবা আবার বেহুঁশ হয়ে যেতেন, আবার কেউ এই বেহুঁশের মধ্যেই চির বিদায় হয়ে যেতেন। (খুতুবাতে জুলফিকার, ৪/১৭৯)

গুনাহের কথা স্মরণ করে কান্না: যাপিত জীবনে কমবেশি সবাই গুনাহ করে থাকে, তবে গুনাহের কথা স্মরণ করে কান্না করা এক অনন্য গুণ। যে গুনাহের কথা স্মরণ করে কান্না করে, আল্লাহতায়ালা তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার কাছে দুটি ফোঁটা অত্যন্ত প্রিয়। এক. আল্লাহতায়ালার ভয়ে যে অশ্রু ফোঁটা ঝরে। দুই. আল্লাহতায়ালার রাস্তায় যে অশ্রু ফোঁটা ঝরে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৬৩৯)

আল্লাহর ভয়ে কান্না: চোখের সদ্ব্যবহারের একটি অনন্য দিক হলো, আল্লাহর ভয়ে কান্না করা। তা ছাড়া আল্লাহর ভয়ে কান্না করা মুমিনের বিশেষ গুণ এবং একনিষ্ঠতার বড় প্রমাণও। আল্লাহর ভয় ইমানের অপরিহার্য উপাদান। কেননা ইমান হলো, আশা ও ভয়ের ভেতরে। নবি-রাসুলদের বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘এরা সৎ কাজে ছিল ক্ষিপ্রগতি, তারা আমাকে ডাকতো আশা নিয়ে ও ভীত হয়ে, আর তারা ছিল আমার প্রতি বিনয়ী।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০)

জীবনের সব ক্ষেত্রে মহান আল্লাহকে ভয় করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করা যাবে না। অনেক কারণে মানুষ কান্না করে এবং অশ্রুপাত করে। এসবের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে তাঁর ভয়ে কান্না করা। হাশরের ময়দানে এ প্রকারের কান্না ও অশ্রু অমূল্য সম্পদ হয়ে বান্দাকে আনন্দিত করবে এবং মুখে হাসি ফোটাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি চোখ জাহান্নামের আগুন দেখবে না। যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদারি করে, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, যে চোখ আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ জিনিস দেখে ক্ষুব্ধ হয়।’ (আল মুজামুল কাবির লিত তিবরানি, হাদিস: ১০০৩)

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর 

 

নিজ হাতে উপার্জনের গুরুত্ব

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
নিজ হাতে উপার্জনের গুরুত্ব
প্রতীকী ছবি

প্রত্যেক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, জীবিকা উপার্জনের বৈধ কোনো পথ ও পন্থা খুঁজে বের করা। ইসলামে জীবিকা অর্জন করা মর্যাদাপূর্ণ ভার ও দায়িত্ব।  মনে রাখতে হবে, রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহতায়ালা নিয়েছেন। এরপর মা-বাবাসহ আরও যাদের মাধ্যমে বান্দা রিজিকপ্রাপ্ত হয়, তারা সবাই আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নির্বাচিত মাধ্যম ও প্রতিনিধি। একজন ইমানদার বান্দার সম্মানের জন্য আর কী চাই! আল্লাহতায়ালা নিজে যে দায়িত্ব নিয়েছেন, সে কাজের সম্মান ও মর্যাদা কি আলোচনা-পর্যালোচনার অপেক্ষা রাখে? আল্লাহতায়ালা যাকে দিয়ে খুশি, তাকে দিয়েই এই সম্মানের কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জগতের কোনো মানুষ কখনো নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম কোনো খাবার খায়নি। আর আল্লাহর নবি দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জিত খাবার খেতেন।’ (আল-মুজামুল কাবির , হাদিস: ৬৩৩)। উল্লিখিত হাদিসে দুটি বিষয় লক্ষণীয়—এক. জগতের শ্রেষ্ঠ খাবার হলো নিজ হাতের উপার্জিত খাবার। দুই. নিজ হাতের উপার্জন খাওয়া ছিল একজন বিখ্যাত নবির জীবনব্যাপী আমল। নবিদের অন্যতম দাউদ (আ.)—যিনি নিজের হাতের উপার্জন ছাড়া আহার করতেন না। এই উপমাটি একটু মনোযোগসহ বোঝা দরকার। কেননা দাউদ (আ.) ছিলেন একই সঙ্গে নবি ও বাদশা। এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহতায়ালা দাউদকে রাজত্ব ও হেকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫১)

অতঃপর তার সে রাজত্ব বিস্তৃত ছিল সিরিয়া, ইরাক, হেজাজ, জর্ডান ও ফিলিস্তিনব্যাপী! এই বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হিসেবে ধর্মীয় বিধানে সরকারি কোষাগার থেকেও প্রয়োজনীয় জীবিকা গ্রহণের আইনসম্মত অধিকার ছিল। কিন্তু তিনি সে অধিকার গ্রহণ করেননি; বরং নিজে পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করেছেন। তিনি নরম লোহা থেকে বর্ম তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। সেই অর্থে তার সংসার চলত। (কাসাসুল কোরআন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৭১)

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি করতে এবং বুননে পরিমাণ রক্ষা করতে পার; এবং তোমরা সৎকর্ম করো। তোমরা যা কিছু কর আমি তার সম্যক দ্রষ্টা।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ১০-১১)। জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জনের বৈধ পথ খুঁজে বের করা নৈতিক দায়িত্ব। 

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

ইসলামের দৃষ্টিতে একাধিক বিয়ের বিধি-নিষেধ

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৩ পিএম
ইসলামের দৃষ্টিতে একাধিক বিয়ের বিধি-নিষেধ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বানানো বর-কনের ছবি।

একাধিক বিয়ের ব্যাপারটি ইসলামপূর্ব যুগেও পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মমতেই বৈধ বলে বিবেচিত হতো। আরব, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইরান, মিসর, ব্যাবিলন প্রভৃতি সব দেশেই এটির প্রচলন ছিল। একাধিক বিয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বর্তমান যুগেও স্বীকৃত। 

ইসলামপূর্ব যুগে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই একাধিক বিয়ের ব্যাপারটি প্রচলিত ছিল। এর প্রতি কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি ছিল না। ইহুদি, খ্রিষ্টান, আর্য, হিন্দু এবং পারসিকদের মধ্যে একাধিক বিয়ের প্রচলন ছিল। ইসলামের প্রাথমিক যুগে কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করা ছাড়া একাধিক বিয়ে বৈধ রেখেছে। পরে চারজনের বেশি করা যাবে না মর্মে আইন করেছে।

আজকের পৃথিবীতে একাধিক বিয়ের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করতে পারেনি কেউ। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতিম মেয়ের হক যথাযথভাবে পূরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্য থেকে যাদের ভালো লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এমন আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সংগত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একটিই; অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩)

ইসলাম একাধিক বিয়ের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বিধি-নিষেধও জারি করেছে। ইসলাম একই সময় চার এর অধিক স্ত্রী রাখাকে হারাম ঘোষণা করেছে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে ইনসাফ কায়েমের জন্য বিশেষ তাগিদ দিয়েছে এবং ইনসাফের পরিবর্তে জুলুম করা হলে তার জন্য শাস্তির ঘোষণা করেছে।

আলোচ্য আয়াতে একাধিক বা চারজন স্ত্রী গ্রহণ করার সুযোগ অবশ্য দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে এই চার পর্যন্ত কথাটি আরোপ করে; এর বেশিসংখ্যক স্ত্রী গ্রহণ করা যাবে না; বরং তা হবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ তাও বলা হয়েছে। 

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একাধিক বিয়ের মধ্যে ছিল বহু প্রজ্ঞা। আল্লাহর নির্দেশেই তিনি এ মহৎ কাজ সম্পাদন করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ততক্ষণ আমি কোনো নারীকে বিয়ে করিনি এবং আমার মেয়েদের অন্য কারও কাছে বিয়ে দিইনি যতক্ষণ না আমার প্রভুর পক্ষ থেকে জিবরাইল (আ.) বিয়ের আদেশ সংবলিত বার্তা না এনেছেন।’ (উয়ুনুল আসার, ২/৩০০, শরহে মাওয়াহিব, ৩/২১৯)

নবি-রাসুলরা আল্লাহর কিতাব ও মুজেজাপ্রাপ্ত হন। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তারা কোনো কাজ করেন না। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘আর তিনি (রাসুল) প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না; বরং যা কিছু বলেন তা সবই (আল্লাহর কাছ থেকে) প্রত্যাদেশ হয়।’ (সুরা নাজম, আয়াত: ৩-৪) 

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একাধিক বিয়ের অনেক কারণ রয়েছে। তা হলো, দ্বীন প্রচার-প্রসারের মাধ্যম। তিনি ছিলেন বিশ্বনবি ও রাষ্ট্রনায়ক। চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ইসলাম ধর্মকে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি আদিষ্ট হয়েছেন। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতিকে সামাল দিতে অনেক জটিল সমস্যার সম্মুখীন হন তিনি। তাঁর একাধিক বিয়ে ধর্মীয় বিধান প্রচার ও প্রসারে বিরাট ভূমিকা রাখে। একাধিক বিয়ের ফলে বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়—যা রাজনৈতিক জটিলতা দূর করে দ্বীন প্রচারের সুযোগ করে।

কোরআনে চারজন স্ত্রীর কথা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে বলে দেওয়া হয়েছ, ‘যদি তোমরা তাদের মধ্যে সমতা বিধান বা ন্যায়বিচার করতে না পার, তাহলে এক স্ত্রীর ওপরেই নির্ভর করো।’ 

এতে বোঝা যায়, একাধিক বিয়ে ঠিক তখনই বৈধ হতে পারে, যখন শরিয়ত মোতাবেক সবার সঙ্গে সমান আচরণ করা হবে; তাদের সবার অধিকার সমভাবে সংরক্ষণ করা হবে। এ ব্যাপারে অপারগ হলে এক স্ত্রীর ওপরই নির্ভর করতে হবে এবং এটাই ইসলামের নির্দেশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) একাধিক স্ত্রীর বেলায় সবার সঙ্গে পরিপূর্ণ সমতার ব্যবহার করার ব্যাপারে বিশেষভাবে তাগিদ করেছেন এবং যারা এর ব্যতিক্রম করবে, তাদের জন্য কঠিন শাস্তির সংবাদ দিয়েছেন। নিজের ব্যবহারিক জীবনেও তিনি এ ব্যাপারে সর্বোত্তম আদর্শ স্থাপন করে দেখিয়েছেন। এমনকি তিনি এমন বিষয়েও সমতাপূর্ণ ব্যবহারের আদর্শ স্থাপন করেছেন, যে ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন ছিল না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির দুই স্ত্রী রয়েছে, সে যদি তাদের মধ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পূর্ণ সমতা ও ইনসাফ করতে না পারে, তবে কিয়ামতের ময়দানে সে এমনভাবে উঠবে যে, তার শরীরের এক পার্শ্ব অবশ হয়ে থাকবে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, পৃষ্ঠা: ২৭৮)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক