ঢাকা ২৪ মাঘ ১৪৩১, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১

জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান
প্রতীকী ছবি। এআই

ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর নাজিল হওয়া প্রথম শব্দ ছিল ইকরা বা পড়ো। পড়ার মাধমে মানুষ জানতে পারে। হতে পারে বিদ্বান। জ্ঞান লাভ করতে পারে আল্লাহর অভিনব সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘পড়ো তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্তপিণ্ড থেকে। পড়ো, আর তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল। যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম দিয়ে, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’ (সুরা আলাক, ১-৫)

মুহাম্মাদ (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির পর ধীরে ধীরে পৃথিবীব্যাপী ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ে। চার খলিফার হাত ধরে অনেক দেশে ইসলামের পতাকা উড়ে। পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায়ও মুসলিমরা ব্যাপকভাবে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মুসলমানদের থেকে তৈরি হয় পৃথিবীবিখ্যাত ধর্মবেত্তা, সেনাপতি, ইতিহাসবেত্তা, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, মনীষী, জ্যোতিষীশাস্ত্রবিদ, রসায়নবিদ, পদার্থবিদসহ নানা শাখার জ্ঞানী-বিজ্ঞানী। 

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন আলি (রা.)। তিনি ছিলেন হাফেজ ও মুফাসসির। আলি (রা.) থেকেই আরব সভ্যতায় বিজ্ঞান গবেষণার সূচনা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) আলি (রা.) সম্পর্কে বলেন, ‘আমি জ্ঞানের নগরী, আর আলি সেই নগরীর দরজা।’ ইদরিস (আ.) প্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানী এবং মুহাম্মদ (সা.) শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানী। পবিত্র কোরআনের ৯৭টি সুরার ৩৫৫টি আয়াত চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট। এ ছাড়া বুখারিতে ‘তিব্বুন নববি’ শীর্ষক অধ্যায়ে ৮০টি পরিচ্ছেদ রয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইবনে সিনা, আল-রাজি, আল-হিন্দি, আত-তাবারি, ইবনে রুশদদের নাম উল্লেখযোগ্য। ইবনে সিনা চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন, অঙ্কশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যামিতি, বীজগণিত প্রভৃতি বিষয়ে ব্যাপক অবদান রাখেন। তার গ্রন্থ ও প্রবন্ধ সংখ্যা ২৪৬। 

ওষুধশাস্ত্র: চিকিৎসার পাশাপাশি ওষুধ শাস্ত্রেও মুসলিমরা ব্যাপক অবদান রাখেন। ইবনে সিনার কানুন ফিততিব্ব, আল-রাজির কিতাবুল মানসুরি, আল বেরুনির কিতাব আস সায়দালা চিকিৎসাশাস্ত্রের আকরগ্রন্থ। 

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা: মুহাম্মাদ (সা.) যুদ্ধকালে যে হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন, তার ওপর ভিত্তি করে মুসলিম শাসকগোষ্ঠী চিকিৎসা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা ও ব্যবহারিক জ্ঞানচর্চার জন্য স্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলেন। 

অস্ত্রোপচার: মুসলিম বিজ্ঞানী আল-রাজি সর্বপ্রথম অস্ত্রোপচারবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। 

গণিতশাস্ত্র: মুসলিম গণিত শাস্ত্রবিদদের মধ্যে রয়েছে আল-খারেজমি, আল-কারখি, ওমর খৈয়াম প্রমুখ। আল-খারেজমি সংখ্যাবাচক চিহ্ন সম্পর্কে ধারণ দেন এবং দূরত্ব ও নির্ণয় বিষয়ে অবদান রেখেছেন ইবনুল হাইসাম। এ ছাড়া মুসলিম বিজ্ঞানী আল-ফারাবি সমুদ্র ও সূর্যের উচ্চতাবিষয়ক যন্ত্র আবিষ্কার করেন।

পদার্থবিজ্ঞান: পদার্থবিজ্ঞানে নানামুখী অবদান রেখেছেন আল-বেরুনি, আল-খারেজমি, ইবনুল হাইসাম প্রমুখ।

রসায়ন: বিজ্ঞানের প্রাণ বলা হয় রসায়নশাস্ত্র। রসায়নশাস্ত্রের জনক জাবের ইবনে হাইয়ান। এ ছাড়া বিভিন্ন মুসলিম মনীষী ও বিজ্ঞানী ব্যাপক অবদান রাখেন এ শাস্ত্রে। এদের মধ্যে খালিদ বিন ইয়াজিদ, জাকারিয়া আল-রাজি, আল জিলকাদ প্রমুখের নাম সবার আগে আসে। 

ধাতুশাস্ত্র: মুসলিম বিজ্ঞানী ও মনীষী আবুল কাশেম আল ইরাকি প্রথম ধাতুর পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেন।

জ্যোতির্বিদ্যা: জ্যোতির্বিদ্যা হলো মহাকাশ সম্পর্কিত বিজ্ঞান। গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র ও সূর্য সম্পর্কিত আলোচনা। এ বিষয়ে মুসলিম মনীষীদের অবদান অপরিসীম। এ বিষয়ে যারা অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে আল-মনসুর, আল-মামুন, আবু-মাশার, আল-খারেজমি, আবুল-হাসান অন্যতম। 

মানচিত্রের ধারণা: বিশ্বে প্রথম মানচিত্রের ধারণা দেন মুসলিম মনীষী আল ইদরিস। পরে এর ওপরে ভিত্তি করেই বিশ্বে মানচিত্রের প্রতিকৃতি হিসেবে স্বীকৃত হয়। বর্ষপঞ্জি ও নক্ষত্র বিষয়ে প্রথমে ধারণা দেন ওমর খৈয়াম। পরে আল-বাত্তানি প্রথম চার্ট তৈরি করেন। প্রথম জ্যামিতিক গণনার সাহায্যে যেকোনো দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব নির্ণয় করেন বিজ্ঞান ও গণিত শাস্ত্রের অন্যতম মুখ ইবনুল হাইসাম।

লেখক: প্রাবন্ধিক

নিজ হাতে উপার্জনের গুরুত্ব

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৩ পিএম
নিজ হাতে উপার্জনের গুরুত্ব
প্রতীকী ছবি

প্রত্যেক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, জীবিকা উপার্জনের বৈধ কোনো পথ ও পন্থা খুঁজে বের করা। ইসলামে জীবিকা অর্জন করা মর্যাদাপূর্ণ ভার ও দায়িত্ব।  মনে রাখতে হবে, রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহতায়ালা নিয়েছেন। এরপর মা-বাবাসহ আরও যাদের মাধ্যমে বান্দা রিজিকপ্রাপ্ত হয়, তারা সবাই আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নির্বাচিত মাধ্যম ও প্রতিনিধি। একজন ইমানদার বান্দার সম্মানের জন্য আর কী চাই! আল্লাহতায়ালা নিজে যে দায়িত্ব নিয়েছেন, সে কাজের সম্মান ও মর্যাদা কি আলোচনা-পর্যালোচনার অপেক্ষা রাখে? আল্লাহতায়ালা যাকে দিয়ে খুশি, তাকে দিয়েই এই সম্মানের কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জগতের কোনো মানুষ কখনো নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম কোনো খাবার খায়নি। আর আল্লাহর নবি দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জিত খাবার খেতেন।’ (আল-মুজামুল কাবির , হাদিস: ৬৩৩)। উল্লিখিত হাদিসে দুটি বিষয় লক্ষণীয়—এক. জগতের শ্রেষ্ঠ খাবার হলো নিজ হাতের উপার্জিত খাবার। দুই. নিজ হাতের উপার্জন খাওয়া ছিল একজন বিখ্যাত নবির জীবনব্যাপী আমল। নবিদের অন্যতম দাউদ (আ.)—যিনি নিজের হাতের উপার্জন ছাড়া আহার করতেন না। এই উপমাটি একটু মনোযোগসহ বোঝা দরকার। কেননা দাউদ (আ.) ছিলেন একই সঙ্গে নবি ও বাদশা। এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহতায়ালা দাউদকে রাজত্ব ও হেকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫১)

অতঃপর তার সে রাজত্ব বিস্তৃত ছিল সিরিয়া, ইরাক, হেজাজ, জর্ডান ও ফিলিস্তিনব্যাপী! এই বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হিসেবে ধর্মীয় বিধানে সরকারি কোষাগার থেকেও প্রয়োজনীয় জীবিকা গ্রহণের আইনসম্মত অধিকার ছিল। কিন্তু তিনি সে অধিকার গ্রহণ করেননি; বরং নিজে পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করেছেন। তিনি নরম লোহা থেকে বর্ম তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। সেই অর্থে তার সংসার চলত। (কাসাসুল কোরআন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৭১)

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি করতে এবং বুননে পরিমাণ রক্ষা করতে পার; এবং তোমরা সৎকর্ম করো। তোমরা যা কিছু কর আমি তার সম্যক দ্রষ্টা।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ১০-১১)। জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জনের বৈধ পথ খুঁজে বের করা নৈতিক দায়িত্ব। 

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

ইসলামের দৃষ্টিতে একাধিক বিয়ের বিধি-নিষেধ

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৩ পিএম
ইসলামের দৃষ্টিতে একাধিক বিয়ের বিধি-নিষেধ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বানানো বর-কনের ছবি।

একাধিক বিয়ের ব্যাপারটি ইসলামপূর্ব যুগেও পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মমতেই বৈধ বলে বিবেচিত হতো। আরব, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইরান, মিসর, ব্যাবিলন প্রভৃতি সব দেশেই এটির প্রচলন ছিল। একাধিক বিয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বর্তমান যুগেও স্বীকৃত। 

ইসলামপূর্ব যুগে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই একাধিক বিয়ের ব্যাপারটি প্রচলিত ছিল। এর প্রতি কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি ছিল না। ইহুদি, খ্রিষ্টান, আর্য, হিন্দু এবং পারসিকদের মধ্যে একাধিক বিয়ের প্রচলন ছিল। ইসলামের প্রাথমিক যুগে কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করা ছাড়া একাধিক বিয়ে বৈধ রেখেছে। পরে চারজনের বেশি করা যাবে না মর্মে আইন করেছে।

আজকের পৃথিবীতে একাধিক বিয়ের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করতে পারেনি কেউ। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতিম মেয়ের হক যথাযথভাবে পূরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্য থেকে যাদের ভালো লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এমন আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সংগত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একটিই; অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩)

ইসলাম একাধিক বিয়ের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বিধি-নিষেধও জারি করেছে। ইসলাম একই সময় চার এর অধিক স্ত্রী রাখাকে হারাম ঘোষণা করেছে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে ইনসাফ কায়েমের জন্য বিশেষ তাগিদ দিয়েছে এবং ইনসাফের পরিবর্তে জুলুম করা হলে তার জন্য শাস্তির ঘোষণা করেছে।

আলোচ্য আয়াতে একাধিক বা চারজন স্ত্রী গ্রহণ করার সুযোগ অবশ্য দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে এই চার পর্যন্ত কথাটি আরোপ করে; এর বেশিসংখ্যক স্ত্রী গ্রহণ করা যাবে না; বরং তা হবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ তাও বলা হয়েছে। 

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একাধিক বিয়ের মধ্যে ছিল বহু প্রজ্ঞা। আল্লাহর নির্দেশেই তিনি এ মহৎ কাজ সম্পাদন করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ততক্ষণ আমি কোনো নারীকে বিয়ে করিনি এবং আমার মেয়েদের অন্য কারও কাছে বিয়ে দিইনি যতক্ষণ না আমার প্রভুর পক্ষ থেকে জিবরাইল (আ.) বিয়ের আদেশ সংবলিত বার্তা না এনেছেন।’ (উয়ুনুল আসার, ২/৩০০, শরহে মাওয়াহিব, ৩/২১৯)

নবি-রাসুলরা আল্লাহর কিতাব ও মুজেজাপ্রাপ্ত হন। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তারা কোনো কাজ করেন না। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘আর তিনি (রাসুল) প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না; বরং যা কিছু বলেন তা সবই (আল্লাহর কাছ থেকে) প্রত্যাদেশ হয়।’ (সুরা নাজম, আয়াত: ৩-৪) 

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একাধিক বিয়ের অনেক কারণ রয়েছে। তা হলো, দ্বীন প্রচার-প্রসারের মাধ্যম। তিনি ছিলেন বিশ্বনবি ও রাষ্ট্রনায়ক। চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ইসলাম ধর্মকে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি আদিষ্ট হয়েছেন। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতিকে সামাল দিতে অনেক জটিল সমস্যার সম্মুখীন হন তিনি। তাঁর একাধিক বিয়ে ধর্মীয় বিধান প্রচার ও প্রসারে বিরাট ভূমিকা রাখে। একাধিক বিয়ের ফলে বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়—যা রাজনৈতিক জটিলতা দূর করে দ্বীন প্রচারের সুযোগ করে।

কোরআনে চারজন স্ত্রীর কথা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে বলে দেওয়া হয়েছ, ‘যদি তোমরা তাদের মধ্যে সমতা বিধান বা ন্যায়বিচার করতে না পার, তাহলে এক স্ত্রীর ওপরেই নির্ভর করো।’ 

এতে বোঝা যায়, একাধিক বিয়ে ঠিক তখনই বৈধ হতে পারে, যখন শরিয়ত মোতাবেক সবার সঙ্গে সমান আচরণ করা হবে; তাদের সবার অধিকার সমভাবে সংরক্ষণ করা হবে। এ ব্যাপারে অপারগ হলে এক স্ত্রীর ওপরই নির্ভর করতে হবে এবং এটাই ইসলামের নির্দেশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) একাধিক স্ত্রীর বেলায় সবার সঙ্গে পরিপূর্ণ সমতার ব্যবহার করার ব্যাপারে বিশেষভাবে তাগিদ করেছেন এবং যারা এর ব্যতিক্রম করবে, তাদের জন্য কঠিন শাস্তির সংবাদ দিয়েছেন। নিজের ব্যবহারিক জীবনেও তিনি এ ব্যাপারে সর্বোত্তম আদর্শ স্থাপন করে দেখিয়েছেন। এমনকি তিনি এমন বিষয়েও সমতাপূর্ণ ব্যবহারের আদর্শ স্থাপন করেছেন, যে ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন ছিল না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির দুই স্ত্রী রয়েছে, সে যদি তাদের মধ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পূর্ণ সমতা ও ইনসাফ করতে না পারে, তবে কিয়ামতের ময়দানে সে এমনভাবে উঠবে যে, তার শরীরের এক পার্শ্ব অবশ হয়ে থাকবে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, পৃষ্ঠা: ২৭৮)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

 

প্রশান্তিময় ঘুমের জন্য মহানবির (সা.) শিক্ষা

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০৭ এএম
প্রশান্তিময় ঘুমের জন্য মহানবির (সা.) শিক্ষা
ঘুমন্ত কিশোরের কার্টুন ছবি। ইন্টারনেট

এই যুগে মানসিক ও শারীরিক রোগের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এর একটি প্রধান কারণ, সঠিক সময়ে এবং শান্তিপূর্ণ ঘুমের অভাব—যা ধীরে ধীরে শরীরে বিভিন্ন জটিল রোগের জন্ম দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রচুর কাজ করতেন এবং ঘুমাতেন খুব অল্প সময়। তবুও তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে সক্রিয়, কর্মঠ এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। পৃথিবীর সব মানুষই শান্তির ঘুম চান। কীভাবে শান্তির ঘুম হতে পারে আমাদের, এখানে সে আলোচনা করা হলো—

ঘুমের সঠিক সময়
শান্তিপূর্ণ ঘুমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সঠিক সময়ে ঘুম। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের শরীরে একটি ‘জৈবিক ঘড়ি’ রয়েছে—যা দিনের আলো ও রাতের অন্ধকারের ভিত্তিতে আমাদের শরীরের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এটি আমাদের শরীরকে সঠিক সময়ে ঘুমাতে, জাগতে এবং কাজের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। যখন আমরা নতুন অঞ্চল বা দেশে যাই, তখন এই জৈবিক ঘড়ি আমাদের শরীরকে স্থানীয় সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা ‘HNF4A প্রোটিন’ তৈরি করে। এই প্রোটিন রাতে কম সক্রিয় থাকে এবং দিনে বেশি। যেমন, সকালের নাশতার পর আমরা কর্মচঞ্চল হই এবং রাতের খাবারের পর ক্লান্তি অনুভব করি—এটি এই জৈবিক ঘড়ির ফল।

তবে যদি এই প্রোটিনে কোনো বিঘ্ন ঘটে, তাহলে জৈবিক ঘড়ির কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়—যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুমানো, রাতভর জেগে থাকা, কিংবা এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে দ্রুত ভ্রমণের কারণে এই ঘড়ির কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। এর ফলে মানুষের মানসিকতা, চিন্তাধারা, আচরণ এবং মনস্তত্ত্বে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ করো, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন; আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই সরল দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।’ (সুরা রুম, আয়াত: ৩০)

রাতের ঘুম এবং স্বাস্থ্যের প্রভাব
রাতে দীর্ঘ সময় কাজ করা ব্যক্তিদের প্রায়শই মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ, রাতের বেলায় শরীরের জৈবিক ঘড়ি ঘুমের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে এবং তখন কর্মক্ষমতা কমে যায়। যারা রাতে ডিউটি করেন, তারা দিনের বেলা ঘুমানোর চেষ্টা করলেও বাইরের আলো শরীরকে জাগ্রত রাখার সংকেত দেয়। ফলে তাদের ঘুম ঠিকমতো হয় না।
গবেষণা বলছে, রাতের শিফটে কাজ করা ৯৭ শতাংশ কর্মী কয়েক বছর কাজ করার পরও তাদের কাজের রুটিনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হন। এর ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পেলে কর্মক্ষমতা ও শক্তি ফিরে আসে—যা আমাদের চঞ্চল ও সক্রিয় করে তোলে। কিন্তু যখন রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে আসে, তখন শরীরে অলসতা, ক্লান্তি এবং ঘুমের ভাব সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে আমরা ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এলে আমাদের জৈবিক ঘড়ি শরীরকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করে। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ করতে পার। আর দিনকে তোমাদের দেখার উপযোগী করে বানিয়েছেন। নিশ্চয়ই এতে সেই সব লোকের জন্য বহু নিদর্শন আছে, যারা লক্ষ্য করে শোনে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৬৭)

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই রাতকে তোমাদের জন্য করেছেন পোশাক-স্বরূপ এবং ঘুমকে শান্তিময়। আর দিনকে ফের উঠে দাঁড়ানোর মাধ্যম বানিয়েছেন।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৪৭)

আলোর সঙ্গে জৈবিক ঘড়ির সম্পর্ক
জৈবিক ঘড়ি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া—যা দিন ও রাতের আলো-অন্ধকারের ভিত্তিতে কাজ করে। যখন সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসে, এই ঘড়ি শরীরকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করে। রাতে যথাসময়ে ঘুমানো এবং সকালে যথাসময়ে জেগে ওঠা এই জৈবিক ঘড়ি ঠিক রাখার মূল হাতিয়ার। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তার অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৭৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার নামাজের আগে ঘুমানো এবং নামাজের পরে (অপ্রয়োজনীয়) কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৮)। নবিজি (সা.)-এর এই সুন্নাহ আমাদের শিক্ষা দেয়, এশার নামাজের পর অনর্থক জাগ্রত থাকার পরিবর্তে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া উচিত। এশার নামাজ দিনের শেষ ইবাদত, আর এ সময় দিনের কাজ-কর্ম শেষ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেওয়া শ্রেয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর ইসলামি আইন গবেষণা বিভাগ, আল-জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া চট্টগ্রাম

ইসলামি প্রকাশনা জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছি

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৯ পিএম
ইসলামি প্রকাশনা জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছি
অর্পণ প্রকাশনের প্রকাশক তকি হাসানের ছবি। সংগৃহীত

মাওলানা তকি হাসান—অর্পণ প্রকাশনের প্রকাশক। জন্ম ঢাকায়। গৃহশিক্ষকের কাছে আরবি প্রথম পাঠের মাধ্যমে পড়াশোনার শুরু। দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পড়েছেন ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসায়। তিনি কেন প্রকাশক হলেন, কোন ধরনের বই প্রকাশে আগ্রহী তিনি, মানসম্মত বই প্রকাশে তার ভূমিকা, লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রায়হান রাশেদ

খবরের কাগজ: আপনি প্রকাশক হলেন কেন?

তকি হাসান: বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই মূলত প্রকাশনা জগতে আসা। এক সময় প্রচুর বই পড়তাম। তখন থেকেই বইয়ের জগৎ নিয়ে আমার আলাদা কৌতূহল ছিল। লেখকদের অতিমানবীয় শক্তির অধিকারী মনে হতো। যারা লেখালেখির মাধ্যমে মানুষের জ্ঞানের জগৎকে প্রসারিত করেন, বিশুদ্ধ বিনোদন উপহার দেন, সেসব লেখকের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, সেই চিন্তা থেকেও প্রকাশনা জগতে কাজ করার অনুপ্রেরণা পাই। 
ছাত্রজীবন থেকেই কারও অধীনে চাকরি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ব্যবসার ইচ্ছা ছিল। ব্যবসা যেহেতু করব, ভালো জিনিসের ব্যবসা করাই শ্রেয়। বইয়ের ব্যবসাকে আমার জ্ঞানের সওদাগরি মনে হয়। আমার লাইফস্টাইলের সঙ্গেও এটাকে জুতসই মনে হয়েছে বিধায় আমি প্রকাশনা জগতে নিজেকে সমর্পণ করেছি। 

খবরের কাগজ: আপনার প্রকাশনী সম্পর্কে কিছু বলুন। কী ধরনের বই প্রকাশে আপনারা আগ্রহী? 

তকি হাসান: মাকতাবাতুল ইসলাম ও অর্পণ প্রকাশনের প্রতিষ্ঠাকালে আমাদের স্বপ্ন ছিল, বিশুদ্ধ জ্ঞান সর্বাধিক বিশুদ্ধভাবে উপস্থাপন করব আভিজাত্যের মোড়কে। একটা বই প্রস্তুতকালে আমাদের চিন্তা থাকে বইটির কনটেন্ট যেন বিশুদ্ধ হয়, ভাষা যেন নির্ভুল থাকে এবং সর্বোপরি বইটির প্রচ্ছদ, কাগজ, ছাপা ও বাঁধাই এতটাই অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন হয়, পাঠক দেখামাত্রই যেন বইটি হাতে তুলে নেন। আমাদের কাজ যেন পাঠককে মুগ্ধ করে। 
আমরা মূলত আকাবির-আসলাফদের লিখিত ও অনূদিত বই প্রকাশ করতেই বেশি আগ্রহ বোধ করি। ইসলামি ইতিহাসের মহানায়কদের জীবনী, জীবনঘনিষ্ঠ মাসয়ালা-মাসায়েল, মোটিভেশনাল বক্তব্য এবং ইসলামি শিশু-সাহিত্যও আমাদের প্রকাশনার বিষয়বস্তু। 

খবরের কাগজ: মানসম্মত বই প্রকাশে আপনাদের ভূমিকা কেমন? 

তকি হাসান: আমি আগেই বলেছি আমাদের স্বপ্ন হল, আভিজাত্যের মোড়কে বিশুদ্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া। বইকে মানসম্পন্ন করার জন্য দুইটি বিষয় লাগে—১. কনটেন্ট নির্ভুল ও বিশুদ্ধ হওয়া। ২. প্রচ্ছদ, কাগজ ছাপা ও বাঁধাই মানসম্মত হওয়া। আমরা দুটো বিষয়েই সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। আমাদের বই হাতে নিয়ে পাঠকমাত্রই সেটা অনুধাবন করতে পারেন। 
ইসলামি প্রকাশনা জগতে ৮০ গ্রাম ক্রিম কালার অফসেট কাগজে আমরাই প্রথম ইসলামি বই প্রকাশ করি। যখন বাংলাদেশেই ক্রিম কালার কাগজ উৎপাদন হতো না। আমরা মিশরীয় শামওয়া কাগজে অনুপ্রাণিত হয়ে অর্ধশতাধিক কাগজের দোকান ঘুরে ইন্দোনেশিয়ান একটা কাগজ পেয়েছিলাম, যেটা মিশরীয় শামওয়া কাগজের কাছাকাছি। সেই কাগজে বই ছাপা ছিল ইসলামি প্রকাশনা জগতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা। আপনি লক্ষ্য করবেন, এখন প্রায় ৯০ ভাগ ইসলামি সৃজনশীল বই ক্রিম কালার কাগজে ছাপা হচ্ছে, যার সূচনা আমরা করেছিলাম। 

আরও পড়ুন: বইয়ের মাধ্যমে ইসলামের আদর্শ মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই

খবরের কাগজ: ইসলামি বইয়ের জাগরণের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে? 

তকি হাসান: ইসলামি বইয়ের জাগরণের ক্ষেত্রে আমার কাছে যে পদক্ষেপটা জরুরি মনে হয় সেটা হলো, জনসাধারণের মাঝে দাওয়াতের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পরিচালনা করে মানুষের মনে দ্বীনি সচেতনতা তৈরি করা। দ্বীনি সচেতনতা তৈরি হলে ইসলামকে জানার আগ্রহ তৈরি হবে। সেই আগ্রহ থেকেই নতুন নতুন পাঠক সৃষ্টি হবে। নতুন পাঠকরাই ইসলামি বইয়ের জাগরণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন ইনশাআল্লাহ। 

খবরের কাগজ: লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

তকি হাসান: একটি প্রকাশনী দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার জন্য আমরা মনে করি, প্রকাশকের সঙ্গে লেখকের এবং লেখকের সঙ্গে প্রকাশকের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। লেখকরা প্রকাশনা জগতে ফুয়েলের কাজ করেন। লেখকরা আমাদের কাছে অত্যন্ত সম্মানীয়। লেখকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা আমাদের অন্যতম একটি কর্তব্য।

 

কারবালার সঠিক ইতিহাস জানতে পড়ুন ‘কারবালার প্রকৃত ইতিহাস’

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৭ এএম
আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০০ এএম
কারবালার সঠিক ইতিহাস জানতে পড়ুন ‘কারবালার প্রকৃত ইতিহাস’
কারবালার প্রকৃত ইতিহাস বইয়ের প্রচ্ছদ। সংগৃহীত

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নয়নমণি, কলিজার টুকরা, জান্নাতি যুবকদের সরদার হুসাইন (রা.)। তার প্রতি ভালোবাসা রাখা মুসলমানদের ইমানি দায়িত্ব। কিন্তু এই হুসাইন (রা.)-কেই নববি আদর্শ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে মুসলিম নামধারী একদল পাপিষ্ঠের হাতে—চোখের সামনে আপন পরিবারের নির্মম মৃত্যু দেখে, অদূরে ফোরাতের কুলকুল জলধারা থাকার পরও ছাতিফাটা তৃষ্ণা নিয়ে, জন্মভূমি থেকে বহু দূরে কারবালা প্রান্তরে। 

জগতের জানা ইতিহাসে কারবালা একটি বিয়োগান্ত ঘটনা। মুসলিম জাতির ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। এটি কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড বা আত্মত্যাগের আখ্যান নয়—এর বাস্তবতা এত মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক, যা পৃথিবীর সমস্ত নৃশংসতা ও পাশবিকতাকে হার মানায়। ফলে হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনা মুসলিমদের হৃদয়ে বেদনার রক্তক্ষরণ ঘটায়। কিন্তু এ কারবালার প্রকৃত ইতিহাস, সঠিক কাহিনি, কাদের দ্বারা এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, কেন ঘটেছিল, কী ষড়যন্ত্রের কবলে পড়তে হয়েছিল মুসলিমদের—তা নিয়ে বাংলাভাষী মানুষের কাছে নানা কল্পকাহিনি ও বানোয়াট গল্প রয়েছে। কারবালার প্রকৃত ইতিহাস জানার অন্যতম উৎকৃষ্ট বই কারবালার প্রকৃত ইতিহাস। 

কারবালা নিয়ে এ পর্যন্ত কম লেখাজোখা হয়নি। প্রায় সব ভাষায় একে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে অসংখ্য বইপুস্তক। কিন্তু বেশির ভাগ বইপুস্তকেই শিক্ষিত ও সাধারণ শ্রেণির পাঠোপযোগিতার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়নি। ঘটনার পরম্পরা এবং বর্ণনার শুদ্ধাশুদ্ধি নিয়েও করা হয়নি যাচাই-বাছাই। এ বইয়ে ঠিক এ জায়গাটিতে বিশেষ নজর দিয়েছেন লেখক। সচেতনভাবে দুর্বল ও অসমর্থিত বর্ণনা এড়িয়ে গেছেন। 

কারবালার ঘটনাকে উপজীব্য করে বিভিন্ন ভাষায় যেসব বই লেখা হয়েছে, এগুলোর কোনোটা বেশ দীর্ঘ, কোনোটা খুব সংক্ষিপ্ত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বেশির ভাগ বইপুস্তকেই সঠিক বর্ণনা ও নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রের তোয়াক্কা করা হয়নি। এ বইয়ের লেখক সঠিক ও সত্য ইতিহাসের আলোকে বইটি লিখেছেন। 

বইটি মুফতি মুহাম্মাদ শফি (রহ.)-এর শহিদে কারবালার অনুবাদ। এতে তুলে ধরা হয়েছে কারবালার প্রকৃত ইতিহাস ও নির্ভরযোগ্য ঘটনাবলি। সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বানোয়াট গল্প-কাহিনি ও দুর্বল-অসমর্থিত বর্ণনা। সংক্ষিপ্ত পরিসরে আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় উঠে এসেছে কারবালার আগাগোড়া বিবরণ। 

বইটি অনুবাদ করেছেন মুজিব হাসান। বইটি প্রকাশ করেছে সমকালীন প্রকাশন। ১১২ পৃষ্ঠার বইটির মুদ্রিত মূল্য ১৮০ টাকা। দেশের অভিজাত সব লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন অনলাইন বুকশপে বইটি পাওয়া যায়। সরাসরি সমকালীন প্রকাশন থেকে বইটি কিনতে ভিজিট করুন ফেসবুক পেজে

বই: কারবালার প্রকৃত ইতিহাস
লেখক: মুফতি মুহাম্মাদ শফি (রহ.)
অনুবাদক: মুজিব হাসান
প্রকাশক: সমকালীন প্রকাশন 
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১১২
মুদ্রিত মূল্য: ১৮০ টাকা
মোবাইল: ০১৪০৯-৮০০৯০০

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক