
আল্লাহ সবচেয়ে বেশি দয়ালু। বান্দাকে আল্লাহর চেয়ে বেশি কেউ ভালোবাসেন না। মা সন্তানকে যতটুকু ভালোবাসেন। আল্লাহ তার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মা তার সন্তানের ওপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার ওপর তদাপেক্ষা অধিক দয়ালু।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৯৯৯)
বস্তুত আল্লাহর নেয়ামতের চাদরে আবৃত মানুষ। এত এত রহমত আল্লাহর, যা গুনে শেষ করা যাবে না। কোরআনে আছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা করো, তবে এর ইয়ত্তা পাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ১৮)
আল্লাহর প্রিয় হওয়ার, তাঁকে কাছে পাওয়ার অনেক আমল রয়েছে। এখানে কয়েকটি আমল তুলে ধরা হলো—
ইসলামে আত্মসমর্পণ
আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম। ইসলাম স্বভাবজাত সহজ পালনীয় ধর্ম। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত—এই পাঁচটির সব কয়টি সবার জন্যই ফরজ; ব্যাপারটি এমন নয়। যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই, তার জন্য জাকাত ফরজ নয়। যার হজের সামর্থ্য নেই, তার জন্য হজ ফরজ নয়। কিন্তু সামর্থ্য থাকলে করতে হবে। এগুলো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে আমল করতে হবে। কোনো একটাকে অস্বীকার করা যাবে না। অস্বীকার করলে ইমান থাকবে না। ইসলামে সমর্পণের অর্থই হলো এই পাঁচটিকে হৃদয়ে ধারণ করে আমল করা।
হালাল-হারাম মেনে চলা
আমাদের জীবনে যা কিছু হারাম—তা পরিহার করতে হবে। ধরা যাক এক ব্যক্তি নামাজ পড়ে, রোজাও রাখে, কিন্তু তার উপার্জন হারাম। অবৈধ্য পথে সে উপার্জন করে। তা হলে ওই নামাজ, রোজায় কোনো কাজ হবে না।
আমরা হারাম উর্পাজনের পাহাড়ে বসে আল্লাহকে পেতে চাই। যেটা আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ সবচেয়ে পবিত্র। তাকে আপনি অপবিত্র হারাম উপার্জনের মাধ্যমে পেতে চাইছেন! এ তো স্রেফ বোকামি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া নামাজ কবুল করেন না। আত্মসাতের সম্পদ থেকে দান করলে কবুল করেন না।’ (মুসলিম, হাদিস ২২৪)
জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন শরীর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম দ্বারা বর্ধিত। জাহান্নামই তার উপযুক্ত জায়গা।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৪৪৪১)
আরও পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব
যারা হারাম পন্থায় উপার্জন করে, মহান আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও সারা শরীর ধূলিমলিন। সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার প্রভু, হে আমার প্রতিপালক, অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এ অবস্থায় তার দোয়া কীভাবে কবুল হতে পারে? (তিরমিজি, হাদিস: ২৯৮৯)
সুদ থেকে সাবধান
সুদ হারাম। সুদখোরদের সম্পর্কে হাদিসে আছে, ‘যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, যে সাক্ষী থাকে এবং যে সুদের হিসাব-নিকাশ বা সুদের চুক্তিপত্র ইত্যাদি লিখে দেয়, সবার প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) লানত করেছেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১২০৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুদ সত্তর প্রকার পাপের সমষ্টি। তার মাঝে সবচেয়ে নিম্নতম হলো আপন মায়ের সঙ্গে ব্যভিচার করার সমতুল্য।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস: ১৫৩৪৫)। সুদ কখনোই সম্পদ বৃদ্ধি করে না। সম্পদে বরকত আনে না। জাকাত সম্পদ বৃদ্ধি করে।
ব্যভিচার থেকে দূরে থাকা
সমাজে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়া একটি পাপাচার হলো ব্যভিচার। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ৩২)
লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক