ঢাকা ৭ চৈত্র ১৪৩১, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
English
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

নিজ হাতে উপার্জনের গুরুত্ব

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
নিজ হাতে উপার্জনের গুরুত্ব
প্রতীকী ছবি

প্রত্যেক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, জীবিকা উপার্জনের বৈধ কোনো পথ ও পন্থা খুঁজে বের করা। ইসলামে জীবিকা অর্জন করা মর্যাদাপূর্ণ ভার ও দায়িত্ব।  মনে রাখতে হবে, রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহতায়ালা নিয়েছেন। এরপর মা-বাবাসহ আরও যাদের মাধ্যমে বান্দা রিজিকপ্রাপ্ত হয়, তারা সবাই আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নির্বাচিত মাধ্যম ও প্রতিনিধি। একজন ইমানদার বান্দার সম্মানের জন্য আর কী চাই! আল্লাহতায়ালা নিজে যে দায়িত্ব নিয়েছেন, সে কাজের সম্মান ও মর্যাদা কি আলোচনা-পর্যালোচনার অপেক্ষা রাখে? আল্লাহতায়ালা যাকে দিয়ে খুশি, তাকে দিয়েই এই সম্মানের কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জগতের কোনো মানুষ কখনো নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম কোনো খাবার খায়নি। আর আল্লাহর নবি দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জিত খাবার খেতেন।’ (আল-মুজামুল কাবির , হাদিস: ৬৩৩)। উল্লিখিত হাদিসে দুটি বিষয় লক্ষণীয়—এক. জগতের শ্রেষ্ঠ খাবার হলো নিজ হাতের উপার্জিত খাবার। দুই. নিজ হাতের উপার্জন খাওয়া ছিল একজন বিখ্যাত নবির জীবনব্যাপী আমল। নবিদের অন্যতম দাউদ (আ.)—যিনি নিজের হাতের উপার্জন ছাড়া আহার করতেন না। এই উপমাটি একটু মনোযোগসহ বোঝা দরকার। কেননা দাউদ (আ.) ছিলেন একই সঙ্গে নবি ও বাদশা। এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহতায়ালা দাউদকে রাজত্ব ও হেকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫১)

অতঃপর তার সে রাজত্ব বিস্তৃত ছিল সিরিয়া, ইরাক, হেজাজ, জর্ডান ও ফিলিস্তিনব্যাপী! এই বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হিসেবে ধর্মীয় বিধানে সরকারি কোষাগার থেকেও প্রয়োজনীয় জীবিকা গ্রহণের আইনসম্মত অধিকার ছিল। কিন্তু তিনি সে অধিকার গ্রহণ করেননি; বরং নিজে পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করেছেন। তিনি নরম লোহা থেকে বর্ম তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। সেই অর্থে তার সংসার চলত। (কাসাসুল কোরআন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৭১)

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি করতে এবং বুননে পরিমাণ রক্ষা করতে পার; এবং তোমরা সৎকর্ম করো। তোমরা যা কিছু কর আমি তার সম্যক দ্রষ্টা।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ১০-১১)। জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জনের বৈধ পথ খুঁজে বের করা নৈতিক দায়িত্ব। 

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল কদর

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল কদর
প্রতীকী ছবি

যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে কদরের রাতে দণ্ডায়মান হয়, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৯০১) আল্লাহতায়ালা বলেন,  রমজান মাস হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে আল-কোরআন, যা মানবজাতির জন্য হেদায়াত ও সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং ভালো-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যকারী। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫) 


মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হওয়ার কারণে অন্য সব মাস ও দিনের চেয়ে রমজান মাস বেশি ফজিলতময় হয়েছে। আর রমজানের রাতগুলোর মধ্যে কোরআন নাজিলের রাত— লাইলাতুল কদর সবচেয়ে তাৎপর্যমণ্ডিত একটি রাত। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন,  আমি একে নাজিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জান কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সুরা কদর, আয়াত : ১-৩) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরকুল শিরোমণি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এ রাতের ইবাদত অন্য হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম’। (তানবিরুল মিকবাস মিন তাফসিরে ইবনে আব্বাস, পৃষ্ঠা ৬৫৪) 


তাবেঈ মুজাহিদ (রহ.) বলেন, এর ভাবার্থ হলো, ‘এ রাতের ইবাদত, তেলাওয়াত, কিয়াম ও অন্যান্য আমল লাইলাতুল কদর ছাড়া হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও উত্তম।’ মুফাসসিররা এমনই ব্যাখ্যা করেছেন। আর এটিই সঠিক ব্যাখ্যা। (ইবনে কাসির, ১৮/২২৩) 


সুরা কদরের শানে নুজুল সম্পর্কে ইবনে কাসির (রা.) বলেন, আলী ইবনে উরওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বনি ইসরাঈলের চারজন আবেদ সম্পর্কে বলেছিলেন, তারা আশি বছর ধরে অনবরত আল্লাহর ইবাদত করছিল। এর মধ্যে এক মুহূর্তের জন্যও ইবাদত থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হননি। বিখ্যাত এ চারজন আবেদ হলো- আল্লাহর নবি জাকারিয়া (আ.), আইউব (আ.), হাজকিল ইবনে আজূজ (আ.) এবং ইউশা ইবনে নূহ (আ.)। এমনটি শুনে সাহাবিরা রীতিমতো অবাক হলেন। এ সময় জিবরাঈল (আ.) এসে বললেন, ‘হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মতরা এ কথা শুনে অবাক হচ্ছে? তাদের জন্য আল্লাহতায়ালা এর চেয়ে উত্তম কিছু রেখেছেন। এর পর সুরা কদর পাঠ করা হয়। (ইবনে কাসির, ১৮/২২৩)


যে রাতটি লাইলাতুল কদর হবে, সেটি বোঝার কিছু আলামত হাদিসে বর্ণিত আছে। সেগুলো হলো—১. এ রাতটি রমজান মাসে নিহিত। ২. এ রাতটি রমজানের শেষ দশকে রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজানের শেষ দশ দিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ করো। (বুখারি) ৩. এটি রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ করো। (তিরমিজি, ৭৯২) ৪. এ রাত রমজানের শেষ সাত দিনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ৫. রমজানের ২৭ রজনী লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। উবাই ইবনে কাব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যতদূর জানি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যে রজনীকে ‘কদরের রাত’ হিসেবে কিয়ামুল্লাইল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা হলো রমজানের ২৭তম রাত। (মুসলিম) 


৬. কদরের রাত হওয়ার ব্যাপারে সম্ভাবনার দিক থেকে পরবর্তী দ্বিতীয় সম্ভাবনা ২৫ তারিখ, তৃতীয় ২৯, চতুর্থ ২১ এবং পঞ্চম হলো ২৩ তারিখের রজনী। ৭. সর্বশেষ আরেকটি মত হলো, মহিমান্বিত এ রজনীটি স্থানান্তরশীল। অর্থাৎ প্রতিবছর একই তারিখে বা একই রজনীতে তা হয় না এবং শুধু ২৭ তারিখেই এ রাতটি আসবে তা নির্ধারিত নয়। আল্লাহর হেকমত ও তাঁর ইচ্ছায় কোনো বছর তা ২৫ তারিখে, কোনো বছর ২৩ তারিখে, কোনো বছর ২১ তারিখে, আবার কোনো বছর ২৯ তারিখেও হয়ে থাকে। 


৮. রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না এবং নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না। ৯. মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে এবং সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে। ১০. কোনো ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন। ১১. ওই রাতে বৃষ্টি হতে পারে। ১২. সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে, যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো। (বুখারি ও মুসলিম)


এ মহা সৌভাগ্যের রাতটি কীভাবে কাটাতে হবে, কীভাবে পাব, কীভাবে সেটাকে আমরা অধিকার করব তার পথ রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এঁকে দেখিয়েছেন। তিনি রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য ইতেকাফ করেছেন। ইতেকাফ করে তিনি উম্মতকে শিখিয়েছেন কীভাবে সহজে নিশ্চিন্তে লাইলাতুল কদর অর্জন করতে হয়। তুমি যদি লাইলাতুল কদরকে দখল করতে চাও, অধিকার করতে চাও, তার সমূহ কল্যাণ তোমার জীবনে তুলে আনতে চাও, তা হলে সহজ পথ হচ্ছে লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্যে তুমি মসজিদে এসে ইতেকাফ করো। এর ভেতর দিয়ে তিরাশি বছর একাধারে ইবাদত করলে যে পুণ্য অর্জিত হবে এক রাতের ভেতর দিয়েই তা অর্জিত হবে।

 

লেখক: খতিব, বঙ্গভবন জামে মসজিদ

ইতেকাফ কেন করবেন এবং কীভাবে করবেন?

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ পিএম
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম
ইতেকাফ কেন করবেন এবং কীভাবে করবেন?
মসজিদের ইতেকাফ অবস্থায় কোরআন পড়ার ছবি

পবিত্র রমজান মাসে বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে ইতেকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রমজান মাসের শেষ দশ দিন কিংবা গোটা রমজান মাসই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার মানসিকতা নিয়ে পুরুষের জন্য মসজিদে এবং নারীর জন্য নিজ নিজ ঘরে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে ইবাদত করাই হলো ইতেকাফ। এই ইবাদত কেবল পবিত্র রমজান মাসের সঙ্গেই বিশেষভাবে সম্পর্কিত। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতেকাফ পালন করা সুন্নত।

 
ইতেকাফ কী: ইতেকাফ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশক বা অন্য কোনো সময় জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহকে খুশি করার নিয়তে পুরুষের জন্য মসজিদে এবং নারীদের জন্য ঘরে নামাজের নির্দিষ্ট একটি স্থানে ইবাদত করার উদ্দেশ্যে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতেকাফ বলে। রমজান মাস ছাড়া অন্য যেকোনো সময়ই আমলটি করা যায়। তবে রমজান মাসের সঙ্গে এর বিশেষ একটি সম্পর্ক রয়েছে। 
ইতেকাফের উদ্দেশ্য: আত্মশুদ্ধির চর্চা ও আত্মার পবিত্রতা অর্জন করাসহ ইতেকাফ পালন করার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এ ছাড়া রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করার আরও বিশেষ একটি উদ্দেশ্য রয়েছে তা হলো, শবে কদরের তালাশ করা। এ সময় ইতেকাফ করার দ্বারা নিশ্চিতভাবে মহিমান্বিত এ রাতে আমলের সুযোগ লাভ করা যায়। 


কোরআন ও হাদিসে ইতেকাফ: পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, আর তোমরা মসজিদে ইতেকাফকালে স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করো না। (সুরা বাকারা, ১৮৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতেকাফকে খুব গুরুত্ব দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানের শেষ দশক (মসজিদে) ইতেকাফ করতেন। এ আমল তার ইন্তেকাল পর্যন্ত জারি ছিল। (বুখারি ও মুসলিম)

 
ইতেকাফ আদায় সহীহ হওয়ার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে—১. পুরুষের মসজিদে এবং নারীদের জন্য ঘরে অবস্থান করা। ২. ইতেকাফের নিয়ত করা। ৩. বড় নাপাক থেকে পবিত্রতা অর্জন করা। ৪. রোজা রাখা। ইতেকাফের ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজার শেষ দশ দিন ইতেকাফ করবে, সে ব্যক্তি দুইটি হজ ও দুইটি ওমরার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। (বুখারি ও মুসলিম) 


ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইতেকাফ করবে, আল্লাহতায়ালা তার এবং জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করবেন। প্রত্যেক পরিখার প্রশস্ততা দুই দিগন্তের চেয়েও বেশি। (বায়হাকি, ৩৬৭৯) 
মসজিদুল হারামে আদায়কৃত ইতেকাফ ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ইতেকাফ। তার পর মসজিদে নববির ইতেকাফ এবং তার পর বায়তুল মুকাদ্দাস। তার পর উৎকৃষ্ট ইতেকাফ হলো কোনো জামে মসজিদে ইতেকাফ করা, যেখানে রীতিমতো জামাতে নামাজ হয়। এর পর মহল্লার মসজিদে। 


ইতেকাফের প্রকারভেদ: ইতেকাফ মূলত তিন প্রকার। এক. ওয়াজিব। দুই. সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। তিন. মুস্তাহাব ইতেকাফ। ইতেকাফ করার মানত করলে তা আদায় করা ওয়াজিব। রমজানের শেষ দশ দিনে ইতেকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া মানে হলো, একটি মহল্লা বা এলাকার সবার পক্ষে অন্তত একজন আদায় করতে হবে। একজনও আদায় না করলে পুরো এলাকাবাসীর গুনাহ হবে। এ ছাড়া রমজানের শেষ দশ দিন ছাড়া যত ইতেকাফ করা হবে, তা মুস্তাহাব বা নফল।


ইতেকাফের শর্তাবলি: একজন ইতেকাফকারীকে পাঁচটি গুণে গুণান্বিত হতে হবে। অর্থাৎ পাঁচটি গুণ না থাকলে কোনো মানুষ ইতেকাফ করতে পারবে না। ১. মুসলমান হওয়া। ২. বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক ও বিবেচনাবোধ সম্পন্ন হওয়া। ৩. পবিত্র হওয়া। ৪. ইতেকাফের নিয়ত করা। ৫. পূর্ণাঙ্গ সময় (একান্ত আবশ্যক কাজ ছাড়া) ইতেকাফের স্থানে অবস্থান করা।


ইতেকাফে কী করা যাবে, কী করা যাবে না: শুদ্ধভাবে ইতেকাফ করার জন্য এর বিধান জানা জরুরি। ইতেকাফের শর্ত, আদব ও ইতেকাফে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না—এসব বিষয় না জানা থাকলে সঠিকভাবে ইতেকাফ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। শুদ্ধভাবে ইতেকাফ আদায় হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। অন্যতম শর্ত হলো, নিয়ত করা। নিয়ত ছাড়া ইতেকাফ সহীহ হবে না। জামে মসজিদে ইতেকাফ করা। নারীরা নিজ গৃহে নামাজের স্থানে বা অন্য পবিত্র স্থানে ইতেকাফ করবে। এ ছাড়া ইতেকাফ শুদ্ধ হওয়ার শর্ত হলো, মুসলমান হওয়া, জ্ঞানবান হওয়া, অপবিত্রতা এবং হায়েজ ও নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া। বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ইতেকাফের শর্ত নয়। তাই জ্ঞানবান নাবালেগরাও ইতেকাফ করতে পারবে। নারীর জন্য স্বামীর অনুমতি নিয়ে ইতেকাফ করা জায়েজ। নারীর জন্য মসজিদে ইতেকাফ করা নাজায়েজ। (বুখারি, ১/২৭২)


বিনা ওজরে দিনে বা রাতে সামান্য সময়ের জন্য মসজিদ থেকে বের হলেও ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যায়। অনুরূপভাবে নারীরা তার ঘরের নির্ধারিত স্থান থেকে বের হবে না। পেশাব-পায়খানা ও জুমা আদায় ইত্যাদি ওজরের কারণে মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ। ইতেকাফের স্থানে ঘুমাবে ও পানাহার করবে। কোনো কারণে যদি মসজিদ ভেঙে যায় অথবা জোরপূর্বক মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়, তা হলে ইতেকাফকারী ব্যক্তি মসজিদ থেকে বের হয়ে সঙ্গে সঙ্গে অন্য মসজিদে চলে যাবে, এতে ইতেকাফ নষ্ট হবে না। জান বা মালের ক্ষতির আশঙ্কা হলেও এই হুকুম প্রযোজ্য হবে। ইতেকাফকারী ব্যক্তি মুয়াজ্জিন হোক বা অন্য কেউ হোক, আজানের জন্য মিনারে আরোহণ করলে ইতেকাফ নষ্ট হবে না। মিনার মসজিদের বাইরে হলেও। এ ছাড়া ইতেকাফ নষ্ট হওয়ার একটি কারণ হলো, সহবাস বা সহবাসের দিকে আকৃষ্টকারী কাজ, তা দিনেই হোক বা রাতেই হোক। স্বপ্নদোষে ইতেকাফ নষ্ট হয় না। কয়েক দিন পাগল বা বেহুঁশ থাকার ফলে লাগাতার ইতেকাফ করতে না পারলেও ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যায়। একেবারে চুপ থাকাকে ইবাদত মনে করে সারাক্ষণ চুপ থাকলে ইতেকাফ মাকরুহ হয়। অন্যথায় মুখের গুনাহ থেকে চুপ থাকা বড় ইবাদত। ইতেকাফের স্থানকে ব্যবসাস্থল বানানো মাকরুহ। ওয়াজিব ইতেকাফ যেকোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেল তার কাজা করা ওয়াজিব।

 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে রমজান কাটাতেন—২০ যখন যেভাবে ইতিকাফ করতেন

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম
যখন যেভাবে ইতিকাফ করতেন
মসজিদে ইতেকাফরত মুসল্লির ছবি

রমজান মাসের বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ‘ইতিকাফ’ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা; কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশক বা অন্য কোনো দিন জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহকে রাজি খুশি করার নিয়তে পুরুষের জন্য মসজিদে বা নারীদের ঘরে নামাজের নির্দিষ্ট একটি স্থানে ইবাদত করার উদ্দেশ্যে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে।


রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ইতিকাফ পালন করতেন। আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ইনতিকাল পর্যন্ত এ নিয়মই ছিল। এর পর তাঁর সহধর্মিণীগণও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন। (বুখারি, ২০৪১)।


বিশ তারিখের দিনের সূর্যাস্তের পর একুশ তারিখের রাতের সূচনাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফের স্থানে প্রবেশ করতেন। ইতিকাফ শেষ করে বেরুতেন ঈদের চাঁদ দেখার পর। মধ্যবর্তী এ সময়টি শেষ দশ দিন। যাতে ইতিকাফের বিধান দেওয়া হয়েছে। 


ইতিকাফরত অবস্থাতেও রাসুলুল্লাহ (সা.) পাক-পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন। ইতিকাফকালীন তিনি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন না। অংশ নিতেন না কোনো জানাজায়। বর্জন করতেন স্ত্রী সহবাস। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইতিকাফকারীর জন্য সুন্নত হচ্ছে, অসুস্থের দর্শনে গমন না করা, জানাজায় অংশ না নেওয়া, নারী সহবাস বর্জন করা এবং অত্যাবশ্যকীয় কোনো প্রয়োজন ছাড়া ইতিকাফের স্থান থেকে বের না হওয়া। (আবু দাউদ, ২৪৭৩)।


ইতিকাফরত অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীগণ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আলাপ করতেন তার সঙ্গে। সাফিয়া (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফরত অবস্থায় আমি তার সাথে সাক্ষাতের জন্য এলাম, তার সাথে আলাপ করে চলে এলাম। (বুখারি, ৩০৩৯)। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে অবস্থানকালীন তার স্ত্রীগণ তার পাশে ছিলেন, তারা ছিলেন আনন্দিত। (বুখারি, ১৮৯৭)। 


রাসুলুল্লাহ (সা.) অত্যবশ্যকীয় কোনো কারণ ছাড়া ইতিকাফগাহ হতে বের হতেন না। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফরত অবস্থায় কোনো কারণ ছাড়া গৃহে প্রবেশ করতেন না। (বুখারি, ২০২৯)। তবে প্রবল কোনো কারণবশত কখনও কখনও রাসুলুল্লাহ (সা.) তার দেহের কিছু অংশ ইতিকাফগাহ হতে বের করতেন। আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফে থাকা অবস্থায় তাঁর মাথা আমার দিকে ঝুঁকিয়ে দিতেন, আমি তাঁর চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে দিতাম। আর তিনি পায়খানা-প্রস্রাবের আবশ্যকতা ছাড়া গৃহে প্রবেশ করতেন না। (বুখারি, ১৮৯০)।


কোনো কারণবশত যদি ইতিকাফ ছুটে যেত, তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) পরবর্তীতে তা কাজা করে নিতেন। আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ পালন করতেন। এক বছর তিনি ইতিকাফ পালনে সক্ষম হলেন না, পরবর্তী বছরে তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করে নিয়েছিলেন। (তিরমিজি, ৮০৩)। উবাই বিন কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ পালন করতেন। একবার সফরজনিত কারণে তিনি ইতিকাফ করলেন না, পরবর্তী বছরে তাই দশ দিন ইতিকাফ করে নিলেন। (ইবনে হিববান, ৩৬৬৩)

 

লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

২১ মার্চ, ২০২৫ শুক্রবারের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম
২১ মার্চ, ২০২৫ শুক্রবারের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি
২১ মার্চ, ২০২৫ শুক্রবারের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচির ছবি

আজ ২১ মার্চ, ২০ তম রোজা। শুক্রবার । এ দিনের সাহরির শেষ সময় ভোর ৪টা ৪৫ মিনিট ও ইফতারির সময় ৬ টা ১০ মিনিট।

২১ মার্চ, শুক্রবার, ২০২৫
সাহরির শেষ সময়: ৪.৪৫ মিনিট
ইফতারের সময়: ৬.১০ মিনিট


জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ইফতারের সময় এবং প্রতি রাতে লোকদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৩)

 

সূত্র : ইসলামিক ফাউন্ডেশন

 

মান্নতের রোজা উদ্দেশ্যপূরণের আগে রাখা শুরু করা যাবে কি?

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১০:৩০ পিএম
মান্নতের রোজা উদ্দেশ্যপূরণের আগে রাখা শুরু করা যাবে কি?
আরবিতে রমজান কারিম লেখা ক্যালিগ্রাফির ছবি। সংগৃহীত

প্রশ্ন : আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে একটি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। অনেক চিকিৎসার পরও তিনি সুস্থ হচ্ছিলেন না। তাই আমি মান্নত করেছিলাম যে, তিনি সুস্থ হলে আমি ১০ দিন রোজা রাখব। কিন্তু তার পরও তিনি সুস্থ না হওয়ায় আমি মনে মনে ভাবলাম যে, মান্নতের রোজাগুলো রাখা শুরু করলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। এর পর আমি ১০টি রোজা রাখি এবং তার পর তিনি সুস্থ হয়ে যান। এখন জানার বিষয় হলো, আমাকে কি আবার ওই মান্নতের রোজাগুলো রাখতে হবে?

 

উত্তর : প্রশ্নোক্ত পরিস্থিতিতে আপনাকে পুনরায় ১০টি রোজা রাখতে হবে। কারণ, আপনি মান্নত করেছিলেন যে, আপনার স্বামী সুস্থ হলে আপনি ১০টি রোজা রাখবেন। কিন্তু আপনি তার সুস্থ হওয়ার আগেই রোজাগুলো রাখা শুরু করে দিয়েছেন। ইসলামি শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, মান্নতের রোজা তখনই আদায় হবে, যখন মান্নতের শর্তপূরণ হওয়ার পর তা রাখা হবে। 


অতএব, মান্নত পূরণের জন্য আপনাকে পুনরায় ১০টি রোজা রাখতে হবে। আপনি যে রোজাগুলো রেখেছেন তা নফল হিসেবে গণ্য হবে, মান্নতের রোজা হিসেবে নয়। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া (৩/৪৩৩), ফাতাওয়া হিন্দিয়া (১/২১০), ইমদাদুল ফাত্তাহ (পৃ. ৭০৭), হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী (পৃ. ৩৮১)

লেখক :  সহ-সম্পাদক, দৈনিক খবরের কাগজ