
পৃথিবীর সব জায়গার ও সব ভাষার মানুষ কাঁদে। মানুষের কান্নার ভাষা সবাই বোঝে। একজন নবজাতকও দুনিয়াতে নিজের আগমন ও অস্তিত্বের জানান এই কান্না দিয়েই প্রকাশ করে। সে তখন কান্না না করলে মা-বাবাসহ সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবজাতককে জন্মের সময় শয়তান খোঁচা দেয়, ফলে সে শয়তানের খোঁচায় চিৎকার করে।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৪৩১)। কান্নায় কি শুধু মনের দুঃখ-কষ্টের প্রকাশ ঘটে, না অন্য কিছুও থাকে? আসলে কান্নার আছে আরও অনেক প্রকার। এখানে পাঁচটি প্রকার উল্লেখ করা হলো—
বিপদের কান্না: বিপদে পড়লে সবাই মন খারাপ করে। কান্না করে। হাদিসে আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তার শিশুপুত্র ইবরাহিমের মৃত্যুর সময় কান্নারত অবস্থায় বলেছেন, চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে, হৃদয় ব্যথিত হয়। তবে আমরা তাই বলি যার ওপর আমাদের সব সন্তুষ্টি। আর তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত।’ (বুখারি, হাদিস: ১৪০৭)
বিচ্ছেদের কান্না: আপনজন ও প্রিয়জনের বিচ্ছেদে মানুষ কান্না করে। ইয়াকুব (আ.) আপন সন্তান ইউসুফ (আ.)-এর বিচ্ছেদে কান্না করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তার চোখ দুটি কাঁদতে কাঁদতে সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং তার হৃদয় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছিল।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৪)
কোরআন পড়ে বা শুনে কান্না: এমন অনেক সৌভাগ্যবান ব্যক্তি আছেন, যারা কোরআন তেলাওয়াতের সময় কান্না করেন। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কেঁদে কেঁদে কোরআন তেলাওয়াত করো, যদি কান্না না আসে তা হলে কান্নার ভান ধরো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৩৭)
ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, সাহাবায়ে কেরামের কোরআন তেলাওয়াতের সময় আশ্চার্যজনক অবস্থা সৃষ্টি হতো, সাহাবিদের ভেতর কেউ তেলাওয়াতের সময় কান্না করতেন, কেউবা আবার বেহুঁশ হয়ে যেতেন, আবার কেউ এই বেহুঁশের মধ্যেই চির বিদায় হয়ে যেতেন। (খুতুবাতে জুলফিকার, ৪/১৭৯)
গুনাহের কথা স্মরণ করে কান্না: যাপিত জীবনে কমবেশি সবাই গুনাহ করে থাকে, তবে গুনাহের কথা স্মরণ করে কান্না করা এক অনন্য গুণ। যে গুনাহের কথা স্মরণ করে কান্না করে, আল্লাহতায়ালা তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার কাছে দুটি ফোঁটা অত্যন্ত প্রিয়। এক. আল্লাহতায়ালার ভয়ে যে অশ্রু ফোঁটা ঝরে। দুই. আল্লাহতায়ালার রাস্তায় যে অশ্রু ফোঁটা ঝরে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৬৩৯)
আল্লাহর ভয়ে কান্না: চোখের সদ্ব্যবহারের একটি অনন্য দিক হলো, আল্লাহর ভয়ে কান্না করা। তা ছাড়া আল্লাহর ভয়ে কান্না করা মুমিনের বিশেষ গুণ এবং একনিষ্ঠতার বড় প্রমাণও। আল্লাহর ভয় ইমানের অপরিহার্য উপাদান। কেননা ইমান হলো, আশা ও ভয়ের ভেতরে। নবি-রাসুলদের বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘এরা সৎ কাজে ছিল ক্ষিপ্রগতি, তারা আমাকে ডাকতো আশা নিয়ে ও ভীত হয়ে, আর তারা ছিল আমার প্রতি বিনয়ী।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০)
জীবনের সব ক্ষেত্রে মহান আল্লাহকে ভয় করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করা যাবে না। অনেক কারণে মানুষ কান্না করে এবং অশ্রুপাত করে। এসবের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে তাঁর ভয়ে কান্না করা। হাশরের ময়দানে এ প্রকারের কান্না ও অশ্রু অমূল্য সম্পদ হয়ে বান্দাকে আনন্দিত করবে এবং মুখে হাসি ফোটাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি চোখ জাহান্নামের আগুন দেখবে না। যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদারি করে, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, যে চোখ আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ জিনিস দেখে ক্ষুব্ধ হয়।’ (আল মুজামুল কাবির লিত তিবরানি, হাদিস: ১০০৩)
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর