
মাওলানা আবদুল মান্নান মাকতাবাতুল খিদমাহর প্রকাশক। ভোলার লালমোহনে জন্ম। গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার হাতেখড়ি। চট্টগ্রামের এক মাদরাসা থেকে হাফেজ হয়েছেন। দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) করেছেন। তাখাসসুল ফিল হাদিস পড়েছেন। তার প্রকাশক হওয়ার গল্প, ইসলামি বইয়ের পাঠকের চাহিদা, কোন ধরনের বই প্রকাশে তিনি আগ্রহী, ইসলামি বইয়ের জাগরণের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রায়হান রাশেদ
খবরের কাগজ: আপনি প্রকাশক হলেন কেন?
মাওলানা আবদুল মান্নান: প্রকাশক হওয়ার বিষয়টা এক রকম কাকতালীয় ব্যাপার বলেই আমার কাছে মনে হয়। আমি প্রথমে মাদরাসাকেন্দ্রিক দ্বীনি খেদমতের জন্যই মনস্থ করেছিলাম। পড়াশোনা শেষে মাদরাসায় খেদমত শুরু করি। পাশাপাশি প্রকাশনা সেক্টরের সঙ্গেও কিছুটা যুক্ত ছিলাম। পরে আমার কাছে মনে হয়েছে, প্রকাশনা জগৎও দ্বীনি খেদমতের স্বতন্ত্র একটি প্ল্যাটফর্ম। জনমানুষের মাঝে ইসলাম ও ধর্মীয় বিশুদ্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া এবং মানুষকে বিশুদ্ধ ইলমের পথে নিয়ে আসা এটা আলেমদের একটি নৈতিক দায়িত্ব। কারণ দ্বীনি ইলম হলো নবিদের তুরাস আর আলেমরা হলেন সেই তুরাসের উত্তরাধিকার। কাজেই বাতিলদের অপব্যাখ্যা এবং মূর্খ লোকদের বিভ্রান্তি থেকে ইলমকে হেফাজতের যে ঐশী দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, সেই দায়িত্ব-কর্তব্য থেকেই এই সেক্টরে যোগদান করা।
খবরের কাগজ: ইসলামি বইয়ের পাঠক দিন দিন বাড়ছে বলে কী আপনি মনে করেন?
মাওলানা আবদুল মান্নান: চারপাশে ইসলামের যে নবজাগরণ বাংলাদেশে লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং যুবসমাজের মনে ইসলামকে জানার যে বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে; এটা অবশ্যই ধর্মীয় বইয়ের পাঠক বৃদ্ধি পাওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করে। ধর্মীয় বইয়ের জগতে সৃজনশীলতা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, পাঠক মহল ততই বাড়ছে এবং সমৃদ্ধ হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, পাঠক বাড়ার এ ধারাবাহিকতা ইনশাআল্লাহ অব্যাহত থাকবে।
খবরের কাগজ: আপনার প্রকাশনী সম্পর্কে কিছু বলুন। কী ধরনের বই প্রকাশে আপনারা আগ্রহী?
মাওলানা আবদুল মান্নান: আমার প্রকাশনী আমার স্বপ্নের জায়গা। আমি আমার স্বপ্নটিকে সুন্দর করে পরিচর্যা করে বাস্তবায়ন করতে চাই। প্রথমত ধর্মীয় বিশুদ্ধ জ্ঞান এবং ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা ছাত্রসমাজসহ মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আমরা দরসি বইগুলো যুগোপযোগী ও মানসম্পন্ন করে প্রকাশ করছি। দ্বিতীয়ত সৃজনশীল বইয়ের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের আকাবিরদের কারনামাগুলো বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। উম্মাহর প্রয়োজনকে সামনে রেখে আমরা যুগোপযোগী বুদ্ধিভিত্তিক কাজ করে যেতে চাই, যে কাজগুলো আমাদেরকে শতাব্দীর পর শতাব্দী স্মরণ রাখবে।
খবরের কাগজ: মানসম্মত বই প্রকাশে আপনাদের ভূমিকা কেমন?
মাওলানা আবদুল মান্নান: মানসম্মত বই প্রকাশের জন্য আমাদের রয়েছে বিজ্ঞ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক চৌকস টিম। টিমটি মানসম্মত বই প্রকাশের জন্য এবং লেখার মান সমৃদ্ধ করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সবে মাত্র এ সেক্টরে এসেছি। মাত্র বছর তিনেক হয়েছে। আমরা আমাদের লেখক, অনুবাদক এবং সম্পাদক প্যানেলকে আরও সমৃদ্ধ করতে চাই। আর বই বাহ্যিকভাবে সুন্দর করতে আমরা আমাদের সাধ্যমতো সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে আমরা কোনো আপস করি না। কারণ খিদমাহর একটি মূলনীতি হলো সৃজনশীলতা। কাজেই আমরা বইয়ের ভেতরগত দিক ও বাহ্যিক দিক উভয়টি সুন্দর করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
খবরের কাগজ: ইসলামি বইয়ের জাগরণের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
মাওলানা আবদুল মান্নান: এর জন্য গণমুখী দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। উম্মাহর প্রয়োজনকে সামনে রেখে বই প্রকাশ করতে হবে। এর পর সোশ্যাল মিডিয়া এবং গণমাধ্যমগুলোতে সেসব বইয়ের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করে সব ধরনের পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।