
মুহাম্মাদ হোসাইন উমেদ প্রকাশনের প্রকাশক। এর মধ্যে ইসলামি জ্ঞান, ইতিহাস, আত্মোন্নয়ন ও সমসাময়িক সামাজিক বিষয়ে বই প্রকাশ করে বেশ সুনাম করেছেন। তিনি কেন প্রকাশক হলেন, কোন ধরনের বই প্রকাশে তিনি আগ্রহী, ইসলামি বইয়ের পাঠক বৃদ্ধি, লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রায়হান রাশেদ
খবরের কাগজ: আপনি প্রকাশক হলেন কেন?
মুহাম্মাদ হোসাইন: সত্যি বলতে আমি প্রকাশনা জগতে সচেতনভাবে আসিনি। প্রুফরিডিং, সম্পাদনা ইত্যাদি কাজের সুবাদে আমি অল্প অল্প করে যুক্ত হই। পরে অনলাইন বুকশপের সুবাদে এতে আরও জড়িয়ে পড়ি। এক সময় সাহস করে বই প্রকাশ করা শুরু করি। এখন তো প্রকাশনাই জীবনের মূল ব্যস্ততা।
খবরের কাগজ: ইসলামি বইয়ের পাঠক দিন দিন বাড়ছে বলে কী আপনি মনে করেন?
মুহাম্মাদ হোসাইন: হ্যাঁ, আমি মনে করি ইসলামি বইয়ের পাঠকসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে মানুষ ধর্মীয় জ্ঞানার্জনে আগ্রহী হচ্ছে এবং ইসলাম সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে চাচ্ছে। সামাজিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে অনেকেই সঠিক ধর্মীয় জ্ঞান লাভের জন্য নির্ভরযোগ্য বইয়ের দিকে ঝুঁকছে। তবে এটাও সত্য, যে পরিমাণ বই বিক্রি হচ্ছে, সে অনুপাতে পাঠক তৈরি হচ্ছে না। অনেকের জন্য বই সংগ্রহ করা একটা শখের ব্যাপার হয়ে গেছে। পাশাপাশি স্ক্রিন-নির্ভরতাও একটা কারণ। মানুষের স্ক্রিনটাইম বেড়েই চলছে। স্মার্টফোন মানুষের অবসর সময়গুলো গ্রাস করে নিচ্ছে। এর প্রভাব পাঠাভ্যাসের ওপরও পড়ছে।
খবরের কাগজ: আপনার প্রকাশনী সম্পর্কে কিছু বলুন। কী ধরনের বই প্রকাশে আপনারা আগ্রহী?
মুহাম্মাদ হোসাইন: আমাদের মূল আগ্রহ হলো, জীবনের প্রায়োগিক দিকগুলো নিয়ে কাজ করা। তাত্ত্বিক দিকগুলো আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে রাখতে চাই। মানুষের আজকের দিনের প্রয়োজনগুলো আমরা বিশেষ করে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বাচ্চা লালন-পালন, সাংসারিক সম্পর্ক, বিয়ের প্রস্তুতি, যুবকদের কর্মমুখী করা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি পদে পদে ইসলামকে ধারণ করা ও চর্চা করার দিকে ফোকাস করে কাজ করি আমরা। আমরা ইসলামি জ্ঞান, আত্মোন্নয়ন ও সমসাময়িক সামাজিক চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করছি।
খবরের কাগজ: মানসম্মত বই প্রকাশে আপনাদের ভূমিকা কেমন?
মুহাম্মাদ হোসাইন: আমরা বইয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। বই নির্বাচনের সময় আমরা বিষয়বস্তু, লেখকের দক্ষতা, ভাষার গুণগত মান এবং পাঠকদের চাহিদা বিবেচনা করি। পাশাপাশি সুন্দর ডিজাইন, মানসম্মত মুদ্রণ ও সহজবোধ্য উপস্থাপনার মাধ্যমে পাঠকদের হাতে একটি পরিপূর্ণ বই তুলে দেওয়ার চেষ্টা করি। তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা আমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তাই প্রতিটি বই একাধিকবার সম্পাদনা করা হয়ে থাকে।
খবরের কাগজ: লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
মুহাম্মাদ হোসাইন: লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহযোগিতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। লেখকের সৃজনশীলতাকে মূল্যায়ন করা এবং তার লেখার যথাযথ মর্যাদা দেওয়া প্রকাশকের দায়িত্ব। একইভাবে লেখকেরও উচিত, প্রকাশনার নীতি ও দিকনির্দেশনা মেনে চলা। এ সম্পর্ক যদি পারস্পরিক আস্থা ও পেশাদারত্বের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, তা হলে পাঠকদের জন্য উৎকৃষ্ট মানের বই উপহার দেওয়া সম্ভব।