
উবায়দুল্লাহ আযহারী মাকতাবাতুল আযহারের স্বত্বাধিকারী। বিদেশ থেকে আরবি, উর্দু কিতাব আমদানির মাধ্যমে প্রকাশনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সময়ের চাহিদায় বাংলাভাষার বইও প্রকাশ করেছেন অনেক। এর মধ্যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। ইসলামি প্রকাশনা জগতে তিনি প্রভাত পুরুষ। তিনি কেন প্রকাশক হলেন, এবারের বইমেলায় কোন ধরনের বই প্রকাশ করছেন, ইসলামি বইয়ের জাগরণে করণীয়, লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক ও তরুণ লেখক-প্রকাশকদের জন্য দিক-নির্দেশনা ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিরাজ রহমান
খবরের কাগজ: আপনি প্রকাশক হলেন কেন?
উবায়দুল্লাহ আযহারী: পারিবারিকভাবেই আমাদের সকল পিতৃপুরুষ ও আত্মীয়স্বজন দ্বীনের খেদমতের সঙ্গে জড়িত। কেউ মাদরাসার মুহতামিম, মুহাদ্দিস। কেউ মসজিদের ইমাম ও খতিব। এ জন্য শিক্ষাজীবন থেকেই আমার নিজেরও ইচ্ছা ছিল, কর্মজীবনে এমন একটা কর্মক্ষেত্রে শরিক হব, যার মাধ্যমে জীবনযাপনের পাশাপাশি দ্বীনের বড় ধরনের খেদমত হবে।
আমাদের ছাত্রজীবনে আরবি কিতাবাদির সমস্যা ছিল প্রকট। প্রয়োজনীয় কিতাবাদি পাওয়া যেতো না। মাদরাসাগুলোর লাইব্রেরিগুরো সমৃদ্ধ ছিল না। এ জন্য মিসরের জামিয়াতুল আযহারে পড়াশুনার সময় কিতাবাদি আমদানির বিষয়টি ভাবনায় ছিল। এরপর পাকিস্তান, ভারত ও বৈরুত সফর করে কিতাবাদি আমদানি করে সুলভ মূল্যে সকল কিতাব হাতের নাগালে পেশ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করি। সেই ভাবনা থেকেই ‘মাকতাবাতুল আযহার’ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম দিকে আমরা শুধু আরবি-উর্দু কিতাবাদি আমদানি করতাম। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা বইয়ের প্রকাশনার সাথেও জড়িয়ে পড়ি ওতোপ্রতোভাবে।
খবরের কাগজ: এবারের বইমেলায় কোন ধরনের বই বেশি আনছেন। পাঠকদের জন্য কী চমক থাকছে?
উবায়দুল্লাহ আযহারী: এবারের একুশে বইমেলায় আমাদের বেশ কিছু গ্রন্থ আসছে। কদিন আগে মাওলানা আতীক উল্লাহ ভাইয়ের ‘আমাদের ইন্তিফাদা’ এনেছি। এরপর তার আরেকটি বই আসছে ‘আমাদের বইমেলা’ নামে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বরেণ্য ওয়ায়েজ মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবির ‘খুতুবাতে আইয়ুবি’র দ্বিতীয় খণ্ড এনেছি। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’ বইটি আসবে। এর পাশাপাশি জান্নাত সম্পর্কে ঢাউস সাইজের একটি বই আসছে। সবচেয়ে চমক হলো, মেলার শেষ দিকে ইতিহাসের ওপর একটি চমকপ্রদ বই আসতে যাচ্ছে, ইনশাআল্লাহ।
খবরের কাগজ: মানসম্মত বই প্রকাশে আপনাদের ভূমিকা কেমন?
উবায়দুল্লাহ আযহারী: আজ থেকে দেড় যুগ আগে আমরা যখন বইয়ের সঙ্গে জড়িত হই, তখন এই ইন্ড্রাস্ট্রি ছিল খুবই ছোট। অল্প পাঠক। স্বল্প পরিসর। এখন আলহামদুলিল্লাহ, এই প্রকাশনা জগত অনেক বিস্তৃত হয়েছে। যোগ্য ও মেধাবী তরুণরা বইয়ের দিকে ঝুঁকছে। বইয়ের কাটতি বেড়েছে। যার ফলে প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনীগুলো দক্ষ জনবল নিয়োগ দিচ্ছে। এখন অন্যদের মতো আমাদেরও নিজস্ব প্রুফ রিডার, বানান সম্পাদক, শরয়ি সম্পাদক ও ভাষা সম্পাদকের প্যানেল রয়েছে। ছাপার ক্ষেত্রে কেউ অফসেটের বাইরে কল্পনাও করতে পারছে না। আপনি আমাদের পাঁচ বছর আগের প্রকাশিত বইয়ের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত বইয়ের তুলনা করলেই বুঝতে পারবেন।
খবরের কাগজ: ইসলামি বইয়ের জাগরণের ক্ষেত্রে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
উবায়দুল্লাহ আযহারী: অনেকগুলো পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, ইসলামি বইয়ের সাথে প্রশাসনের বৈষম্যমূলক আচরণ বাদ দিতে হবে। সাধারণ বইপত্রের মতো তাদেরকেও সারা দেশে স্বাধীনভাবে মেলা আয়োজন ও বইপত্র প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, সরকারের ভর্তুকি দিয়ে হলেও বইপত্রের জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে হবে। গত দু’ বছর ধরে কাগজের দাম হু হু করে বাড়তে থাকার কারণে আমরা হতাশ। আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এর লাগাম টেনে ধরবে।
খবরের কাগজ: লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
উবায়দুল্লাহ আযহারী: বন্ধুর মতো হওয়া দরকার। একজন অপরের সংকট বুঝবেন। দুঃসময়ে পাশে থাকবেন। সুসময়ের অংশিদার করবেন। তবেই এই জগত উন্নতি করবে। পান থেকে চুন খসলেই সমালোচনার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এখানে একপক্ষের স্থিতি অন্যপক্ষের ভালো অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। লেখক না থাকলে প্রকাশক বই বের করবেন কোত্থেকে! আবার প্রকাশকপক্ষ না থাকলে লেখকের লেখক সত্ত্বার বিকাশ হবে কীভাবে! কাজেই সকল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্যে দু পক্ষের মাঝে আন্তরিক সম্পর্ক থাকা দরকার।
খবরের কাগজ: তরুণ লেখক-প্রকাশকদের জন্য আপনার অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ প্রত্যাশা করছি।
উবায়দুল্লাহ আযহারী: হুট করেই কেউ গাছে উঠতে পারে না। তার জন্যে প্রয়োজন প্রশিক্ষণ ও চেষ্টা। আপনি যে পেশায় নিজেকে বিকশিত করতে চান, সবার আগে সেই পেশার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করুন। অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করুন। যোগ্য হয়ে ওঠুন। এরপর সেই পেশায় আত্মনিয়োগ করুন, ইনশাআল্লাহ সফলতা আপনার পদচুম্বন করবে।