ঢাকা ১১ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

দোয়া শুধু চাওয়া নয়, আত্মার প্রশান্তিও

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১০:৩০ পিএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:০৭ এএম
দোয়া শুধু চাওয়া নয়, আত্মার প্রশান্তিও
মোনাজাতরত হাত ও মুসলিমের ছবি। সংগৃহীত

মানুষের জীবনে সবচেয়ে গভীর ও ব্যক্তিগত যে অনুভূতিটি আছে, তা হলো দোয়া। বিপদে-আপদে, স্বপ্নপূরণের আশায়, ব্যথায়-কষ্টে কিংবা নীরব ভালোবাসায় মানুষ একান্তে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। দোয়া মানেই চাওয়া, আর আল্লাহই একমাত্র যিনি আমাদের সব চাওয়া পূরণ করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা সবাই দোয়া করি, কিন্তু সবার দোয়া কি কবুল হয়? অনেকেই হতাশ হয়ে বলেন, “আমি তো বহুদিন ধরে দোয়া করছি, কিছুই হচ্ছে না!" তখন প্রশ্ন আসে, দোয়া কি আসলেই কবুল হয়? নাকি আমাদের চাওয়ায় কোনো ভুল থেকে যাচ্ছে?


আল্লাহ কোরআনে বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।" (সুরা গাফির: ৬০) আল্লাহ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, যে-ই তাঁকে ডাকে, তিনি তা শোনেন। কিন্তু দোয়ার উত্তর আসার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বান্দার দোয়া তিনভাবে কবুল করেন- কখনো তিনি বান্দাকে তার চাওয়া জিনিসই দেন, কখনো তার চেয়ে ভালো কিছু দেন, আবার কখনো এই দোয়ার প্রতিদান আখিরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন (মুসনাদ আহমদ, ১১১৩৩)। অর্থাৎ, মানুষ যেটিকে ‘না পাওয়া’ মনে করে, সেটিও আসলে পাওয়ারই অংশ। কারণ আল্লাহ আমাদের জন্য যা ভালো, সেটিই নির্ধারণ করেন।


আমাদের অনেকের মধ্যেই একটা ভুল ধারণা কাজ করে, আমরা মনে করি, দোয়া মানেই তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া। কিন্তু দোয়া কখনোই জাদুর কাঠির মতো নয়, বরং এটি পরীক্ষা, আস্থার এবং ধৈর্যের বিষয়। অনেক সময় আমরা ভাবি, ‘কেন আমার দোয়া কবুল হচ্ছে না?’ অথচ আমরা কি কখনো নিজেদের দিকে ফিরে তাকাই? হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি হারাম উপার্জন করে, হারাম খায়, তার দোয়া কবুল হয় না (মুসলিম, ১০১৫)। আমাদের রিজিক, জীবনযাপন, আত্মার শুদ্ধতা সবকিছুই দোয়া কবুলের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা যদি নিজেদের সংশোধন না করি, তা হলে আল্লাহর কাছে আমাদের আকুতি কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে?


দোয়া কবুলের কিছু নির্দিষ্ট সময় আছে, যখন দোয়া করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, যখন আল্লাহ নিজে পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কোনো প্রার্থনাকারী আছে কি, যে আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে দেব।’ (বুখারি, ১১৪৫) এ সময় দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ঠিক তেমনি আজানের পর, ইফতারের সময়, বৃষ্টি নামার মুহূর্ত, জুমার দিনের বিশেষ সময়ে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি এই সময়গুলো কাজে লাগাই? নাকি দোয়া শুধু তখনই করি, যখন বিপদে পড়ি?


দোয়া শুধু চাওয়ার বিষয় নয়, এটি আত্মার প্রশান্তিরও মাধ্যম। আমরা যখন আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাই, তখনই আমাদের মনের মধ্যে একটা নির্ভরতা তৈরি হয়। মনে হয়, ‘আমার চাওয়া শোনা হচ্ছে, আমি একা নই।’ তাই দোয়া কখনো বৃথা যায় না, বরং এটি আমাদের অন্তরের প্রশান্তি ও আশার প্রদীপ হয়ে থাকে। আল্লাহ কখনো আমাদের শূন্য হাতে ফেরান না, হয় দুনিয়ায়, নয়তো আখিরাতে তিনি তার প্রতিদান দেন। তাই হতাশ না হয়ে, ধৈর্য ধরে, নিজের আত্মশুদ্ধির দিকে মনোযোগ দিয়ে আমাদের দোয়া করতে হবে।


অনেক সময় আমরা চাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি, কিন্তু কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, তবে আমি তোমাদের আরও বেশি দেব।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭) আমরা কি দোয়ার পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি? নাকি শুধু চাই, কিন্তু যে নেয়ামতগুলো ইতোমধ্যেই পেয়েছি, তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাই? অনেক সময় আল্লাহ আমাদের দোয়া দেরিতে কবুল করেন, কারণ তিনি আমাদের ধৈর্য পরীক্ষা করেন। আমরা যদি ধৈর্য ধরে, দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে চাই, তা হলে কোনো দোয়াই বৃথা যাবে না।


আল্লাহ আমাদের সব নেক দোয়া কবুল করুন, আমাদের অন্তরকে তাঁর প্রতি আস্থায় পরিপূর্ণ করুন এবং আমাদের দেরিতে পাওয়া কিংবা না পাওয়ার মধ্যেও যে কল্যাণ লুকিয়ে আছে, তা বোঝার ক্ষমতা দিন। আমিন!

 

লেখক : শিক্ষার্থী, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

 

 

স্বপ্নে কুকুর দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
স্বপ্নে কুকুর দেখলে কী হয়?
কুকুরের ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্নের জগৎ রহস্যময় ও গভীর। এতে অনেক সময় এমন সব চিত্র দেখা যায়, যার অর্থ জানতে মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তেমনি এক স্বপ্ন হলো কুকুর দেখা। ইসলামি মনীষীদের মতে, স্বপ্নে কুকুর দেখার ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে— যা নির্ভর করে কুকুরের আচরণ, রং, প্রেক্ষাপট ও স্বপ্নদ্রষ্টার অবস্থার ওপর।

যদি স্বপ্নে দেখেন কোনো কুকুর আপনাকে কামড়াচ্ছে, তবে বুঝতে হবে আপনি এমন কিছু অর্জন করবেন যা অপছন্দনীয়। আর যদি কুকুর আপনার কাপড় ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে, তবে কোনো নীচ প্রকৃতির লোক আপনার আশাকে হতাশায় পর্যবসিত করবে।

আরো পড়ুন : স্বপ্নে সাপ দেখলে কী হয়?

স্বপ্নে কুকুরকে বালিশ হিসেবে ব্যবহার করতে দেখলে, এর অর্থ হলো কুকুর আপনার বন্ধু হয়ে আপনাকে সাহায্য করবে। খেত পাহারা দেওয়ারত কুকুর দেখা সাধারণত শুভ লক্ষণ। তবে, এর ব্যাখ্যা কখনো বিদআতী চিন্তাভাবনার ইঙ্গিতও হতে পারে। নিজেকে কুকুরের দ্বারা কামড়াতে দেখলে, আপনি কোনো বিচক্ষণ বিদআতীর সঙ্গী হতে পারেন। দুর্ভিক্ষের সময়ে কুকুর দেখা কোনো কিছু অর্জনের লক্ষণ।

মাদি কুকুর দেখা খারাপ স্বভাবের নারী বা সন্তানের প্রতীক। কালো কুকুরছানা আপনার পরিবারের ইঙ্গিত বহন করে, সাদা ছানা আপনার ইমানের লক্ষণ। কুকুরের ছানা কুড়াতে দেখলে, আপনি জেনাকারী সম্প্রদায়ের কোনো বোকা লোককে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেবেন। তবে, যদি আপনি শিকারি কুকুর কুড়ান, তবে মালিকের কাছ থেকে সম্পদ লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।

আরো পড়ুন : স্বপ্নে ঘোড়া দেখার ব্যাখ্যা ও ইঙ্গিত

সাধারণভাবে স্বপ্নে কুকুর দেখা জালেম শত্রুর প্রতীক। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দেখলে, তা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক হবে। কুকুরের স্বভাবের মূল বৈশিষ্ট্য হলো- তার মধ্যে মানবতাবোধের অভাব এবং নীচ মানসিকতা। কারও মতে, কুকুরের যেকোনো ধরনের স্বপ্নই ক্ষতি, দুর্দশা, অসুস্থতা ও শত্রুতার ইঙ্গিত বহন করে। তবে, যদি কেউ স্বপ্নে খেলা বা পাহারার জন্য কুকুর নেয়, তবে এটি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনযাপনের লক্ষণ।


 বি.দ্র. এই স্বপ্নগুলোর ব্যাখ্যা আমাদের শেখায়, প্রতিটি স্বপ্নই কেবল নিছক কল্পনা নয়, বরং অন্তর্নিহিত বার্তা বা ইঙ্গিত বহন করতে পারে। তবে, এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের 'তাফসীরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

 

কম কথা বলা উন্নত চরিত্রের এক অপরিহার্য গুণ

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
কম কথা বলা উন্নত চরিত্রের এক অপরিহার্য গুণ
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

উন্নত চরিত্রের মাপকাঠি নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন মতামত থাকলেও, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং শ্রেষ্ঠ মাপকাঠি হলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষ্য। তাঁর প্রতিটি কথাই সত্য এবং সঠিক। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নীতি ও শিক্ষা মানবজীবনে সর্বোত্তম পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার চরিত্র ও ব্যবহার ভালো, সে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। কেয়ামতের দিন সে আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৪৭৪)।

তবে তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অনর্থক বকবক করে, উপহাস করে এবং অহংকার করে, তারা কেয়ামতের দিন আমার থেকে সবচেয়ে দূরে থাকবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫১১৫)এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনটি নিন্দনীয় চরিত্রের কথা উল্লেখ করেছেন, যেগুলো সচ্চরিত্রবান মানুষের মধ্যে কখনো দেখা যায় না। এর মধ্যে প্রথমটি হলো— অনর্থক কথা বলা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই শিক্ষা আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অধিক কথা বলা নানা ধরনের ভুলের জন্ম দেয়। ভাষা মানুষের অন্তরের প্রতিফলন এবং তাই অপ্রয়োজনীয় বা অনর্থক কথা চরিত্রের উন্নতির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।

আরো পড়ুন: রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে মেলবে যে প্রতিদান


বেশি কথা বলার ফলে ভুলের সুযোগও বেড়ে যায়। এই কথাটি মহা সাহাবি হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেছেন, ‘যারা বেশি কথা বলে, তাদের স্খলনও বেশি হয়।’ একজন বিখ্যাত মনীষী ফুয়াইল ইবনে ইয়ায (রহ.) বলেন, ‘মুমিনরা কথা কম বলে এবং আমল বেশি করে। কিন্তু মুনাফিকরা কথা বেশি বলে আর আমল কম করে।’ এই বাণীটি থেকে আমরা শিখি, যে সত্যিকারের মুমিনের জীবনে কথার তুলনায় কাজের গুরুত্ব অনেক বেশি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১১০)

এই হাদিসটি আমাদের শেখায়, যে ভালো কথা বলা অথবা প্রয়োজনের সময় চুপ থাকা— এ দুটি উপায়েই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার গুরুত্ব।
এখন আমাদের জীবনে এই শিক্ষা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। কম কথা বলা, সঠিক সময়ে চুপ থাকা এবং ভালো কথা বলা— এই গুণগুলো আমাদের চরিত্রকে আরও উন্নত এবং আল্লাহর কাছে প্রিয় করে তোলে।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক 

 

স্বপ্নে বানর দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
স্বপ্নে বানর দেখলে কী হয়?
বানরের ছবি। সংগৃহীত

স্বপ্নে প্রাণী দেখা মানুষের মানসিক অবস্থা, ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি ও নৈতিক অবস্থার ইঙ্গিত হতে পারে। ইসলামি মনীষীগণ স্বপ্নে দেখা বিভিন্ন প্রাণীর বিশেষ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এর মধ্যে বানর এমন এক প্রাণী, যার স্বপ্নে আগমন অনেক অর্থ বহন করে। ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.) ও অন্যান্য তাফসীরবিদের মতে, বানরের প্রতীকী মানে রয়েছে নৈতিক অবক্ষয়, প্রতারণা এবং শত্রুতা।

যদি স্বপ্নে দেখেন যে আপনি বানরের সাথে যুদ্ধ করছেন এবং আপনি জয়ী হয়েছেন, তবে এর অর্থ হলো আপনি অসুস্থ হবেন, তবে শিগগিরই সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু যদি বানর জয়ী হয়, তবে বুঝতে হবে রোগমুক্তি বিলম্বিত হবে। স্বপ্নে যদি কেউ আপনাকে বানর উপহার দেয়, তবে এটি শত্রুর বিরুদ্ধে আপনার বিজয়ের পূর্বাভাস। বানরের মাংস খাওয়া কঠিন পেরেশানি বা অসুস্থতায় পতিত হওয়ার লক্ষণ।

অন্যদিকে, স্বপ্নে নিজেকে বানর হিসেবে রূপান্তরিত হতে দেখলে, চারদিক থেকে আপনার উপকার লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। বানরকে বিয়ে করতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা নির্লজ্জ কোনো কাজে লিপ্ত হতে পারে। স্বপ্নে বানরের কামড় দেখলে, আপনার ও অন্যের মধ্যে ঝগড়া বা বিবাদের আশঙ্কা থাকে।

কারও মতে, বানর কবিরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিদেরও প্রতিনিধিত্ব করে। যদি স্বপ্নে কেউ দেখে যে বানর কোনো ব্যক্তির বিছানায় প্রবেশ করেছে, তবে এর অর্থ হলো সেই ব্যক্তি ইহুদি বা নাস্তিক হয়ে তার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে।

 

বি.দ্র. এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সীরীনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

কৃতজ্ঞতা মানবতার শ্রেষ্ঠ উপহার

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
কৃতজ্ঞতা মানবতার শ্রেষ্ঠ উপহার
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

কেউ যখন আমাদের উপকার করেন, তখন তাকে কৃতজ্ঞতা জানানো আমাদের জন্য একটি মানবিক উৎকৃষ্ট গুণ। কারণ, মানুষের সহযোগিতা, সাহায্য বা পরামর্শ পেতে গেলে সাধারণত তাকে কিছু কষ্ট ও পরিশ্রম করতে হয়। এমনকি একবার সাহায্য পাওয়ার পর অনেক সময় দ্বিতীয়বার সাহায্য করা হয় না। কারণ মানুষ তার কষ্টের কথা ভাবতে থাকে। তবে যদি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, তা হলে সেই ব্যক্তি পরবর্তী সময়ে আবারও আমাদের সাহায্য করতে উৎসাহী হবে।

কৃতজ্ঞতার কথা বলতে গেলে, কেবল তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই যথেষ্ট নয়; বরং তাকে যথাযথভাবে কৃতজ্ঞতা জানানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো আমরা কৃতজ্ঞতা প্রত্যাশা না করলেও, আমাদের জন্য অপরজনের সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট শিক্ষা দিয়েছেন।

আরো পড়ুন : বাজারে যে দোয়া পড়লে ১০ লাখ নেকি পাওয়া যায়

অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানানো এবং এর সুন্দর প্রকাশের পদ্ধতি শেখানোর জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের পথ দেখিয়েছেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা জানায় না, সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা জানায় না।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৮৯) এটি স্পষ্টভাবে বোঝায় যে, আমাদের আশপাশের মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো, আল্লাহর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার একটি অংশ।

এ ছাড়া, রাসুলুল্লাহ (সা.) কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুন্দর পদ্ধতিও আমাদের শিখিয়েছেন। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, ‘যদি কেউ আপনার উপকার করে এবং আপনি তাকে ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন) বলেন, তবে আপনি তাকে পূর্ণাঙ্গরূপে তার প্রশংসা করেছেন।’ এটি আমাদের শেখায় যে, শুধু মুখে কৃতজ্ঞতা জানানোই যথেষ্ট নয়; বরং সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এক বিশেষ সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ উপায় রয়েছে, যা আল্লাহর কাছে আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে সাহায্য করে।

তা হলো, আমাদের উচিত— প্রতিটি উপকারের জন্য মানুষকে সঠিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানানো এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিখানো এই দোয়া 'জাযাকাল্লাহু খাইরান' মুখস্থ করে, তা বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করা। এমনকি আমাদের ছোটো ছোটো কাজের জন্যও কৃতজ্ঞতা জানানো আমাদের মানবিক মূল্যবোধকে আরও উজ্জ্বল করবে। ইনশা আল্লাহ।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

 

স্বপ্নে বিড়াল দেখা বন্ধু নাকি বিপদের সংকেত?

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
স্বপ্নে বিড়াল দেখা বন্ধু নাকি বিপদের সংকেত?
বিড়ালের ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্নে বিড়াল দেখা একটি বহুল জিজ্ঞাসিত বিষয়। এর ব্যাখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। কারও মতে, বিড়াল বিশ্বস্ত সেবক বা পাহারাদারের প্রতীক। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এটি পরিবারের অভ্যন্তরে চুরির প্রবণতা নির্দেশ করে। এমনকি, মাদি বিড়ালকে অসৎ ও ধোঁকাবাজ নারীর ইঙ্গিত হিসেবেও দেখা হয়।

যদি স্বপ্নে কোনো বিড়ালকে আপনার আশপাশে ঘুরতে বা পাহারা দিতে দেখেন, অথবা কোনো জিনিস আকস্মিকভাবে নিয়ে যেতে দেখেন, তবে এর অর্থ হতে পারে প্রথমে আপনার ক্ষতি হবে, এর পর উপকার লাভ করবেন। যদি বিড়াল আপনাকে কামড়ায় বা আঁচড় দেয়, তবে সম্ভবত আপনার কোনো কর্মচারী আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করবে অথবা আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

বিখ্যাত স্বপ্ন ব্যাখ্যাকার ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.) স্বপ্নে বিড়াল দেখাকে রোগের বছর হিসেবে ব্যাখ্যা করতেন। যদি স্বপ্নে কোনো বুনো বিড়াল দেখেন, তবে তা কঠিন রোগের পূর্বাভাস হতে পারে। যদি বিড়ালটি পোষা ও শান্ত প্রকৃতির হয়, তবে তা সুখ ও শান্তির বছর নির্দেশ করে। বুনো মাদি বিড়াল দেখা কষ্টের বছর আসার লক্ষণ। কারণ এ ধরনের বিড়াল দুর্যোগপূর্ণ সময়ের ইঙ্গিত দেয়।

একটি বাস্তব ঘটনার মাধ্যমে এই ব্যাখ্যার গভীরতা উপলব্ধি করা যেতে পারে। জনৈক মহিলা ইমাম ইবনে সীরীনের কাছে এসে বললেন যে তিনি স্বপ্নে দেখেছেন একটি বিড়াল তার স্বামীর পেটে মুখ ঢুকিয়ে কিছু যেন বের করে খাচ্ছে। ইমাম ইবনে সীরীন এর ব্যাখ্যায় বললেন, যদি স্বপ্ন সত্য হয়, তবে বুঝতে হবে আপনার স্বামীর দোকানে কোনো হাবশী চোর প্রবেশ করবে এবং সে তিন শত ষোলো দিরহাম চুরি করবে। আশ্চর্যজনকভাবে, বাস্তবে তেমনটিই ঘটেছিল।

মহিলার বাড়ির পাশে বসবাসকারী এক হাবশীকে চুরির অভিযোগে ধরে আনা হয় এবং সে ইমাম ইবনে সীরীনের কাছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রেরিত হয়।আগন্তুক ব্যক্তি ইমাম ইবনে সীরীনকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি কীভাবে এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা করলেন। জবাবে ইমাম ইবনে সীরীন বলেন, স্বপ্নে বিড়াল হলো চোর, পেট হলো সম্পদ এবং বিড়ালের আহার করা হলো চুরি করা। তিনি আরবি অক্ষরের সংখ্যাগত মান ব্যবহার করে চুরি যাওয়া অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করেছিলেন। আরবিতে ‘আল-কাত্তু’ অর্থাৎ বিড়াল শব্দটি ছয়টি অক্ষর দিয়ে গঠিত, যার সংখ্যাগত মান ৬০+১০+৩০+১+৪০+১০০ = ৩১৬ দিরহাম।

বি.দ্র. এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সীরীনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক