
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মাঝে যে এ (রমজান) মাসকে পাবে; সে যেন এতে রোজা রাখে। কিন্তু যে অসুস্থ অথবা সফরে থাকে, তাকে অন্যান্য দিনে রোজার এ সংখ্যা পূর্ণ করতে হবে। আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য সহজ চান এবং তোমাদের জন্য কাঠিন চান না।’ (সুরা বাকারা, ৮৫)অসুস্থতা মানুষের জীবনের সত্য একটি বিষয়। মানুষ নানা সময় নানা কারণে অসুস্থ হয়ে থাকে। অসুস্থতাও আল্লাহতায়ালার এক প্রকারের নিয়ামত। কারণ অসুস্থ হলে সুস্থতার নিয়ামতের মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়। অসুস্থতা আমাদের জীবনের একটি অংশ।
তাই যেকোনো মানুষের যেকোনো সময় অসুস্থ হতে পারেন৷ অসুস্থতা থেকে বাদ পড়েননি রাসুলুল্লাহ (সা.)। মানুষ যাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে, সে ব্যাপারে ইসলাম জোর তাগিদ দিয়েছে। অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) উৎসাহিত করেছেন। তিনি নিজে অসুস্থ হলেও চিকিৎসা গ্রহণ করতেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো। কেননা আল্লাহতায়ালা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি; শুধু বার্ধক্যরোগ ব্যতীত।’ (আবু দাউদ, ৩৮৫৫)।
অভিজ্ঞ ব্যক্তির দিকনির্দেশনায় চিকিৎসা করা হলো ইসলামের নির্দেশ। হাদিস শরিফে এসেছে, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) হৃদরোগে আক্রান্ত হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে তখনকার প্রসিদ্ধ ডাক্তার হারেস ইবনে কালদাহর কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (আবু দাউদ, ৩৮৭৫)।
অপর একটি বর্ণনায়ও এসেছে, জনৈক রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে রাসুল (সা.) গোত্রের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। (মুসনাদে আহমদ, ২৩১৫৬)।
উসামা ইবনু শারিক (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, মফস্বলের লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা কি রোগীর চিকিৎসা করব না? তিনি বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা করো। আল্লাহতায়ালা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার ওষুধ বা নিরাময়ের ব্যবস্থা রাখেননি। রোগও দিয়েছেন, রোগ সারাবার ব্যবস্থাও করেছেন। কিন্তু একটি রোগের কোনো নিরাময় নেই। সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সে রোগটি কি?’ তিনি বললেন, ‘বার্ধক্য।’ (ইবনে মাজাহ, ৩৪৩৬, তিরমিজি, ২০৩৮)।
রোগের কারণে যদি স্বাভাবিক সুস্থতা হারিয়ে ফেলে, ডাক্তার যদি বলে যে, এ সিয়ামের কারণে রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, বা রোগীর ক্ষতি হতে পারে বা সুস্থতা বিলম্বিত হতে পারে, তবেই রোজা ভাঙবে। কিন্তু সামান্য অসুখ যেমন মাথাব্যথা, সর্দি, কাশি অনুরূপ কোনো সাধারণ রোগ-বালাইয়ের কারণে সিয়াম ভঙ্গ করা জায়েজ হবে না। মনে রাখতে হবে যে, রোগের কারণে যেসব সিয়াম ভঙ্গ হবে ঠিক অনুরূপ সংখ্যক সিয়াম পরে কাজা করতে হবে।
অসুস্থতার কারণে, সফরে থাকলে ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের বিবেচনায় রোজা রাখতে অক্ষম হন এবং পরে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা হলে সুস্থ হওয়ার পর ওই ব্যক্তিকে রোজার কাজা আদায় করতে হবে। আর যদি কোনো ব্যক্তি অসুস্থতা বা বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা রাখতে একেবারেই অক্ষম হন, অর্থাৎ তার দ্বারা রোজা রাখা কোনোভাবেই সম্ভব না হয়, তা হলে শরীয়ত তার জন্য ফিদিয়া আদায়ের ব্যবস্থা রেখেছে। যে রোগীর আরোগ্য লাভের আশা নেই তিনি রোজা না রেখে প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকিনকে খাওয়াবেন। কেননা তিনি বৃদ্ধ লোকের হেতুর অধিভুক্ত। (আল-মুগনি, ৪/৩৯৬)
রোগীর অবস্থা দুটো : ১. মোটেই রোজা রাখার সক্ষমতা না থাকা; তার জন্য রোজা না-রাখা ওয়াজিব। ২. কিছু শারীরিক ক্ষতি ও কষ্টের সাথে রোজা রাখতে সক্ষম হওয়া। এ ব্যক্তির জন্য রোজা না-রাখা মুস্তাহাব। এমতাবস্থায় কেবল অজ্ঞ লোকই রোজা রাখে। (কুরতুবি, ২/২৭৬)
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক