
রমজান মাস শিক্ষার মাস। দীক্ষা গ্রহণের মাস। এ মাসকে বলা হয় প্রশিক্ষণের মাস। এক মাস থেকে যে শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা হয়, বাকি ১১ মাসে সে অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হয়। ইবাদতের মৌসুম রমজানকে গনিমত হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণে মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। আর এক্ষেত্রে নিজ পরিবার-পরিজনকে ভুলে গেলে চলবে না। তাদেরকে সর্বাগ্রে বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন, ‘আপনি আপনার নিকটবর্তী পরিবার-পরিজনকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা, ২১৪)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে নানাভাবে তার পরিবারের সদস্যসহ স্ত্রীদের শিক্ষা দান করতেন। জ্ঞান বিতরণের মজলিস বসত তার তত্ত্বাবধানে। হাদিসের পাঠক মাত্রই জানেন, রমজানবিষয়ক অধিকাংশ হাদিস তার স্ত্রীদের থেকে বর্ণিত। স্ত্রীদের শিক্ষার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গুরুত্বারোপের উত্তম প্রমাণ এসব হাদিস।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কি মত, আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জ্ঞাত হই বা বুঝতে পারি যে আজকে লাইলাতুল কদর; তা হলে আমি কী দোয়া পাঠ করব?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, ‘তুমি দোয়া করবে, বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি। বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল সম্মানিত, আপনি ক্ষমা পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি, ৩৪৩৫)।
নারীদের ধর্মীয় জ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে পুরুষকে, বিশেষ করে স্বামীকে অবশ্যই যত্নবান হতে হবে এবং তার জন্য রমজানই সুন্দর ও উপযুক্ত সময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ব্যক্তির জন্য পাপ হিসেবে এ-ই যথেষ্ট যে, যার ভরণ-পোষণ তার দায়িত্ব তাকে সে বিনষ্ট করে দেয়।’ (মুসনাদে আহমদ, ৬৪৯৫)। সুতরাং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের নারীসমাজকে ধর্মীয় জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে তোলার ক্ষেত্রে রমজান মাসকে আমরা সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।
এ ছাড়া রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরের নারীদের বিভিন্নভাবে ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন রাখার ব্যবস্থা করতেন। আলী (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার পরিবারকে রমজানের শেষ দশ দিনে রাতে জাগিয়ে দিতেন। (তিরমিজি, ৭৯৫)।
আবু জর (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, মাসের তিন দিন অবশিষ্ট অবধি তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন না। তৃতীয় দিনে তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন, তার পরিবার ও স্ত্রীদের আহ্বান করলেন, এতটা দীর্ঘসময় তিনি জাগরণ করলেন যে, আমরা সাহরি পরিত্যাগের আশঙ্কা করলাম। (তিরমিজি, ৮০৬)।
অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, চার দিন অবশিষ্ট থাকা পর্যন্তও তিনি আমাদের নিয়ে রাত্রি যাপন করলেন না। অতঃপর যখন অবশিষ্ট ছিল মাত্র তিন দিন, তখন তিনি তার কন্যা ও স্ত্রীদের নিকট সংবাদ পাঠালেন এবং লোকেরা জমায়েত হলো। তিনি আমাদের নিয়ে এতটা সময় জাগরণ করলেন যে, সাহরি ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলো। (নাসায়ি, ১৩৬৪)।
জয়নব বিনতে উম্মে সালামা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন মাসের মাত্র দশ দিন অবশিষ্ট থাকত, তখন পরিবারের সক্ষম সবাইকে রাসুল রাত্রি জাগরণ করাতেন। (মারওয়াজি, কিয়ামু রমাজান, পৃষ্ঠা ৩১)।
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক