
নফল নামাজের মধ্যে সালাতুত তাসবিহ একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত, যা গুনাহ মাফ এবং আত্মশুদ্ধির জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ। সালাতুত তাসবিহ নামাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এতে সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার তাসবিহ বারবার পড়া হয়। এই নামাজটি আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর স্মরণে সংগতিপূর্ণভাবে গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার এক সুগম পথ।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের গুরুত্ব
জীবনে অন্তত একবার হলেও সালাতুত তাসবিহ পড়া। এটি নিয়মিত আমল করলে একজন মুমিন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং তার গুনাহ মাফ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এ নামাজের সুসংবাদ নবীজি (সা.) তাঁর চাচাকে দিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন নবীজি (সা.) আমার পিতা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.)-কে বললেন, চাচাজান, আমি কি আপনাকে উত্তম তাসবিহ শিক্ষা দেব না, যখন আপনি তা আদায় করবেন, আল্লাহ আপনার পূর্বাপর, নতুন-পুরোনো, ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ছোট-বড় সব ধরনের পাপ ক্ষমা করবেন।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম
সালাতুত তাসবির নামাজ মোট ৪ রাকাত। এর জন্য আপনাকে সাধারণ নিয়ত করতে হবে। আমি চার রাকাত নফল নামাজ সালাতুত তাসবিহ পড়ছি।
প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর যেকোনো সুরা পড়তে হবে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রতি রাকাতে ৭৫ বার তাসবিহ পড়া। সুতরাং, পুরো নামাজে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পড়া হবে। তাসবিহটি হলো- সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার
প্রথম রাকাতে, সানা পড়ার পর তাসবিহ ১৫ বার পড়তে হবে। এরপর সুরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সুরা পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। রুকুতে গিয়ে তাসবিহ ১০ বার এবং রুকু থেকে উঠে রাব্বানা লাকাল হামদ বলার পর তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। সিজদাতে গিয়ে সিজদার তাসবিহ পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার, এবং প্রথম সিজদা থেকে উঠে বসে তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। এভাবে প্রতি রাকাতে মোট ৭৫ বার তাসবিহ পড়তে হবে।
ভুলে তাসবিহ পড়লে কী করবেন?
যদি কোনো কারণে ভুলে যায় বা নির্দিষ্ট সংখ্যার কম পড়লে, পরবর্তী রোকনে এসে ভুলে যাওয়া তাসবিহের সংখ্যা আদায় করতে হবে। তবে, সাহু সেজদা করতে হলে তার মধ্যে তাসবিহ পড়া হবে না। তা ছাড়া আঙুল দিয়ে তাসবিহের সংখ্যা গণনা করা উচিত নয়।
জীবনে সালাতুত তাসবিহ নামাজের উপকারিতা
এ নামাজ পড়লে আল্লাহতায়ালা তার বান্দার দোয়া গ্রহণ করেন, বিশেষ করে জুমার রাতে এই নামাজের পরে দোয়া করলে আল্লাহতায়ালা কখনোই তা ফিরিয়ে দেন না। এটি একটি পরীক্ষিত আমল। যে জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান চায়, সালাতুত তাসবিহ তার জন্য এক বিশেষ উপায়। আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি অবশ্যই খুশি হন। যে আল্লাহর কাছে চায় না, আল্লাহ তার ওপর অসন্তুষ্ট হন।
লেখক : আলেম ও সাংবাদিক