
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলোর মধ্যে ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদ অন্যতম। এটি তার অনন্য স্থাপত্যশৈলী এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। মসজিদটি ধানমন্ডি ১২/১১ নম্বর সড়কে অবস্থিত এবং এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ধানমন্ডি লেক, যা মসজিদের সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করে।
এই মসজিদের স্থাপত্যের চেয়ে এর সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হলো এই মসজিদটি মহান আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি একটি আদর্শ সমাজ গঠন কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও ইসলামিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে এখানকার ইমাম-মুসল্লি ও এলাকাবাসী আত্মার আত্মীয়তে পরিণত হয়েছে।
অন্য মসজিদের মতো দৈনন্দিন কার্যক্রম, যেমন-পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সার্বিক নিরাপত্তা, ভোজনশালা ইতাদি তো আছেই। পাশাপাশি আছে বিভিন্ন আধুনিক কার্যক্রম। যাকে মৌলিকভাবে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদের কার্যক্রমকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
১. শিক্ষামূলক কার্যক্রম
২. সেবামূলক কার্যক্রম
শিক্ষা কার্যক্রম
মুসল্লিদের দ্বীন শিক্ষার কথা মাথায় রেখে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় মৌলিক ইসলামি জ্ঞানচর্চার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদ। যেমন- প্রতিদিন মাগরিবের নামাজের আগে দুই মিনিটে একটি করে মাসয়ালা শোনানো এবং ফজর নামাজের পর প্রতিদিন পবিত্র কোরআনের সংক্ষিপ্ত তাফসির করা, মুসল্লিদের বিশুদ্ধ ঈমান-আকিদা ও ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের সুবিধার্থে বয়স্ক কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা, স্কুলপড়ুয়া শিশু-কিশোরদের অনাবাসিক মাদরাসার ব্যবস্থা করা, যাতে তারা এখানে বিশুদ্ধ কোরআন তিলাওয়াত ও ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করতে পারে। আরও আছে মাদরাসায় পড়তে ইচ্ছুক শিশু-কিশোরদের জন্য মক্তব ও হিফজ বিভাগ।
মসজিদ যেহেতু একটি ইসলামি সমাজ পরিচালনার অন্যতম কেন্দ্র, তাই এখান থেকে সমাজসেবামূলক কিছু প্রকল্পও পরিচালিত হয়। যেমন- মাত্র ১০ টাকায় চিকিৎসাসেবা, প্রতিদিন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সকাল-সন্ধ্যা দুবেলা রোগী দেখেন। মাত্র ১০ টাকার টিকিট সংগ্রহের মাধ্যমে চিকিৎসা ও ওষুধ সেবা পাওয়া যায়। প্রতিদিন প্রায় এক শ জন রোগী এখান থেকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে থাকেন।
পাশাপাশি শীতকালে শীতবস্ত্র বিতরণ, দুর্যোগকালে ত্রাণ বিতরণ, অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে হুইলচেয়ার, সেলাই মেশিন ইত্যাদি বিতরণসহ বিভিন্ন রকম সহায়তা করা হয়। বিশেষ করে যারা নও-মুসলিম হন, তাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা মসজিদ থেকেই করার চেষ্টা করা হয়। গরিব ও দুস্থ শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতার জন্য আছে বৃত্তির ব্যবস্থা।
এ ছাড়া কোনো মুসলিম মারা গেলে তার লাশ সৎকারের জন্য মসজিদের পক্ষ থেকে আছে মৃতদেহ গোসলের কক্ষ। যেখানে ন্যূনতম ফি প্রদানের মাধ্যমে মৃতদেহ গোসল থেকে শুরু করে কাফন-দাফনে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়।
এ মসজিদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, মুসল্লিদের জন্য এখানকার দরজা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, যে কেউ যেকোনো সময় এখানে এসে নামাজ/ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে এবং খুশির দিনে যেমন মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের স্মরণ করে, তেমনি বিপদের সময়ও সহযোগিতার জন্য ২৪ ঘণ্টাই ইমাম সাহেবের দ্বারস্থ হওয়ার জন্য মসজিদের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়।
লেখক : আলেম ও সাংবাদিক