
লাইলাতুল কদর বা শবে কদর হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ঠ রাত, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতের ইবাদত, তেলাওয়াত, কিয়াম ও অন্যান্য আমল হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে বিবেচিত। তবে এই রাতটি কবে, তা নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে, তবে পরে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে এটি খুঁজে পাবে।’ (বুখারি, ২০১৪)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এ রাতের ইবাদত অন্য হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম।’ (তাফসিরে ইবনে আব্বাস, পৃষ্ঠা: ৬৫৪) এর ভাবার্থ হলো, ‘এ রাতের ইবাদত, তেলাওয়াত, কিয়াম ও অন্যান্য আমল হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও উত্তম।’ (ইবনে কাসির, ১৮/২২৩)
যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় এ রাতে ইবাদত করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (মুসলিম, হাদিস: ৭৬০; বুখারি, হাদিস: ২০১৪)
এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে বুঝবেন আজ মনিমান্বিত সেই রাত? হাদিসে বর্ণিত এ রাতের কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো-
১. রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাত
শবে কদর রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতে হবে। বিশেষত, ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ তারিখের রাতটি হতে পারে শবে কদর।
২. আবহাওয়া বিশেষ থাকবে
শবে কদর রাতের আবহাওয়া হবে নাতিশীতোষ্ণ, অর্থাৎ তীব্র গরম বা শীত থাকবে না। রাতে গভীর অন্ধকারেও ভাসবে না, বরং স্নিগ্ধ ও শান্ত অনুভূতি থাকবে।
৩. মৃদুমন্দ বাতাস
এ রাতে মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হবে, যা শান্তির অনুভূতি তৈরি করবে এবং ইবাদতের সময় বিশেষ তৃপ্তি দেবে।
৪. ইবাদত করবে তৃপ্তি অনুভব
শবে কদরের রাতে ইবাদত করতে করতে মানুষ বিশেষ এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব করবে। তাদের মনে শান্তি এবং সন্তুষ্টি থাকবে, যা স্বাভাবিক রাতের ইবাদত থেকে আলাদা।
৫. আল্লাহ স্বপ্নে জানাতে পারেন
এ রাতে ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে শবে কদরের রাতের ব্যাপারে জানিয়ে দিতে পারেন, যা এই রাতের একটি আলামত হতে পারে।
৬. বৃষ্টির সম্ভাবনা
শবে কদর রাতে বৃষ্টিও হতে পারে, যা এই রাতের বরকতের চিহ্ন হিসেবে ধরা হয়। (মুসনাদে আহমাদ, ২০৯৩০)
৭. সূর্যোদয়ের আলোকরশ্মি
শবে কদরের পর সূর্যোদয় হবে হালকা আলোকরশ্মি নিয়ে, যা পূর্ণিমার চাঁদের মতো হবে। এটি একটি বিশিষ্ট আলামত হিসেবে ধরা হয়। (ইবনে খুজাইমা, ২১৯১)
৮. ইবাদতের সময় সওয়াব বৃদ্ধি
এই রাতের ইবাদত অন্য হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। ফলে একজন মুসলমান তার অতীত গুনাহ থেকে মুক্তি পেয়ে অতিরিক্ত সওয়াব লাভ করতে পারেন।
৯. শবে কদরের রাতের ফজিলত কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে
শবে কদর যেহেতু বছরের শ্রেষ্ঠ রাত, তাই এর ফজিলত কেয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী হবে এবং যারা এই রাতে ইবাদত করবেন, তারা বিশেষ পুরস্কৃত হবেন।
১০. শবে কদরের রাতটি আল্লাহর রহমত ও বরকতের রাত
শবে কদর রাতটি এমন একটি রাত, যেখানে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের ওপর বিশেষ রহমত ও বরকত বর্ষণ করেন। এই রাতে যারা ইবাদত করেন, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও সুখ লাভ করবেন।
লেখক : আলেম ও সাংবাদিক