ঢাকা ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে মেলবে যে প্রতিদান

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে মেলবে যে প্রতিদান
ফোণে অন্যের সাথে রেগে কথা বলার দৃশ্য । ছবি সংগৃহীত

শয়তান সাধারণত ঝগড়া-বিবাদ ও দ্বন্দ্বের মাধ্যমে মানুষের রাগ উসকে দেয়। রাগের সময় মানুষকে নিয়ন্ত্রণে আনা তার পক্ষে সহজ। এর মাধ্যমে শয়তান মানুষকে তার কাঙ্ক্ষিত অকল্যাণের দিকে ঠেলে দেয়। সৃষ্টির সূচনাতেই আদম (আ.) এবং তার সন্তানদের এ সহজাত প্রবৃত্তি সম্পর্কে শয়তান খুব ভালোভাবে অবহিত ছিল।


আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা যখন জান্নাতে আদম (আ.)-এর আকৃতি গঠন করলেন, তখন আল্লাহ তার আকৃতিকে যত দিন ইচ্ছা ফেলে রাখলেন। এ সময় ইবলিস তার চতুর্দিকে ঘুরাফেরা করতে লাগল। দেখতে দেখতে সে অনুভব করল, এটি একটি শূন্য কাঠামো। তখন সে বুঝল যে, (আল্লাহ) এমন একটি সত্তা সৃষ্টি করেছেন, যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬১১)


এই বর্ণনার বিভিন্ন অর্থের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ হলো—রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা কঠিন হলেও, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সুন্নাহর মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে রাগের মুহূর্তে নিজেকে সংযত রাখতে হয়, যাতে শয়তানের ফাঁদে পড়া থেকে বাঁচা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত বীর সেই ব্যক্তি নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং প্রকৃত বাহাদুর সে, যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংবরণ করতে সক্ষম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৬৩)


রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, রাগ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহতায়ালা কত বড় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমরা ছুটে যাও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের মতো। এটি মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতার সময়ে (অর্থ) খরচ করে, যারা নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪)


মুয়াজ ইবনে আনাস জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হলেও ক্রোধ সংবরণ করে, (এজন্য) কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সব সৃষ্টির সামনে ডেকে বলবেন, তুমি যে হুর চাও, পছন্দ করে নিয়ে যাও।’ (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস: ৪৭৭৭)


এই সুন্নাহ আমাদের জন্য এক চমৎকার শিক্ষা। রাগ নিয়ন্ত্রণ করা কেবল আমাদের দুনিয়ার শান্তি ও সুখের জন্য নয়, বরং আখেরাতে আমাদের জন্য এক বিশাল পুরস্কার অপেক্ষা করছে। রাগ সংবরণ করার মাধ্যমে আমরা শয়তানের ফাঁদে না পড়তে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হই। এটি আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের উন্নতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পথ।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

স্বপ্নে সহবাস করতে দেখার ব্যাখ্যা কী?

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৮ এএম
স্বপ্নে সহবাস করতে দেখার ব্যাখ্যা কী?
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

স্বপ্ন মানবমনের এক জটিল অধ্যায়। ঘুমের গভীরে আমরা এমন কিছু দৃশ্য দেখি, যা আমাদের বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি অথবা অনাগত ভবিষ্যতের পূর্বাভাস বহন করে। স্বপ্নে সহবাস দেখা একটি স্বাভাবিক বিষয় হলেও এর বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। এই স্বপ্ন আমাদের অবচেতন মনের কামনা, জীবনের কল্যাণ-অকল্যাণ এবং কিছু ক্ষেত্রে ভুল পথে চালিত হওয়ার ইঙ্গিতও দিতে পারে।

 

পরিচিত নারীর সাথে সহবাস: যদি কোনো ব্যক্তি স্বপ্নে কোনো বিখ্যাত বা সম্ভ্রান্ত নারীর সাথে সহবাস করতে দেখে, তবে এর ব্যাখ্যা হলো স্বপ্নদ্রষ্টার পরিবারের সদস্যরা পার্থিব জীবনে উন্নতি ও কল্যাণ লাভ করবে। তবে যদি সহবাসের কাছাকাছি গিয়েও তা সম্পন্ন না হয়, তবে বুঝতে হবে তার পরিবার পূর্বের তুলনায় কম সম্পদ লাভ করবে। কোনো পুরুষকে চুম্বন করা অথবা কামোদ্দীপনার সাথে সহবাস করার স্বপ্ন দেখলে, তা সম্পদ হ্রাসের ইঙ্গিত বহন করে।

 

পুরুষের সাথে সম্পর্ক: স্বপ্নে কোনো পুরুষকে কামোদ্দীপক চুম্বন করতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা সেই ব্যক্তির কাছ থেকে উপকৃত হবে। অন্যদিকে, কোনো মৃত ব্যক্তির সাথে সহবাসের স্বপ্ন দেখলে এবং যদি সেই বাড়িটি মৃত ব্যক্তির কি না তা স্পষ্ট না হয়, তবে তা স্বপ্নদ্রষ্টার মৃত্যুর পূর্বাভাস হতে পারে। তবে যদি বাড়িটি মৃত ব্যক্তিরই নির্দিষ্ট হয়, তবে বুঝতে হবে তার সম্পদ কমে যাবে।

 

নিষিদ্ধ পথে কামনা: যদি কোনো ব্যক্তি স্বপ্নে কোনো নারীর সাথে পায়ুপথে সহবাস করে, তবে এর অর্থ হলো সে কোনো কাজ অবৈধ বা অপ্রাকৃতিক উপায়ে হাসিল করার চেষ্টা করবে। বাদশাহর নিষিদ্ধ স্থানে প্রবেশ করে অথবা স্ত্রীর ঋতুবতী থাকা অবস্থায় সহবাস করার স্বপ্ন দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা হারাম বা অবৈধ কাজে লিপ্ত হবে।

 

অপূর্ণ চাহিদা ও তাড়াহুড়ো: ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার পূর্বে কোনো নারীর সাথে সহবাসের স্বপ্ন দেখলে, বুঝতে হবে স্বপ্নদ্রষ্টা তার স্ত্রীর মাধ্যমে কোনো প্রয়োজন পূরণ করতে চাইবে এবং স্ত্রী কোনো কাজে বিলম্ব করলে সে দ্রুততার আশ্রয় নেবে। এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.)-এর মূল্যবান ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

বি.দ্র. এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.)-এর মূল্যবান ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

 

পানি সংরক্ষণে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকনিদের্শনা

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৪ পিএম
পানি সংরক্ষণে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকনিদের্শনা
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

বর্তমান যুগে পরিবেশের সমস্যাগুলোর মধ্যে পানি সংকট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলে পানির অভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। আর এর কারণে মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পানির অপচয় রোধ এবং পানি সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় হলো, ইসলাম এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষায় আমরা পাই এক সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা, যার মাধ্যমে আমরা পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে পারি।

 

রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, পানির অপচয় শুধু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, এটি একটি বড় পাপও বটে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে দেখা যায়, যখন সাদ (রা.) অজু করছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে প্রশ্ন করেন, ‘এই অপচয় কেন?’ সাদ (রা.) বলেন, ‘অজুতেও কি অপচয় হতে পারে?’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) জবাব দেন, ‘হ্যাঁ, যদিও তুমি প্রবহমান নদীতে থাকো।‘ (সুনানুত তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৩৩)

 

এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিষ্কারভাবে বুঝিয়েছেন যে, পানি ব্যবহার করার সময়ও অপচয় থেকে বিরত থাকা জরুরি, যদিও তা একটি বহমান নদী হয়। কেননা, কোনো একটি প্রাকৃতিক সম্পদও অযথা অপচয় করা ইসলামিক শিক্ষায় অগ্রাহ্য। তিনি আমাদের শেখান যে, অল্প পরিমাণে পানি দিয়েও সঠিকভাবে অজু করা সম্ভব, যদি আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করি।

 

আরেকটি হাদিসে, আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক সা (৪ মুদ) থেকে পাঁচ মুদ পানি দিয়ে গোসল করতেন এবং অজু করতেন এক মুদ দিয়ে। (ফাহমুর রিয়াজি, পৃ. ২৮) এই পরিমাণ পানি খুবই কম, প্রায় ৭৯৬ মিলিলিটার পানি দিয়েই তিনি গোসল করতেন এবং অজু করতেন। এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.) পানির ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় শিক্ষা দিয়েছেন—কীভাবে অল্প পরিমাণে পানি দিয়েও শরীরের পবিত্রতা বজায় রাখা সম্ভব। এটি আমাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। আজ আমরা যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদগুলো যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করছি, সেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। যদি আমরা ইসলামিক শাসনব্যবস্থার শিক্ষা অনুসরণ করি, তবে আমরা বিশ্বের যেকোনো সংকটকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব। বিশেষত পানির অপচয় রোধ করতে এবং পানি সংরক্ষণে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। অতএব আসুন, আমরা সবাই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই মহান সুন্নাহ অনুসরণ করে সুস্থ, সুন্দর এক পৃথিবী গড়ি ।

 

লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

স্বপ্নে মসজিদ দেখা কিসের ইঙ্গিত?

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
স্বপ্নে মসজিদ দেখা কিসের ইঙ্গিত?
দৃষ্টিনন্দন মসজিদের ছবি। সংগৃহীত

স্বপ্ন মানবমনের রহস্যময় জগৎ, যা আমাদের ভেতরের অনুভূতি, ভবিষ্যতের পূর্বাভাস এবং আধ্যাত্মিক উপলব্ধির বার্তা বহন করে। ইসলামে, মসজিদ বা কাবার মতো পবিত্র স্থান স্বপ্নে দেখা অত্যন্ত শুভ ও তাৎপর্যপূর্ণ। মসজিদ কেবল ইবাদতের স্থান নয়, এটি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের চাবিকাঠি এবং আখিরাতের পথের দিশারি। 

স্বপ্নে মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষের আগমন এবং অবাধে প্রবেশ করার সুযোগ— এসবই কল্যাণ ও বরকতের লক্ষণ। মসজিদ আখিরাতের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে, ঠিক যেমন ময়লার স্তূপ পার্থিব মোহ ও লোভের প্রতীক। স্বপ্নে মসজিদ কখনো পবিত্র কাবা শরিফ, ন্যায়বিচারের স্থান, জ্ঞানীর মজলিস, হজের মিলনক্ষেত্র বা সত্যের পথে জিহাদের ময়দানের প্রতীক হতে পারে। এটি মূলত সাওয়াব, সাহায্য ও কল্যাণের এক পবিত্র আশ্রয়স্থল।

যদি কোনো ব্যক্তি স্বপ্নে নিজেকে মসজিদ নির্মাণ করতে দেখে, তবে এর অর্থ হলো তার মধ্যে নেতৃত্ব, ন্যায়বিচার বা জ্ঞান বিতরণের মতো গুণাবলি রয়েছে। স্বপ্ন অনুযায়ী, সে বিচারকের আসনে বসতে পারে, ফতোয়া দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে অথবা একজন বিদ্বান আলেম হিসেবে সমাজে সম্মানিত হতে পারে। লেখক বা প্রকাশকের জন্য এই স্বপ্ন তাদের জ্ঞান ও লেখনীর মাধ্যমে মানুষের উপকারিতার ইঙ্গিত দেয়। অবিবাহিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি বিবাহের শুভ সংবাদ বয়ে আনতে পারে।

তবে, যদি মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্য জাগতিক হয়, যেমন ধনসম্পদ লাভ, তবে এর অর্থ দাঁড়ায় তার উপার্জনের পথ হবে ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘস্থায়ী। এই নির্মাণকার্য কোনো কল্যাণকর প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্রামাগার বা দাতব্য ভাণ্ডারও হতে পারে, যা সদকায়ে জারিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে।

অন্যদিকে, স্বপ্নে মসজিদ ধ্বংস করতে দেখা একটি অশুভ লক্ষণ, যা ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়। মসজিদের পবিত্র স্থানে দোকান বা গর্ত নির্মাণ করা আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, দুনিয়ার প্রতি অত্যধিক আকর্ষণ এবং দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়ার লক্ষণ। এটি পারিবারিক কলহ বা দাম্পত্য জীবনে অস্থিরতাও ডেকে আনতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, স্বপ্নে মসজিদ দেখা কেবল একটি সাধারণ স্বপ্ন নয়, বরং এটি আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের গভীর বার্তা বহন করে। এই স্বপ্ন আমাদের আত্মিক পথে আরও সতর্ক ও সচেতন হতে এবং আল্লাহর পথে অবিচল থাকতে উৎসাহিত করে। তবে এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.)-এর মূল্যবান ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

মধু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরীক্ষিত ওষুধ

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
মধু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরীক্ষিত ওষুধ
মৌমাছি ও মধুর ছবি। সংগৃহীত

আমরা সবাই জানি, অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শেখালেন, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করা সুন্নাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ব্যাধির প্রতিকার রয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭৩০) এ জন্য সঠিক সময়ে ও যথাযথ উপায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে, আর আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা আরোগ্য লাভ করব।

চিকিৎসা সম্পর্কিত বিভিন্ন হাদিসের মধ্যে একটি খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো মধু পান। মধু একটি বিশেষ উপাদান, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী, বিশেষত পেটের ব্যথায়। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, ‘তাকে মধু পান করাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৮৬)

এই ঘটনা বারবার ঘটেছিল। লোকটি প্রথমবার মধু পান করলেও তাঁর পেটের ব্যথা সেরে ওঠেনি। তখন আবারও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে মধু পান করতে বলেছেন। দ্বিতীয়বারও যখন ফলপ্রসূ কিছু হয়নি, তখন তিনি তৃতীয়বারও একই নির্দেশ দেন। অবশেষে লোকটি আবার এসে জানালেন যে, মধু পান করার পর তাঁর পেট ভালো হয়ে গেছে। এই ঘটনাটি আমাদের শেখায় যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কিছু নির্দেশ দেন, তখন তার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা জরুরি।

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু শারীরিক চিকিৎসা সম্পর্কেই বলেননি, বরং তিনি মধুর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন। একবার যদি মধু পান করা ফলপ্রসূ না হয়, তবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বারে চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় রোগের প্রতিকার হবে, তবে আমাদের বিশ্বাস থাকতে হবে।

কোরআনের সুরা নাহলে বলা হয়েছে, ‘তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার রয়েছে।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৬৯) এটি মধুর উপকারিতা এবং এর মাধ্যমে রোগের প্রতিকার পাওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই আয়াতের দ্বারা আমাদেরকে মধুর উপকারিতা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

মধু পান কেবলমাত্র একটি সুন্নাহ নয়, বরং এটি আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। তবে, এর অর্থ এই নয় যে আমরা ডাক্তারদের কাছে যেতে নিষেধ। বরং ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া উচিত, সেই সঙ্গে মধু পান করা আমাদের জন্য একটি সুন্নাহ হিসেবে পালন করা উচিত, যাতে আমরা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় সুন্নাহ অনুসরণ করে বিরাট পুরস্কার অর্জন করতে পারি।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

 

পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো ইসলামের একটি মহৎ শিক্ষা

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো ইসলামের একটি মহৎ শিক্ষা
পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর ছবি । সংগৃহীত

সমাজে শান্তি, সুরক্ষা এবং সহযোগিতা স্থাপন করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর মধ্যে এমন অনেক কাজ রয়েছে, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ ও সুন্দর করে তোলে। এক্ষেত্রে এমন অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না- এই অজুহাতে অনেকে এড়িয়ে যান। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের উৎসাহিত করেছেন আমাদের নিজেদের ছোট ছোট উদ্যোগ দিয়ে সমাজকে আরও সুন্দর, মানবিক ও সুষ্ঠু করে তুলতে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহর হলো পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো একটি সদকা। (সহিহ বুখারি, ২৮২৭) অর্থাৎ, আমরা যখন রাস্তার ওপর পড়ে থাকা কাঁটা, পাথর বা অন্য কোনো ঝুঁকিপূর্ণ বস্তু সরিয়ে দিই, তখন আল্লাহর কাছে তা একটি সদকা হিসেবে গণ্য হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শুধু একে অপরকে সাহায্য করার জন্য উৎসাহিত করেননি, বরং সমাজে এমন কাজ করার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন, যেগুলোতে কোনো ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট উপকারিতার পরিচয় থাকে না। যেমন রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো। এ কাজটি করতে গিয়ে একজন ব্যক্তির কোনো প্রত্যাশা বা নিজের সুবিধার উদ্দেশ্য থাকতে পারে না, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানুষের উপকারের উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দেহের প্রতিটি জোড়ার বিনিময়ে মানুষের সদকা আদায় করা কর্তব্য, সূর্য ওঠে এমন প্রতিদিন দুই ব্যক্তির মাঝে সুবিচার করা একটি সদকা, কাউকে সাহায্য করতে তাকে বাহনে উঠিয়ে দেওয়া বা তার মালপত্র তাতে তুলে দেওয়া একটি সদকা, ভালো কথা একটি সদকা, নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে গমনের প্রতিটি কদম একটি করে সদকা এবং পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা একটি সদকা (সহিহ মুসলিম, ১০০৯)

এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বিভিন্ন সামাজিক কাজের প্রতি উৎসাহিত করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা শুধু নিজেরাই উপকৃত হই না, বরং সমাজের অন্য সদস্যদের জন্যও উপকারী হতে পারি। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো একদম সহজ একটি কাজ। কিন্তু এর মাধ্যমে আমাদের সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর কাছে অনেক পুরস্কার অর্জন করা যায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি উল্লেখযোগ্য হাদিসে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি একদিন রাস্তায় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখে সেটি সরিয়ে রাখেন এবং আল্লাহতায়ালা তাঁর এই কাজের কারণে তাকে ক্ষমা করে দেন (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯১৪) কেবল একটি কাঁটাযুক্ত ডাল সরিয়েই একজন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে এত বড় পুরস্কার লাভ করেছেন! এটি আমাদের শেখায়, যে কাজটি সমাজে কোনো বড় পরিবর্তন আনতে পারে না বলে মনে হয়, সেটিও আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং পুরস্কৃত হতে পারে।

পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো শুধু একটি সুন্নাহ নয়, এটি একটি মহান সামাজিক দায়িত্ব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের একটি উপায়। তাই আসুন, আমরা সবাই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই মহান সুন্নাহ অনুসরণ করি এবং সমাজে শান্তি, সহযোগিতা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করি।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক