
আমাদের জীবনের প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস প্রকৃতির একটি অমূল্য দান। অক্সিজেন, যা আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য, তা প্রকৃতি থেকেই আসে। গাছপালা সেই অক্সিজেনের প্রধান উৎস। মহান আল্লাহতায়ালা মানুষকে অক্সিজেনসহ অসংখ্য ও অগণিত নিয়ামত দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। আল্লাহ তো অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।’ (সুরা নাহল : ১৮)।
মানুষ যাতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে, সে জন্য আল্লাহতায়ালা নানা জাতীয় বৃক্ষ তথা উদ্ভিদ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি ও তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদ্গত করেছি, অনুরাগী সব বান্দার জন্য জ্ঞানও উদাহরণস্বরূপ। আর আমি আকাশ থেকে কল্যাণকর বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং এর দ্বারা উদ্যান ও পরিপক্ব শস্যরাজি উদ্গত করি, যেগুলোর ফসল আহরণ করা হয়। আছে সমুন্নত খেজুরগাছ যাতে রয়েছে কাঁদি কাঁদি খেজুর, বান্দাদের জন্য রিজিক। বৃষ্টির পানি দ্বারা মৃত ভূমিকে জীবিত করি, অনুরূপই পুনরুত্থান।’ (সুরা কাফ : ৭-১১)
এসব বৃক্ষরাজি বা উদ্ভিদই অতিপ্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং মানবদেহ থেকে নিঃসরিত ক্ষতিকর কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে পরিবেশকে দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য রাখে। পৃথিবী থেকে বৃক্ষরাজি বা উদ্ভিদ কমে গেলে অক্সিজেন সংকট, কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ হ্রাস ও পরিবেশের ভারসাম্যহীনতাসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ জন্য ইসলামে বেশি বেশি বৃক্ষরোপণের প্রতি খুবই গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৫৫০ লিটার বা ১৯ কিউবিক ফুট বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করে (হেলথ ডট হাউ স্টাফ ওয়ার্কস ডটকম)। যার জন্য আল্লাহকে কোনো দিন কোনো অর্থ বা বিনিময় দিতে হয়নি। ধনী-গরিব সবাই একইভাবে এই নিয়ামত ভোগ করে। অথচ বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী ১.৪ কিউবিক মিটারের একটি সিলিন্ডার কিনতে গুনতে হচ্ছে ৪৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। যার মধ্য থেকে খালি সিলিন্ডারের দাম বাবদ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বাদ দিলেও শুধু ১.৪ কিউবিক অক্সিজেনের দাম দাঁড়ায় ২২ থেকে ২৭ হাজার টাকা। অবস্থা ও সময় অনুযায়ী যার মূল্য আরও অনেক বেশি হতে পারে। অর্থাৎ স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দুই লাখ ৭১ হাজার থেকে ৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকার অক্সিজেন গ্রহণ করে। আর সারা জীবনের ক্ষেত্রে এই অঙ্কটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
বৃক্ষরোপণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে বিশ্বনবি (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করে এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তবে তা উৎপাদনকারীর জন্য সদকাস্বরূপ গণ্য হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবি (সা.) বলেছেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে, কেয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি রোপণ করবে।’ (বুখারি, আদাবুল মুফরাদ, মোসনাদে আহমাদ)।
জীবজগতের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ও পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে তথা সার্বিক বিবেচনায় বিনা প্রয়োজনে বৃক্ষরাজি কাটা বা ধ্বংস করাকেও ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নবিজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে, আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।’ (আবু দাউদ, বায়হাকি)।
মানুষ বায়ু বা বাতাস থেকে বা বাতাসের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে। এই বায়ু বা বাতাসও মহান আল্লাহর সৃষ্টি ও অনন্য নিয়ামত। যেমন পবিত্র কোরআনে এসেছে আল্লাহর বাণী হলো, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। এর পর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছে আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন। এর পর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য থেকে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি (আল্লাহ) তার বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছে তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা রুম: ৪৮)।
মোট কথা, অক্সিজেনের উৎপাদন বা সৃষ্টি ও পরিবেশন বা গ্রহণের মাধ্যম সবই মহান আল্লাহ কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত এবং আল্লাহর ইচ্ছা ও রহমত থাকে বলেই প্রতিটি মানুষ নিজের জন্য নির্ধারিত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আপনার যে কল্যাণ হয়, তা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ (সুরা নিসা : ৭৯)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘আল্লাহ মানুষের জন্য অনুগ্রহের মধ্য থেকে যা খুলে দেন, তা ফেরানোর কেউ নেই এবং তিনি যা বারণ করেন, তা কেউ প্রেরণ করতে পারে না তিনি ব্যতীত। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা ফাতির : ২)।
লেখক: প্রাবন্ধিক