
বর্তমান যুগে পরিবেশের সমস্যাগুলোর মধ্যে পানি সংকট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলে পানির অভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। আর এর কারণে মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পানির অপচয় রোধ এবং পানি সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় হলো, ইসলাম এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষায় আমরা পাই এক সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা, যার মাধ্যমে আমরা পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে পারি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, পানির অপচয় শুধু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, এটি একটি বড় পাপও বটে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে দেখা যায়, যখন সাদ (রা.) অজু করছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে প্রশ্ন করেন, ‘এই অপচয় কেন?’ সাদ (রা.) বলেন, ‘অজুতেও কি অপচয় হতে পারে?’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) জবাব দেন, ‘হ্যাঁ, যদিও তুমি প্রবহমান নদীতে থাকো।‘ (সুনানুত তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৩৩)
এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিষ্কারভাবে বুঝিয়েছেন যে, পানি ব্যবহার করার সময়ও অপচয় থেকে বিরত থাকা জরুরি, যদিও তা একটি বহমান নদী হয়। কেননা, কোনো একটি প্রাকৃতিক সম্পদও অযথা অপচয় করা ইসলামিক শিক্ষায় অগ্রাহ্য। তিনি আমাদের শেখান যে, অল্প পরিমাণে পানি দিয়েও সঠিকভাবে অজু করা সম্ভব, যদি আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করি।
আরেকটি হাদিসে, আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক সা (৪ মুদ) থেকে পাঁচ মুদ পানি দিয়ে গোসল করতেন এবং অজু করতেন এক মুদ দিয়ে। (ফাহমুর রিয়াজি, পৃ. ২৮) এই পরিমাণ পানি খুবই কম, প্রায় ৭৯৬ মিলিলিটার পানি দিয়েই তিনি গোসল করতেন এবং অজু করতেন। এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.) পানির ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় শিক্ষা দিয়েছেন—কীভাবে অল্প পরিমাণে পানি দিয়েও শরীরের পবিত্রতা বজায় রাখা সম্ভব। এটি আমাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। আজ আমরা যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদগুলো যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করছি, সেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। যদি আমরা ইসলামিক শাসনব্যবস্থার শিক্ষা অনুসরণ করি, তবে আমরা বিশ্বের যেকোনো সংকটকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব। বিশেষত পানির অপচয় রোধ করতে এবং পানি সংরক্ষণে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। অতএব আসুন, আমরা সবাই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই মহান সুন্নাহ অনুসরণ করে সুস্থ, সুন্দর এক পৃথিবী গড়ি ।
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক