
ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, প্রতিশ্রুতি রক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমানত। এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য— ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে। আল্লাহতায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী, মুমিনদের অবশ্যই তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুনাফিকের তিনটি লক্ষণ— মিথ্যা বলা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা এবং আমানত খিয়ানত করা।’ (বুখারি, হাদিস: ৩২)
প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা বা আমানত খিয়ানত করা মুনাফিকের নিদর্শন। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যার মধ্যে এই চারটি স্বভাব রয়েছে, সে খাঁটি মুনাফিক।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৩) অর্থাৎ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা ইমানের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করো, নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে (কিয়ামতের দিন) তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৪)
প্রতিশ্রুতি রক্ষা একদিকে যেমন আল্লাহর নির্দেশ, তেমনি সমাজে বিশ্বাস ও সম্মান বজায় রাখার জন্যও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম— এই তিনটি প্রধান আমানতকে সঠিকভাবে রক্ষা করা মুমিনের অন্যতম গুণ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, তারা জান্নাতের উত্তরাধিকারী হবে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ৮-১১)
অতএব, প্রতিশ্রুতি রক্ষা কেবল ব্যক্তিগত আস্থা ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়, ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্বও বটে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমানতসমূহ তার প্রকৃত হকদারগণের নিকট পৌঁছে দাও।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৫৮) যারা তাদের প্রতিশ্রুতি এবং আমানত রক্ষা করে, তারা আল্লাহর নিকটে শ্রেষ্ঠ হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একজন সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী আখিরাতে নবীগণ, সিদ্দিকগণ এবং শহীদগণের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১২০৯)
প্রতিশ্রুতি রক্ষা ইমানের মূল ভিত্তি এবং এটি মুমিনের খাঁটি পরিচয়। আমাদের জীবনে প্রতিটি আমানত, প্রতিশ্রুতি এবং কর্তব্য রক্ষা করা, পরকালে আল্লাহর কাছে আমাদের সফলতার চাবিকাঠি হবে। ইনশা আল্লাহ।