ঢাকা ১১ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
English

হজের ইতিহাস

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
হজের ইতিহাস
প্রাচীন কালের কাবা ঘরের ছবি। সংগৃহীত

হজ শুধু একটি ইবাদত নয়, এটি ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ এবং মুসলমানদের জীবনের এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। এই পবিত্র সফর বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহকে এক কাতারে শামিল করে, যেখানে আল্লাহর প্রতি পরম আনুগত্য ও দাসত্বের সুর প্রতিধ্বনিত হয়। হজের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, এর গভীর তাৎপর্য এবং মানবজীবনে এর প্রভাব অনন্য। কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা হজের উৎপত্তি ও মাহাত্ম্য অনুধাবন করব। ইনশাআল্লাহ। 

হজের ইতিহাস ও ইসলামের পূর্ণতা

হজের ইতিহাস সুপ্রাচীন, যা ইসলামের আবির্ভাবের বহু আগে থেকেই এই অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রথা হিসেবে প্রচলিত ছিল। প্রাক-ইসলামিক যুগে আরবের বিভিন্ন গোত্র পবিত্র কাবাঘরের প্রতি অগাধ ভক্তি প্রদর্শন করত। যদিও সেই সময় শিরক ও কুসংস্কারে পরিপূর্ণ ছিল তাদের আচার-অনুষ্ঠান। কালের বিবর্তনে হজের মূলনীতি থেকে সরে গিয়ে নানাবিধ কুপ্রথা সেখানে স্থান করে নিয়েছিল।

১. জাহেলিয়া যুগ: ইসলাম আগমনের আগে কাবাঘর বিভিন্ন আরব জাতির মিলনকেন্দ্র হলেও, সেখানে পৌত্তলিকতা ও নানা অপকর্ম বিস্তার লাভ করেছিল। অশ্লীলতা, পাপাচার ও নৈতিক অবক্ষয় ছিল সেই সময়ের হজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসলামের আগে হজের অনেক নিয়ম পরিবর্তিত হয়ে বিকৃত রূপ ধারণ করেছিল। যা মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বিধিবিধানের মাধ্যমে সংশোধিত হয়।

২. ইসলামের আবির্ভাব (সপ্তম শতাব্দী): ইসলামের আগমন হজের বিধানকে সুস্পষ্টভাবে কোরআন ও হাদিসের আলোকে প্রতিষ্ঠা করে। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা মূলত আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহীম (আ.) ও তার ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.) কর্তৃক শুরু হয়েছিল। যখন ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর আদেশে কাবাঘরের পুনর্নির্মাণ করেন, তখনই আল্লাহ তাঁকে হজের বিধান দান করেন।

কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই ঘরের হজ করা তার জন্য আবশ্যক।’ (সুরা ইমরান, ৯৭) এই আয়াতের মাধ্যমে ইসলামিক যুগে হজের ফরজ হওয়া স্পষ্ট হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় হিজরত করার পর হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। যা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

 

যে আমলে প্রশান্তিময় হবে সন্ধ্যা নিরাপদে কাটবে রাত

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম
যে আমলে প্রশান্তিময় হবে সন্ধ্যা নিরাপদে কাটবে রাত
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

দিনের ক্লান্তি শেষে যখন সন্ধ্যা নামে, মুমিনের জন্য আসে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। রাতের বেলায় কিছু বিশেষ আমল রয়েছে, যা আমাদের সারারাতকে বরকতময় এবং নিরাপদ করতে পারে। এই আমলগুলো শুধু আত্মিক শান্তিই বয়ে আনে না, বরং আমাদের দুশ্চিন্তামুক্ত ও প্রশান্তিময় ঘুমের ব্যবস্থা করে।

ক্ষমা প্রার্থনা ও জান্নাতের সোপান
প্রতিদিন সন্ধ্যায় যে আমলটি মুমিনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় হতে পারে, তা হলো 'সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার' বা শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার। নবিজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনের বেলায় বিশ্বাসের সাথে এটি পাঠ করে এবং সন্ধ্যার আগে ইন্তেকাল করে, সে জান্নাতের অধিবাসী হবে। আর যে রাতের বেলায় এটি পাঠ করে এবং সকাল হওয়ার আগে ইন্তেকাল করে, সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে।

দোয়াটি হলো: আল্লা-হুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানি ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লি, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমতো আপনার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির ওপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে যে নেয়ামত দিয়েছেন, আমি তা স্বীকার করছি এবং আমার অপরাধও স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে মাফ করে দিন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া পাপরাশি ক্ষমা করার কেউ নেই।’ (বুখারি, ৬৩০৬)

অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা ও আল্লাহর প্রশংসা
সন্ধ্যায় কিছু নির্দিষ্ট জিকির ও দোয়া পাঠ করা সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার ঢাল হিসেবে কাজ করে-

১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি: প্রতিদিন সন্ধ্যায় ১০০ বার 'সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি' (অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি) পাঠ করলে কিয়ামতের দিন এর চেয়ে উত্তম আমলকারী আর কেউ থাকবে না। (মুসলিম,২৬৯২)

বিপদাপদ থেকে মুক্তির দোয়া: যেকোনো অনিষ্ট থেকে বাঁচতে সন্ধ্যায় এই দোয়াটি পাঠ করা অত্যন্ত উপকারী।
‘আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন শাররি মা খালাক্বা।’

অর্থ: ‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের উসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।’ (মুসলিম, ২৭০৯)

শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সুরক্ষা: সন্ধ্যায় এই দোয়াটি পাঠ করলে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর।’

অর্থ: ‘এক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ এই আমলের বিনিময়ে দশটি সওয়াব লাভ হয়, দশটি গুনাহ মাফ হয় এবং দশ স্তর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। (আবু দাউদ, ৫০৭৭)

আত্মিক প্রশান্তি ও স্বাবলম্বীতার জন্য দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) ফাতেমা (রা.)-কে উপদেশ দিয়েছিলেন, সকালে বা সন্ধ্যায় যেন এই দোয়াটি পাঠ করা হয়। 
ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু বিরহ্‌মাতিকা আস্তাগীসু, আসলিহ্‌ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন।

অর্থ: ‘হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার প্রার্থনা করছি। আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন। আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।’

এই আমলগুলো প্রতিদিন সন্ধ্যায় পালন করার মাধ্যমে একজন মুমিন যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবে, তেমনি দুনিয়ার সকল বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পাবে। ইনশাআল্লাহ। আপনার সন্ধ্যা হোক প্রশান্তিময়, আর রাত কাটুক নিরাপদে।

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক 

নামাজে মাহরামের সম্মুখে মহিলাদের পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা জরুরি কী?

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
নামাজে মাহরামের সম্মুখে মহিলাদের পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা জরুরি কী?
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

প্রশ্ন: মাহরামের সম্মুখে মহিলাদের পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা জরুরি নয়। কিন্তু ঘরে মাহরাম থাকাকালীন নামায পড়লে পূর্ণ শরীর ঢাকে রাখা জরুরি কী? 

উত্তর: নামাজে শরীর ঢেকে রাখার মাসয়ালা ভিন্ন। সে সময় অন্য কেউ সামনে থাকা বা না থাক এর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। এক্ষেত্রে মাসয়ালা হল, মহিলাদের জন্য নামাজেরর সময় চেহারা, কব্জি পর্যন্ত উভয় হাত ও উভয় পা টাখনু গিরা পর্যন্ত খুলে রাখা জায়েয। এছাড়া অবশিষ্ট পুরো শরীর ঢেকে রাখা জরুরি। আর পায়ের পাতা ঢেকে রাখা উত্তম।

নামাজ অবস্থায় উপরোক্ত নিয়মে শরীর ঢেকে রাখা মহিলাদের জন্য সর্বদা পালনীয় বিষয়। চাই নামাজ একাকি নির্জনে পড়া হোক বা মাহরামের সামনে পড়া হোক।

আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪১৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৪-৪০৫

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

যেভাবে শুরু করবেন আপনার দিন

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ১০:২৬ এএম
যেভাবে শুরু করবেন আপনার দিন
দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতির ছবি । সংগৃহীত

প্রতিটি নতুন দিন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অপার নেয়ামত। এই নেয়ামতের সদ্ব্যবহার করা । দিনের শুরুটা আল্লাহর স্মরণে করা মুমিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তা  সারা দিনের কর্ম ও চেতনায় এক অপার্থিব বরকত বয়ে আনে। প্রভাতের পবিত্র মুহূর্তে আল্লাহর জিকির ও নবিজির (সা.) সুন্নাহ অনুসরণ করে যে যাত্রা শুরু হয়, তা আত্মিক প্রশান্তি ও সাফল্যের পথ খুলে দেয়।

প্রভাতের সূচনায় কৃতজ্ঞতা ও তাসবিহ
ঘুম ভাঙার পর মহান রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করাই একজন মুমিনের প্রথম কাজ। প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, দিনের শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং তাঁর মহিমা স্মরণ করা। হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,  রাসুলুল্লাহ (সা.) ভোরে উপনীত হলে বলতেন, ‘আসবাহনা ওয়া আসবাহাল হামদু কুল্লুহু লিল্লাহ, লা শারিকা লাহু, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া ইলাইহিন নুশুর।’

অর্থ: আমরা ভোরে উপনীত হয়েছি এবং আল্লাহর রাজত্ব (সৃষ্টিকুল) ভোরে উপনীত হয়েছে। সব প্রশংসা মহান আল্লাহর। তাঁর কোনো শরিক নেই। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই এবং পুনরুত্থান তাঁর কাছেই।

এছাড়াও, প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে ১০০ বার এবং সন্ধ্যায় ১০০ বার 'সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি' পড়বে, কিয়ামতের দিন তার চেয়ে উৎকৃষ্ট কিছু কেউ নিয়ে আসতে পারবে না; তবে সে ব্যক্তি ছাড়া যে তার মতো বলবে বা তার চেয়ে বেশি আমল করবে। এই তাসবিহের অর্থ হলো : ‘আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি।’ এই আমলগুলো আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং সারা দিন আল্লাহর রহমতের ছায়ায় থাকার সুযোগ করে দেয়।

ফজরের নামাজ ও কুরআন তেলাওয়াতের মাহাত্ম্য
দিনের শুরুটা ফজরের জামাতে নামাজ আদায় করে শুরু করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ে, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকির করে, তারপর দুই রাকাত নামাজ পড়ে, সেই ব্যক্তি একটি হজ ও একটি উমরার সওয়াব লাভ করে।’ (তিরমিজি, ৫৮৬) এটি শুধু একটি সওয়াবের মাধ্যম নয়, বরং দিনটিকে একটি শান্তিপূর্ণ ও বরকতময় করার বড় উপায়।

কুরআন তেলাওয়াত সর্বোত্তম জিকির। পবিত্র কুরআনের হৃদয় বলা হয় সুরা ইয়াসিনকে। দিনের শুরুতে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করা অত্যন্ত বরকতপূর্ণ। বিশিষ্ট তাবেয়ী ইয়াহইয়া ইবন কাসির (রহ.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে।’ এটি অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণিত।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক 

 

জিনদের হাদিস বর্ণনা ও ইসলামের বিধান

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
জিনদের হাদিস বর্ণনা ও ইসলামের বিধান
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

জিনদের অস্তিত্ব যেমন কোরআন ও হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত, তেমনি তাদের মধ্যে মুসলিম, কাফির, ভালো ও মন্দ সব শ্রেণির জিনও রয়েছে। কোরআনে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিনদের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল এবং তিনি তাদের ইসলাম শিক্ষা দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে কিছু মুসলিম জিন রাসুলের হাদিস বর্ণনা করেছে তবে তা নিয়ে শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

ইসলামের ইতিহাসে জিনদের হাদিস বর্ণনার কিছু ঘটনা পাওয়া যায়। আবু নুআইম আসবাহানি (রহ.) উবাই ইবনু কাব (রা.) থেকে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। একদল লোক মক্কার পথে যাত্রা করে। দীর্ঘ পথ অতিক্রমের পর তারা পথ হারিয়ে ফেলে এবং পানির অভাবে প্রায় মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। এমতাবস্থায়, তাদের কাছে এক জিন এসে জানায় যে সে নবিজি (সা.)-এর কাছে আগমনকারী জিন দলের শেষ সদস্য। জিনটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছে, ‘প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে, এক মুমিন অপর মুমিনের ভাই। পানি ও পথ প্রদর্শনে সে তার ভাইকে ধোঁকা দেয় না।’ এরপর জিনটি তাদের পানির সন্ধান এবং সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দেয়।

এ ধরনের আরও কিছু হাদিসের বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে কোনো মুসলিম জিন হাদিস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে, ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি অনুযায়ী, জিনদের বর্ণিত হাদিস মানুষের জন্য শরিয়তের দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে সব মুসলিম ইমাম একমত পোষণ করেছেন। এর কারণ হলো, হাদিস গ্রহণের ক্ষেত্রে বর্ণনাকারীর নির্ভরযোগ্যতা, স্মৃতিশক্তি ও সততা বিশেষভাবে যাচাই করা হয়। জিনদের জগৎ মানুষের থেকে ভিন্ন এবং তাদের স্বভাব ও জ্ঞান সম্পর্কে মানুষের পূর্ণাঙ্গ ধারণা নেই। তাই, তাদের বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে শরিয়তের কোনো বিধান নির্ধারণ করা যুক্তিযুক্ত নয়।

তবে, জিনরা নিজেদের মধ্যে হাদিস বর্ণনা করতে পারবে। এতে কোনো বাধা নেই। কারণ তাদের নিজস্ব জীবন ও শরয়ী বিধিবিধান থাকতে পারে, যা তারা একে অপরের কাছে বর্ণনা করতে পারে। কিন্তু সেই বর্ণনা মানুষের জন্য অনুসরণীয় বা দলিল হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হবে না। জিনদের হাদিস বর্ণনা ইসলামি ইতিহাসে একটি গ্রহণযোগ্য বিষয় হলেও, মানুষের জন্য শরিয়তের দলিল হিসেবে তা গ্রাহ্য নয়। মানুষের জন্য অনুসরণীয় দলিল হলো সাহাবা, তাবেইন ও অন্য নির্ভরযোগ্য মানব বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে পরম্পরায় বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী ও কর্ম।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

জিন ও মানুষের সহবাস প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে?

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১০:৪৪ এএম
জিন ও মানুষের সহবাস প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে?
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

ইসলামি শরিয়তে জিনদের অস্তিত্ব বাস্তব এবং কোরআন-হাদিসে তা বারবার এসেছে। বহু মানুষের অভিযোগ থাকে যে, তাদের ওপর কোনো জিন বা অদৃশ্য সত্তা প্রভাব বিস্তার করছে বা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করছে। শরিয়তের দৃষ্টিতে এসব বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে, যা জানা একজন মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

কোরআনুল কারিমের সুরা আর-রাহমানের ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা জান্নাতের হুরদের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘সেখানে (জান্নাতে) রয়েছে আয়তলোচনা রমণীরা, যাদের আগে কোনো মানুষ কিংবা কোনো জিন স্পর্শ করেনি।’ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনুল জাওজি (রহ.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার এই বাণী প্রমাণ করে যে, জিনদের নারী ও পুরুষ উভয়ই মানব নারী-পুরুষের সঙ্গে সহবাস করতে সক্ষম।’


এই প্রেক্ষাপটে, ইসলামি শরিয়তে জিন ও মানুষের সহবাসের বিষয়টিকে প্রধানত তিনটি অবস্থায় বিবেচনা করা হয়-

১. স্বপ্নে সহবাসের অনুভূতি: ঘুমের মধ্যে যদি কোনো নারী বা পুরুষ এমন কিছু অনুভব করে যা স্বামী বা স্ত্রীর সহবাসের সময় হয়ে থাকে এবং ঘুম ভাঙার পর বীর্য (শুক্রাণু) দেখতে পায়, তাহলে তার ওপর গোসল ফরজ হবে। আর যদি বীর্য দেখতে না পায়, তবে তা সাধারণ স্বপ্নদোষ হিসেবে গণ্য হবে এবং এক্ষেত্রে গোসল ফরজ হবে না।

২. জিনের মানুষের আকৃতিতে সহবাস: যদি কোনো জিন বা পরি মানুষের আকৃতি ধারণ করে কোনো নারী বা পুরুষের সঙ্গে সহবাস করে, তাহলে বীর্যপাত হোক বা না হোক, এমতাবস্থায় গোসল ফরজ হবে। কারণ এমনটা বাস্তবে বিরল হলেও ইসলামি ফিকহে তা সম্ভব হিসেবে গণ্য করা হয়।

৩. অদৃশ্য জিনের সহবাস: যদি কোনো জিন অদৃশ্য থেকে কোনো জাগ্রত মানুষের সঙ্গে সহবাস করে এবং সেই অনুভূতিও সহবাসের মতোই হয়, তাহলে চার মাজহাবের অধিকাংশ ফকিহের মতানুসারে, যদি বীর্যপাত ঘটে তবেই গোসল ফরজ হবে, অন্যথায় নয়।

এ বিষয়ে শরিয়তের নির্দেশনা স্পষ্ট। যেকোনো অবস্থায় শুক্রাণু নির্গত হলে গোসল ফরজ হয়। তবে এমন ঘটনায় মানুষের মনে নানা প্রশ্ন জাগতে পারে। তাই এসব বিষয়ে বিশ্বস্ত আলেমদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ইসলামি শরিয়ত আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়, যা আমাদের আধ্যাত্মিক ও শারীরিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক